রদ্দে খারেজিয়্যাত

আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার-এর ব্যাপারে সালাফদের বাণী সমূহ-০৭ ইমাম ইবনুল জাওযী (৫৯৭হি:) রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ফয়সালা মূলক কথা হলো: ক) যারা ইহুদীদের মতো "আল্লাহ নাযিল করেছেন" এটা জেনেও অস্বীকার করতঃ আল্লাহর বিধান ছাড়া বিচার করে, তারা কাফের। খ) যারা অস্বীকার না করে নিজ প্রবৃত্তির দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে বিচার করা বাদ দেয়, তারা জালেম ও ফাসেক। আলী ইবনু আবী তালহা ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ "যে আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করল সে-ই মূলত কাফের। আর যে স্বীকার করল বটে, কিন্তু তদানুযায়ী বিচার করল না, সে জালেম ও ফাসেক। --(তাফসীরে যাদুল মাসীর, ২/৩৬৬)
আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার-এর ব্যাপারে সালাফদের বাণী সমূহ-০৬ ইমাম সাম'আনী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আর তুমি জেনে রাখো, উক্ত আয়াত দিয়ে খারেজীরা এই দলীল দেয় যে, যারাই আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার করবে তারাই কাফের। কিন্তু আহলুস সুন্নাহর অভিমত হলো, (শুধুমাত্র) এটা ছাড়ার কারণেই কেউ কাফের হবে না (বরং আরো বিষয় রয়েছে) --(তাফসীরে সাম'আনী, ২/৪২)
আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার-এর ব্যাপারে সালাফদের বাণী সমূহ-০৫ ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র মালিকী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আলেমদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে শাসনের ক্ষেত্রে জেনেশুনে ইচ্ছাকৃতভাবে জুলুম করা কাবীরা গুনাহ। সালাফদের থেকে এ ব্যাপারে কঠোর কঠোর কথা বর্ণিত হয়েছে। আর আল্লাহর বাণী "যারাই আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার করে, তারাই (কাফের)...(জালেম)...(ফাসেক)"; এই আয়াতটি আহলে কিতাবদের (ইহুদী খৃষ্টানদের) ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। হুযায়ফা ও ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, তবে এটা আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে এর সাথে তারা আরো বলেছেন: এটা এমন কুফরী না, যা মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। যতক্ষণ না সে আল্লাহ, ফেরেশতা, আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাবাদি, তদ্বীয় রাসূলদের এবং বিচার দিবসকে মিথ্যারোপ ও অস্বীকার না করে বসে। এই অর্থটা...
আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার-এর ব্যাপারে সালাফদের বাণী সমূহ-০৪ ইমাম ইবনু বাত্ত্বাহ আল-উকবারী রহিমাহুল্লাহ তার "আল-ইবানা" গ্রন্থে (২/৭২৩) বলেন: অধ্যায়ঃ এমন কিছু পাপের কথা, যা এই পাপিষ্ঠকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না এরকম কুফরীতে নিয়ে যায়। এর অধীনে তিনি আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার-এর ব্যাপারটাও নিয়ে এসেছেন। সেখানে সাহাবী ও তাবেয়ীদের কথা এনে এটা প্রমাণ করেছেন যে, এ প্রকার কুফর ইসলাম থেকে বের করে না।
আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার-এর ব্যাপারে সালাফদের বাণী সমূহ-০৩ ইমাম ইবনু জারীর আত-ত্ববারী রহিমাহুল্লাহ তার তাফসীরে (৬/১৬৬) বলেনঃ এসব কথার মাঝে আমার কাছে সঠিকতার সবচেয়ে কাছাকাছি মনে হয়েছে ঐ দলের কথা, যারা বলেছেন: এই আয়াতগুলো (আল্লাহর আইন বাদে অন্য বিধান দিয়ে বিচার-এর) আহলে কিতাবের কাফেরদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। কারণ, পূর্বাপর আয়াতগুলো তাদের ব্যাপারেই নাযিল হয়েছে, ঐসব আয়াত দ্বারা তারাই উদ্দেশ্য। আর এই আয়াতগুলোও তাদের বর্ণনার পটেই এসেছে। তাই, এই আয়াতগুলো তাদের ঘটনা সম্পর্কে হওয়াই অধিক যুক্তিযুক্ত। এখন কেউ যদি বলে: আল্লাহ তা'আলা এর মাধ্যমে পূর্বাপর তাঁর বিধান দিয়ে বিচার না করা সবাইকেই শামিল করেছেন। তো আপনি কিভাবে এটাকে তাদের সাথে নির্দিষ্ট করছেন? তার উত্তরে বলা হবে: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এখানে ঐসমস্ত...
আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার-এর ব্যাপারে সালাফদের বাণী সমূহ-০২ মুহাম্মাদ বিন নাসর আল-মারওয়াযী (মৃত: ২৯৪ হি:) রহিমাহুল্লাহ তা'যীমু ক্বদরিস সালাহ (২/৫২০)-তে বলেনঃ এ ব্যাপারে সাহাবী ও তাবেয়ীদের মধ্য থেকে আমাদের পূর্বসূরী রয়েছেন, যারা কিনা আমাদের আদর্শ। কারণ, তারা কুফরের এমন কিছু শাখা নির্ণয় করেছেন, যেসব করলেও কোনো ব্যক্তি মিল্লাত থেকে বের হয়ে যায় না; যেমনভাবে আমলের দিক থেকে ঈমানেরও রয়েছে বেশ কিছু প্রশাখা আছে, যেগুলো ছাড়লে কেউ কাফের হয়না। তন্মধ্যে অন্যতম হলো, ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক "আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো বিধান দিয়ে যারা বিচার করে, তারা কাফের" আয়াতের তাফসীর। উক্ত বইয়েরই (২/৫২২) এ আত্বা রহিমাহুল্লাহ বলেন: এটা হলো ছোট কুফর, ছোট জুলুম, ছোট ফাসেকী। এ কথার প্রেক্ষিতে মুহাম্মাদ বিন নাসর আল-মারওয়াযী...
আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার-এর ব্যাপারে সালাফদের বাণী সমূহ-০১ সুয়ালাতু ইবনে হানী (২/১৯২) গ্রন্থে ইসমাইল বিন সা'দ বলেছে: আমি আহমাদ বিন হাম্বল রহিমাহুল্লাহকে "আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে যারা বিচার করে না, তারা কাফের" এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। বললাম, এই কুফর বলতে কী উদ্দেশ্য? তিনি বললেনঃ যে কুফর ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। ইবনু তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ মাজমূ' ফতোয়া (৭/২৫৪) ও তার সুযোগ্য ছাত্র ইবনুল কয়্যিম রহিমাহুল্লাহ হুকমু তারিকিস সালাত (পৃ. ৫৯-৬০) গ্রন্থে বলেন: উক্ত আয়াতে বর্ণিত কুফর সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল রহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ যে কুফর দ্বীন থেকে বের করে দেয় না। যেমন ঈমানের বিভিন্ন অংশ রয়েছে, তেমনি কুফরেরও রয়েছে। যতক্ষণ না সে এমন কাজ করছে, যেটার (কুফরীর) ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই।
খারেজী চিন্তাধারা লালিত হওয়ার কারণ উবায়দ বিন আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী হাফিযাহুল্লাহ বলেনঃ খারেজীপনায় লিপ্ত হওয়ার, বিশেষ করে এই যুগে, বেশ কয়েকটা কারণ আছেঃ ১) যোগ্যদের কাছ থেকে ইলম অর্জন না করা। আর যোগ্যরা হলো: আলেমরা অথবা ছাত্ররা- যারা আলেমদের থেকে জ্ঞান নিয়েছেন। ২) উল্টাপাল্টা শ্লোগানের আবেগী প্রভাব। ৩) বিভিন্ন সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে দেয়া। ৪) ভ্রষ্টতার প্রতি আহ্বানকারীদের সাথে মিশা। যারা যুবকদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। জিহাদ পুনরুজ্জীবিত এবং শরয়ী আইন বাস্তবায়নের লোভ দেখিয়ে। ৫) যুবকদের মাঝে এই চিন্তাধারার বইয়ের ছড়াছড়ি। যেমন, সাইয়েদ কুতুব ও তার অনুসারীদের বইসমূহ। --(আল-ফাওয়ায়িদুল আকদিয়্যাহ ওয়াল কওয়াইদুল মানাহিজিয়্যাহ, ১৮২ পৃষ্ঠা)।
মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসায়মীন রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি সরকারের জন্য দোয়া করে না, তার মাঝে অত্যন্ত জঘন্য একটি বিদয়াত রয়েছে। আর সেটা হলো: খারেজীদের, সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের। যদি তুমি সত্যিকার অর্থেই আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তদ্বীয় রাসূল, মুসলিম শাসক ও সাধারণ মুসলিমদের জন্য হিতাকাঙ্খী ও উপদেশদানকারী হতে, তাহলে অবশ্যই শাসকদের জন্য দোয়া করতে। কেননা, শাসক ঠিক হলে প্রজারাও ঠিক হবে। কিছু লোক আছে, তারা যদি শাসকের কোনো বিচ্যুতি দেখে আর যদি তাদের বলা হয়: শাসকের হিদায়াতের জন্য দোয়া করো। তার উত্তরটা ঠিক এরকম হয়ঃ না না। আল্লাহ তাকে কখনোই হিদায়াত দেবেন না!! বরং আমি তার ধ্বংসের জন্য দোয়া করব!!! এটা সে কিভাবে বলল যে, আল্লাহ তাকে হিদায়াত করবেন না?!! অথচ আল্লাহ কত শত কাফের শাসকদের হিদায়াত দিয়েছেন!! তারপরেও যদি ধরে নিই যে, তুমি...
নিজেরা একটা বিদআত করবে, আর বিরোধীদের কাফের আখ্যা দেবে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন: খারেজীরাই প্রথম মুসলিমদেরকে পাপ করার কারণে কাফের বলেছে। তাদের এই বিদয়াতী চিন্তাধারার যারা বিরোধিতা করে, তাদেরকেও কাফের বলেছে। এবং বিরোধীদের রক্ত ও সম্পদ হালাল বানিয়ে নিয়েছে। সব বিদয়াতীরই একই অবস্থা। নিজেরা একটা বিদয়াত করবে, আর বিরোধীদের কাফের আখ্যা দেবে। কিন্তু, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত সর্বাবস্থায় কুরআন সুন্নাহর অনুসরণ করে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুকরণে চলে। সুতরাং, তারা যেমন সত্যপন্থী, তেমনি সৃষ্টির প্রতি দয়াদ্র। مجموع الفتاوى: (٢٧٩/٣)

Install Salafi Forum Mobile App

Download Android App

Latest books

Forum statistics

Threads
15,113
Comments
19,957
Members
5,450
Latest member
sma1
Back
Top