একটি ঈমান বিধ্বংসী ফিতনার নাম হচ্ছে ইন্টারফেইথ বা আন্তঃধর্ম
বর্তমানে মুসলিমদের জন্য ইহুদীবাদীদের একটি বড় ষড়যন্ত্র ও ফিতনার নাম হচ্ছে ইন্টারফেইথ বা আন্তঃধর্ম। ইন্টারফেইথ বা আন্তঃধর্ম নামটি বিভিন্ন নাম দিয়ে প্রচারিত হতে পারে। যেমনঃ ইন্টারফেইথ ডায়ালগ, ইন্টারফেইথ হারমোনি, ইন্টারফেইথ এলিয়েন্স ইত্যাদি। নামগুলো শুনতে খুব সুন্দর শোনা গেলেও বাস্তবে এই ইন্টারফেইথ মুসলিমদের জন্য ঈমান বিধ্বংসী হবে।
“ইন্টারফেইথ ডায়ালগ” বাংলা করলে যার অর্থ দাড়ায় “আন্তঃধর্মীয় সংলাপ”। যার ভাবানুবাদ হলো সকল ধর্মের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য সমঝোতা করা। বিষয়টা শুনতে ভাল শোনা গেলেও এর পেছনে রয়েছে পবিত্র দ্বীন ইসলামের ক্ষতি সাধনের লক্ষে এক গভীর ষড়যন্ত্র। মোঘল বাদশাহ আকবর যেমন সব ধর্ম মিলিয়ে নতুন এক কুফরি ধর্ম “দ্বীন-ই-ইলাহি” চালু করেছিল, ইন্টারফেইথ তেমনি এক সর্ব ধর্মের কুফরি মিশ্রণ। বর্তমানে এ কুফরি ধর্মের বিষ প্রবেশ করানো হচ্ছে মুসলিমদের আক্বীদায়।
ইন্টারফেইথকে যদি আপনি আপনার পন্থা হিসেবে নির্বাচিত করেন তাহলে আপনাকে এ কথা মেনে নিতে হবে যে, “সকল ধর্মই সঠিক”। যেমনঃ কিছু দিন পূর্বে পোপ ফ্রান্সিস যখন বাংলাদেশে এসেছিল তখন ফরিদ উদ্দিন মাসউদ সকল ধর্মের পন্ডিতদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে আন্তঃধর্মীয় প্রার্থনা বা মুনাজাত করেছিলো। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন জাগ্রত হয় যে, তারা সকলে কার নিকট প্রার্থনা করেছিল? খ্রিষ্টান হিন্দু বৌদ্ধ পন্ডিতেরা নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করেনি বরং তারা তাদের কল্পিত মিথ্যা রবের নিকট প্রার্থনা করেছে। তাই কাফিরদের সাথে সম্মিলিত মুনাজাত করার অর্থই হচ্ছে আপনি মেনে নিয়েছেন যে, আপনার প্রার্থনা যেমন আল্লাহ তায়ালা শ্রবণ করছেন, তাদের প্রার্থনাও তাদের ভগবান ও উপাস্যরা শ্রবণ করছে এবং আল্লাহ তায়ালা যেমন আপনাকে সাহায্য করতে সক্ষম, তাদের ভগবান ও উপাস্যরাও তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম। (নাউযুবিল্লাহ)
অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তিনিই আল্লাহ তোমাদের রব। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদত কর। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর তত্ত্বাবধায়ক”। [সূরা আন’আম, আয়াত ১০২]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ “নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ। আমি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে
সালাত কায়েম করো”। [সূরা ত্ব-হা, আয়াত ১৪]
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার কোন ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব তুমি যদি এরূপ করো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [সূরা ইউনুস, আয়াত ১০৬]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম”। [সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৯]
অতএব মুমিন ব্যক্তিকে অবশ্যই এরূপ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ ব্যতীত মানুষ অন্য যা কিছুর উপাসনা করে তারা কেউই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা বা ইলাহ নয়, বরং আল্লাহই হচ্ছেন একমাত্র সত্য ইলাহ। আল্লাহ ব্যতীত মানুষ অন্য যাদের কাছে দোয়া বা প্রার্থনা করে তাদের কেউই উপকার বা অপকার করতে সক্ষম নয়। একমাত্র ইসলাম ব্যতীত পৃথিবীতে অন্য যে সকল ধর্ম প্রচলিত রয়েছে সমস্ত ধর্মই মিথ্যা এবং মানুষের তৈরি করা। ইসলামই হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র সঠিক ধর্ম। তাই কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, সকল ধর্মই সঠিক তাহলে সে মুমিন নয়, বরং সে কাফির। আর ইন্টারফেইথ আমাদের এই কুফরি মতবাদই শিক্ষা দিচ্ছে।
বাস্তবিক প্রয়োগে ইন্টারফেইথ ও সেক্যুলারিজম একই জিনিস। তবে সেক্যুলারিজম করানো হয় দাড়ি টুপিবিহীন লোকদের মাধ্যমে। কিন্তু ইন্টারফেইথ করানো হবে বিভিন্ন মসজিদের হুজুর, খতিব, মাদ্রাসার শিক্ষক, ওয়ায়েজ, মুফতি, বক্তা, স্কলারদের মাধ্যম দিয়ে। কয়েকটি বিদেশী এনজিও বাংলাদেশের মাদ্রাসা, বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসাগুলোতে এই ইন্টারফেইথ প্রবেশ করানোর জন্য কয়েকটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। তারা ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের ইন্টারফেইথ প্রশিক্ষণ দিবে।
বিশ্বব্যাপী ইন্টারফেইথ বা আন্তঃধর্ম প্রচারকারী কিছু সংগঠনের নামঃ
১) Muslim Christian Dialogue Forum এ সংগঠনটি চালাচ্ছে তাহির কাদরী নামক পাকিস্তানি এক রাজনীতিবিদ।
২) Interfaith Encounter Association (IEA) সংগঠনটি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনটির সহযোগী সংগঠনের নাম “মিডেলইস্ট আব্রাহামিক ফোরাম”। সংগঠনটি মিশর, ইরান, জর্ডান, লেবানন, মরক্কো, তিউনিশিয়াতে ইন্টারফেইথ প্রচার করছে।
৩) Messiah Foundation International সংগঠনটির মূল রিয়াজ আহমেদ গোহার শাহী নামক এক ব্যক্তি, যে নিজেকে ইমাম মাহদি, মাসিয়াহ ও কাল্কি অবতার বলে দাবি করে। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও জাপানে কাজ করে থাকে।
৪) Project Interfaith সংগঠনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাসা ভিত্তিক, যার প্রতিষ্ঠাতা বেথ কাটজ নামক এক নারী।
৫) The Insight Film Festival (IFF) যুক্তরাজ্য ভিত্তিক এ সংগঠনটি বিভিন্ন স্থানে সিনেমা তৈরির মাধ্যমে কাজ করে।
৬) United Religions Initiative (URI) যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠনটি ৮০টি দেশে কাজ করে যাচ্ছে।
৭) Jordanian Interfaith Coexistence Research Center এ বেসরকারি সংগঠনটি জর্ডানে কাজ করে।
৮) Global Peace Pioneers (GPP) পাকিস্তান ভিত্তিক বেসরকারি সংগঠনটি ইন্টারফেইথের জন্য কাজ করছে।
৯) OSIS নিউইয়র্ক সিটি ভিত্তিক সংগঠন।