সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Golam Rabby

প্রবন্ধ কুরআন হাদীসে বর্ণিত ঈসা (আঃ)-এর মর্যাদাসমূহ

কুরআন হাদীসে বর্ণিত ঈসা (আঃ)-এর মর্যাদাসমূহ

১. তিনি পাঁচজন “উসুল আযম” (দৃঢ় প্রতিজ্ঞ) বৈশিষ্ট্য একজন:

আল্লাহ তা'আলা এই পাঁচজন “উসুল আযম” (দৃঢ় প্রতিজ্ঞ) রাসূলকে সূরা আহযাবের ৭ নং আয়াতে একরে উল্লেখ করেছেন, “(স্মরণ কর) যখন আমি নবীদের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমার নিকট হতেও এবং নুহ (আঃ), ইবরাহীম (আঃ), মূসা (আঃ), মারইয়াম পুত্র ঈসা (আঃ)-এর নিকট হতে, তাদের নিকট হতে গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার।” – সূরা আহযাব, আয়াত: ০৭

২. আল্লাহ তাকে পিতাহীন সৃষ্টি করে তার অস্তিত্ব দান করেছেন, মহাবাণী "কুন ফায়াকূন" দ্বারা:

এ মৰ্মে আল্লাহ তা'আলা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ; তিনি তাঁকে মাটি দ্বারা দৃষ্টি করলেন, অতঃপর বললেন হও, ফলতঃ তাতেই হয়ে গেল।” – সূরা ইমরান, আয়াত: ৫৯

৩. ভূমিষ্টের সময় আল্লাহ তা'আলা তাঁকে শয়তানের স্পর্শ থেকে নিরাপদে রাখেন:

তাঁর জন্মের সময় আল্লাহ পাক স্বীয় দয়ায় তাঁকে সকল প্রকার শয়তানের স্পর্শ থেকে মুক্ত রাখেন, রাসূলে করীম (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক নবজাতক জন্মগ্রহন করার সময় শয়তান তাকে স্পর্শ করেই। যার ফলশ্রুতিতে শয়তানের স্পর্শমাত্র সে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু মারইয়াম ও তার পুত্র ঈসা (আঃ) কে স্পর্শ করতে পারেনি।” – বুখারী: ৪৫৪৮, মুসলিম: ৬১৩৩

৪. শৈশবকালে তিনি মানুষের সাথে কথা বলেছেন:

এ মর্মে আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন, “অতঃপর মারইয়াম (আঃ) সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করলেন, তারা বললো, যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলবো? তিনি (ঈসা) বললেন, আমি তো আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন। যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে। আর আমাকে আমার মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে করেননি উদ্ধত ও হতভাগ্য”। – সূরা মারইয়াম, আয়াত: ২৯-৩২

৫. আল্লাহ তা'আলা তাঁকে লিখনি বিদ্যা, হিকমাহ তথা শরী'আতী প্রজ্ঞা এবং তাওরাত ও ইঞ্জীলের জ্ঞান দান করেছেন:

এ মর্মে আল্লাহ তা'আলা ঈসা (আঃ) কে লক্ষ্য করে বলেন, “আর স্মরণ করুন, যখন আমি আপনাকে কিতাব ও হিকমতের কথা এবং তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছি।” – সূরা মায়িদা, আয়াত: ১১০

তিনি আরো বলেন, “(ফেরেশতারা মারইয়ামকে বললো) আল্লাহ তাঁকে (ঈসাকে) লিখনি বিদ্যা, শরী'আতী প্রজ্ঞা এবং তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দেবেন।” – সূরা ইমরান, আয়াত: ৪৮

উপরিউক্ত আয়াতদ্বয়ে উল্লিখিত (কিতাব) দ্বারা লিখনি বিদ্যা বুঝানো হয়েছে; অধিকাংশ মুফাসসিরগণও তাই বলেছেন। এবং (হিকমাহ) দ্বারা তাঁর উপর অবতারিত গ্রন্থ ইঞ্জীলের সঠিক বুঝ বা ইঞ্জীলের মাধ্যমে নাজীলকৃত শরী'আতী প্রজ্ঞা বুঝানো হয়েছে। – তাফসীর ইবনে কাসীর: ৩/২২৩; তাফসীর বাগবী: ৩/১১৬

আবার কোনো কোনো মুফাসসির বলেছেন, (কিতাব) দ্বারা আসমানী কিতাবসমূহের শ্রেণীবিশেষ বুঝানো হয়েছে; অর্থাৎ আল্লাহ তাঁকে আসমানী কিতাবসমূহের জ্ঞান দান করেছেন; যার মধ্যে তাওরাত ও ইঞ্জীলের জ্ঞানও বিদ্যমান রয়েছে; আর তাওরাত ও ইঞ্জীলকে দ্বিতীয়বার উল্লেখ করা হয়েছে "আতফুল খাছ আলাল আম" হিসেবে, সুতরাং সাধারণভাবে আসমানী কিতাবসমূহের শ্রেণীবিশেষ বুঝানোর পর এই দু'খানা কিতাব নির্দিষ্ট করে আবার উল্লেখ করার কারণ হলো; ঈসা (আঃ)-এর সাথে এই দু'খানা কিতাবের বিশেষ সংশ্লিষ্টতা বুঝানো উদ্দেশ্য। – তাফসীর ফাতহুল কাদীর, শাওকানী: ২/৩৮০

তিনি আরো বলেন, “তিনি (ঈসা আঃ) বললেন, আমি তো আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন। আমি যেখানেই থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন”। – সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৩০-৩১

৬. তাঁর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম (শাস্তি) অবতীর্ণ হয়:

আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আমার প্রতি শান্তি, যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি ও যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো”। – সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৩৩

অর্থাৎ যেদিন তিনি জন্মগ্রহন করেন, সেদিন আল্লাহ তা'আলা শয়তানের খোচা বা স্পর্শ থেকে তাঁকে নিরাপদ রাখেন এবং যেদিন মৃত্যু বরণ করবেন সেদিন শির্ক করা থেকে তাঁকে মুক্ত রাখবেন এবং যেদিন পুনরুত্থিত হবেন সেদিনও পুনরুত্থানের আতঙ্ক থেকে নিরাপদ থাকবেন। – তাফসূরে বাগবী: ৫/ ২৩০-২৩১

৭. শেষ যামানায় ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গে থাকা উম্মতে মুহাম্মদীরএকটিদল জাহান্নাম থেকে বেঁচে যাবেন:

ছাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন, “আমার উম্মতের দু'টি দলকে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নাম থেকে অবশ্যই রক্ষা করবেন। তাদের একটি দল হচ্ছে যারা হিন্দুস্থানের সাথে যুদ্ধ করবে, আর অপরটি ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-এর সঙ্গী দল”। – নাসায়ী: ৩১৭৫; সিলসিলাহ আস সহীহা: ১৯৩৪

– কুরআন হাদীসের আলোকে ঈসা (আঃ) এর জীবনকাহিনী, সংকলক: ড. আব্দুল বাসির বিন নওশাদ, আতিফা পাবলিকেশন্স
 
Top