সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
rasikulindia

ভ্রান্তি নিরসন হাদীস অস্বীকারকারী কাফের - অষ্টম পর্ব

rasikulindia

Salafi

Salafi User
LV
5
 
Awards
17
Credit
179
আহলে কুরআন বা হাদীহ অস্বীকারকারীদের কিছু বিভ্রান্তিমূলক সংশয় ও তার নিরসন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমার প্রতি যে অহী অবতীর্ণ করা হয়েছে, তাতে আহারকারী যা আহার করে, তার মধ্যে আমি কিছুই নিষিদ্ধ পাই না। তবে মৃতপ্রাণী, বহমান রক্ত ও শূকরের গোশত ব্যতীত, কেননা তা অপবিত্র। অথবা যব্হকালে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম নেয়ার কারণে যা অবৈধ।’(সূরা আল-আন‘আম: ১৪৫)।

এই আয়াতে উল্লেখিত চারটি জিনিস ছাড়া অন্য কোন প্রাণী হারাম নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কুকুরের বিধান কী হবে? সাপের বিধান কী হবে? ইঁদুরের বিধান কী হবে? শকুনের বিধান কী হবে? খাওয়া যাবে কি-না?! হাদীস অস্বীকারকারী ভ্রান্ত ফেরকার লোকদের কাছে কি এগুলো হালাল? তারা কি এগুলো খাবে? প্রশ্ন রইল তাদের কাছে।

এবার দেখুন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মাতের সুবিধার্থে উক্ত আয়াতের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা পেশ করেন। তিনি একটি উছূল বা মূলনীতি বর্ণনা করেছেন।
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) খায়বার যুদ্ধের দিন শিকারী দাঁতযুক্ত যে কোন হিংশ্র জন্তু এবং নখযুক্ত যে কোন শিকারী পাখী আহার করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫৫২৭, ৫৫৩০; সহীহ মুসলিম, হা/১৯৩২-১৯৩৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩২৩৪; নাসাঈ, হা/৪৩৪৮; আবু দাঊদ, হা/৩৮০৩, ৩৮০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/ ২১৯৩, ২৭৪২, ৩০১৫, ৩০৬০, ৩১৩১, ৩৫৩৪; ইরওয়াউল গালীল, হা/২৪৮৮)।

অন্য আরেকটি হাদীসে এসেছে যে, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। কারণ তা নাপাক।’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৫২৮;সহীহ মুসলিম, হা/১৯৪০)।

অন্য আরেকটি বর্ণনায় এভাবে এসেছে, ‘জেনে রেখো, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও কিছু বস্তু হারাম করেছেন, যেমন আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন।’(মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৯৪; ইবনু মাজাহ, হা/১২)। এছাড়াও আরো বহু উদাহরণ দেওয়া যায়।

যেমন: (১) কুরআনে কেবল সালাতের হুকুম রয়েছে। কিন্তু তার পদ্ধতি বর্ণিত হয়নি। কুরআন বলেছে,أَقِيمُوا الصَّلاَةَ ‘তোমরা সালাত কায়েম কর।’(সূরা বাক্বারাহ: ২/৪৩)।

যদি সুন্নাহ থেকে না নেয়া হয়, তাহলে উক্ত হুকুম প্রতিপালনে এক অদ্ভূত রকমের বিশৃংখলা দেখা দেবে। অনুরূপভাবে وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ (এবং তোমরা রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর)-এর অর্থ ও উদ্দেশ্য একেবারে অজানা থেকে যাবে যার বিস্তারিত বিবরণ সুন্নাহ বর্ণনা করেছে।

যেমন রাসূল(ﷺ) বললেন, صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ ‘তোমরা সালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ’...। (বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; মিশকাত হা/৬৮৩, সালাত অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬)।

(২). কুরআন কেবল বিবাহ হালাল ও যেনা হারাম বলেছে। কিন্তু বিবাহের পদ্ধতি বলেনি। সুন্নাহ তা বলে দিয়েছে। কুরআনে আছে আম নির্দেশ, হাদীসে সেটাকে খাছ করেছে। যেমন কার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ আলোচনা পেশ করার পর মহান আল্লাহ বলেন, ‘উল্লিখিত নারীগণ ব্যতীত আর সকলকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়; এই শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে নিজ সম্পদের বিনিময়ে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে, অবৈধ যৌন-সম্পর্কের মাধ্যমে নয়।’(সূরা আন-নিসা: ২৪)।

অথচ হাদীসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে, কেউ যেন ফুফু ও তার ভাতিজীকে এবং খালা ও তার বোনঝিকে একত্রে বিবাহ না করে। (সহীহ বুখারী, হা/৫১০৯)। অথচ কুরআনে তা বলা হয়নি।


(৩). কুরআনে কেবল যাকাত ফরয করা হয়েছে। কিন্তু যাকাতের নিসাব, তা আদায়ের সময়কাল এবং কি কি মালের যাকাত দিতে হবে, সবকিছু সুন্নাহ বলে দিয়েছে।

(৪). কুরআনে কেবল সূদ হারামের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সূদ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে এবং উক্ত নিষিদ্ধ করণের ভিত্তিই বা কিসের উপর তা জানা যায়নি। হাদীস এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছে- সমান ওযনে একই প্রকারের জিনিস নগদে বিক্রয় করা যাবে। অতিরিক্ত লেনদেন সূদ হবে।’(সহীহ মুসলিম হা/১৫৮৭; মিশকাত হা/২৮০৮)

হাদীসে সূদ-এর ব্যাখ্যা পাওয়া গেল। কিন্তু সূদ নিষিদ্ধ করণের উদ্দেশ্য ও অন্যান্য বিষয় বিস্তারিত জানা গেল না। সেকারণ ওমর ফারূক(রাঃ) বলেছিলেন, রাসূল (ﷺ) চলে গেলেন। কিন্তু সূদের রহস্য আমাদের নিকটে পুরোপুরি উদ্ঘাটিত হয়নি।'(ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ, ২/২৭৫)

ফলে মুজতাহিদ বিদ্বানগণ স্ব স্ব ইজতিহাদের আলোকে সূদ হারাম হওয়ার কারণ নির্দিষ্ট করেছেন। এক্ষণে যদি এ হাদীসটি না পাওয়া যেত, তাহলে কিসের ভিত্তিতে ইজতিহাদ করা হতো? অতএব সূদের বিষয়ে কুরআন মূল এবং হাদীসকে তার ব্যাখ্যা গণ্য করেই হুকুম বের করতে হবে।

(৫). কুরআনে একই সাথে দুই বোনকে বিবাহ নিষিদ্ধ করেছে। (সূরা আন-নিসা: ৪/২৩)।

কারণ তাতে দুই বোনের মধ্যকার রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়বে। যা আল্লাহর নিকটে অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ। আয়াতের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ভাগিনেয়ী ও খালা এবং ভাইঝি ও ফুফুকে একত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ করলেন। কেননা সেক্ষেত্রেও রক্ত সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া অপরিহার্য হবে।

(৬). কুরআনে হজ্জ ফরয করা হয়েছে। কিন্তু নিয়ম বলা হয়নি। তাই রাসূল (ﷺ) বললেন, خُذُوا عَنِّى مَنَاسِكَكُمْ ‘হে জনগণ! তোমরা আমার নিকট থেকে হজ্জ ও কুরবানীর নিয়ম-কানূন শিখে নাও’..(আহমাদ হা/১৪৪৫৯, মুসলিম হা/১২৯৭ (৩১০); মিশকাত হা/২৬১৮)।

উপরের উদাহরণ গুলি থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, কুরআন ও হাদীস উভয়ের সমন্বয়ে মাসআলা সমূহ বের করতে হবে। এমন নয় যে, সুন্নাহর পৃথক শারঈ মর্যাদা রয়েছে এবং কুরআন থেকে সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টি সরিয়ে কেবল সুন্নাহ দ্বারা হুকুম বের করা যেতে পারে। একজন মানুষ কখনোই আল্লাহর কালামের অর্থ সম্বোধনকৃত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ নির্ধারণ করতে সক্ষম হন না।

যেমন অসুস্থ বন্ধুকে কুশল জিজ্ঞেস করলে যদি তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাল আছি’ তবে তার অর্থ হয় ‘ভাল নেই’। এমনিভাবে দৈনন্দিন জীবনে কোন কোন বাক্যের অর্থ ও উদ্দেশ্য যদি সম্বোধনকৃত ব্যক্তির সাহায্য ব্যতিরেকে আমরা বুঝতে না পারি, তাহলে সুন্নাতের সাহায্য ছাড়া আমরা কিভাবে কুরআন অনুধাবনে সক্ষম হব?

হাদীস অস্বীকারকারীদের দ্বিতীয় সংশয়: মুনকিরুল হাদীস বা হাদীস অস্বীকারকারীরা মনে করে যে, হাদীস আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অহী নয়, বরং এগুলো তো কথা মাত্র যা আল্লাহর নামে মিথ্যা চালানো হচ্ছে (নাউযুবিল্লাহ)। (আল-মুবাহাছাহ, পৃ. ৮১; ইশা‘আতুস সুন্নাহ, ১৯তম খ-, পৃ. ২৯১; মাজাল্লাহ্, ইশা‘আতুল কুরআন, পৃ. ৩৫; চতুর্থ সংখ্যা, ১৯০৩ খ্রি.)

তাদের সংশয় নিরসন: তাদের এ অভিযোগ ও সন্দেহ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কাফির-মুশরিকরাও এমন অভিযোগ করেছিল, মহান আল্লাহ তা নাকোচ করে দিয়ে বলেন,

مَا کَانَ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنُ اَنۡ یُّفۡتَرٰی مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ لٰکِنۡ تَصۡدِیۡقَ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡہِ وَ تَفۡصِیۡلَ الۡکِتٰبِ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ مِنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۟۳۷﴾ اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىہُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّثۡلِہٖ وَ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ​

আর এ কুরআন আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো রচনা হওয়া সম্ভব নয়। বরং এর আগে যা নাযিল হয়েছে এটা তার সত্যায়ন এবং আল কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাকি তারা বলে, ‘তিনি এটা রচনা করেছেন?’ বলুন, ‘তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।' (সূরা ইউনুস: ৩৭-৩৮)।

আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ﷺ) এবং সুন্নাতের স্থান স্পষ্ট করে বলেন,

وَ لَوۡ تَقَوَّلَ عَلَیۡنَا بَعۡضَ الۡاَقَاوِیۡلِ- لَاَخَذۡنَا مِنۡہُ بِالۡیَمِیۡنِ- ثُمَّ لَقَطَعۡنَا مِنۡہُ الۡوَتِیۡنَ - فَمَا مِنۡکُمۡ مِّنۡ اَحَدٍ عَنۡہُ حٰجِزِیۡنَ​

‘যদি তিনি আমার নামে কিছু রচনা করে চালানোর চেষ্টা করতেন। তবে অবশ্যই আমি তাঁকে ডান হাত দ্বারা পাকড়াও করতাম এবং তাঁর জীবন-ধমনী কেটে দিতাম। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তাঁকে রক্ষা করতে পারত।’(সূরা আল-হাক্কাহ: ৪৪-৪৭)।

উক্ত আয়াত থেকে প্রতিভাত হয় যে, যদি রাসূল(ﷺ) নিজের পক্ষ থেকে কিছু বানিয়ে বলার চেষ্টা করতেন অথবা এতে কম-বেশি করতেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে পাকড়াও করতেন এবং তাঁকে ঢিল দিতেন না।

এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) সত্য রাসূল ছিলেন। যেহেতু তাঁকে আল্লাহ শাস্তি প্রদান করেননি তার মানে এই যে, তিনি নিজের পক্ষ থেকে কোন কিছু বানিয়ে বলেননি।(সংকলিত আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

হাদীস অস্বীকারকারী কাফের ধারাবাহিক ১০ পর্বের আজ অষ্টম পর্ব। পূর্বের পর্বগুলো কমেন্টে দেখুন।
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Similar threads

Total Threads
13,018Threads
Total Messages
16,573Comments
Total Members
3,408Members
Latest Messages
Atikur RahmanLatest member
Top