ঋতুবতী নারীর ঋতুস্রাব বন্ধ হলে গোসলের মাধ্যমে পুরো শরীরের পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব

Joined
Jan 12, 2023
Threads
808
Comments
1,054
Solutions
19
Reactions
10,986
ঋতুবতী নারীর ঋতুস্রাব বন্ধ হলে গোসলের মাধ্যমে পুরো শরীরের পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা বিনতে আবি হুবাইশকে বলেছিলেন:

«فَإذَا أقْبَلَتِ الْحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلاَةَ وَإذَا أدْبَرَتْ فَاغْتَسِلِيْ وَصَلِّي»​

“সুতরাং যখন তোমার রক্তস্রাব আরম্ভ হবে তখন সালাত ছেড়ে দিবে। আর যখন বন্ধ হবে তখন গোসল করে সালাত পড়বে।”[1]

ওয়াজিব গোসল সমাপনের সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে পুরো দেহটাকে চুলের গোড়াসহ গোসলের মধ্যে শামিল করে নেওয়া। আর উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে হাদীসে বর্ণিত পন্থায় গোসল করা। জনৈকা আসমা বিনতে শাকাল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঋতুবতী মহিলার গোসল সম্পর্কে প্রশ্ন করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«تَأْخُذُ إحْدَاكُنَّ مَاءَهَا وَسِدْرَتَهَا فَتَطَهَّرُ فَتُحْسِنَ الطُّهُوْرَ ثُمَّ تَصُبُّ عَلَى رَأسِهَا فَتَدْلُكَهُ دَلْكًا شَدِيْدًا حَتَّى تَبْلُغَ شُئُوْنَ رَأسِهَا ثُمَّ تَصُبُّ عَلَيْهَا الْمَاءَ, ثُمَّ تَأخُذُ فِرْصَةً مُمَسَّكَةً أيْ قِطْعَةَ قُمَاشٍ فِيْهَا مِسْكٌ فَتَطَهَّرُ بِهَا فَقَالَتْ أسْمَاءُ: كَيْفَ تَطَهَّرُ بِهَا؟ فَقَالَ: سُبْحَانَ اللهِ! تَطَهَّرِيْنَ بِهَا فَقَالَتْ عَائِشَةُ: كَأنَّهَا تُخْفِيْ ذَلِكَ تَتَّبِعيْنَ أثَرَ الدَّمِ».​

“তোমরা বরইপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করবে। অতঃপর মাথায় পানি ঢালবে এবং উত্তমরূপে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছাবে এবং সম্পূর্ণ শরীরে পানি ঢেলে দিবে। পরে কস্তুরী মাখানো এক টুকরা কাপড় দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করবে। একথা শুনে আসমা বললেন: কস্তুরী মাখানো বস্ত্র দ্বারা কীভাবে পবিত্রতা হাসিল করবো? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সুবহানাল্লাহ!। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা চুপিসারে তাকে বললেন: রক্তের চিহ্ন উক্ত কস্তুরী মিশ্রিত কাপড় দ্বারা ঘষে মুছে ফেলবে।”[2]

গোসলের সময় নারীদের মাথায় চুল বাঁধা থাকলে তা খোলা আবশ্যক নয়। তবে যদি এমন শক্তভাবে বাঁধা থাকে যে, চুলের গোড়ায় পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থাকে তাহলে বন্ধন খোলা বাধ্যতামূলক। সহীহ মুসলিমে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত এক হাদীস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, আমি আমার মাথার চুল বেঁধে রাখি। এখন অপবিত্রতার গোসলের সময় (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী ‘অপবিত্রতা ও হায়েযের গোসলের সময়’) আমি কি তা খুলে নিব? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

«لاَ إنَّمَا يَكْفِيْكِ أنْ تَحْثِي عَلَى رَأسِكِ ثَلاَثَ حَثَيَاتٍ ثُمَّ تُفِيْضِيْنَ عَلَيْكِ الْمَاءَ فَتَطْهُرِينَ»​

“না, বরং তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তুমি মাথার উপর তিন অঁজলা পানি ঢেলে দিবে। অতঃপর সারা শরীরে পানি ঢেলে পবিত্রতা অর্জন করবে।”

সালাতের ওয়াক্ত চলাকালে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে ঋতুবতী মহিলার ওপর তাড়াতাড়ি গোসল করা অত্যাবশ্যক, যাতে উক্ত সালাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে পারে। তবে ঋতুবতী মহিলা যদি সফরে থাকে এবং সঙ্গে পানি না থাকে অথবা সাথে পানি আছে কিন্তু ব্যবহার করলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে অথবা অসুস্থতার কারণে ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তাহলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নিবে। এ অবস্থা চলতে থাকবে যতক্ষণ না বাধা দূরীভূত হবে, যখন বাধা দূরীভূত হবে তখন গোসল করবে।

কিছু কিছু মহিলা এমনও আছেন যারা সালাতের ওয়াক্তের মধ্যেই রক্তস্রাব বন্ধ হওয়া সত্বেও গোসল করতে বিলম্ব করেন এবং এই বলে কারণ দেখিয়ে থাকেন যে এই সময়ে পূর্ণাঙ্গরূপে পবিত্র হওয়া সম্ভব নয়। মূলত এটা কোনো দলীল বা ওযর হতে পারে না। কেননা ওয়াজিবের সর্বনিম্ন স্তর অনুসারে কোনো রকম গোসল সেরে ওয়াক্তের মধ্যে সালাত আদায় করা সম্পূর্ণ সম্ভব, অসম্ভবের কিছুই নেই। অতঃপর দীর্ঘ সময় পাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গরূপে পবিত্রতা অর্জন করে নিতে পারে।

নারীর প্রাকৃতিক রক্তস্রাব
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদ: মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​

[1] সহীহ বুখারী।
[2] সহীহ বুখারী।
 
Back
Top