▌সালাফদের কোন কথা ও আমল আমাদের জন্য দলীল?
❐ সালাফ তথা সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এর কথা ও কর্ম আমভাবে দলীল নয়। বরং তাতে শর্ত রয়েছে।
• প্রথমতঃ তাদের বর্ণিত সে কথা বা আমলের সনদ সহীহ হতে হবে।
• দ্বিতীয়তঃ এমন নয় যে, যে কোন একজন সাহাবীর কথা বা আমলকে মেনে নিলেই হবে। যেহেতু হাদীসে এসেছে,
أصحابي كالنجوم بأيهم اقتديتم اهتديتم
‘আমার সাহাবীগণ তারকারাজির মতো। তাদের যার অনুসরণ করবে, সুপথ পাবে।’
• কিন্তু এ হাদীস সহীহ নয়; বরং এটি জাল হাদীস। (সিঃ যয়ীফাহ ৫৮-৬২নং)
• বিশেষ করে সাহাবীর কথা ও কাজ যদি কুরআন বা হাদীসের বিরোধী হয় অথবা অন্য সাহাবীর কথা বা কাজের বিপরীত হয়, তাহলে আমরা সে ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করে সালাফী হব কীভাবে?
• উদাহরণ স্বরূপ সাহাবী আবু তালহা রোযা অবস্থায় বরফ খেতেন এবং বলতেন, এটা বরকত; এটা খাদ্যও নয়, পানীয়ও নয়!
• মুহাদ্দিস আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, (আবু তালহার) এই মওকুফ হাদীসটি উক্ত (তারকারাজির মারফু) হাদীসটি বাতিল হওয়ার অন্যতম প্রমাণ। যেহেতু তা সহীহ হলে আবু তালহার অনুসরণ করে যে রমযানে (রোযা অবস্থায়) বরফ খাবে, তার রোযা নষ্ট হবে না। (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু।) আর আমার বিশ্বাস, এ কথা আজ কোন মুসলিম বলবে না। (ঐ ৬৩নং)
• উলামাদের মাঝে এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে যে, কোন সাহাবীর উক্তি বা আমল শরয়ী দলীল কি না?
• একদল উলামা মনে করেন, আল্লাহর কুরআন ও তাঁর রসূল (সা.)-এর হাদীস ছাড়া অন্য কিছু শরয়ী দলীল নয়। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন,
وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِن شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ
‘তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন -- ওর মীমাংসা তো আল্লাহরই নিকট।’ (সূরাঃ ১০)।
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ
‘যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।’ (নিসাঃ ৫৯)
• এখানে তৃতীয় কোন এখতিয়ার (অপশন) এর কথা বলা হয়নি। সুতরাং সাহাবীর উক্তি অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের উক্তির মতোই, তা শরয়ী কোন দলীল নয়। কিন্তু উলামার অন্য দলটি বলেন, নিশ্চয় অন্যান্যের তুলনায় সাহাবাগণের অধিক মর্যাদা আছে এবং সাহাবাগণের উক্তি ও আমল পরবর্তীদের উক্তি ও আমল অপেক্ষা সঠিকতার বেশি কাছাকাছি।
• তাছাড়া তৃতীয় অপশন না থাকলেও যেভাবে শরয়ী দলীল হিসাবে ইজমা-কিয়াসকে গ্রহণ করা হয়, সেইভাবে সাহাবীর উক্তি ও আমল শরয়ী দলীল বলে বিবেচিত হবে।
• অবশ্য তাতে কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। যেমন সাহাবীকে ইলম ও ফিকহে সুপরিচিত হতে হবে। নচেৎ এমন বহু বেদুঈন সাহাবী আছেন, যারা ইসলাম গ্রহণের পর মরুবাসে ফিরে গেছেন এবং শরয়ী জ্ঞানের সাথে খুব একটা সম্পর্ক রাখেননি।
• এ ছাড়া যেমন উল্লিখিত হয়েছে, সাহাবীর উক্তি বা আমল সহীহ সনদ দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে।
• আমরা সংক্ষেপে এ ব্যাপারে পাঠককে অবহিত করব, যাতে সালাফী হওয়ার মৌলিক বুনিয়াদ সম্পর্কে অল্প হলেও সতর্ক থাকতে পারেন এবং মতভেদের সময় সঠিকটা বেছে নিতে পারেন। সাহাবীর উক্তি মোটামুটি দুই ভাগে বিভক্তঃ
❐ প্রথম ভাগঃ
এমন উক্তি, যা রায় বা ইজতিহাদ হতে পারে না। শোনা ও বর্ণনা ছাড়া অন্য কিছু নয়। যেমন কোন অদৃশ্য বিষয়ক (গায়বী) খবর অথবা কোন ইতিহাস।
এমন উক্তি মারফু হাদীসের মান পায়। এমন উক্তিকে কিয়াসের উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়, এমন উক্তি দ্বারা কোন বাক্যের ব্যাখ্যা করা যায়। যেহেতু এ ক্ষেত্রে সম্ভাবনা থাকে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ -এর হাদীসের অর্থ নিজের ভাষায় বর্ণনা করছেন। বিশেষ করে কোন ফতোয়া বা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন ঘটতে পারে।
তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হল, যেন উক্ত সাহাবী ইসরাঈলী বর্ণনা গ্রহণে বা বর্ণনে পরিচিত না হন (যেমন সাহাবী কাব আল-আহবার)। (মুযাক্কিরাতু উসূলিল ফিক্হ, শানীত্বী ২৫৬পৃঃ) প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, ইসরাঈলী বর্ণনার ৩ অবস্থা হতে পারেঃ
• একঃ সত্য বলে বিশ্বাস করা ওয়াজেব। কুরআন বা সহীহ সুন্নাহতে যে কথার সত্যায়ন বর্তমান।
• দুইঃ মিথ্যা বলে বিশ্বাস করা ওয়াজেব। কুরআন বা সহীহ সুন্নাহতে যে কথার মিথ্যায়ন বর্তমান। তিন ঃ যা সত্য বলে বিশ্বাস করা যাবে না এবং মিথ্যাও বলা যাবে না।
• তিনঃ কুরআন বা সহীহ সুন্নাহতে যে কথার সত্যায়ন বা মিথ্যায়ন কিছুই বর্তমান নেই। (আওয়াউল বায়ান ৪/২৩৮)
❐ দ্বিতীয় ভাগঃ
সাহাবীর এমন উক্তি বা আমল, যা তার নিজস্ব রায় বা ইজতিহাদ হতে পারে। এমন উক্তি বা আমলের কয়েক অবস্থা হতে পারে।