সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Abu Abdullah

হায়েয প্রতিরোধকারী অথবা আনয়নকারী এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ কিংবা গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার বিধান

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
737
Comments
989
Solutions
19
Reactions
9,676
Credits
5,781
দু‘টি শর্তে হায়েয প্রতিরোধ করে এমন ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয:

১ম শর্ত: ঔষধ ব্যবহারে কোনো রকম ক্ষতির আশঙ্কা না থাকা। যদি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাহলে ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা কুরআনে মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ﴾ [البقرة: ١٩٥]​

‘‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে পতিত করো না।’’ [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৫]

এমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেছেন:

﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا﴾ [النساء: ٢٩]​

‘‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।’’ [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯]

২য় শর্ত: হায়েয বা রক্তস্রাবের সাথে স্বামীর যদি কোনো হক সম্পৃক্ত থাকে তাহলে অবশ্যই তার অনুমতি নিয়েই ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন, স্ত্রী তালাক প্রাপ্তা হওয়ার পর ইদ্দত পালন করে চলছে এবং ইদ্দত পালনকালে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ স্বামীর ওপর ওয়াজিব। এমতাবস্থায় ইদ্দতকাল দীর্ঘ করে ভরণ-পোষণ বেশি পাওয়ার উদ্দেশ্যে যদি স্ত্রী হায়েয প্রতিরোধ করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামী অনুমতি দিলে করতে পারবে, অন্যথায় পারবে না।

এমনিভাবে যখন প্রমাণিত হবে যে, হায়েয রোধ করলে স্ত্রীর গর্ভ ধারণ করা সম্ভব নয় তাহলে তখনও ঔষধ ব্যবহারের জন্যে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে।

উপরোক্ত দু’টি শর্ত মোতাবেক হায়েয প্রতিরোধক ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয। মনে রাখতে হবে, জায়েয হওয়ার পরেও বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে ব্যবহার না করাই উত্তম । কেননা প্রাকৃতিক বিষয়কে তার গতিতে ছেড়ে দেওয়া শারীরিক সুস্থতার পক্ষে খুবই মঙ্গলজনক।

হায়েয আনয়নের জন্য ঔষধের ব্যবহারও দুই শর্তে জায়েয:

১ম শর্ত: কোনো ফরয বা ওয়াজিব কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ঔষধ ব্যবহার না করা। যদি এমনটি হয়ে থাকে অর্থাৎ কোনো ফরয বা ওয়াজিব পালন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য যদি ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে নাজায়েয হবে। যেমন, রমাযান মাস আরম্ভ হওয়ার পূর্বে হায়েয আনয়নের জন্য ঔষধ ব্যবহার করা, যেন সালাত এবং সাওম আদায় করা থেকে বেঁচে যায়, তাহলে তা কখনই জায়েয হবে না।

২য় শর্ত: স্বামীর অনুমতিক্রমে ব্যবহার করতে হবে। কেননা হায়েয এলে স্বামী পূর্ণাঙ্গরূপে স্ত্রী থেকে উপকৃত হতে পারে না বা নিজের কামভাব পূর্ণ করতে পারে না। সুতরাং স্বামীর অনুমতি ছাড়া এমন কিছু ব্যবহার করা স্ত্রীর জন্য জায়েয হবে না যার কারণে স্বামী নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যদি স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তাও হয়ে থাকে তবুও স্বামীর অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করতে পারবে না। কেননা স্বামীর যদি তালাক প্রত্যাহার করার ইচ্ছা থাকে তাহলে স্ত্রী এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করে হায়েয নিয়ে আসলে স্বামীর অধিকার দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।

গর্ভরোধকারী ঔষধের ব্যবহার দুই প্রকার:

১ম প্রকার: ঔষধের ব্যবহার দ্বারা যদি স্থায়ীভাবে গর্ভধারণকে প্রতিরোধ করা হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা গর্ভধারণের প্রক্রিয়াকে চিরতরে বন্ধ করলে বংশবৃদ্ধি ও সন্তানাদি কমে যাবে যা শরী‘আতের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কারণ উম্মতে ইসলামিয়ার সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়াই শরী‘আতের উদ্দেশ্য যা গর্ভধারণ প্রক্রিয়াকে বন্ধ করার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত হবে। এতদ্ব্যতীত উপস্থিত সন্তানাদি মারা না যাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মারা গেলে নারী সন্তানহীন হয়ে থাকার আশঙ্কা থেকে যায়।

২য় প্রকার: সাময়িকভাবে গর্ভরোধ করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করা। যেমন, কোনো নারী খুব বেশি পরিমাণে গর্ভবতী হচ্ছে এবং এর কারণে শারীরিকভাবে ক্ষীণ হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলা দুই বছর অন্তর অন্তর সন্তান নিতে আগ্রহী, তাহলে তার জন্যে সাময়িকভাবে ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয, তবে এ ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে এবং এ ধরনের ঔষধ ব্যবহারে কোনো রকম ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে সাহাবায়ে কেরাম ‘আযল’ পদ্ধতি অবলম্বন করে স্ত্রী সঙ্গমে লিপ্ত হতেন, যাতে করে তাঁদের স্ত্রীগণ গর্ভবতী না হয়। কিন্তু এ পদ্ধতি অবলম্বন থেকে তাদেরকে তখন নিষেধ করা হয় নি।

প্রকাশ থাকে যে, স্ত্রী সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার পর বীর্যস্খলনের সময় ঘনিয়ে আসলে পুরুষাঙ্গ স্ত্রী যোনী থেকে বের করে বাইরে বীর্যপাত করাকে শরী‘আতের পরিভাষায় ‘আযল’ বলা হয়।

গর্ভপাতকারী ঔষধের ব্যবহারও দুই প্রকার:

১ম প্রকার: গর্ভপাতকারী ঔষধ গ্রহণ গর্ভস্থ সন্তানকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যে হওয়া। এমতাবস্থায় এই ঔষধের ব্যবহার যদি গর্ভস্থ বাচ্চার মাঝে প্রাণ সঞ্চারিত হওয়ার পর হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং এতে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা এটা নিষিদ্ধকৃত আত্মাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার শামিল। কুরআন ও হাদীস এবং মুসলিমদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিষিদ্ধকৃত আত্মাকে হত্যা করা হারাম।

আর যদি প্রাণ সঞ্চারিত হওয়ার পূর্বে গর্ভপাতের জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে ওলামায়ে কেরামের মাঝে এর বৈধতার প্রশ্নে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ জায়েয বলেছেন, কেউ কেউ নিষেধ করেছেন, আবার কেউ বলেছেন, গর্ভ ধারণের পর থেকে আরম্ভ করে যতক্ষণ পর্যন্ত গর্ভস্থ বস্তু জমাট রক্তের রূপ না নিবে অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত ৪০ দিন অতিবাহিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত গর্ভপাতের জন্য এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয। ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ আবার এমনও বলেছেন যে, মানুষের আকৃতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার করতে পারবে। তবে খুব বেশি সাবধানতা অবলম্বনের উদ্দেশ্যে গর্ভপাতের জন্য ঔষধের ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই উত্তম। তবে বিশেষ প্রয়োজন ও অপারগতার সম্মুখীন হলে এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করতে পারবে। প্রয়োজনীয়তা বলতে যেমন গর্ভধারণকারীনী এমন অসুস্থ যে গর্ভধারণে অক্ষম ইত্যাদি ইত্যাদি। এমতাবস্থায় গর্ভপাত করা জায়েয। কিন্তু গর্ভ ধারণের পর থেকে যদি এই পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, যে সময়ের মধ্যে গর্ভস্থ বাচ্চার মধ্যে মানুষের আকৃতি প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে ব্যবহার করা হারাম। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বজ্ঞ।

২য় প্রকার: গর্ভপাতের ঔষধ গ্রহণের দ্বারা গর্ভস্থ আত্মাকে ধ্বংস করা উদ্দেশ্য নয় বরং গর্ভের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রসব আসন্ন এমন সময়ে যদি গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে তা জায়েয আছে। তবে শর্ত হচ্ছে এ ধরনের ঔষধ ব্যবহারের ফলে মা ও বাচ্চার যেন ক্ষতি না হয় এবং ঔষধ ব্যবহার করার কারণে যেন অপারেশন বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা দেখা না দেয়।

যদি ঔষধ ব্যবহারের কারণে অপারেশন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তাহলে এর চার অবস্থা, যা নিম্নে বর্ণিত হলো:

১. মা ও গর্ভস্থ বাচ্চা উভয়েই জীবিত। এমতাবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া অস্ত্রোপচার জায়েয নেই, যেমন প্রসব অত্যন্ত কষ্টকর এবং ঝুকিপূর্ণ, তাহলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। মনে রাখতে হবে একজনের শরীর অপরজনের নিকট আমানতস্বরূপ। সুতরাং বৃহত্তর কোনো কল্যাণ সাধনে এমন কোনো হস্তক্ষেপ করবে না যা দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া বর্তমান যুগে অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনের পূর্বে মনে করা হয়ে থাকে যে, কোনো রকম ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, অথচ অপারেশনের পর ক্ষতি প্রকাশ পেয়ে যায়।

২. মা ও গর্ভস্থ বাচ্চা উভয়ই মৃত। এমতাবস্থায় বাচ্চাকে বের করার জন্য অস্ত্রোপচার করা জায়েয নয়। কেননা বের করার মধ্যে কোনো লাভ নেই।

৩. মা জীবিত কিন্তু গর্ভস্থ বাচ্চা মৃত। তাহলে অস্ত্রোপচার করে বের করা জায়েয আছে। তবে মায়ের কোনো প্রকার ক্ষতির যেন আশঙ্কা না থাকে। কেননা বাহ্যিক অবস্থার প্রেক্ষিতে গর্ভস্থ সন্তানকে তো অপারেশন ছাড়া বের করা সম্ভব নয় এবং বাচ্চাকে যদি ভিতরে রেখে দেওয়া হয় তাহলে প্রথমতঃ ভবিষ্যতে পেটে সন্তান ধারণ করা সম্ভব হবে না। দ্বিতীয়তঃ এভাবে রেখে দিলে মায়ের জন্য অত্যন্ত কষ্ট ও যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া অনেক সময় স্ত্রীকে স্বামীহীনা-বিধবা হয়ে থাকতে হয় যখন মহিলা পূর্ব স্বামীর ইদ্দতের অবস্থায় থাকে। এসব কারণে অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভস্থ মৃত বাচ্চাকে বের করা জায়েয আছে।

৪. মা মৃত এবং গর্ভস্থ বাচ্চা জীবিত। এমতাবস্থায় গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানোর সম্ভাবনা যদি না থাকে তাহলে অপারেশন করা জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যদি গর্ভস্থ সন্তানটি বাঁচবে এমন আশা থাকে, সেই অবস্থায় কিছু অংশ যদি বের হয়ে থাকে তাহলে মৃত মার পেট কেটে বাচ্চার বাকী অংশ বের করতে পারবে। আর যদি বাচ্চার কিছুই বের না হয় তাহলে এক্ষেত্রে আমাদের ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, গর্ভস্থ শিশুকে বের করার জন্য মায়ের পেট কাটবে না। কেননা এটা নাক-কান কেটে বিকৃত করার অন্তর্ভুক্ত। তবে সার্বিক সমাধান হচ্ছে এই যে, অপারেশন ছাড়া যদি বের করা সম্ভব না হয় তাহলে অপারেশন করতে পারবে। এ সমাধানটি ইবন হুবাইরা গ্রহণ করেছেন। তিনি ‘ইনসাফ’ গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৫৫৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, এক্ষেত্রে পেট কেটে বাচ্চা বের করাই উত্তম।

বর্তমান কালে এ অবস্থায় অস্ত্রোপচার করা ‘মুসলা’ অর্থাৎ নাক-কান কেটে শাস্তি দেওয়া হিসেবে পরিগণিত হবে না। কারণ, প্রথমতঃ পেট কেটে পরে আবার সেলাই করে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়তঃ একটা জীবিত সন্তানের ইজ্জত একজন মৃত ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশি। তৃতীয়তঃ একটা নিষ্পাপ শিশুকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা ওয়াজিব। সুতরাং যেহেতু গর্ভস্থ বাচ্চা জীবিত এবং নিষ্পাপ মানুষ সেহেতু অপারেশনের মাধ্যমে তাকে বের করা ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বজ্ঞ।

সতর্কীকরণ:

উল্লিখিত যে সকল অবস্থায় গর্ভপাত করা জায়েয সে সকল অবস্থায় গর্ভপাত করতে চাইলে অবশ্যই গর্ভের মালিক তথা স্বামীর অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।


নারীর প্রাকৃতিক রক্তস্রাব
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদ: মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​
 
COMMENTS ARE BELOW
Top