প্রবন্ধ হায়েযের বিধি-বিধান

Joined
Jan 12, 2023
Threads
817
Comments
1,064
Solutions
19
Reactions
11,536
হায়েযের বিশটিরও অধিক হুকুম রয়েছে, তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজনীয়গুলো এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।

১. সালাত: ঋতুবতী মহিলার জন্য ফরয হোক কিংবা নফল, সকল প্রকার সালাত পড়া নিষিদ্ধ। যদি পড়া হয় তাহলে সে সালাত শুদ্ধ হবে না। এমনিভাবে ঋতুবতী মহিলার জন্য সালাত ফরযও নয়। তবে পবিত্র হওয়ার পর অথবা ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পূর্বে কোনো ওয়াক্তের পূর্ণ এক রাকাত পড়তে পারে এতটুকু সময় যদি পেয়ে যায় তাহলে উক্ত ওয়াক্তের সালাত কাযা করা ফরয। এক্ষেত্রে সে সময়টুকু ওয়াক্তের প্রথম দিক হোক অথবা শেষ দিক, এতে কোনো পার্থক্য নেই।

ওয়াক্তের প্রথম দিকে এক রাকাত পরিমাণ সময় পাওয়ার দৃষ্টান্ত: একজন নারী সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর এক রাকাত পড়তে পারে এতটুকু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ঋতুবতী হলো, তাহলে হায়েয বন্ধ হওয়ার পর মাগরিবের এ সালাতটি কাযা করা তার ওপর ফরয। কেননা সে ঋতুবতী হওয়ার পূর্বে মাগরিবের ওয়াক্ত থেকে এক রাকাত সমপরিমাণ সময় পেয়েছে।

ওয়াক্তের শেষ দিকে এক রাকাত সময় পাওয়ার দৃষ্টান্ত: একজন নারী সূর্যোদয়ের পূর্বে ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়েছে এবং তখনও ফজরের এক রাকাত আদায় করতে পারে এতটুকু সময় বাকী রয়েছে তাহলে পবিত্র হওয়ার পর সেই ফজরের সালাত কাযা করা তার ওপর ফরয। কেননা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর সে ফজরের ওয়াক্ত থেকে এক রাকাতের সমপরিমাণ সময় পেয়েছে।

পক্ষান্তরে ঋতুবতী মহিলা যদি সালাতের ওয়াক্ত থেকে এতটুকু সময় না পায় যার মধ্যে এক রাকাত সালাত পড়া যেতে পারে, যেমন প্রথম দৃষ্টান্তে সূর্যাস্তের পর এক মিনিটের মধ্যেই মহিলা ঋতুবতী হয়ে গেল অথবা ২য় দৃষ্টান্তে সূর্যোদয়ের পূর্বে মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই ঋতু থেকে পবিত্র হলো, তাহলে উক্ত মহিলার ওপর সেই ওয়াক্তের সালাত কাযা করা ওয়াজিব হবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»مَنْ أدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلاَةِ فَقَدْ أدْرَكَ الصَّلاَةَ»​

“যে ব্যক্তি সালাতের এক রাকাত পেয়েছে সে পুরো সালাতই পেয়েছে বলে মনে করতে হবে।”[1] এর মাফহূম তথা বুঝ হলো, যদি কোনো ব্যক্তি সালাতের এক রাকাতের চেয়েও কম অংশ পায় তাহলে পুরো সালাত পেয়েছে বলে মনে করা যাবে না।

কিন্তু কোনো ঋতুবতী মহিলা যদি আসরের সময় থেকে এক রাকাতের সমপরিমাণ সময় পেয়ে যায় তাহলে তার ওপর আসরের সাথে যোহরের সালাতেরও কি কাযা করা ফরয? এমনিভাবে এশার ওয়াক্ত থেকে এক রাকাত পড়তে পারে এতটুকু সময় যদি পেয়ে যায় তাহলে তার জন্য কি এশার সালাতের সাথে মাগরিবের সালাতেরও কাযা করা জরুরী? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে শুধুমাত্র যে ওয়াক্তের এক রাকাত পরিমাণ সময় পাওয়া যাবে সে ওয়াক্তেরই সালাতের কাযা করা ফরয। আর তা হচ্ছে শুধু আসর এবং এশা, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাকাত সালাত পেয়েছে সে আসরের সালাতকে পেয়েছে।”[2]

এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেননি যে, সে যোহর এবং আসর পেয়েছে। একথাও উল্লেখ করেন নি যে, তার ওপর যোহরের সালাতের কাযা ফরয। আর শরী‘আতের মূলনীতি হচ্ছে দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়া (যতক্ষণ না দায়িত্বে বর্তানোর দলীল পাওয়া যাবে)। এটা ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালেক রাহিমাহুমাল্লাহর মাযহাব।[3]

ঋতুবতী মহিলার যিকর করা, তাকবীর বলা, তাসবীহ পাঠ করা, আল্লাহর প্রশংসা করা, খাওয়া-দাওয়াসহ যে কোনো কাজে বিসমিল্লাহ বলা, হাদীস পাঠ করা, দো‘আ করা, দো‘আয় আমীন বলা এবং কুরআন শরীফ শ্রবণ করা ইত্যাদি কোনোটাই হারাম নয়। কেননা সহীহ বুখারী ও মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত আছে,

«أنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَّكِئُ فِيْ حِجْرِ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا وَهِيَ حَائِضٌ فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ».​

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার রক্তস্রাব চলাকালীন তার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন।”

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, “স্বাধীন নারী, পর্দানশীন ও ঋতুবতী মহিলারা দুই ঈদের সালাতের জন্য ঈদগাহে যেতে পারবে এবং তারা ধর্মীয় আলোচনা ও মুমিনগণের দো‘আয় উপস্থিত হতে পারবে। তবে ঋতুবতী নারীরা সালাতের স্থান থেকে দূরে থাকবে।”

নারীর প্রাকৃতিক রক্তস্রাব
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদ: মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​

[1] সহীহ বুখারী ও মুসলিম।
[2] সহীহ বুখারী ও মুসলিম।
[3] শারহুল মুহায্যাব: ৩/৭০।
 
Back
Top