হায়েযের মাধ্যমে তালাকের ইদ্দত গণনা করা

Joined
Jan 12, 2023
Threads
808
Comments
1,054
Solutions
19
Reactions
11,156
কোনো পুরুষ যদি স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করার পর অথবা নির্জন স্থানে একত্রিত হওয়ার পর তালাক দেয় তাহলে পূর্ণ তিন হায়েযের মাধ্যমে ইদ্দতকাল গণনা করা তালাকপ্রাপ্তা নারীর ওপর ফরয। তবে শর্ত হচ্ছে উক্ত স্ত্রীকে ঋতুবতী মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে এবং অন্তঃসত্ত্বা হবে না। প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার ঘোষণা:

﴿ٱلۡمُطَلَّقَٰتُ يَتَرَبَّصۡنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَٰثَةَ قُرُوٓءٖ﴾ [البقرة: ٢٢٨]​

‘‘তালাকপ্রাপ্তা নারী তিন হায়েয পর্যন্ত নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে।’’ [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২৮]

আর যদি তালাকপ্রাপ্তা নারী অন্তঃসত্ত্বা হয় তাহলে তার ইদ্দতকাল হবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

﴿وَأُوْلَٰتُ ٱلۡأَحۡمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّ﴾ [الطلاق: ٤]​

‘‘গর্ভবতী নারীদের ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত।’’ [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ৪]

আর যদি তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ঋতুবতী নারীদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে থাকে, যেমন কম বয়স্কা, যার রক্তস্রাব এখনো আরম্ভ হয়নি বা অতিবয়স্কা নারী যার বয়োঃবৃদ্ধির কারণে হায়েয আসার সম্ভাবনা নেই অথবা অস্ত্রোপচার জনিত কারণে গর্ভাশয় নষ্ট হওয়ায় হায়েয আসছে না -ইত্যাদি কারণে যে সকল মহিলার রক্তস্রাবের সম্ভাবনা নেই তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ তিন মাস। প্রমাণ হচ্ছে পবিত্র কুরআনের বাণী:

﴿وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ﴾ [الطلاق:4]​

‘‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবতী হওয়ার আশা নেই তাদেরকে নিয়ে সন্দেহ হলে (হায়েয দ্বারা ইদ্দত গণনা সম্ভব না হলে) তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস। এমনিভাবে যারা এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি তাদের ইদ্দতকালও অনুরূপ হবে।’’ [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ৪]

ঋতুবতী নারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্বেও যে সমস্ত মহিলার নির্দিষ্ট কোনো কারণে যেমন অসুস্থতা বা দুগ্ধ পান করানোর ফলে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত হায়েয আসে না তারা ইদ্দতের মধ্যেই পড়ে থাকবে। যদিও ইদ্দতকাল দীর্ঘ হয়ে যায়। অতঃপর যখন রক্তস্রাব আরম্ভ হবে তখন ইদ্দত গণনা শুরু করবে। আর যদি নির্দিষ্ট কারণটি শেষ হওয়ার পরেও রক্তস্রাব না আসে যেমন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেছে অথবা দুধ পান করানো শেষ হয়ে গিয়েছে অথচ হায়েয বন্ধই রয়েছে তাহলে কারণটি শেষ হওয়ার পর থেকে পূর্ণ এক বছর ইদ্দত পালন করবে এবং এটাই বিশুদ্ধ অভিমত, যা শরী‘আতের বিধান অনুসারে কার্যকরী হয়ে থাকে। কেননা নির্দিষ্ট কারণ শেষ হওয়ার পরেও হায়েয না আসা বিনা কারণে হায়েয বন্ধ থাকার মতই। আর কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া হায়েয বন্ধ থাকলে পূর্ণ এক বছর ইদ্দত পালন করতে হয়। তন্মধ্যে ৯ মাস গর্ভের কারণে সতর্কতাবশতঃ, আর তিন মাস ইদ্দতের কারণে।

যদি বিবাহের পর স্পর্শ করার অথবা স্বামী-স্ত্রী কোনো নির্জন স্থানে একাকীভাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বেই তালাক দেওয়া হয় তাহলে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে আদৌ ইদ্দত পালন করতে হবে না, না হায়েযের মাধ্যমে না অন্য কোনো পন্থায়। কারণ, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মুমিন বান্দাদেরকে সম্মোধন করে বলেন,

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا ﴾ [الأحزاب : 49]​

‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা মু‘মিনা নারীদেরকে বিয়ে করার পর এবং স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিলে তোমাদের জন্যে তাদের পালনীয় কোনো ইদ্দত নেই যা তোমরা গণনা করবে।’’ [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪৯]



নারীর প্রাকৃতিক রক্তস্রাব
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদ: মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​
 
Back
Top