সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Yiakub Abul Kalam

শাসক সিরিজ - ০১ (অধুনা আইন দিয়ে বিচার করা কি ইসলাম থেকে বের করে দেবে?)

অধুনা আইন দিয়ে বিচার করা কি ইসলাম থেকে বের করে দেবে?

উপস্থাপকঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ "আর যারা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না, তারাই তো কাফের। ...তারা জালেম। ...তারা ফাসেক।" -[সূরা মায়েদা, ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নং আয়াত]

উপরোক্ত আয়াত গুলোর প্রেক্ষিতে কিছু আলেম বলেন, অধুনা আইন দিয়ে বিচার করা ইসলাম থেকে বের করে দেবে। আবার কতিপয় আলেম বলেন, এটা ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। তবে এটা তো জানা কথা যে, আল্লাহ যাদের রহম করেছেন তারা ছাড়া এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশই এই আইন দিয়ে পরিচালিত হয়।

তো এখন প্রশ্ন হলো: তারা এর কারণে ইসলাম থেকে বের হবে -আল্লাহ রক্ষা করুন- নাকি হবে না?

শায়খঃ তুমি যে আয়াত গুলোর দিকে ইঙ্গিত করলে, তন্মধ্যে প্রথমোক্ত আয়াতের ব্যাপারে ইমামুল মুফাসসিরীন তবারী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন যে, যদি সে এগুলোকে হালাল জ্ঞান করে, তবেই তার বিষয়টা কাফেরদের মতো হবে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই হালাল মনে করা দুইভাবে হয়:
১) মনে মনে (অর্থাৎ বিশ্বাসগতভাবে) হালাল মনে করা এবং
২) আমল তথা বাস্তবে করার মাধ্যমে হালাল মনে করা।
একমাত্র বিশ্বাসগতভাবে হালাল মনে করাটাই ইসলাম থেকে বের করে দেবে।

পক্ষান্তরে, আমলগত হালাল করার ভিতরে (প্রায়) সব মুসলিমই নিমজ্জিত। চুরি করা, যিনা করা, ধোঁকা দেওয়া ইত্যাদি পাপগুলোর কর্তারা কিন্তু আমলগতভাবে তা হালাল করে ফেলে!! (এই দৃষ্টিকোণ থেকে) তারা এবং আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচারক- সবাই, সব্বাই অপরাধী। কিন্তু সব অপরাধই তো আর সমান নয়।

যে ব্যক্তি সুদ খায় -আর আপনারা তো সবাই জানেন যে, সুদ একটা কাবীরাহ গুনাহ- সে যদি এটাকে অন্তর থেকে হালাল মনে করে, তবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। কিন্তু এটাকে গুনাহের কাজ স্বীকৃতি দেওয়ার পর করলে সে হবে ফাসেক, আর তার বিষয়টা আল্লাহর উপর। সে আয়াতের ব্যাপকতার মাঝে অন্তর্ভুক্ত, যেটাতে বলা হয়েছে: "নিশ্চয়ই আল্লাহ শিরকের গুনাহ ব্যতীত অন্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করেন।" -[সূরা নিসা, ৪৮]

অনুরূপভাবে, যারা আল্লাহর হুকুম বাদে অন্য হুকুম দিয়ে বিচার করে, হোক সেটা একটিমাত্র বিধান -সব বিধান হওয়া জরুরি নয়-, সে যদি তার চালু করা এই বিধানকেই ইসলামের বিধানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও যুগোপযোগী মনে করে, তবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। সব বিধানেই এমনটি হওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং একটি বিধানই যথেষ্ট। তাহলে যে তার চালু করা সব বিধানকেই শ্রেষ্ঠ মনে করে, তার কি হতে পারে?! সে যদি এগুলোকে অন্তর থেকেই হালাল জ্ঞান করে, তবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে।

কিন্তু তার সাথে পর্যালোচনা ও প্রশ্নোত্তরে বলা হয় যে, আপনি শরীয়ত বিরোধী এগুলো করছেন কেন? (তখন সে যদি উত্তরে বলে,) আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, ইনশাআল্লাহ আমরা আল্লাহর বিধান দিয়েই বিচার ফয়সালা করতে সক্ষম হব; তাহলে এটা তাকে মিল্লাত থেকে বের করে দেবে না, বরং এটা হবে আমলগত কুফরী।

আমরা শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহর কিতাবাদি থেকে কুফরীর যে দুটি বরং চারটি প্রকরণ -যদিও ফলাফলের দিক থেকে দুই প্রকারই যথেষ্ট- থেকে যা বুঝতে পারি, তা হলো: ১) আমলগত কুফরী, ২) বিশ্বাসগত কুফরী, ৩) শাব্দিক কুফরী এবং ৪) অন্তরের কুফরী।

শাব্দিক কুফরী ইসলাম থেকে বের করে দেয় না, বরং অন্তরের কুফরীই একমাত্র ইসলাম থেকে বের করে দিতে পারে। একইভাবে আমলগত কুফরী কাউকে ইসলাম থেকে খারিজ করে না, কেবলমাত্র বিশ্বাসগত কুফরী কাউকে ইসলাম থেকে বের করে দিতে পারে।

সুতরাং যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, ইসলামের কোনো একটি বিধান এই যুগের জন্য উপযোগী নয়, সে কাফের, মুরতাদ। পক্ষান্তরে কেউ যদি মনে করে যে ইসলামের বিধান বাস্তবায়ন করতে হয়, কিন্তু (এটা মনে করেও) পালন করে না; তার অবস্থা ঐসব ফাসেকদের মতোই যারা যিনা করে, সুদ খায় প্রভৃতি গুনাহ করে।

(আশা করি) এতটুকুই যথেষ্ট। ওয়াল-হামদুলিল্লাহি রব্বিল 'আলামীন।"


ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী রহিমাহুল্লাহ।
সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর।

গৃহীত,
জামি'উ তুরাসিল আলবানী ফীল আকীদাতি ওয়াল মানহাজ, ২/২৩৩-২৩৫।
 
Top