শাসক সিরিজ - ৪ (কুফরে বাওয়াহ দ্বারা উদ্দেশ্য কি?)

  • Thread starter Thread starter Yiakub Abul Kalam
  • Start date Start date
  • Thread Author
কুফরে বাওয়াহ দ্বারা উদ্দেশ্য কি?

উপস্থাপকঃ
উবাদা বিন সামিত রাযিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে এসেছে যে, "রাসূল ﷺ আমাদেরকে ডাকলে আমরা তার হাতে বাইয়াত নিলাম এই মর্মে যে, পছন্দ-অপছন্দ সহজ-কঠিন, এমনকি আমাদের উপর (অন্যকে) প্রাধান্য দিলেও সব বিষয়েই আমরা (শাসকের কথা) শুনব এবং মানব। আমরা যেন এটা নিয়ে তাদের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত না হই; তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে (সুস্পষ্ট) প্রমাণ সাপেক্ষে কোনো স্পষ্ট কুফর দেখলে ভিন্ন কথা।"
এখন প্রশ্ন হলো, এই স্পষ্ট কুফর তথা কুফরে বাওয়াহ কি?

শায়খঃ এখানে কুফরে বাওয়াহ দ্বারা উদ্দেশ্য স্পষ্ট কুফর, যেটার দলীলের ব্যাপারে ব্যক্তি নিজেই স্যাটিসফাইড হতে পারে না (ভালোমতো বুঝতে পারলে), অন্যকে স্যাটিসফাইড করা দূরের কথা। তো এখানে হুজ্জাহ তথা দলীল মানে একদম সুস্পষ্ট অকাট্য দলীল; অর্থাৎ আমরা যেটাকে কুফর বলছি, সেটার বিষয়ে স্পষ্ট দলীল লাগবে। কিন্তু যদি সে এমন দলীল নিয়ে আসে যেটাতে সে স্যাটিসফাইড (সঠিক না হলেও), তাহলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না, কারণ সে আমাদের জ্ঞাত ও জানা বিষয়ের বিপরীত বুঝ বুঝেছে।

এভাবেই আমরা (আব্বাসী খলীফা) মামুনের সময়ের ফিতনার সমাধান দেব, যখন সে "কুরআন সৃষ্ট" বলে পুরো মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে চলে যায়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তারা খুরূজ করেননি। সেই সময়ে স্বনামধন্য ইমাম, ফকীহ, মুহাদ্দিস সহ মুসলিম বিশ্বের কাউকেই তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে দেখা যায় নি; অথচ নিঃসন্দেহে তারা এই বিষয়ে (ইলম ও বাহুতে) আমাদের চেয়েও শক্তিশালী ছিলেন। এর কারণ হলো, তারা যে মতামত পোষণ করতেন তা হচ্ছে: শাসকদের মাঝে স্পষ্ট কুফরী তথা কুফরে বাওয়াহ দেখা না গেলে মুসলিমদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েয নয়। তারা (মামুনের এই কথার মাঝে) কুফরে বাওয়াহ দেখতে পাননি।

কুফরে বাওয়াহ আমরা এভাবে বুঝতে পারি, -যেমনটি কোনো একজন আলেম কোনো এক প্রেক্ষিতে বলেছিলেন- দ্বীনের যে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে জানা যায়, অর্থাৎ যে হুকুমের বিষয়ে জনসাধারণ ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, জাহেল ও আলেম সবাই জানে। যেমন, কোনো শাসক যদি কোনো অকাট্য হারাম বস্তুকে (শরয়ীভাবে) বৈধতার ঘোষণা দেয়, তাহলে তার বাইয়াত তখনই শেষ; কারণ সে স্পষ্ট কুফরী তথা কুফরে বাওয়াহ করেছে।

খলকে কুরআন তথা কুরআন সৃষ্ট এই বিষয়টি নিঃসন্দেহে ভুল, কিন্তু এর (মানে কুফরী হওয়ার) দলীল কৈ? ইতোপূর্বের সাহাবায়ে কেরাম কেউই এ বিষয়ে কিছু বলেননি। কিন্তু যখন মুতাযিলারা এই ভ্রান্ত বিকৃত আকীদার আবিষ্কার করল, তখন সুন্নাহর আলেমগণ বিশেষ করে হাদীসবেত্তাগণ এই মতবাদ খন্ডনে এর বিপরীত বিষয়টি নিয়ে আসলেন। তারা বললেন, কালাম তথা বাণী এটা আল্লাহর সিফাত, আর সিফাত তথা গুণ তো সৃষ্ট হতে পারে না। এটা ইলমুল কালামের ভাষার কাছাকাছি। অন্য কথায় -সমঝদারদের জন্য- দর্শনের সাথে মিলিয়ে বলা যায়, এটি (কালাম) একটি সিফাত তথা গুণ, আর গুণ তো স্বত্তারই অনুসারী; স্বত্বা অনাদি, সিফাতও অনাদি। সুতরাং বুঝা গেল যে, কালাম সৃষ্ট নয়, কেননা এটি স্রষ্টার সিফাত তথা গুণ।... এগুলো সবগুলোই ইজতেহাদী নির্ণয়; তবে বিষয়টি এমন নয় যে, ইজতেহাদের সবই বাতিল বা সবই ঠিক। বরং যেটাতে সরাসরি ভাষা আছে, আর যেটা ইজতেহাদের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়- দুটোর মাঝে পার্থক্য রয়েছে।

(অন্য আরেকটি ক্যাসেট থেকে নিচেরগুলো নেওয়া হয়েছে)

শায়খঃ এজন্যই আমরা (আব্বাসী খলীফা) মাহদীর সময়ের আলেমদের দেখতে পাই যে, তারা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মাধ্যমে মোকাবেলা করেননি। এটা সত্য যে, সে একটা নিকৃষ্ট কাজ করেছে, কিন্তু কুফরে বাওয়াহ তো আর করেনি। এজন্যই তারা শাস্তি, হত্যা, মৃত্যুদন্ড, জেলে গেলেও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি।

কুফরে বাওয়াহ বিষয়ে উপরোক্ত উদাহরণসহ আলোচনার পর এখন প্রশ্ন হলো: এই যুগে বাইয়াত না থাকা সত্ত্বেও এই হাদীস বুঝার ফায়েদা কি? আমার তো দৃঢ় বিশ্বাস যে, যারা এই ধরনের প্রশ্ন উস্কে দিচ্ছে, তারা আধুনিক খারেজী। যারা জামা'আতুত তাকফীর ওয়াল হিজরাহ (মিশরীয় জঙ্গি সংগঠন) নামক গোষ্ঠির চিন্তা লালন করে। তারা বলতে চায় যে, বর্তমানে আমরা বেশিরভাগ মুসলিম শাসকদের মাঝেই কুফরে বাওয়াহ দেখতে পাই। অতএব তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হবে।

আমরা তাদের প্রত্যুত্তরে বলব: মূলত তোমরা তো বাইয়াতই করনি। তারা যতটা চিত্রায়িত করে, তার চেয়েও সহজ বিষয়টি; কিন্তু তাদের ধারণাতীত খতরনাক। অর্থাৎ এক দিক থেকে ঠুনকো, অন্য দিক থেকে বিপজ্জনক। মূলত এখন কোনো বাইয়াত নেওয়া ইমাম নেই যার বাইয়াত ভঙ্গ করব কুফরে বাওয়াহ দেখে!... একটিও নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তারা সবাই নিশ্চিন্তেই আছে। আমাদের একজন ইমাম থাকবে তার হাতে বাইয়াত করব, কুফরে বাওয়াহ পাওয়া পর্যন্ত তার জুলুম ও বাড়াবাড়ি সহ্য করব। তাহলে মূলত এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত যে, আমাদের হাতে বাইয়াত নেই।

কিন্তু ভয়ানক বিষয়টি হলো: এই অধুনা যুগেও কি কুফরে বাওয়াহ দেখলে আমরা খুরূজ করতে পারব?
আমরা বাইয়াত নেওয়ার পরেও কুফরে বাওয়াহ দেখলে তার আনুগত্য ছাড়তে ও বিদ্রোহ করার অনুমোদন পাইনা, আর সেখানে কি বাইয়াত না নিয়েই তারা আমাদের বিদ্রোহ করতে দেবে? কথা কি বুঝা গেল?

কিন্তু এখন কি আমাদের দ্বীন আমাদেরকে এই অনুমতি দেয় যে, আমরা এই শাসক বা ঐ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারব? আশা করি তোমরা সবাই উত্তর পেয়ে গেছ। কারণ, এই বিদ্রোহের পরিণতি আমরা এখন যেভাবে জীবনযাপন করছি তার চেয়েও খারাপ হবে।

উপস্থাপকঃ...(অস্পষ্ট)

শায়খঃ কি বললে?

উপস্থাপকঃ বিদ্রোহের পরিণতি?!!

শায়খঃ হ্যা, বিদ্রোহের পরিণতি। যেমনটি আমি কিছুক্ষণ পূর্বে বললাম, যেসব ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করলাম এই সবগুলোই ঘটেছে দুঃখজনক ভাবে ফিকহী অননুমোদিত এই বিদ্রোহের কারণে।

ঐ জামা'আতুত তাকফীর ওয়াল হিজরাহ ইসলামের কিছু জেনেই সেটা নিয়ে উত্তেজনা (সোজা বাংলায়: লম্ফঝম্ফ) দেখিয়ে তাদের বিকৃত বুঝকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছিল। এর ফলাফল ছিল, তারা ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন জটিলতম (শাব্দিক অর্থে: বোবা, বধির, অন্ধ) ফিতনার সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশে তারা (এই ধরনের চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে) দাওয়াতকে কয়েক দশক পিছিয়ে দিয়েছে।"


ইমাম আলবানী রহিমাহুল্লাহ।
সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর।

গৃহীত:
জামি'উ তুরাসিল আলবানী ফীল আকীদাতি ওয়াল মানহাজ, ২/২৪২-২৪৫।

আল্লাহ আমাদের এই বাংলাদেশকে হেফাজত করুন, দ্বীনের পথে চলার তাওফীক দিন শাসক শাসিত সবাইকে। হেদায়েতের পথে অচল থাকুন।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top