অন্যান্য সুর দিয়ে বক্তব্য দেওয়া: জায়েজ না কি হারাম?

Joined
Feb 8, 2023
Threads
14
Comments
15
Reactions
152
ভূমিকা: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমরা তাঁর প্রশংসা করি, সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি, এবং তাঁর কাছে তাওবা করি। সুর দিয়ে বক্তৃতা দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েজ নাকি নিষিদ্ধ, এ বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজনীয়। কেননা, সুর দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে বিভিন্ন মৌলিক বিষয়, যেমন উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও প্রভাবের ওপর। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সুরের ব্যবহার জায়েজ হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।

এই আলোচনায় সুর দিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার ব্যাপারে দুটি ক্ষেত্র ব্যাখ্যা করা হবে:

১. কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে সুরের ব্যবহার:​


কুরআন তিলাওয়াতের সময় সুন্দর কণ্ঠে তাজবীদ ও সুরের ব্যবহার অত্যন্ত পছন্দনীয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
"وَرَتِّلِ ٱلۡقُرۡءَانَ تَرۡتِيلًا" (সূরা মুযজাম্মিল, ৭৩: ৪)
"তুমি কুরআনকে সুস্পষ্ট ও সুন্দরভাবে তিলাওয়াত কর।"

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“তোমরা কুরআনকে সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াত কর, কারণ সুন্দর কণ্ঠ কুরআনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।” (মুস্তাদরাক হাকেম, হা/২১২৫)

এছাড়া, সুরেলা কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করাও ইবাদতের অংশ হিসেবে বিবেচিত। শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী বলেছেন, "সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।" (ফাতহুল বারী)

তবে, সুরের নামে কুরআন তিলাওয়াত করার মধ্যে যদি কোনো বাড়াবাড়ি করা হয় বা গানের সুরে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তবে তা নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“কুরআনকে গানের সুরে তিলাওয়াত করার সময়, সে জাতির প্রতি আল্লাহ তাআলার অভিশাপ বর্ষিত হয়।” (মুসনাদে আহমাদ)

২. ওয়াজ, খুতবা বা বক্তৃতায় সুরের ব্যবহার:​

এখন আলোচনা করা হবে, যদি বক্তৃতা, ওয়াজ, খুতবা বা অন্যান্য ধর্মীয় আলোচনায় সুর ব্যবহার করা হয়, তা কতটুকু জায়েজ। ইসলামে ওয়াজ বা খুতবায় সুরের ব্যবহার যতটুকু শরীয়ত সম্মত, তা হলো আল্লাহর বাণী বা ইসলামের মূল বিষয়গুলো শ্রোতাদের কাছে সুন্দরভাবে পৌঁছানো।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার খুতবায় কখনো সুরে কথা বলতেন না; বরং তাঁর ভাষণ ছিলো শক্তিশালী, কিন্তু তা অতি নাটকীয় বা সুরেলা ছিল না। একদা আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, "রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাধারণত স্পষ্টভাবে ও ধীরগতিতে কথা বলতেন, যাতে কেউ যেন সঠিকভাবে তা শুনতে ও বুঝতে পারে।" (সহীহ বুখারী, হা/২০৭৩)

অতএব, খুতবা বা বক্তৃতায় সুর দিয়ে কথা বলা সুন্নাহ পরিপন্থী। বিশেষ করে, যদি বক্তৃতা গানের সুরে বা কবিতার মতো হয়ে যায়, তবে তা শরীয়তের বিরুদ্ধে হতে পারে, কারণ এতে রিয়া বা লোকসভার প্রভাব থাকতে পারে এবং তা শ্রোতাদের সঠিক শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের পরিবর্তে শখ বা আকর্ষণের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

৩. ইমামদের ফাতওয়া:​

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত ইমামরা, যেমন ইমাম বাগাবী, শাইখ আলী মাহফুজ, ইমাম ইবনুল জাওযি, এবং শাইখ মুহাম্মাদ রশিদ রেজা, সুর দিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার ব্যাপারে নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, সুর দিয়ে বক্তব্য দেওয়া নব আবিষ্কৃত বিদআত এবং এটি হারাম হতে পারে, কারণ এতে প্রভাব ফেলে বক্তৃতার মূল উদ্দেশ্যটি হারিয়ে যেতে পারে এবং শ্রোতাদের সঠিক শিক্ষা এবং উপদেশ দেওয়া ব্যাহত হতে পারে।

উপসংহার:​

সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করা প্রশংসনীয়, তবে গানের সুরে কুরআন তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ। অন্যদিকে, ওয়াজ বা খুতবায় সুরের ব্যবহার সুন্নাহ পরিপন্থী এবং এটি শিরক বা বিদআতের দিকে ঠেলে দিতে পারে। সুতরাং, বক্তৃতা বা খুতবায় সুর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি বা গানের সুর থেকে বিরত থাকা উচিত।


অতএব, সুর দিয়ে বক্তব্য দেওয়া ইসলামি দৃষ্টিকোণে সীমিত এবং নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে থাকা উচিত, যাতে উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুতি না ঘটে।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top