- Author
- মুফতী মাওলানা আব্দুর রউফ
সকল প্রশংসা সেই মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি সকল কিছুর স্রষ্টা, অতঃপর তাঁর প্রেরিত রসূলের প্রতি অসংখ্য দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক।
কিছুলোক প্রশ্ন করে থাকেন “ইমাম আবূ হানীফার বর্ণিত হাদীস ও তার মাযহাব আপনারা গ্রহণ করেন না বরং তার পরিবর্তে সিহাহ সিত্তার হাদীস মেনে চলেন, অথচ সিহাহ সিত্তা সংকলিত হয়েছে ইমাম আবূ হানীফার বহু পরে।
ইমাম আবূ হানীফার বর্ণনা ১২০ হিজরী হতে ১৫০ হিজরীর মধ্যে আর সিহাহ সিত্তার সংকলন হল ২৫৬ হতে ৩০৩ হিজরীর মধ্যে। সিহাহ সিত্তার সংকলন ও ইমাম আবূ হানীফার মধ্যে ব্যবধান হল (২৫৬-১৫০)= ১০৬ হতে (৩০৩-১৫০) = ১৫৩ বৎসর।
বিষয়টি বুঝবার জন্য প্রথমে একটি কথা বলে রাখি, তাহলো আমরা কেবল সিহাহ সিত্তার হাদীসই মেনে চলি, অন্য কোন সংকলনের হাদীস মেনে চলিনা, কথাটি সত্য নয়। আমরা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত সকল হাদীস মেনে চলার চেষ্টা করি। তবে বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে মানের দিক হতে সকল সহীহ হাদীসকে সমান মনে করি না। তাই অধিকতর বিশুদ্ধ হাদীসের তুলনায় তার চাইতে কম বিশুদ্ধ হাদীস গ্রহণ করি না। যেমন খেজুর বা আখের গুড় এবং চিনি। গুড়ও মিষ্টি এবং চিনিও মিষ্টি। ধরুন, কোন বাজারে উভয়টার মূল্য সমান। এক্ষেত্রে কেউ সমান মূল্য দিয়ে গুড় কিনলেন, কেউ চিনি কিনলেন।
এক্ষেত্রে আমরা গুড়ের পরিবর্তে চিনিকে গ্রহণ করলাম। এটাই হল পার্থক্য। মানের তারতম্য হিসেবে গ্রহণ ও বর্জনের পার্থক্য উসূলে হাদীসে বহু পুরাতন বিষয়। উসূলে হাদীসের কোন কিতাব মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে- (পাঠ করুন মাদরাসার পাঠ্য মুকাদ্দামা মিশকাত)। এবার পূর্বের কথায় ফিরে যাই। হাদীস গ্রহণের জন্য বর্ণনাকারীগণের বিশুদ্ধতা অপরিহার্য। অর্থাৎ বর্ণনাকারীগণ সকলে বিশুদ্ধ হলে হাদীস বিশুদ্ধ হয়। ইমাম আবূ হানীফা তাবি তাবিঈ । তাই তাঁর মধ্যে ও সাহাবাদের মধ্যে একজন বর্ণনাকারী তাবিঈ অবশ্যই থাকবেন।
ঐ তাবিঈ যদি বিশুদ্ধ হয় তাহলে হাদীস আবূ হানীফা পর্যন্ত সহীহ হবে, তেমন আবূ হানীফার বর্ণিত হাদীস যাদের মাধ্যমে পরবর্তী লোকেরা পাবেন সেই সূত্রগুলোও ধারাবাহিক ও বিশুদ্ধ হলে তার হাদীস বিশুদ্ধ হবে। তাবিঈদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য যেমন ছিল, বিশ্বাস করা হয়নি এমনও ছিল। দুঃখের বিষয় ইমাম আবূ হানীফা যদি কোন হাদীসের কিতাব সংকলন করে যেতেন তাহলে আমরা যেমন সিহাহ সিত্তাহ হতে সহীহ হাদীস গ্রহণ করি, তেমন তাঁর সংকলন হতেও সহীহ হাদীস গ্রহণ করতাম। ইমাম আবূ হানীফা নিশ্চয়ই বয়সে সিহাহ সিত্তার ইমামগণ হতে প্রবীণ কিন্তু কেবল প্রবীণত্ব গ্রহণ ও বর্জনের নীতি নয়। ইব্রাহীম (আঃ) হতে তাঁর পিতা অবশ্যই প্রবীণ ছিলেন, কিন্তু ইব্রাহীম (আঃ)-এর উম্মত কি নবীন ইব্রাহীম (আঃ)-এর কথা বর্জন করে তাঁর প্রবীণ পিতার কথা শুনলে ভাল করতেন? রসূল (সঃ)-এর চাচা অবশ্যই রসূল (সঃ) হতে প্রবীণ ছিলেন। মক্কাবাসীগণ কি নবীন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কথা বর্জন করে তাঁর প্রবীণ চাচার পথ অবলম্বন করলে হেদায়াত পেত?
ইমাম আবূ হানীফার জন্ম ৮০ হিজরীতে। ইমাম বুখারীর জন্ম ১৯৪ হিজরীতে। অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফা ইমাম বুখারী হতে (১৯৪-৮০)=১১৪ বৎসরের প্রবীণ। অতএব, সহীহ বুখারীর বহু পূর্বে সহীহ আবূ হানীফা সংকলিত হওয়া প্রয়োজন ছিল। ইমাম মুসলিম ইমাম আবূ হানীফা হতে (২০২-৮০) = ১২২ বৎসরের নবীন। অতএব, সহীহ মুসলিমের মত সহীহ আবূ হানীফা সহীহ মুসলিমের পূর্বেই সংকলিত হবার কথা ছিল।
তিনি ইমাম আবূ দাউদের জন্মের (২০২-৮০)= ১২২ বৎসর পূর্বে, ইমাম তিরমিযী জন্মের (২০৯-৮০)=১২৯ বৎসর পূর্বে, ইমাম ইবনু মাজাহর (২৯০-৮০)= ২১০ বৎসর পূর্বে, ইমাম নাসাঈর (২২৩-৮০)=১৪৩ বৎসর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু সুনানু আবূ হানীফা পৃথিবীর মুসলমান পেল না। সিহাহ সিত্তার সংকলনকারী ইমামগণ ভূবন বিখ্যাত। তারা ইমাম আবূ হানীফার কোন বর্ণনা গ্রহণ করেননি। কেন গ্রহণ করেননি? কেউ যদি বলেন তারা কেবল হিংসার বশবর্তী হয়ে ইমাম আবূ হানীফার বর্ণনা ত্যাগ করেছেন, তাহলে বলব হিংসুকের বর্ণিত হাদীস সহীহ হয় কি করে? হানাফী মাযহাবের মাদরাসা সমূহে সিহাহ সিত্তাহ সহীহ সংকলন হিসাবে পড়ানো হয় কেন? কেন তারা ইমাম আবূ হানীফার বর্ণনা গ্রহণ করেননি সে আলোচনা ভিন্ন বিষয়, তবে এটাই সত্য যে তাঁরা ইমাম আবূ হানীফাকে বর্জন করেছেন। আমরা যদি আবূ হানীফার বর্ণিত হাদীস মান্য করতে চাই, তাহলে তাঁর কোন সংকলন কোথায় পাব? কিন্তু একদল মানুষ বলেই চলেছেন ইমাম আবূ হানীফাকে কেন মানেন না?
আমরা এই প্রশ্নের জবাব দিলাম অত্র পুস্তকে। আমরা আমাদের পুস্তকে যে সকল তথ্য পেশ করেছি, যদি কেউ বরাত মত না পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মেহেরবানী করে লিখে পাঠাবেন। আমরা পরবর্তী সংস্করণে বরাত ছাপিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ। কোন পাঠক যদি কোন ভুল পান তাহলে মেহেরবানী করে আমাদিগকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। বাস্তবিক পক্ষেই যদি ভুল হয় তাহলে অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করে নেব।
কিছুলোক প্রশ্ন করে থাকেন “ইমাম আবূ হানীফার বর্ণিত হাদীস ও তার মাযহাব আপনারা গ্রহণ করেন না বরং তার পরিবর্তে সিহাহ সিত্তার হাদীস মেনে চলেন, অথচ সিহাহ সিত্তা সংকলিত হয়েছে ইমাম আবূ হানীফার বহু পরে।
ইমাম আবূ হানীফার বর্ণনা ১২০ হিজরী হতে ১৫০ হিজরীর মধ্যে আর সিহাহ সিত্তার সংকলন হল ২৫৬ হতে ৩০৩ হিজরীর মধ্যে। সিহাহ সিত্তার সংকলন ও ইমাম আবূ হানীফার মধ্যে ব্যবধান হল (২৫৬-১৫০)= ১০৬ হতে (৩০৩-১৫০) = ১৫৩ বৎসর।
বিষয়টি বুঝবার জন্য প্রথমে একটি কথা বলে রাখি, তাহলো আমরা কেবল সিহাহ সিত্তার হাদীসই মেনে চলি, অন্য কোন সংকলনের হাদীস মেনে চলিনা, কথাটি সত্য নয়। আমরা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত সকল হাদীস মেনে চলার চেষ্টা করি। তবে বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে মানের দিক হতে সকল সহীহ হাদীসকে সমান মনে করি না। তাই অধিকতর বিশুদ্ধ হাদীসের তুলনায় তার চাইতে কম বিশুদ্ধ হাদীস গ্রহণ করি না। যেমন খেজুর বা আখের গুড় এবং চিনি। গুড়ও মিষ্টি এবং চিনিও মিষ্টি। ধরুন, কোন বাজারে উভয়টার মূল্য সমান। এক্ষেত্রে কেউ সমান মূল্য দিয়ে গুড় কিনলেন, কেউ চিনি কিনলেন।
এক্ষেত্রে আমরা গুড়ের পরিবর্তে চিনিকে গ্রহণ করলাম। এটাই হল পার্থক্য। মানের তারতম্য হিসেবে গ্রহণ ও বর্জনের পার্থক্য উসূলে হাদীসে বহু পুরাতন বিষয়। উসূলে হাদীসের কোন কিতাব মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে- (পাঠ করুন মাদরাসার পাঠ্য মুকাদ্দামা মিশকাত)। এবার পূর্বের কথায় ফিরে যাই। হাদীস গ্রহণের জন্য বর্ণনাকারীগণের বিশুদ্ধতা অপরিহার্য। অর্থাৎ বর্ণনাকারীগণ সকলে বিশুদ্ধ হলে হাদীস বিশুদ্ধ হয়। ইমাম আবূ হানীফা তাবি তাবিঈ । তাই তাঁর মধ্যে ও সাহাবাদের মধ্যে একজন বর্ণনাকারী তাবিঈ অবশ্যই থাকবেন।
ঐ তাবিঈ যদি বিশুদ্ধ হয় তাহলে হাদীস আবূ হানীফা পর্যন্ত সহীহ হবে, তেমন আবূ হানীফার বর্ণিত হাদীস যাদের মাধ্যমে পরবর্তী লোকেরা পাবেন সেই সূত্রগুলোও ধারাবাহিক ও বিশুদ্ধ হলে তার হাদীস বিশুদ্ধ হবে। তাবিঈদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য যেমন ছিল, বিশ্বাস করা হয়নি এমনও ছিল। দুঃখের বিষয় ইমাম আবূ হানীফা যদি কোন হাদীসের কিতাব সংকলন করে যেতেন তাহলে আমরা যেমন সিহাহ সিত্তাহ হতে সহীহ হাদীস গ্রহণ করি, তেমন তাঁর সংকলন হতেও সহীহ হাদীস গ্রহণ করতাম। ইমাম আবূ হানীফা নিশ্চয়ই বয়সে সিহাহ সিত্তার ইমামগণ হতে প্রবীণ কিন্তু কেবল প্রবীণত্ব গ্রহণ ও বর্জনের নীতি নয়। ইব্রাহীম (আঃ) হতে তাঁর পিতা অবশ্যই প্রবীণ ছিলেন, কিন্তু ইব্রাহীম (আঃ)-এর উম্মত কি নবীন ইব্রাহীম (আঃ)-এর কথা বর্জন করে তাঁর প্রবীণ পিতার কথা শুনলে ভাল করতেন? রসূল (সঃ)-এর চাচা অবশ্যই রসূল (সঃ) হতে প্রবীণ ছিলেন। মক্কাবাসীগণ কি নবীন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কথা বর্জন করে তাঁর প্রবীণ চাচার পথ অবলম্বন করলে হেদায়াত পেত?
ইমাম আবূ হানীফার জন্ম ৮০ হিজরীতে। ইমাম বুখারীর জন্ম ১৯৪ হিজরীতে। অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফা ইমাম বুখারী হতে (১৯৪-৮০)=১১৪ বৎসরের প্রবীণ। অতএব, সহীহ বুখারীর বহু পূর্বে সহীহ আবূ হানীফা সংকলিত হওয়া প্রয়োজন ছিল। ইমাম মুসলিম ইমাম আবূ হানীফা হতে (২০২-৮০) = ১২২ বৎসরের নবীন। অতএব, সহীহ মুসলিমের মত সহীহ আবূ হানীফা সহীহ মুসলিমের পূর্বেই সংকলিত হবার কথা ছিল।
তিনি ইমাম আবূ দাউদের জন্মের (২০২-৮০)= ১২২ বৎসর পূর্বে, ইমাম তিরমিযী জন্মের (২০৯-৮০)=১২৯ বৎসর পূর্বে, ইমাম ইবনু মাজাহর (২৯০-৮০)= ২১০ বৎসর পূর্বে, ইমাম নাসাঈর (২২৩-৮০)=১৪৩ বৎসর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু সুনানু আবূ হানীফা পৃথিবীর মুসলমান পেল না। সিহাহ সিত্তার সংকলনকারী ইমামগণ ভূবন বিখ্যাত। তারা ইমাম আবূ হানীফার কোন বর্ণনা গ্রহণ করেননি। কেন গ্রহণ করেননি? কেউ যদি বলেন তারা কেবল হিংসার বশবর্তী হয়ে ইমাম আবূ হানীফার বর্ণনা ত্যাগ করেছেন, তাহলে বলব হিংসুকের বর্ণিত হাদীস সহীহ হয় কি করে? হানাফী মাযহাবের মাদরাসা সমূহে সিহাহ সিত্তাহ সহীহ সংকলন হিসাবে পড়ানো হয় কেন? কেন তারা ইমাম আবূ হানীফার বর্ণনা গ্রহণ করেননি সে আলোচনা ভিন্ন বিষয়, তবে এটাই সত্য যে তাঁরা ইমাম আবূ হানীফাকে বর্জন করেছেন। আমরা যদি আবূ হানীফার বর্ণিত হাদীস মান্য করতে চাই, তাহলে তাঁর কোন সংকলন কোথায় পাব? কিন্তু একদল মানুষ বলেই চলেছেন ইমাম আবূ হানীফাকে কেন মানেন না?
আমরা এই প্রশ্নের জবাব দিলাম অত্র পুস্তকে। আমরা আমাদের পুস্তকে যে সকল তথ্য পেশ করেছি, যদি কেউ বরাত মত না পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মেহেরবানী করে লিখে পাঠাবেন। আমরা পরবর্তী সংস্করণে বরাত ছাপিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ। কোন পাঠক যদি কোন ভুল পান তাহলে মেহেরবানী করে আমাদিগকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। বাস্তবিক পক্ষেই যদি ভুল হয় তাহলে অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করে নেব।