সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

ভ্রান্তি নিরসন হাদিস অস্বীকার করার কতক অজুহাত

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
690
Comments
1,222
Solutions
17
Reactions
7,057
Credits
5,690
হাদিস অস্বীকারকারীরা নানান অজুহাত দেখিয়ে হাদিস অস্বীকারকার করতে চায়।

প্রথম অজুহাত:

একশ্রেণী লোকের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা হাদিসকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। তাদের নিকট কুরআন ব্যতীত কোন কিছুর উপর আমল করা যাবে না। সন্দেহ নেই হাদিস অস্বীকারকারী এ শ্রেণীর লোক কাফের ও ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত। কারণ এর মাধ্যমে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতকে অস্বীকার করেছে। তারা বিশ্বাস করেনি তিনি সন্দেহাতীত ও সত্যিকার অর্থে আল্লাহর রাসূল, যা কুরআন ও তার আয়াতকে অস্বীকার করার শামিল। এ মত পোষণকারী কয়েকটি দল:

এক. কট্টর রাফেযী তথা শিয়া সম্প্রদায়: তাদের নিকট সাহাবিরা সবাই কাফের, ফলে তাদের বর্ণনা গ্রহণ করা যাবে না।

দুই. আহলে কুরআন অথবা কুরআনী সম্প্রদায়: তাদের সৃষ্টি ভারতে। এ মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে আহমদ খান ও আব্দুল্লাহ বকর আলাভি।

তিন. পাশ্চাত্য চিন্তা ধারায় প্রভাবিত কতক বুদ্ধিজীবী হাদিস অস্বীকার করেন, অথবা তাতে সন্দেহ পোষণ করেন।

দ্বিতীয় অজুহাত:

একশ্রেণীর লোক সব হাদিসকে নয়, বরং শুধু খবরে ওয়াহেদ অস্বীকার করেন। খবরে ওয়াহেদ দ্বারা উদ্দেশ্য এক সনদে বা এক সূত্রে বর্ণিত হাদিস।

কয়েকটি বিদআতি দল এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন মুতাযিলা সম্প্রদায় এবং আবুল হাসান আশআরি ও আবুল মানসুর মাতুরিদির অনুসারীগণ। তারা আকিদার বিষয়ে খবরে ওয়াহেদ গ্রহণ করেন না, যদিও বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়। তাদের দাবি একাধিক সনদ ব্যতীত আমরা হাদিস গ্রহণ করব না।

এ জাতীয় লোকের সংশয় নিরসন ও অজুহাতের কতক উত্তর:

এক. আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن جَآءَكُمۡ فَاسِقُۢ بِنَبَإٖ فَتَبَيَّنُوٓاْ ٦ ﴾ [الحجرات: ٦]

“হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও”।[1]

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সংবাদের সত্যতা যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং একজন ফাসেকের সংবাদ প্রত্যাখ্যান করতে বলেছেন। এর অর্থ আমরা একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির সংবাদ গ্রহণ করব।

দুই. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মুসলিমরা মসজিদে কুবায় ফজর সালাত আদায় করতে ছিলেন, একজন সংবাদ দাতা এসে বলল, কেবলা কাবার দিকে ঘুরে গেছে, ইতোপূর্বে যা বায়তুল মাকদিসের দিকে ছিল। তারা তার সংবাদ শুনে সালাতেই কেবলার দিকে ঘুরে যান। যদি একজনের সংবাদ তাদের নিকট দলিল ও আমলযোগ্য না হত, তাহলে অবশ্যই তারা দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় ব্যক্তিকে স্বাক্ষীরূপে চাইত। কিন্তু তারা তৎক্ষণাৎ তার সংবাদ গ্রহণ করে প্রমাণ করেন, খবরে ওয়াহেদের উপর আমল করা জরুরী।

তিন. আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ ٦٧ ﴾ [المائ‍دة: ٦٧]

“হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও”।[2]

এ আয়াতে আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার উপর নাযিলকৃত রিসালাত পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, অথচ তিনি মাত্র একজন ব্যক্তি। আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে সাহাবিদের প্রেরণ করতেন। এ ক্ষেত্রে একস্থানে একজন দায়ী প্রেরণ করা সাধারণ নীতিতে পরিণত হয়েছিল, লোকেরা প্রেরিত দায়ীর সংবাদ গ্রহণ করত, তাকে আল্লাহ ও তাদের মাঝে আমানতদার জ্ঞান করত। দেখুন মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামানে প্রেরণ করেন, তুমি তাদেরকে ইসলাম ও তাওহীদের দিকে আহ্বান কর। তিনি ছিলেন একা।

চার. যখন মদ হারাম করে আয়াত নাযিল হল, তখন তার প্রচারকারী ছিল মাত্র একজন। মদিনার লোকেরা তার সংবাদ শ্রবণ করে তাদের মদের পাত্রগুলো ভেঙে ফেলে। তারা বলেনি আমরা একজনের সংবাদ গ্রহণ করব না।

তৃতীয় অজুহাত:

এক শ্রেণীর লোক বিবেক সমর্থন করে না তাই হাদিস ত্যাগ করেন। হাদিস ত্যাগ করার এ ফেতনা প্রথম যুগের বিদআতিদের থেকে সূচনা হয়, যেমন মুতাযেলা ও তাদের অনুসারী আশায়েরা প্রমুখ কয়েকটি সম্প্রদায়। তারা বিবেক সমর্থন না করার অজুহাতে অনেক হাদিস প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশেষ করে যেসব হাদিসে গায়েব তথা অদৃশ্যের সংবাদ রয়েছে, যেমন আল্লাহর সিফাত ও ঐসব বিষয় যা আমরা চোখে দেখি না। আশ্চর্য যা গায়েবি বিষয়, বা যা বিবেকের ঊর্ধ্বে তারা বিবেক দ্বারা কিভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে! আমাদের বুঝে আসে না। ঐ ফেতনা পর্যায়ক্রমে আমাদের যুগ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে, যখন বিবেককে খুব প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে, দৃশ্য ব্যতীত অদৃশ্যকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মুসলিম পরিচয়দানকারী এসব লোক কুরআন ও হাদিসের বাইরে বিবেককে প্রাধান্য দেয়ার নতুন এক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে।

সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

[1] সূরা হুজুরাত: (৬)
[2] সূরা আল-মায়েদা: (৬৭)
 
Top