If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
আবু হুরায়রা (রা) সম্পর্কে আরোপিত অভিযোগ সমূহের বিস্তারিত জবাব। - ১ম পর্বের পরবর্তী পর্ব
তিনি কি অর্থ আত্মসাৎকারী ছিলেন?
নাউযুবিল্লাহ! প্রাচ্যবিদরা সকল সীমানা অতিক্রম করে আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে অর্থ আত্মসাত্রে অভিযোগে অভিযুক্ত করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। আল্লাহর অভিশাপ তাদের উপর বর্ষিত হোক! আমীন!!
(ক) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করা মানে রাসূল (ﷺ)-কে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করা। কেননা সাধারণ সাহাবী ও সর্বদা রাসূল (ﷺ)-এর সাথে থাকা ঘনিষ্ঠ সাহাবীগণের মধ্যে পার্থক্য আছে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
এই একটি হাদীসই ছাহাবায়ে কেরাম বিশেষ করে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মত রাসূল (ﷺ)-এর ঘণিষ্ঠ সাহাবীগণের সততা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য যথেষ্ট।
এই হাদীসের আলোকে নিঃসন্দেহে বলা যায়, যারা ঘনিষ্ঠ সাহাবীগণের বিরুদ্ধে এই জাতীয় অভিযোগ উত্থাপন করে তারা মূলতঃ রাসূল (ﷺ)-কে একজন অযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। তিনি এমন এক ব্যক্তিকে সবসময় তার সাথে রাখতেন যে অর্থের লোভী। এটা রাসূল (ﷺ)-এর মর্যাদা বিরোধী। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর সাহাবীগণকে দিয়ে তার রাসূলকে অপমান করাতে পারেন না। সুতরাং আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মত ঘনিষ্ঠ সাহাবী অর্থ আত্মসাৎকারী হতে পারেন না। অসম্ভব!
(খ) আমরা পূর্বেই বলেছি তিনি উঁচু বংশের সন্তান ছিলেন। শুধু দ্বীন ও রাসূল (ﷺ)-এর হাদীসের খাতিরে তিনি সীমাহীন কষ্ট সহ্য করেছেন। তাঁর মত সরদার বংশের সন্তানের সাথে এই স্বভাব যায়না। যেখানে তারা যুগ যুগ থেকে দাওস গোত্রের নেতা। তাঁর চাচা খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলেও আমীর ছিলেন।
(গ) কথায় আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট। যখন তিনি ক্ষুধার জ্বালায় পেটে পাথর বেধে রাখতেন। অজ্ঞান হয়ে মসজিদে পড়ে থাকতেন, তিনি চাইলে তখনি আত্মসাৎ করতে পারতেন। খায়বার, তাবুক, মুতা ইত্যাদী যুদ্ধের গণীমত তার সামনে বন্টিত হয়েছে। যখন দরকার তখন তিনি আত্মসাৎ করলেন না ক্ষুধার জ্বালায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকলেন। আর যখন তিনি আমীর, শত ছাত্রের উস্তায, তাবেঈগণের চোখের মণি তখন অর্থ আত্মসাৎ করে নিজের ইযযত ধ্বংস করবেন? কি সেলুকাস! কি বিচিত্র!
(ঘ) তিনি দুনিয়াবিমুখ সাহাবী ছিলেন। একদা গণীমতের মাল বণ্টন হচ্ছিল। সকল সাহাবী তাদের নিজ নিজ অংশ গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু আবু হুরায়রা (রাঃ) গ্রহণ এসেছে, রাসূল (ﷺ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আমার নিকট গণীমত চাইবেনা যেমন তোমার সঙ্গী-সাথীরা চাচ্ছে? তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি আপনার নিকট চাইব, আপনি আমাকে তা শিখিয়ে দিন যা আপনাকে মহান আল্লাহ শিখিয়েছেন।হুলিয়াতুল আওলিয়া ১/৩৮১।
তাহক্বীক্ব : সনদ হাসান পর্যায়ের।
ঘটনার বাস্তবতা :
প্রাচ্যবিদরা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নামে অর্থ আত্মসাতের যে ঘটনা প্রচার করে থাকে তা বিকৃত ও আংশিক। প্রাচ্যবিদরা ঘটনাটি পূর্ণ প্রচার করেনা। নীচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল। ভূমিকা স্বরুপ প্রথমে বলে নেয়া যরুরী। ওমর (রাঃ)- এর কঠোরতা সকলের জানা। প্রায় হাদীসে আমরা দেখি একটু এদিক সেদিক হলেই ওমর (রাঃ) বলে উঠেন আল্লাহর রাসূল অনুমতি দিন! আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তাঁকে দেখে মানুষ তো ভয় করে করে শয়তানও ভয় করে। মদীনার মহিলা থেকে শুরু করে বাচ্চারাও ভয় পেত।সহীহ বুখারী হা/ ৩২৯৪; তিরমিযী হা/৩৬৯১।
তিনি অত্যন্ত প্রতাপশালী ছিলেন। রাসূল (ﷺ) ও আবু বকর (রাঃ)-এর পর তিনি সাহাবীগণের অভিভাবকে পরিণত হন। অভিভাবক হিসেবে যেমন তিনি তাদেরকে স্নেহ করতেন তেমনি দায়িত্বশীল সাহাবীগণের নিকট থেকে কড়াভাবে
কাজের হিসাব নিতেন। একটু ত্রুটি দেখলেই ধমক দিতেন। অনেক সময় ক্ষমতাচ্যুত করতেন। সব সময় তার সিদ্ধান্ত ঠিক হত এমন নয় অনেক সময় ভুল হত। ভুল হলে তিনি সাথে সাথে শুধরে নিতেন। ছালামের বিষয়ে প্রসিদ্ধ ঘটনায় হাদীসের হিফাযতের জন্য তিনি আবু মুসা আশআরী (রাঃ)-এর সাথে অনেক কড়াকড়ি করেন। সহীহ মুসলিম হা/২১৫৩।
তিনি খালিদ ইবন েওয়ালীদ (রাঃ)-কে যুদ্ধের ময়দানে ক্ষমতাচ্যুত করেন।বিদায়া ও নিহায়া ৭/৭৬।
তাঁর প্রতিটি নির্দেশের পিছনে কোন না কোন রহস্য থাকত। যা তিনি সব সময় প্রকাশ করতেন না। যত কিছুই হোক তিনি আইন ভঙ্গ করতেন না। কে বড় তা তিনি দেখতেন না। সবার কাছে হিসাব নিতেন। পাই পাই হিসাব নিতেন। নিজেই তাদের কাজের অনুসন্ধান করতেন। তার এই কঠোরতা ও আইনের শাসনের কারণেই মূলতঃ তার শাসনামলে কোন ফিতনা সৃষ্টি হওয়া তো দূরের কথা মাথা চাড়া দেওয়ার সুযোগই পাইনি।
আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে রাসূল (ﷺ) আ'লা আল হাযরামীর সাথে দ্বীন শিখানোর জন্য বাহরাইনে পাঠিয়েছিলেন। আবু বকর (রাঃ) ও তাকে বাহরাইনে পাঠিয়েছিলেন।আনওয়ারুল কাশিফা, মুয়াল্লিমী ২২৫ পৃঃ।
আবু বকর (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর ওমর (রাঃ) সাহাবীগণের পরামর্শ সভা ডাকেন। এ সভায় আবু হুরায়রা (রাঃ)ও উপস্থিত ছিলেন। ওমর (রাঃ) সবাইকে লক্ষ্য করে রাষ্ট্রীয় কাজ পরিচালনার জন্য সহযোগিতা চান। সাহাবীগণ তাঁকে সহযোগিতার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর পূর্ব অভিজ্ঞতার দরূন ওমর (রাঃ) এ বৈঠকেই তাকে বাহরাইনের গভর্নর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।কিতাবুল খারাজ, আবু ইউসুফ ১১৪ পৃঃ।
এ ঘটনা প্রমাণ করে আবু হুরায়রা জ্ঞানীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন এই জন্যই পরামর্শসভায় তাঁকে ডাকা হয়েছে।
দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মাথায় আবু হুরায়রা (রাঃ) বাৎসরিক হিসাব নিয়ে মদীনায় আসলেন। সাথে ছিল কেন্দ্রে প্রদানের জন্য ছিল ৪ লাখ দিনার। মাত্র এক বছরে ৪ লাখ দিনার! ওমর (রাঃ) টাকার আধিক্য দেখে আশ্চর্য হয়ে যান। তিনি প্রশ্ন করেন, তুমি কারো প্রতি যুলুম করনি তো? জবাবে তিনি বলেন, না।
কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করনি তো? জবাবে তিনি বলেন, না। তোমার নিজস্ব কি আছে? তিনি জবাবে বললেন, ২০ হাযার রিয়াল। ওমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় পেয়েছ? তিনি বললেন ব্যবসা করেছি। অন্য রেওয়ায়েতে তিনি ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন। ওমর (রাঃ) বললেন, তোমার মূলধন গ্রহণ কর! আর লভ্যাংশ বায়তুল মালে দিয়ে দাও!আমওয়াল, আবু ওবায়দ ২৬৯ পৃঃ; আনওয়ারুল কাশিফা মুয়াল্লিমী ২১৩পৃঃ।
এ ঘটনা থেকে গ্রহণ করা প্রাচ্যবিদদের বিকৃত উদ্দেশ্যের জবাবে বলতে চাই,
(ক) ওমর (রাঃ) প্রখর ধী শক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সাথে এবং আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে রাষ্ট্রীয়কাজে শরীক ছিলেন। যদি তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মধ্যে কোন ত্রুটি বুঝতে পারতেন তাহলে তাকে বাহরাইন পাঠাতেন না। রাসূল (ﷺ) এবং আবু বকর (রাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে শুধু দ্বীন প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তাকে গভর্নর কাছেও পাঠান। আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর যোগ্যতা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য তার এই মনোনয়নই যথেষ্ট।
(খ) আবু হুরায়রা (রাঃ) যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাষ্ট্র পরিচালনা সহ দুনিয়াবী কাজেও পারদর্শী ছিলেন, এ ঘটনা তার অন্যতম প্রমাণ। মাত্র এক বছরে রাষ্ট্র পরিচালনার খরচের পর কেন্দ্রের জন্য ৪ লাখ দিনার লভ্যাংশ অর্জন করা তার যোগ্যতার পরিচয় বহন করে। সুতরাং রাসূল (ﷺ)-এর যুগে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাসূল (ﷺ)-এর সাথে থাকার পিছনে মূলতঃ দরিদ্রতা কারণ নয় বরং হাদীসের প্রতি তার সীমাহীন আগ্রহই অন্যতম কারণ।
(গ) এ ঘটনায় কোথাও তাঁকে পদচ্যুত করার কথা নেই। এই মর্মে সহীহ সূত্রে যত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সব জায়গায় শুধুমাত্র হিসাব গ্রহণের কথা এসেছে। এটাকেই প্রাচ্যবিদরা বিকৃত করে পদচ্যুত করার ঘটনায় রূপ দিয়েছেন।
(ঘ) ওমর (রাঃ) একই কাজ মুয়ায ইবনে জাবালের সাথে আবু বকর (রাঃ)-এর খিলাফত আমলে এবং তার খিলাফত আমলে আবু মূসা আল-আশআরী, সাদে ও হারিছ (রাঃ)-এর সাথে করেছেন। তাঁদের নিকট থেকেও তাঁদের ব্যবসার লভ্যাংশ বায়তুল-মালে জমা করিয়েছেন।তাবাক্বাত, ইবনু সাদ ৩/১০৫; আনওয়ারুল কাশিফা, মুয়াল্লিমী ২১৩ ৷
মৌলিক ভাবে এর পিছনে কারণ ছিল ইসলামী খিলাফতের স্বচ্ছতা বজায় রাখা। যেহেতু তখন বিভিন্ন জাতি-প্রজাতির মানুষ নিয়ে অর্ধ-বিশ্বে কালেমার পতাকা পত পত করে উড়ছে। সব জায়গায় ছাহাবায়ে কেরাম নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। যদি তাদের ধন-সম্পদ বেড়ে যায় চাহে যতই হালাল পন্থায় বাড়ুক সেই দেশের মানুষরা অভিযোগ করবে আমাদের টাকা মেরে খেয়ে আরবেরী বড়লোক হয়ে গেল। আর এটাই স্বাভাবিক। ওমর (রাঃ) অত্যন্ত চৌকস রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি দুনিয়ার মানুষের সাইকোলোজী বুঝতেন। তাই তিনি ইসলামী খিলাফতের স্বচ্ছতা দুনিয়ার সামনে বজায় রাখার জন্য এবং ছাহাবায়ে কেরামকে মানুষের সমালোচনার পাত্র হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য সকল গভর্নরের অতিরিক্ত ইনকাম বাধ্যতামূলক বায়তুল-মালে দান করাতেন। তিনি নিজেও করতেন।
(ঙ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে তিনি যে অর্থ আত্মসাত্রে অভিযোগে অভিযুক্ত করেননি তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে পুনরায় বাহরাইন যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু আবু হুরায়রা (রাঃ) মদীনায় থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আমওয়াল, আবু ওবায়দ ২৬৯।
উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয়বার বাহরাইন প্রেরণের কথাকে প্রাচ্যবিদরা লুকানোর চেষ্টা করে অথবা না জেনেই যঈফ বলার ঘৃণিত অপচেষ্টা চালায়। অথচ সনদ নিঃসন্দেহে সহীহ। আনওয়ারুল কাশিফা ২১৫; বিদায়া ও নিহায়া ৮/১১৯; হিলয়াতুল আওলিয়া ১/৩৮০; ইসাবা, আসক্বালানী ৮/৩৩।
মূলতঃ আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মদীনা থাকার মধ্যেই কল্যাণ ছিল। কেননা মদীনা ইলমী মারকায ছিল। স্থায়ীভাবে মদীনাতে থাকার ফলেই তাঁর ছাত্র সংখ্যা প্রচুর বৃদ্ধি পায় এবং তিনি পূর্ণরুপে রাসূল (ﷺ)-এর হাদীসের খিদমাতে মনোনিবেশ করতে পারেন। ফালিল্লাহিল হামদ।
তাহক্বীক্ব : হাদীসের সকল রাবী মযবূত মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ব্যতীত। তিনি মুদাল্লিস। তিনি মুসনাদে বাযযারে শ্রবণের বিষয়ে স্পষ্ট শব্দ ব্যবহার না করলেও মুসনাদে ইয়ালাতে শ্রবণের বিষয়ে স্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করেছে।” সুতরাং হাদীসটি নিঃসন্দেহে হাসান।মুসনাদে ইয়ালা হা/৬৩৬।
ইবনু ওমর (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ)-এর সত্যায়ন :
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি একদা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস শুনাচ্ছিলেন, যে ব্যক্তি জানাযার ছালাতে উপস্থিত হবে তার জন্য এক ক্বিরাত নেকী আর যে ব্যক্তি দাফনেও অংশগ্রহণ করবে তার জন্য দুই ক্বিরাত নেকী। আর এক কিবরাতের পরিমাণ উহুদ পাহাড়ের চেয়েও বড়। এ হাদীস শুনে ইবনু ওমর (রাঃ) তাকে বললেন, হে আবু হুরায়রা! তুমি কি হাদীস বর্ণনা করছ খিয়াল কর! তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং ইবনু ওমর (রাঃ)-এর হাত ধরে উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা (রাঃ)-এর নিকটে নিয়ে গিয়ে বললেন, হে উম্মুল মু'মিনীন! আমি আপনাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি কি রাসূল (ﷺ) থেকে এই হাদীস শুনেননি? তখন আয়েশা রাঃ) বললেন, জী হ্যাঁ। অতঃপর ইবুন ওমর (রাঃ) বলেন, আবু হুরায়রা! তুমি সত্যিই আমাদের চেয়ে বেশী রাসুলের সাথে থাকতে এবং আমাদের চেয়ে তার হাদীস সম্পর্কে বেশী জ্ঞান রাখ।মুসনাদে আহমাদ হা/৪৪৫৩।
তাহক্বীক্ব : সনদের সকল রাবী মযবূত। শুধু তাই নয় অন্য রেওয়ায়েতে ইবনু ওমর (রাঃ) আফসোস করে বলেন, আমরা জীবনে অনেক কিরাত্ব নষ্ট করেছি। সহীহ মুসলিম হা/৫২।
হুযায়ফা (রাঃ)-এর মন্তব্য :
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে বলল, নিশ্চয়! আবু হুরায়রা রাসূল (ﷺ) থেকে অনেক হাদীস বর্ণনা করে।তখন ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, তার বর্ণিত কোন হাদীস নিয়ে তোমার সন্দেহ করা থেকে আমি আল্লাহর নিকট তোমার পরিত্রাণ চাই’। মুস্তাদরাকে হাকিম হা/৬১৬৫
সাহাবীগণের ইজমা :
জানাযার ছালাতে সাধারণত গণ্য-মান্য ব্যক্তিবর্গকে পাঠানো হয়। আর জানাযার ছালাত যদি হয় মা আয়েশা (রাঃ)-এর তাহলে স্বভাবতঃই সাহাবীগণের মাঝে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ তিনিই আদায় করাবেন। ৫৭ হিজরীর রমযান মাসে যখন মুমিনগণের মা আয়েশা (রাঃ) মারা যান তখন ছাহাবায়ে কেরাম আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে জানাযার ছালাত পড়ানোর জন্য নির্বাচন করেন।বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৮/১০১।
৫৭ হিজরীর এই ঘটনা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর ন্যায়পরায়ণতা ও সততার ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরাম ও মদীনাবাসীর ইজমা বলা যায়। আর এই ঘটনা উপরে উল্লেখিত সকল অভিযোগের অনেক পরের ঘটনা। যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে উপরের সকল অভিযোগ ডাহা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে শত্রুতার নির্মম পরিণতি:
কাজী ত্ববারী বর্ণনা করেন আমরা একদা জা'মে মানসুরে হাদীসের দারসে ছিলাম।খোরাসান থেকে একজন হানাফী মাযহাবের অনুসারী যুবক আসল।
সে মুসাররাতের হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তখন তাকে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীস শুনানো হল। (মুসাররাতের হাদীস বিষয়ক আলোচনা যথা জায়গায় করা হবে ইনশাআল্লাহ) সে বলল,
নিকট অতীতে মিসরের অভিশপ্ত লেখক আবু রাইয়া। আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বিষয়ে এমন কি নেই যা সে বলেনি। আব্দুর রহমান ইবনে ইয়াহিয়া আল মুয়াল্লীমী (রহঃ) তার আনওয়ার আল কাশিফা বইয়ে তার সকল অভিযোগের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন। এই অভিশপ্ত ব্যক্তিটি মৃত্যুর পূর্বে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নাম চিৎকার করতে করতে উচ্চারণ করছিল। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই সমস্ত অভিশপ্তদের হাত থেকে রক্ষা করুন!
সমাপ্ত।
তিনি কি অর্থ আত্মসাৎকারী ছিলেন?
নাউযুবিল্লাহ! প্রাচ্যবিদরা সকল সীমানা অতিক্রম করে আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে অর্থ আত্মসাত্রে অভিযোগে অভিযুক্ত করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। আল্লাহর অভিশাপ তাদের উপর বর্ষিত হোক! আমীন!!
(ক) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করা মানে রাসূল (ﷺ)-কে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করা। কেননা সাধারণ সাহাবী ও সর্বদা রাসূল (ﷺ)-এর সাথে থাকা ঘনিষ্ঠ সাহাবীগণের মধ্যে পার্থক্য আছে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
المرء على دين خليله فلينظر أحدكم من يخالط.
‘মানুষ তার বন্ধুর স্বভাবের উপর। অতএব (তোমরা কারো সম্পর্কে জানতে চাইলে) সে কার সাথে মিশে তাকে দেখ”।মুসনাদে আহমাদ হা/৮০১৫।এই একটি হাদীসই ছাহাবায়ে কেরাম বিশেষ করে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মত রাসূল (ﷺ)-এর ঘণিষ্ঠ সাহাবীগণের সততা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য যথেষ্ট।
এই হাদীসের আলোকে নিঃসন্দেহে বলা যায়, যারা ঘনিষ্ঠ সাহাবীগণের বিরুদ্ধে এই জাতীয় অভিযোগ উত্থাপন করে তারা মূলতঃ রাসূল (ﷺ)-কে একজন অযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। তিনি এমন এক ব্যক্তিকে সবসময় তার সাথে রাখতেন যে অর্থের লোভী। এটা রাসূল (ﷺ)-এর মর্যাদা বিরোধী। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর সাহাবীগণকে দিয়ে তার রাসূলকে অপমান করাতে পারেন না। সুতরাং আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মত ঘনিষ্ঠ সাহাবী অর্থ আত্মসাৎকারী হতে পারেন না। অসম্ভব!
(খ) আমরা পূর্বেই বলেছি তিনি উঁচু বংশের সন্তান ছিলেন। শুধু দ্বীন ও রাসূল (ﷺ)-এর হাদীসের খাতিরে তিনি সীমাহীন কষ্ট সহ্য করেছেন। তাঁর মত সরদার বংশের সন্তানের সাথে এই স্বভাব যায়না। যেখানে তারা যুগ যুগ থেকে দাওস গোত্রের নেতা। তাঁর চাচা খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলেও আমীর ছিলেন।
(গ) কথায় আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট। যখন তিনি ক্ষুধার জ্বালায় পেটে পাথর বেধে রাখতেন। অজ্ঞান হয়ে মসজিদে পড়ে থাকতেন, তিনি চাইলে তখনি আত্মসাৎ করতে পারতেন। খায়বার, তাবুক, মুতা ইত্যাদী যুদ্ধের গণীমত তার সামনে বন্টিত হয়েছে। যখন দরকার তখন তিনি আত্মসাৎ করলেন না ক্ষুধার জ্বালায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকলেন। আর যখন তিনি আমীর, শত ছাত্রের উস্তায, তাবেঈগণের চোখের মণি তখন অর্থ আত্মসাৎ করে নিজের ইযযত ধ্বংস করবেন? কি সেলুকাস! কি বিচিত্র!
(ঘ) তিনি দুনিয়াবিমুখ সাহাবী ছিলেন। একদা গণীমতের মাল বণ্টন হচ্ছিল। সকল সাহাবী তাদের নিজ নিজ অংশ গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু আবু হুরায়রা (রাঃ) গ্রহণ এসেছে, রাসূল (ﷺ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আমার নিকট গণীমত চাইবেনা যেমন তোমার সঙ্গী-সাথীরা চাচ্ছে? তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি আপনার নিকট চাইব, আপনি আমাকে তা শিখিয়ে দিন যা আপনাকে মহান আল্লাহ শিখিয়েছেন।হুলিয়াতুল আওলিয়া ১/৩৮১।
তাহক্বীক্ব : সনদ হাসান পর্যায়ের।
ঘটনার বাস্তবতা :
প্রাচ্যবিদরা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নামে অর্থ আত্মসাতের যে ঘটনা প্রচার করে থাকে তা বিকৃত ও আংশিক। প্রাচ্যবিদরা ঘটনাটি পূর্ণ প্রচার করেনা। নীচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল। ভূমিকা স্বরুপ প্রথমে বলে নেয়া যরুরী। ওমর (রাঃ)- এর কঠোরতা সকলের জানা। প্রায় হাদীসে আমরা দেখি একটু এদিক সেদিক হলেই ওমর (রাঃ) বলে উঠেন আল্লাহর রাসূল অনুমতি দিন! আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তাঁকে দেখে মানুষ তো ভয় করে করে শয়তানও ভয় করে। মদীনার মহিলা থেকে শুরু করে বাচ্চারাও ভয় পেত।সহীহ বুখারী হা/ ৩২৯৪; তিরমিযী হা/৩৬৯১।
তিনি অত্যন্ত প্রতাপশালী ছিলেন। রাসূল (ﷺ) ও আবু বকর (রাঃ)-এর পর তিনি সাহাবীগণের অভিভাবকে পরিণত হন। অভিভাবক হিসেবে যেমন তিনি তাদেরকে স্নেহ করতেন তেমনি দায়িত্বশীল সাহাবীগণের নিকট থেকে কড়াভাবে
কাজের হিসাব নিতেন। একটু ত্রুটি দেখলেই ধমক দিতেন। অনেক সময় ক্ষমতাচ্যুত করতেন। সব সময় তার সিদ্ধান্ত ঠিক হত এমন নয় অনেক সময় ভুল হত। ভুল হলে তিনি সাথে সাথে শুধরে নিতেন। ছালামের বিষয়ে প্রসিদ্ধ ঘটনায় হাদীসের হিফাযতের জন্য তিনি আবু মুসা আশআরী (রাঃ)-এর সাথে অনেক কড়াকড়ি করেন। সহীহ মুসলিম হা/২১৫৩।
তিনি খালিদ ইবন েওয়ালীদ (রাঃ)-কে যুদ্ধের ময়দানে ক্ষমতাচ্যুত করেন।বিদায়া ও নিহায়া ৭/৭৬।
তাঁর প্রতিটি নির্দেশের পিছনে কোন না কোন রহস্য থাকত। যা তিনি সব সময় প্রকাশ করতেন না। যত কিছুই হোক তিনি আইন ভঙ্গ করতেন না। কে বড় তা তিনি দেখতেন না। সবার কাছে হিসাব নিতেন। পাই পাই হিসাব নিতেন। নিজেই তাদের কাজের অনুসন্ধান করতেন। তার এই কঠোরতা ও আইনের শাসনের কারণেই মূলতঃ তার শাসনামলে কোন ফিতনা সৃষ্টি হওয়া তো দূরের কথা মাথা চাড়া দেওয়ার সুযোগই পাইনি।
আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে রাসূল (ﷺ) আ'লা আল হাযরামীর সাথে দ্বীন শিখানোর জন্য বাহরাইনে পাঠিয়েছিলেন। আবু বকর (রাঃ) ও তাকে বাহরাইনে পাঠিয়েছিলেন।আনওয়ারুল কাশিফা, মুয়াল্লিমী ২২৫ পৃঃ।
আবু বকর (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর ওমর (রাঃ) সাহাবীগণের পরামর্শ সভা ডাকেন। এ সভায় আবু হুরায়রা (রাঃ)ও উপস্থিত ছিলেন। ওমর (রাঃ) সবাইকে লক্ষ্য করে রাষ্ট্রীয় কাজ পরিচালনার জন্য সহযোগিতা চান। সাহাবীগণ তাঁকে সহযোগিতার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর পূর্ব অভিজ্ঞতার দরূন ওমর (রাঃ) এ বৈঠকেই তাকে বাহরাইনের গভর্নর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।কিতাবুল খারাজ, আবু ইউসুফ ১১৪ পৃঃ।
এ ঘটনা প্রমাণ করে আবু হুরায়রা জ্ঞানীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন এই জন্যই পরামর্শসভায় তাঁকে ডাকা হয়েছে।
দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মাথায় আবু হুরায়রা (রাঃ) বাৎসরিক হিসাব নিয়ে মদীনায় আসলেন। সাথে ছিল কেন্দ্রে প্রদানের জন্য ছিল ৪ লাখ দিনার। মাত্র এক বছরে ৪ লাখ দিনার! ওমর (রাঃ) টাকার আধিক্য দেখে আশ্চর্য হয়ে যান। তিনি প্রশ্ন করেন, তুমি কারো প্রতি যুলুম করনি তো? জবাবে তিনি বলেন, না।
কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করনি তো? জবাবে তিনি বলেন, না। তোমার নিজস্ব কি আছে? তিনি জবাবে বললেন, ২০ হাযার রিয়াল। ওমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় পেয়েছ? তিনি বললেন ব্যবসা করেছি। অন্য রেওয়ায়েতে তিনি ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন। ওমর (রাঃ) বললেন, তোমার মূলধন গ্রহণ কর! আর লভ্যাংশ বায়তুল মালে দিয়ে দাও!আমওয়াল, আবু ওবায়দ ২৬৯ পৃঃ; আনওয়ারুল কাশিফা মুয়াল্লিমী ২১৩পৃঃ।
এ ঘটনা থেকে গ্রহণ করা প্রাচ্যবিদদের বিকৃত উদ্দেশ্যের জবাবে বলতে চাই,
(ক) ওমর (রাঃ) প্রখর ধী শক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সাথে এবং আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে রাষ্ট্রীয়কাজে শরীক ছিলেন। যদি তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মধ্যে কোন ত্রুটি বুঝতে পারতেন তাহলে তাকে বাহরাইন পাঠাতেন না। রাসূল (ﷺ) এবং আবু বকর (রাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে শুধু দ্বীন প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তাকে গভর্নর কাছেও পাঠান। আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর যোগ্যতা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য তার এই মনোনয়নই যথেষ্ট।
(খ) আবু হুরায়রা (রাঃ) যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাষ্ট্র পরিচালনা সহ দুনিয়াবী কাজেও পারদর্শী ছিলেন, এ ঘটনা তার অন্যতম প্রমাণ। মাত্র এক বছরে রাষ্ট্র পরিচালনার খরচের পর কেন্দ্রের জন্য ৪ লাখ দিনার লভ্যাংশ অর্জন করা তার যোগ্যতার পরিচয় বহন করে। সুতরাং রাসূল (ﷺ)-এর যুগে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাসূল (ﷺ)-এর সাথে থাকার পিছনে মূলতঃ দরিদ্রতা কারণ নয় বরং হাদীসের প্রতি তার সীমাহীন আগ্রহই অন্যতম কারণ।
(গ) এ ঘটনায় কোথাও তাঁকে পদচ্যুত করার কথা নেই। এই মর্মে সহীহ সূত্রে যত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সব জায়গায় শুধুমাত্র হিসাব গ্রহণের কথা এসেছে। এটাকেই প্রাচ্যবিদরা বিকৃত করে পদচ্যুত করার ঘটনায় রূপ দিয়েছেন।
(ঘ) ওমর (রাঃ) একই কাজ মুয়ায ইবনে জাবালের সাথে আবু বকর (রাঃ)-এর খিলাফত আমলে এবং তার খিলাফত আমলে আবু মূসা আল-আশআরী, সাদে ও হারিছ (রাঃ)-এর সাথে করেছেন। তাঁদের নিকট থেকেও তাঁদের ব্যবসার লভ্যাংশ বায়তুল-মালে জমা করিয়েছেন।তাবাক্বাত, ইবনু সাদ ৩/১০৫; আনওয়ারুল কাশিফা, মুয়াল্লিমী ২১৩ ৷
মৌলিক ভাবে এর পিছনে কারণ ছিল ইসলামী খিলাফতের স্বচ্ছতা বজায় রাখা। যেহেতু তখন বিভিন্ন জাতি-প্রজাতির মানুষ নিয়ে অর্ধ-বিশ্বে কালেমার পতাকা পত পত করে উড়ছে। সব জায়গায় ছাহাবায়ে কেরাম নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। যদি তাদের ধন-সম্পদ বেড়ে যায় চাহে যতই হালাল পন্থায় বাড়ুক সেই দেশের মানুষরা অভিযোগ করবে আমাদের টাকা মেরে খেয়ে আরবেরী বড়লোক হয়ে গেল। আর এটাই স্বাভাবিক। ওমর (রাঃ) অত্যন্ত চৌকস রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি দুনিয়ার মানুষের সাইকোলোজী বুঝতেন। তাই তিনি ইসলামী খিলাফতের স্বচ্ছতা দুনিয়ার সামনে বজায় রাখার জন্য এবং ছাহাবায়ে কেরামকে মানুষের সমালোচনার পাত্র হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য সকল গভর্নরের অতিরিক্ত ইনকাম বাধ্যতামূলক বায়তুল-মালে দান করাতেন। তিনি নিজেও করতেন।
(ঙ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে তিনি যে অর্থ আত্মসাত্রে অভিযোগে অভিযুক্ত করেননি তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে পুনরায় বাহরাইন যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু আবু হুরায়রা (রাঃ) মদীনায় থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আমওয়াল, আবু ওবায়দ ২৬৯।
উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয়বার বাহরাইন প্রেরণের কথাকে প্রাচ্যবিদরা লুকানোর চেষ্টা করে অথবা না জেনেই যঈফ বলার ঘৃণিত অপচেষ্টা চালায়। অথচ সনদ নিঃসন্দেহে সহীহ। আনওয়ারুল কাশিফা ২১৫; বিদায়া ও নিহায়া ৮/১১৯; হিলয়াতুল আওলিয়া ১/৩৮০; ইসাবা, আসক্বালানী ৮/৩৩।
মূলতঃ আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মদীনা থাকার মধ্যেই কল্যাণ ছিল। কেননা মদীনা ইলমী মারকায ছিল। স্থায়ীভাবে মদীনাতে থাকার ফলেই তাঁর ছাত্র সংখ্যা প্রচুর বৃদ্ধি পায় এবং তিনি পূর্ণরুপে রাসূল (ﷺ)-এর হাদীসের খিদমাতে মনোনিবেশ করতে পারেন। ফালিল্লাহিল হামদ।
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বিষয়ে ছাহাবায়ে কেরামের মন্তব্য তালহা (রাঃ)-এর মন্তব্য :
জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশ জন সাহাবীর অন্যতম জ্বলহা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর কসম আমরা কোন সন্দেহ করি না, অবশ্যই সে রাসূল (ﷺ)-এর নিকট থেকে তা শুনেছে যা আমরা শুনিনি এবং তা শিখেছে যা আমরা শিখিনি। আমরা ধনী মানুষ ছিলাম। আমাদের বাড়ী-ঘর ও পরিবার-পরিজন ছিল। আমরা রাসূল (ﷺ)-এর নিকট দিনের কোন একভাগে আসতাম। আর সে মিসকীন ছিল। তার কোন ধন-সম্পদ ছিল না। ছিলনা কোন পরিবার-পরিজন। তার হাত থাকত রাসূল (ﷺ)-এর হাতের সাথে। রাসূল (ﷺ) যেখানে যেত সে সেখানে যেত’(মুসনাদে বাযযার হা/৯৩২।)তাহক্বীক্ব : হাদীসের সকল রাবী মযবূত মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ব্যতীত। তিনি মুদাল্লিস। তিনি মুসনাদে বাযযারে শ্রবণের বিষয়ে স্পষ্ট শব্দ ব্যবহার না করলেও মুসনাদে ইয়ালাতে শ্রবণের বিষয়ে স্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করেছে।” সুতরাং হাদীসটি নিঃসন্দেহে হাসান।মুসনাদে ইয়ালা হা/৬৩৬।
ইবনু ওমর (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ)-এর সত্যায়ন :
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি একদা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস শুনাচ্ছিলেন, যে ব্যক্তি জানাযার ছালাতে উপস্থিত হবে তার জন্য এক ক্বিরাত নেকী আর যে ব্যক্তি দাফনেও অংশগ্রহণ করবে তার জন্য দুই ক্বিরাত নেকী। আর এক কিবরাতের পরিমাণ উহুদ পাহাড়ের চেয়েও বড়। এ হাদীস শুনে ইবনু ওমর (রাঃ) তাকে বললেন, হে আবু হুরায়রা! তুমি কি হাদীস বর্ণনা করছ খিয়াল কর! তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং ইবনু ওমর (রাঃ)-এর হাত ধরে উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা (রাঃ)-এর নিকটে নিয়ে গিয়ে বললেন, হে উম্মুল মু'মিনীন! আমি আপনাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি কি রাসূল (ﷺ) থেকে এই হাদীস শুনেননি? তখন আয়েশা রাঃ) বললেন, জী হ্যাঁ। অতঃপর ইবুন ওমর (রাঃ) বলেন, আবু হুরায়রা! তুমি সত্যিই আমাদের চেয়ে বেশী রাসুলের সাথে থাকতে এবং আমাদের চেয়ে তার হাদীস সম্পর্কে বেশী জ্ঞান রাখ।মুসনাদে আহমাদ হা/৪৪৫৩।
তাহক্বীক্ব : সনদের সকল রাবী মযবূত। শুধু তাই নয় অন্য রেওয়ায়েতে ইবনু ওমর (রাঃ) আফসোস করে বলেন, আমরা জীবনে অনেক কিরাত্ব নষ্ট করেছি। সহীহ মুসলিম হা/৫২।
হুযায়ফা (রাঃ)-এর মন্তব্য :
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে বলল, নিশ্চয়! আবু হুরায়রা রাসূল (ﷺ) থেকে অনেক হাদীস বর্ণনা করে।তখন ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, তার বর্ণিত কোন হাদীস নিয়ে তোমার সন্দেহ করা থেকে আমি আল্লাহর নিকট তোমার পরিত্রাণ চাই’। মুস্তাদরাকে হাকিম হা/৬১৬৫
সাহাবীগণের ইজমা :
জানাযার ছালাতে সাধারণত গণ্য-মান্য ব্যক্তিবর্গকে পাঠানো হয়। আর জানাযার ছালাত যদি হয় মা আয়েশা (রাঃ)-এর তাহলে স্বভাবতঃই সাহাবীগণের মাঝে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ তিনিই আদায় করাবেন। ৫৭ হিজরীর রমযান মাসে যখন মুমিনগণের মা আয়েশা (রাঃ) মারা যান তখন ছাহাবায়ে কেরাম আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে জানাযার ছালাত পড়ানোর জন্য নির্বাচন করেন।বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৮/১০১।
৫৭ হিজরীর এই ঘটনা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর ন্যায়পরায়ণতা ও সততার ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরাম ও মদীনাবাসীর ইজমা বলা যায়। আর এই ঘটনা উপরে উল্লেখিত সকল অভিযোগের অনেক পরের ঘটনা। যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে উপরের সকল অভিযোগ ডাহা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে শত্রুতার নির্মম পরিণতি:
কাজী ত্ববারী বর্ণনা করেন আমরা একদা জা'মে মানসুরে হাদীসের দারসে ছিলাম।খোরাসান থেকে একজন হানাফী মাযহাবের অনুসারী যুবক আসল।
সে মুসাররাতের হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তখন তাকে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীস শুনানো হল। (মুসাররাতের হাদীস বিষয়ক আলোচনা যথা জায়গায় করা হবে ইনশাআল্লাহ) সে বলল,
أبو هريرة غير مقبول الحديث
আবু হুরায়রার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। (নাউযুবিল্লাহ!) রাবী বলেন, তার এই কথা বলা শেষ হয়নি সাথে সাথে ছাদ থেকে বিরাট একটা সাপ তার সামনে পড়ল। ছেলেটি ভয়ে পালাতে লাগল। সাপটিও তার পিছু নিল। মানুষজন তাকে বলল তওবা কর! তওবা কর! সে তওবা করল। সাথে সাথে সাপটি হারিয়ে গেল। ঘটনাটি অনেক আয়েম্মায়ে কেরাম সনদসহ উল্লেখ করেছেন। সনদ উঁচু পর্যায়ের সহীহ।যাহাবী, তারিখুল ইসলাম ৩/৩৫৪; তারীখুল মুলুক ওয়াল উমাম ১৭/১০৬; যাহাবী, সিয়ার আলামিন নুবালা ২/৬১৯।নিকট অতীতে মিসরের অভিশপ্ত লেখক আবু রাইয়া। আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বিষয়ে এমন কি নেই যা সে বলেনি। আব্দুর রহমান ইবনে ইয়াহিয়া আল মুয়াল্লীমী (রহঃ) তার আনওয়ার আল কাশিফা বইয়ে তার সকল অভিযোগের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন। এই অভিশপ্ত ব্যক্তিটি মৃত্যুর পূর্বে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নাম চিৎকার করতে করতে উচ্চারণ করছিল। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই সমস্ত অভিশপ্তদের হাত থেকে রক্ষা করুন!
সমাপ্ত।