সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

শাসক সিরিজ - ৮ (যেসব শাসক ইসলামের নাম ভাঙিয়ে খায়, সেসব শাসকের বিরুদ্ধে সতর্ক করা কি ওয়াজিব?)

প্রশ্নঃ যেসব শাসক ইসলামের নাম ভাঙিয়ে খায়, মুসলিমদের সাথে ধোঁকা প্রতারণা করে, কুফরী ঔপনিবেশিক শক্তির ক্রিড়নক, তারাই তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এইসব শাসকদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, এসব শাসকরাই মুসলমানদের পিছিয়ে পড়ার কারণ, ইসলামী ও আরব দেশগুলোকে তারা কাফের জাতির লেজুড়ে পরিণত করেছে, সেসব শাসকের বিরুদ্ধে সতর্ক করা কি ওয়াজিব?

উত্তরঃ মুসলিম শাসকের বিরোধিতা করা ইসলামের দেখানো পথ নয়। বরং ইসলামের দেখানো পথ হলো, নিম্নোক্ত রীতিগুলো খেয়াল রেখে শাসকদের নসীহাহ করা:
১) আপনার ও তার মাঝে একান্ত গোপনে হবে এই নসীহাহ,
২) আপনি তার পদ মর্যাদা খেয়াল রেখে আদবের সাথে ও নম্র ভাষায় নসীহাহ করবেন এবং
৩) আপনার কাজ এখানেই শেষ। নসীহাহ গ্রহণ করলে ভালো, না করলে আপনি আপনার জিম্মা থেকে মুক্ত।

এখন "ইসলামের নাম ভাঙিয়ে খায়" এটা সব মুসলিমের জন্য নয়, বরং এটা (খতিয়ে) দেখবেন আলেমগণ এবং আহলুল হাল্লি ওয়াল 'আকদ। যদি সত্যিই শাসক কুফরে বাওয়াহ-তে লিপ্ত হয় -যে বিষয়ে আমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে-, তাহলে তারাই (আলেম ও আহলুল হাল্লি ওয়াল 'আকদ) উম্মাহর মাসলাহাহ দেখবেন। জনসাধারণের জন্য ঠিক নয় যে, তারা এক্ষেত্রে এমন কোনো কাজ করে বসবে, যার ফলে উম্মাহর উপর দিয়ে ধ্বংসের ঝড় বয়ে যাবে, যুদ্ধ, রক্তের প্রবাহ, সম্পদের ক্ষতি ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হবে। বরং জনসাধারণ ধৈর্য ধারণ করবেন আলেমরা ও আহলুল হাল্লি ওয়াল 'আকদ কথা বলা পর্যন্ত। জনসাধারণ এবং ছাত্ররা তাড়াহুড়া ও তাড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ, শাসকের কুফরে বাওয়াহ প্রকাশ পেয়ে গেলেই দ্বীন বিদ্রোহ আবশ্যক করে না শর্ত ছাড়া; যেগুলোর কেন্দ্রবিন্দু হলো: নূন্যতম ক্ষতি খতিয়ে দেখা এবং অবস্থা এর চেয়েও নিকৃষ্ট বা অনুরূপ না হওয়া। আর এগুলো বিষয় তো দেখবেন একমাত্র আলেমগণ এবং আহলুল হাল্লি ওয়াল 'আকদ।

আর "শাসকরা কুফরী ঔপনিবেশিকদের ক্রিড়নক" আমার মতে এধরনের কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইখওয়ানেরই মেগাফোন! তারা (এগুলো বলে) তাদের মত ভিন্ন অন্য শাসকদের আক্রমণ করে থাকে। কিন্তু তারা শাসন ক্ষমতায় গেলে এর চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ করে। মিশরে ইখওয়ান ক্ষমতায় গিয়ে কি করেছিল সেগুলো দেখে আপনি ইনসাফভিত্তিক মতামত দিন।

এক্ষণে "শাসকরাই মুসলমানদের পিছিয়ে পড়ার কারণ" ঢালাওভাবে এটা বলা সঠিক নয়। কোনো সমাধান মূলক কথা নয় এটা, যদি সত্যিই আপনি সমাধান চান। বরং মুসলিমদের পিছিয়ে পড়া এবং অন্যান্য জাতির উপরে নির্ভরশীল হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হলো: শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া; যেগুলো মূলত শত্রুদেরকে (সমাধানের নামে) এই জাতির মাঝে ঢুকে উম্মাহর চিন্তা চেতনা নষ্ট করে ধ্বংস করার সুযোগ করে দিয়েছে।

আব্বাসী খেলাফতের শেষের দিক থেকে এটাই মুসলিমদের বাস্তব অবস্থা। উসমানী খেলাফতের (শুরুর দিকে) একটু উন্নতি হয়েছিল এর চেয়ে, কিন্তু আবার (শেষের দিকে) নেমে গেছে। যেসব শাসকরা এমতাবস্থায় এসব দেশের ক্ষমতা পেয়েছে তাদের এ ক্ষেত্রে কোনো দখল নাই। বরং তারা অবস্থা বুঝে দেশকে নিরাপত্তায় নিতে সচেষ্ট। তো (এটা দেখে) ঐসব ঔপনিবেশিক দেশগুলো মুসলিম দেশে এইসব (ইসলামী) দলগুলোকে সৃষ্টি করে, তাদের অগ্রযাত্রা রুখে দিয়ে পশ্চাদপদ করে রাখার জন্য।

হে আল্লাহ, আপনি অবস্থার সংশোধন করে দিন। আমাকে এবং সবাইকেই আপনার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার কাজগুলো করার তাওফীক দিন।"


মক্কার মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
 
Top