প্রবন্ধ শাসকের বিরুদ্ধে বের হওয়ার ক্ষেত্রে শাসকদের অবস্থা

  • Thread Author
১. যদি শাসক কাফের হয়, যার কুফরীর ব্যাপারে প্রমাণ স্পষ্ট হয়, তখন তার বিরুদ্ধে বের হওয়া মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়, তবে শর্ত হচ্ছে,
  • সমস্যা দূর করা কিংবা কমিয়ে ফেলার ক্ষমতা থাকতে হবে।
  • সমস্যা যা আছে তার চেয়ে বড় ফিতনা কিংবা তার সম পর্যায়ের ফিতনাতে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা মুক্ত থাকতে হবে।
  • যদি শর্ত পূরণ করা সম্ভব না হয়, তবে সেখানে ধৈর্যের সাথে অনুকুল অবস্থার জন্য কাজ করে যেতে হবে।
২. যদি শাসক যালিম হয় বা ফাসেক হয়, তখন তার বিরুদ্ধে বের হওয়া যাবে কি না এ ব্যাপারে সালাফদের মাঝে দু'টি মত রয়েছে:
  • বের হওয়া যাবে। এটি হানাফী, মালেকীশাফেয়ী মাযহাবের ইমামগণের মত। এর পক্ষে যেমন কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য অনেক তেমনি যুক্তি ও ঐতিহাসিক ঘটনাও কম নয়।
  • বের হওয়া যাবে না। ইমাম আহমাদ ও পরবর্তী আলেমগণের ঐকমত্য। এ ব্যাপারেও কুরআন
হাদীস ও ইতিহাসের শিক্ষা প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়ে থাকে। দলীল প্রমাণাদি বিশ্লেষণপূর্বক প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হচ্ছে, যালিম শাসকের বিরুদ্ধে বের হতে হলে কতগুলো শর্ত পাওয়া যেতে হবে:

- সম্পূর্ণভাবে দূর করা ও সেখানে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ থাকতে হবে।​
- যুলুম ও ফাসাদ কম করা সম্ভব হতে হবে যদিও তা পুরোপুরি দূর না হয়।​

আর যদি তাকে রাখা ও তার বদলে যাকে আনা হবে সেখানে কোনো দৃশ্যমান পার্থক্য সূচিত না হয় তাহলে বিদ্রোহ না করাই উত্তম কাজ হবে। তখন ধৈয্য ধারণ করে অনুকুল সময়ের অপেক্ষায় দীন ও ঈমানের চর্চা করতে হবে।

কিন্তু যদি দেখা যায়, তাকে তাড়াতে গিয়ে আরও বড় ধরনের সমস্যা আসবে, তখন তা করা একবাক্যে হারাম হবে। সুতরাং যদি সেসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব না হয়, তবে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে বের না হওয়াই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। কারণ, ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, মুসলিমরা শাসকের বিরুদ্ধে বের হয়ে আরও বড় বিপদ ডেকে এনেছে, যেমন :

১। উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহুর বিরুদ্ধে বের হয়ে সমস্যা বেশি তৈরি করেছে।
২। উষ্ট্রীর যুদ্ধের পরিণতি হচ্ছে খিলাফত ধ্বংস হওয়া ও বনি উমাইয়ার রাজত্ব কায়েম হওয়া।
৩। হুসাইন ইবন আলী রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহুর বিয়োগান্ত ঘটনার উদ্ভব হওয়া।
৪। মদীনাবাসীরা হাররার যুদ্ধে বের হয়ে শুধু মৃত্যু আর অপমানই ডেকে এনেছে।
৫। ইবনুল আস'আছ এর সাথে ক্বারী ও আলেমরা হাজ্জাজের বিরুদ্ধে বের হয়ে বিশাল বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
৬। যাইদ ইবন আলীর ঘটনা আজও সকলকে অসম অবস্থার কথা মনে করিয়ে দেয়। [মু"আল্লেমী, আত-তানকীল, (১/৯৪)]
৭। রাসূলের পরিবার থেকে ২৫ জন বিদ্রোহ করেছিল কিন্তু তাদের কোনো উপকার হয়নি, জাতিরও হয়নি। [আবুল হাসান আল-আশ'আরী, মাকালাতুল ইসলামিয়্যীন (১/১৫১-১৬১)]



আরও পড়ুন - ফাতওয়া আল হামাউইয়্যা
 
Back
Top