- Joined
- Feb 8, 2023
- Threads
- 14
- Comments
- 15
- Reactions
- 152
- Thread Author
- #1
ভূমিকা:
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি।আজকের আলোচনা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা নিয়ে, যা ইসলামের শিক্ষা ও মুসলিম সমাজের মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে।
হাদিসের বর্ণনা:
আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“দু’জন মুসলিম যখন পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হয়ে একজন অপরজনের ওপর অস্ত্র ধারণ করে, তখন তারা উভয়ে জাহান্নামের দাঁরপ্রান্তে উপনীত হবে। অতঃপর যদি একজন অপরজনকে হত্যা করে বসে, তাহলে তারা উভয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।”
(সহীহ বুখারী ৬৮৭৫, মুসলিম ২৮৮৮, আবূ দাঊদ ৪২৬৮, নাসায়ী ৪১২২)
অপর বর্ণনায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন:
"যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামী হয়।"
"আমি বললাম, হত্যাকারীর বিষয়টি তো পরিষ্কার, কিন্তু নিহত ব্যক্তি কেন জাহান্নামী হবে? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, 'কারণ সে (নিহত ব্যক্তি) নিজের সঙ্গীকে হত্যার ইচ্ছা পোষণ করছিল।'"
(সহীহ মুসলিম ২৮৮৮)
হাদিসটির অর্থ ও ব্যাখ্যা:
এই হাদিসটি মুসলিম সমাজে গৃহীত দুই মুসলিমের মধ্যে সংঘর্ষ ও হত্যার মারাত্মক পরিণতির বিষয়ে সতর্কতা প্রদান করছে।নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্পষ্ট করেছেন যে, যখন দুটি মুসলিম একে অপরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র ধারণ করে, তখন তাদের মধ্যে কোনো একজন যদি অপরজনকে হত্যা করে, তাহলে উভয়েই জাহান্নামের শাস্তির যোগ্য হন।
নিহত ব্যক্তি কেন জাহান্নামী হবেন?
যেহেতু নিহত ব্যক্তি তার সঙ্গীকে হত্যা করার ইচ্ছা পোষণ করছিল, তাই তিনি হত্যার জন্য অপরাধী। যদিও সে হত্যার কাজটি করেনি, তবুও তার উদ্দেশ্য ও মনোভাব তাকে শাস্তির উপযুক্ত করে তোলে।ইমাম খাত্তাবী ও ইমাম কুরতুবীর ব্যাখ্যা:
- ইমাম খাত্তাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
"এই শাস্তির বিধান প্রযোজ্য এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে, যারা পার্থিব উদ্দেশ্যে, যেমন দুনিয়া লাভ বা গোষ্ঠীগত সংঘাতে লিপ্ত হয়ে যুদ্ধ করেন।"
তিনি আরো বলেন, "যারা শারী‘আতের নির্দেশে অত্যাচারী বা শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন, তাদের জন্য শাস্তি প্রযোজ্য নয়।"
(ফাতহুল বারী, ১২তম খন্ড) - ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
"যদি যুদ্ধ পার্থিব স্বার্থ বা নিজেদের কামনা-বাসনা অনুসরণ করে হয়, তবে তা হাদিসের প্রেক্ষিতে গণ্য হয়।"
(ফাতহুল বারী, ১৩ তম খন্ড)
ইমাম নববীর ব্যাখ্যা:
ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:- "হত্যাকারী ও নিহত উভয়ের জাহান্নামী হওয়া, শুধুমাত্র সেই লোকদের জন্য প্রযোজ্য, যারা যুদ্ধ বা সংঘর্ষে নিঃসন্দেহে গোষ্ঠীগত বা পার্থিব উদ্দেশ্যে লিপ্ত ছিল।"
- "নিহত ব্যক্তির জাহান্নামী হওয়ার কারণ হল, সে তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য আগ্রহী ছিল, যদিও তার তা বাস্তবে ঘটেনি।"
(শারহু সহীহ মুসলিম, ১১তম খণ্ড)
যুদ্ধ ও সাহাবীদের মাঝে সংঘর্ষ:
এটি মনে রাখা জরুরি যে, রাসূল (ﷺ)-এর সাহাবীদের মাঝে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলি এই শাস্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। সাহাবীরা, যদিও একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তারা সবাই ইসলামের উদ্দেশ্য ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ছিল ইজতিহাদের ফলস্বরূপ, এবং তাদের মধ্যে কেউ কোনো ভুল করেনি, বরং তাদের যুদ্ধ ছিল ইসলামের সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে।বর্তমান যুগে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য রক্ষা:
আজকের মুসলিম সমাজের জন্য, এই হাদিস থেকে শিক্ষা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে করে আমরা পার্থিব শত্রুতা ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দূরে থাকতে পারি। শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে।মহান আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃত সালাফী ও আহলে হাদীস হওয়ার তৌফিক দিন এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য রক্ষা করুন। আমীন।
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)
শিক্ষক, চর বাগডাঙ্গা সেরাজুল হুদা লতিফিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া ও হাফিজিয়া মাদরাসা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)
শিক্ষক, চর বাগডাঙ্গা সেরাজুল হুদা লতিফিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া ও হাফিজিয়া মাদরাসা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।