সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
abdulazizulhakimgrameen

কুরবানী মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যাবে কি? এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
LV
12
 
Awards
23
Credit
17,648
উত্তর: প্রথমত,কোন ব্যক্তির নামে কুরবানী করা এই কথাটি সঠিক নয়। কেননা কুরবানী করা একটি ইবাদত। আর কুরআন সুন্নাহ দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে,কোন নেক আমল বা আমলে সালেহ গৃহীত ও নৈকট্য দানকারী হয় না; যতক্ষণ না তাতে দু’টি শর্ত পূরণ হয়েছে;ইখলাস এবং রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশিত বিধি-বিধান অনুযায়ী হওয়া।তাই কুরবানী কোন ব্যক্তির নামে নয় বরং কুরবানী হবে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর নামে। আল্লাহ তাআলা বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ অতএব,তুমি সালাত পড় তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে এবং কুরবানী কর।(সূরা আল কাউসার ২) তিনি অন্যত্র বলেন, قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ অর্থাৎ, বল, অবশ্যই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।(সূরা আনআম ১৬২) অতএব কোন ব্যক্তির নামে না বলে বলুন অমুক ব্যক্তির পক্ষ থেকে মহান আল্লাহর নামে।

দ্বিতীয়ত:মৃত ব্যক্তি যদি মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়ত করে যায়,তাহলে তার পরিবারের জীবিতদের জন্য কর্তব্য হলো তার ওসিয়ত পূরণার্থে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে মৃত ব্যক্তির জন্য স্বতন্ত্রভাবে কুরবানী দেওয়া। যেহেতু বৈধ ওসিয়ত পূর্ণ করা ওয়াজিব। কিন্তু তিনি যদি অসিয়ত না করে যান,তাহলে ইসলামী শরীয়তে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে আলেদা করে কুরবানী করার যেমন কোন সহীহ হাদীস নেই তেমনি জমহুর ওলামাদের বিশুদ্ধ মতেও এটি বৈধ নয়।মূলত কুরবানীর বিধান কেবল জীবিত ব্যক্তির জন্য। কেউ যদি কুরবানীর পূর্ব মুহূর্তে মারা যায় তাহ’লে তার উপর থেকে বিধান রহিত হয়ে যাবে। (ইবনে উসাইমীন, আহকামুল উযহিয়াহ ১/৩-৪)।

মূলত সমাজে মৃত মানুষের পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়ার পক্ষে আবু দাউদ থেকে যে হাদীসটি দলিল হিসেবে পেশ করা হয়, সে হাদীসটি যঈফ এটি আমলযোগ্য নয়। হাদীসটি হল- হানাশ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,আমি আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে দু’টি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কী ব্যাপার? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পক্ষ থেকে আমাকে কুরবানী করার অসিয়ত করে গেছেন, তাই আমি তাঁর পক্ষ থেকে ঐ কুরবানী করছি’।(আবূ দাঊদ, হা/২৭৯০; মিশকাত, হা/১৪৬২ সনদ জয়ীফ কারণ,এর সনদে শরীক স্মৃতিশক্তিগত কারণে দুর্বল রাবী এবং হানাশ-কে জমহূর একজন দুর্বল রাবী হিসেবে অবহিত করেছেন)

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা যুগ শ্রেষ্ঠ ইমাম আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (মৃ. ১৩৫৩ হি.) (রহঃ) বলেন,‘মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়ার ব্যাপারে আমি কোন সহীহ- মারফূ‘ হাদীস পাইনি। উল্লেখিত আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীসটি যঈফ। তবে কোন ব্যক্তি যদি মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী প্রদান করে, তাহলে উক্ত পশুর গোশত সম্পূর্ণটাই সাদাক্বাহ করে দিতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত’।[বিস্তারিত দেখুন আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী শারহ জামেঊত তিরমিযী (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৬; শায়খ ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শারহ মিশকাতুল মাছাবীহ (বানারাস, হিন্দ : আল-জামে‘আহ আস-সালাফিয়াহ, ৩য় সংস্করণ ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি.), ৫ম খণ্ড, পৃ. ৯৫)]

তিনি আরো বলেন, أُحِبُّ أَنْ يَّتَصَدَّقَ عَنْهُ وَلَا يُضَحِّيَ ‘আমি মৃত ব্যক্তির জন্য সাদাক্বাহ করা পছন্দ করি, কুরবানী করা নয়’।(মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহ মিশকাতুল মাছাবীহ (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১৪২২ হি./২০০২ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১০৮৪)

মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি দেওয়ার বিধান সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে প্রশ্ন করা হলে শায়খ তার প্রদত্ত ফাতওয়ায় বলেন,-কুরবানি মৃতদের জন্য নয়। কুরবানি জীবিতদের জন্য। মৃতদের তরফ থেকে কুরবানি করা সুন্নাত নয়। এর দলিল হলো—শরিয়ত এসেছে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ নিকট থেকে, আর রাসূলের সুন্নাহ’য় কেবল জীবিতের পক্ষ থেকে কুরবানি করার কথা বর্ণিত হয়েছে। নাবী ﷺ এর আত্মীয়স্বজন মারা গেছেন, কিন্তু তাঁদের পক্ষ থেকে কুরবানি করেননি। তিনি মারা যাওয়ার আগেই তাঁর ﷺ সকল সন্তান মারা গেছে। তাঁদের কেউ কেউ সাবালক হয়েছিলেন, আবার কেউ কেউ সাবালক হওয়ার পূর্বেই মারা গেছেন। তাঁর সকল ছেলে সন্তান সাবালক হওয়ার পূর্বেই মারা গেছেন।

আর তাঁর সকল কন্যাসন্তান সাবালিকা হওয়ার পর মারা গেছেন। কেবল ফাত্বিমাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) ব্যতীত; তিনি তাঁর ﷺ মৃত্যুর পরেও জীবিত ছিলেন। তিনি ﷺ তাঁর জীবদ্দশায় দুজন স্ত্রীকে হারান। তাঁরা হলেন খাদীজাহ ও যাইনাব বিনতে খুযাইমাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)। কিন্তু তিনি তাঁদের দুজনের তরফ থেকে কুরবানি করেননি। তাঁর চাচা হামযাহ বিন ‘আব্দুল মুত্বত্বালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) শহিদ হয়েছেন তাঁর জীবদ্দশায়, কিন্তু তিনি তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানি করেননি। আসলে তিনি ﷺ মৃত ব্যক্তির তরফ থেকে কুরবানি করাকে শরিয়ত হিসেবে প্রণয়ন করেননি এবং স্বীয় উম্মতকে এই কাজের দিকে আহ্বানও করেননি।এরই ভিত্তিতে আমরা বলি, মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এটা নাবী ﷺ থেকে বর্ণিত হয়নি। আর আমি সাহাবীদের থেকেও এমন কাজের বর্ণনা আছে বলে জানি না।

হ্যাঁ, মৃত ব্যক্তি যদি কুরবানি করার অসিয়ত করে যায়, তাহলে তাঁর অসিয়ত পালন করা হবে এবং তাঁর অসিয়ত পালন করার জন্য তাঁর তরফ থেকে কুরবানি করা হবে। অনুরূপভাবে মৃত ব্যক্তি যখন জীবিতদের আওয়াতাভুক্ত হন, তখনও তাঁর তরফ থেকে কুরবানি করা হয়ে যায়। যেমন কোনো ব্যক্তি তার নিজের তরফ থেকে এবং তার পরিবারের তরফ থেকে কুরবানি করে, আর এর মাধ্যমে (পরিবারের) জীবিত-মৃত সকল সদস্যের কথা নিয়ত করে। পক্ষান্তরে এককভাবে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা সুন্নাহসম্মত নয়।”(ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ১০-১১; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি. (১ম প্রকাশ)।

জেনে রাখা ভালো যে,মক্কা বা হারামের বাহিরে থেকে যারা মৃত মানুষের পক্ষ থেকে হজ্জে তামাত্তু ও ক্বিরাণ পালন করবেন তাদের জন্য হাদ্ই বা কুরবানী করা ওয়াজিব। যেহেতু এটি হজ্জের একটি অংশ, সেহেতু যার জন্য হজ্জ করা হবে তার পক্ষ থেকেই কুরবানী দিতে হবে। উল্লেখ্য যে,বদলী হজ্জ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা শর্ত নয়। বরং অন্তরে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে। (আবূদাঊদ হা/১৮১১; মিশকাত হা/২৫২৯; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৭১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১১/৮২)(আল্লাহই অধিক জ্ঞানী)।



উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।​
 
Last edited by a moderator:

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,350Threads
Total Messages
17,210Comments
Total Members
3,679Members
Latest Messages
Shajib AuzidLatest member
Top