হাদিস ও হাদিসের ব্যাখ্যা বিবাহ অনুষ্ঠান ও ঈদের দিন গান শোনা ও দফ বাজানোর বৈধতা

Joined
Jun 16, 2023
Threads
46
Comments
69
Reactions
769
বিবাহের অনুষ্ঠানে এবং ঈদের দিন দাসীর কণ্ঠে গান শোনা ও দফ বাজানোর বৈধতা:

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (ﷺ) আমার নিকট এলেন তখন আমার নিকট দু’টি মেয়ে বু’আস যুদ্ধ সংক্রান্ত গান গাইছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) এসে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র (দফ্) বাজান হচ্ছে নবী (ﷺ) -এর নিকট! তখন আল্লাহর রসূল (ﷺ) তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। অতঃপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম আর তারা বেরিয়ে গেল।

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ دَخَلَ عَلَىَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَعِنْدِي جَارِيَتَانِ تُغَنِّيَانِ بِغِنَاءِ بُعَاثَ، فَاضْطَجَعَ عَلَى الْفِرَاشِ وَحَوَّلَ وَجْهَهُ، وَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ فَانْتَهَرَنِي وَقَالَ مِزْمَارَةُ الشَّيْطَانِ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَقْبَلَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ ـ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ـ فَقَالَ ‏"‏ دَعْهُمَا ‏"‏ فَلَمَّا غَفَلَ غَمَزْتُهُمَا فَخَرَجَتَا‏.‏ وَكَانَ يَوْمَ عِيدٍ يَلْعَبُ السُّودَانُ بِالدَّرَقِ وَالْحِرَابِ، فَإِمَّا سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَإِمَّا قَالَ ‏"‏ تَشْتَهِينَ تَنْظُرِينَ ‏"‌‏.‏ فَقُلْتُ نَعَمْ‏.‏ فَأَقَامَنِي وَرَاءَهُ خَدِّي عَلَى خَدِّهِ، وَهُوَ يَقُولُ ‏"‏ دُونَكُمْ يَا بَنِي أَرْفِدَةَ ‏"‌‏.‏ حَتَّى إِذَا مَلِلْتُ قَالَ ‏"‏ حَسْبُكِ ‏"‌‏.‏ قُلْتُ نَعَمْ‏.‏ قَالَ ‏"‏ فَاذْهَبِي ‏"‌‏.‏

সহিহ বুখারী ৯৪৯

শাইখুল ইসলাম ইবনু হাজার আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ) এই হাদিসটির শরাহ তে বলেন,

وفيه أن التلميذ إذا رأى عند شيخه ما يستكره مثله بادر إلى إنكاره، ولا يكون في ذلك افتئات على شيخه، بل هو أدب منه ورعاية لحرمته وإجلال لمنصبه، وفيه فتوى التلميذ بحضرة شيخه بما يعرف من طريقته، ويحتمل أن يكون أبو بكر ظن أن النبي صلى الله عليه وسلم نام فخشي أن يستيقظ فيغضب على ابنته، فبادر إلى سد هذه الذريعة.
«فتح الباري» لابن حجر 2/ 443

হাদিসটিতে এই বুঝ রয়েছে যে কোনো ছাত্র যদি তার শাইখের মাঝে এমন কিছু দেখে যা সে অপছন্দ করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ তাতে অস্বীকৃতি জানানো উচিত।
এটি তার শাইখের উপর আক্রমণ করা বলে ধর্তব্য হবে না। বরং এতে ছাত্রের আদবের লক্ষণ, তার উস্তাদের সম্মান রক্ষা এবং উস্তাদের অবস্থানের প্রতি সম্মান প্রকাশ পায়। আর শাইখের উপস্থিতিতে ছাত্র তার শাইখের ফতোয়াদানের পদ্ধতি সমন্ধে যা জানে তার উপর ভিত্তি করে ছাত্রের ফতোয়া দেয়ার অনুমোদনও হাদিসটি থেকে বোঝা যায় (অর্থাৎ শাইখের উপস্থিতিতে শাইখের পূর্ববর্ণিত ফতোয়ার সাথে সাংঘর্ষিক কিছু দেখলে তার ফতোয়া স্মরণ করিয়ে দেয়া). হতে পারে আবু বকর ভেবেছিলেন রাসূল ﷺ ঘুমিয়ে আছেন এবং আশঙ্কা করেছিলেন যে গানের আওয়াজের জন্য ঘুম ভেঙে গেলে তার মেয়েদের উপর রাগ করবেন। তাই তিনি (আবু বকর) গান বন্ধ করতে উদ্যত হোন।

ফাতহুল বারী ২/৪৪৩

অনুবাদকের ব্যাখা: অর্থাৎ যেহেতু আবু বকর (রা:) দেখলেন রাসূল (ﷺ) এর সামনে বাদ্য বাজানো হচ্ছে তখন তিনি সেটাতে প্রতিবাদ জানালেন। যেহেতু তিনি আগে থেকে জানতেন রাসূল ﷺ বাদ্যকে অপছন্দ করতেন। অর্থাৎ ছাত্র তার শাইখের পূর্ববর্তী ফতোয়ার ভিত্তিতেই এহেন কাজের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু, রাসূল ﷺ ঘুমিয়ে আছেন এই জন্য গায়িকাদের চলে যেতে বললেন। কিন্তু সেটা ছিল ঈদের দিন, আর ঈদের দিন দফ বা বাদ্য বাজানো জায়েজ সেটা হয়তো আবু বকর (রা:) জানতেন না। তাই রাসূল ﷺ বাদ্য শুনছিলেন, এমতাবস্থায় শোয়া থেকে উঠে তাদের ছেড়ে দিতে বললেন।

বস্তুত আবু বকর (রা:) এবং রাসূল (ﷺ) নিজ নিজ অবস্থানে সঠিক কাজ করেছেন এবং হাদিসটি থেকে শাইখের বা উস্তাদের ফতোয়ার বিপরীত কিছু দেখলে বা ভুল দেখলে তাতে অস্বীকৃতি জানানো বেয়াদবি নয় বরং তা উস্তাদের সম্মানের প্রতি আদবের লক্ষণই প্রকাশ পায় বলে বুঝাচ্ছে।

ইবন হাজার আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ) ঈদের দিন বা নিকাহের উরুশ এ বাদ্য বাজানোর বৈধতা সমন্ধে বলেন,

উক্ত হাদিসটি দাসীর কন্ঠে গান শোনার বৈধতা প্রমাণ করে যদিও দাসীটি শ্রোতার নিজের দাসী না হয়ে থাকে। কারণ, রাসূল ﷺ আবু বকর কে তা শুনতে নিষেধ করেননি বরং আবু বকরেই তাদেরকে বাধা দিতে নিষেধ করেছেন। আর আয়েশা (রা:) তাদেরকে চলে যেতে ইঙ্গিত দেয়ার আগ পর্যন্ত তারা গান গেয়েছে। এতে আর সংশয় থাকে না যে তা বৈধতার সুযোগ থাকবে যদি সেখানে ফিতনার আশঙ্কা না থাকে। আল্লাহ ভালো জানেন।

واستدل به على جواز سماع صوت الجارية بالغناء ولو لم تكن مملوكة؛ لأنه صلى الله عليه وسلم لم ينكر على أبي بكر سماعه بل أنكر إنكاره، واستمرتا إلى أن أشارت إليهما عائشة بالخروج. ولا يخفى أن محل الجواز ما إذا أمنت الفتنة بذلك، والله أعلم.
«فتح الباري» لابن حجر 2/ 443

ফাতহুল বারী ২/৪৪৩

ইবনু হাজার আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন,

قال المهلب: في هذا الحديث إعلان النكاح بالدف وبالغناء المباح، وفيه إقبال الإمام إلى العرس وإن كان فيه لهو ما لم يخرج عن حد المباح.
«فتح الباري» لابن حجر 9/ 203

আল মুহাল্লাব বলেছেন, এই হাদিসটিতে প্রমাণিত হয় যে দফ বাজিয়ে বা গান গেয়ে বিয়ের ঘোষণা দেয়া জায়েজ। ইমামও এমন বিয়ের অনুষ্ঠানে আসতে পারবে, যতক্ষণ শরয়ী বৈধতার সীমারেখা অতিক্রম না করছে।

ফাতহুল বারী লি ইবন হাজার, ৯/২০৩.

শায়েখ মুহাম্মদ বিন সলেহ আল উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তির আগমনের ক্ষেত্রে সুন্নাহ সম্মতভাবে এটা বৈধ। একজন মহিলা রাসূল (ﷺ) এর নিকটে এসে তাকে বলেছিলেন, আমি মানত করেছিলাম যে, আপনাকে আল্লাহ তা’আলা হিফাযাতে (সুস্থাবস্থায়) ফিরিয়ে আনলে আপনার সম্মুখে আমি দফ বাজাব। তিনি তাকে বলেছিলেন: 'তুমি মানত পূর্ণ করো।'
যদি এটা পাপ হতো তাহলে রাসূল (ﷺ) তাকে মানত পূর্ণ করতে বাধা দিতেন। কারণ, স্রষ্টার অবাধ্যতামূলক কোনো মানত পূরণের প্রয়োজন নেই।

আশ-শারহুল মুমতি আলা যাদিল মুস্তাকনি' ১২/৩৫২

وأما قدوم الغائب، فقد جاءت السنة بإباحته، فقد أتت امرأة إلى النبي صلى الله عليه وسلم وقالت له: إني نذرت إن ردك الله سالما أن أضرب بالدف بين يديك، فقال: «أوف بنذرك»، ولو كان هذا معصية لمنعها من الوفاء بالنذر؛ لأنه لا وفاء لنذر في معصية الله.
«الشرح الممتع على زاد المستقنع» 12/ 352

শায়েখ নিম্নোক্ত হাদিসটির কথা বলেছেন:

حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ، قَالَ سَمِعْتُ بُرَيْدَةَ، يَقُولُ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ فَلَمَّا انْصَرَفَ جَاءَتْ جَارِيَةٌ سَوْدَاءُ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي كُنْتُ نَذَرْتُ إِنْ رَدَّكَ اللَّهُ سَالِمًا أَنْ أَضْرِبَ بَيْنَ يَدَيْكَ بِالدُّفِّ وَأَتَغَنَّى ‏.‏ فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِنْ كُنْتِ نَذَرْتِ فَاضْرِبِي وَإِلاَّ فَلاَ ‏"‏ ‏.‏

বুরাইদাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর কোন এক যুদ্ধাভিযানে যান। তিনি ফিরে এলে এক কৃষ্ণবর্ণা মেয়ে এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি মানত করেছিলাম যে, আপনাকে আল্লাহ তা’আলা হিফাযাতে (সুস্থাবস্থায়) ফিরিয়ে আনলে আপনার সম্মুখে আমি দফ বাজাব এবং গান করব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি সত্যিই যদি মানত করে থাক তবে দফ বাজাও, তা না হলে বাজিও না। সে দফ (এক মুখ খোলা ঢোল) বাজাতে লাগল। (তিরমিজি ৩৬৯০)

লেখা: সাফিন চৌধুরী
লেখা পেতে যুক্ত হোন: টেলিগ্রাম
 
Similar threads Most view View more
Back
Top