- Joined
- Jul 31, 2024
- Threads
- 8
- Comments
- 8
- Reactions
- 143
- Thread Author
- #1
প্রশ্ন : বিভিন্ন মুসলিম দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার নির্বাচন করা হয়। উক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যাবে কি? এ ব্যাপারে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের বক্তব্য কী?
উত্তর :-এ ব্যাপারে দুই ধরনের বক্তব্য রয়েছে।(ক) একশ্রেণীর আলেম মনে করেন, গণতন্ত্র ইসলাম বিরোধী কুফুরী মতবাদ। গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার নির্বাচন পদ্ধতিকেও ইসলাম সমর্থন করে না। তাই একে সমর্থন করা যাবে না।
(খ) অন্য আলেমগণ মনে করেন, যদি উদ্দেশ্য হয় এই পদ্ধতির অধীনে নির্বাচিত হয়ে আইনসভাতে ঢুকে এর বিরোধিতা করা, গণতন্ত্রের বিপক্ষে দলীল উপস্থাপন করা, সাধ্যানুযায়ী অকল্যাণ ও দুর্নীতি রোধ করা, খোলাফায়ে রাশেদীনের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করা, তাহলে এতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। বরং কোন কোন মুজতাহিদ আলেম মনে করেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা ফরয। এগুলো ইজতিহাদী মাসআলা।
শাইখ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘গণতন্ত্র একটি মানবরচিত মতবাদ। এখানে জনগণ নিজেই নিজেকে শাসন করে। তাই এটি ইসলাম বিরোধী মতবাদ। শাসন করার একমাত্র অধিকার আল্লাহ তা‘আলার। কোন মানুষকে আইন প্রণয়ন করার অধিকার দেয়া জায়েয নয়, সে মানুষ যেই হোক না কেন।
‘মাওসূ‘আতুল আদইয়ান ওয়াল মাযাহিব আল-মু‘আসিরা’ গ্রন্থে এসেছে, ‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও তার প্রতি নতি স্বীকার কিংবা আইন প্রণয়নের অধিকার দেয়া নব্য শিরকের একটি রূপ। এ পদ্ধতিতে মহান আল্লাহ্র কর্তৃত্বকে বাতিল করে দেয়া হয়, অথচ আইন প্রণয়নের একচ্ছত্র অধিকার হচ্ছে- আল্লাহ তা‘আলার। কিন্তু সে অধিকার তাঁর থেকে ছিনিয়ে মাখলূক্বকে প্রদান করা হয়’ (মাওসূ‘আতুল আদইয়ান ওয়াল মাযাহিব আল-মু‘আসিরা, ২/১০৬৬, ১০৬৭ পৃ.)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হুকুম বা শাসনের মালিক একমাত্র তিনি এবং তিনিই হচ্ছেন- উত্তম হুকুমদাতা বা শাসক’ (সূরা আল-মুমিন: ১৩)। আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন, ‘আল্লাহ কি হুকুমদাতাদের শ্রেষ্ঠ নন?’ (সূরা আত-ত্বীন: ৮)। ‘তিনি নিজ হুকুমে কাউকে অংশীদার করান না’ (সূরা আল-কাহফ: ২৬)।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে নির্বাচনে অংশ নেয়ার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেন, আমি মনে করি এ নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়া ফরয। আমরা যাকে ভাল মনে করি তাকে সহযোগিতা করা ফরয। কারণ ভাল লোকেরা যদি ঢিলেমি করে, তাহলে এ স্থানগুলো কে দখল করবে? খারাপ লোকেরাই দখল করবে কিংবা এমন লোকেরা দখল করবে, যাদের কাছে না আছে ভাল, না আছে খারাপ, যারা সুবিধাবাদী। তাই আমাদের উচিত যাকে যোগ্য মনে করি তাকে নির্বাচিত করা। যদি কেউ বলেন, ‘আমরা যাকে নির্বাচিত করলাম আইনসভার অধিকাংশ সদস্য তার বিপক্ষে। আমরা জবাবে বলব, ‘কোন অসুবিধা নেই। এই একজনের মধ্যে আল্লাহ বরকত দিতে পারেন। তিনি যদি আইনসভার সামনে হক্ব কথা বলতে পারেন, তাহলে অবশ্যই এর প্রভাব থাকবে, প্রভাব থাকতেই হবে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের অপরাধ যেটা হয় সেটা হচ্ছে, আল্লাহর সাথে বিশ্বস্ত না হওয়া। আমরা শুধু বৈষয়িক বিষয়ের উপর নির্ভর করি। সুতরাং আপনি যাকে ভাল মনে করেন, তাকে নির্বাচিত করুন, এরপর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন’ (লিক্বা‘আতুল বাব আল-মাফতূহ থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দেয়া ও ভোট দেয়া জায়েয আছে কি? উল্লেখ্য, আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থা আল্লাহর নাযিলকৃত আইনে নয়। জবাবে তাঁরা বলেন, যে সরকার আল্লাহর নাযিলকৃত আইন দিয়ে শাসন করে না, শারী‘আহ আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে না কোন মুসলিমের জন্য সে সরকারে যোগ দেয়ার প্রত্যাশায় নিজেকে মনোনীত করা জায়েয নয়। তাই এ সরকারের সাথে কাজ করার জন্য কোন মুসলিমের নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে নির্বাচিত করা জায়েয নেই। তবে কোন মুসলিম যদি এ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয় কিংবা অন্যকে নির্বাচিত করে যে, এর মাধ্যমে এ শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামী শরী‘আহ ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করবে, নির্বাচনে অংশ গ্রহণকে তারা যদি বর্তমান শাসনব্যবস্থার উপর আধিপত্য বিস্তার করার মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে, তাহলে সেটা জায়েয। তবে সে ক্ষেত্রেও যে ব্যক্তি প্রার্থী হবেন তিনি এমন কোন পদ গ্রহণ করতে পারবেন না, যা ইসলামী শরী‘আর সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৩/৪০৬, ৪০৭ পৃ.)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটিকে আরো জিজ্ঞেস করা হয় যে, আপনারা জানেন, আমাদের আলজেরিয়াতে ‘আইনসভার নির্বাচন’ অনুষ্ঠিত হয়। কিছু কিছু দল আছে যারা ইসলামী হুকুমত কায়েমের দিকে আহ্বান করে। আর কিছু কিছু দল আছে যারা ইসলামী হুকুমত চায় না। এখন যে ব্যক্তি এমন কাউকে ভোট দেয় যে, প্রার্থী ইসলামী হুকুম চায় না সে ব্যক্তির হুকুম কী হবে? তবে এ ব্যক্তি ছালাত আদায় করে। জবাবে তাঁরা বলেন, ‘যেসব দেশে ইসলামী শরী‘আহ ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চালু নেই, সেসব দেশের মুসলিমদের উপর ফরয হল, ইসলামী হুকুমত ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়োজিত করা এবং যে দল ইসলামী হুকুমত বাস্তবায়ন করবে বলে চেষ্টা করে, সে দলকে একজোটে সবাই মিলে সহযোগিতা করা।
পক্ষান্তরে, যে দল ইসলামী শরী‘আহ বাস্তবায়ন চায় না, সে দলকে সহযোগিতা করা জায়েয নয়। বরং এ ধরনের সহযোগিতা ব্যক্তিকে কুফরের দিকে ধাবিত করে। দলীল হচ্ছে আল্লাহর বাণী, ‘আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের মাঝে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী বিধান দিন, তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, যাতে করে আল্লাহ আপনার প্রতি যা নাযিল করেছেন তারা এর কোন কিছু হতে আপনাকে বিচ্যুত করতে না পারে। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু পাপের শাস্তি দিতে চান। নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসিক্ব। তারা কি জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে? যারা (আল্লাহর প্রতি) বিশ্বাস রাখে তাদের কাছে আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা কে?’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ৪৯-৫০)। এ কারণে যারা ইসলামী শরী‘আহ অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে না আল্লাহ তাদেরকে কাফির হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তাদের সাথে সহযোগিতা করা থেকে, তাদেরকে মিত্র হিসাবে গ্রহণ করা থেকে সাবধান করেছেন। যদি মুমিনগণ প্রকৃত ঈমানদার হয় তাদেরকে তাক্বওয়া অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্য কাফিরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ৫৭; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১/৩৭৩ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১০৭১৬৬)।
শাইখ আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইসলাম ও গণতন্ত্র দু’টি বিপরীতমুখী ব্যবস্থা, যা কখনো এক হবার নয়। একটি আল্লাহ্র উপর ঈমান ও আল্লাহ নির্দেশিত পন্থায় জীবন পরিচালনার নির্দেশ দেয়, অপরটি তাগূতের (আল্লাহ বিরোধী অনুশাসন) প্রতি ঈমান ও তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার উপর নির্ভরশীল’ (সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, রেকর্ড নং-৩৫৩)। আল্লাহর উপর ঈমান ও রাসূলদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনার পর আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন গ্রহণ করার প্রবণতাকে আল্লাহ তা‘আলা ‘বিস্ময়কর’ ঘোষণা করেছেন (সূরা আন-নিসা: ৬০)।
পূর্বোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গণতন্ত্র পদ্ধতি ইসলাম বিরোধী এবং এর দ্বারা নির্বাচিত সরকারের ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের আনুগত্য করাও শরী‘আত বিরোধী। সে জন্য এরূপ কাফির, মুশরিক, ফাসিক্ব ও দুর্নীতিবাজ নেতাদের বর্জন করে যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ শাসককে নির্বাচন করতে হবে।
ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
পরিচালক
ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
Shaikh Dr. Muzaffar Bin Mohsin