বক্তা আদনানের গরম ফতোয়া— সামর্থ্য থাকলে একাধিক বিয়ে করা ফরজ

Joynal Bin TofajjalVerified member

Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
344
Comments
475
Reactions
5,426
আবু ত্বহা আদনান বিয়ে করার নসিহত করতে যেয়ে বলেছেন, “সামর্থ্য হয়ে গেলেই তুমি বিয়ে করবে। আর কোনোদিকে দেখার দরকার নাই। এমনকি তোমার যদি একাধিক বিয়ে করার সামর্থ্য থাকে, সেটাও তোমাকে করতে হবে। যার একাধিক বিয়ে করার সামর্থ্য আছে, সে যদি না করে, সেটাই তার জন্য গুনাহর কাজ। জি, এ কথাগুলো বলার সাহস পায় না অনেকে। এ কথাগুলো বলার সাহস হয় না। আলেমদেরই হয় না।... তাহলে কুরআনের মধ্যে চারটা বিয়ের কথা আসল কেন? আল্লাহ পাক কি এমনি এমনি এই আয়াত নাজিল করলেন নাকি? আল্লাহ পাক খুব ভালো করেই জানেন, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি হবে। অনেক ছেলে মারা যাবে। মেয়েরা সমাজে বেঁচে থাকবে। কত অসংখ্য এতিম মেয়ে সমাজে পড়ে আছে, অসংখ্য বিধবা মেয়ে সমাজে পড়ে আছে। ওদের দায়িত্ব নিতে হবে না?” [দেখুন: https://youtu.be/wla-tKArOdM (শুরু থেকে ১:১৫ মিনিট)]

কী চমৎকার ফতোয়া! ন্যূনতম হুঁশ তো করা উচিত, আবেগ দিয়ে মাঠ কাঁপানো গেলেও আবেগ দিয়ে দিন-ধর্ম চলে না। এজন্য চোদ্দোশো বছরের ইতিহাসে কোনো একজন গ্রহণযোগ্য সু্ন্নাহপন্থি ইমামকে আমরা পাইনি, যিনি কিনা সামর্থ্য থাকলে একাধিক বিয়ে করা ফরজ বলে ফতোয়া দিয়েছেন। বরং সামর্থ্যানুযায়ী একাধিক বিয়ে করা শরিয়তে পছন্দনীয় জায়েজ একটি বিষয় মাত্র, আবশ্যকীয় ফরজ বিধান নয়। মহান আল্লাহ সামর্থ্যানুযায়ী চারটি বিয়ের অনুমতি দিয়ে বলেছেন, فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً “নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে তাকে তোমরা বিয়ে কর; দুটি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি আশঙ্কা করো, তোমরা ন্যায়সম্মত আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি।” [সুরা নিসা: ৩]

ইমাম বাগাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৫১৬ হি.) বলেছেন, اتفقت الأمَّةُ على أنَّ الحُرَّ يجوزُ له أن ينكِحَ أربعَ حرائرَ “পুরো উম্মত একমত পোষণ করেছে, স্বাধীন পুরুষের জন্য চারজন স্বাধীন নারীকে বিয়ে করা জায়েজ আছে।” [ইমাম বাগাবি কৃত শারহুস সুন্নাহ, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৬১]

সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহকে (মৃত: ১৪২০ হি.) বহুবিবাহের বিধান প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, تعدد الزوجات مسنون مع القدرة “সামর্থ্য থাকলে বহুবিবাহ একটি পছন্দনীয় সুন্নাতি আমল।” এরপর উক্ত কথার দলিল হিসেবে তিনি সুরা নিসার উপরিউক্ত আয়াতটি উল্লেখ করেছেন এবং নবিজির কর্মের বিবরণ দিয়েছেন। সেই সাথে আরও জানিয়ে দিয়েছেন, একত্রে নবিজির অধীনে নয়টি স্ত্রী থাকলেও এটা তাঁর জন্য বিশেষ বিধান ছিল। অন্য মুমিনদের জন্য একত্রে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি রয়েছে ইসলামি শরিয়তে। [মুহাম্মাদ বিন আব্দুল আজিজ আল-মুসনিদ কৃত ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২০২]

এ থেকে স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও একাধিক বিয়ে না করা লোকজন গুনাহ করছেন - বলে ফতোয়া হাঁকানো বক্তা আদনান এক্ষেত্রেও চরম ভুল করেছেন। তাঁর মতো বক্তা ও তাদের অনুসারীদের মনে রাখা উচিত, মহান আল্লাহ বলেছেন, وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَٰذَا حَلَالٌ وَهَٰذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ “আর তোমাদের জবান থেকে মিথ্যা কথা বেরোয় বলেই তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করার জন্য এমন কথা বলো না যে, এটা হালাল, আর এটা হারাম। যারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তারা কখনো কামিয়াব হতে পারে না।” [সুরা নাহল: ১১৬]




লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।​
 
Back
Top