সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Joynal Bin Tofajjal

সালাফি-বিদাতি সবার নিকট থেকে শরিয়তের ইলম নিতে বলেন বক্তা আদনান - প্রথমার্ধ

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
LV
16
 
Awards
30
Credit
4,600
বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত এমন প্রতিটি দল ও বিদ্বানের নিকট থেকে শরিয়তের জ্ঞান নিতে বলেছেন জনসাধারণকে। সালাফি-বিদাতি সবার নিকট থেকে শরিয়তের ইলম নিতে বলার মতো ভ্রষ্টকারী উপদেশের স্বরূপ এবং তার প্রামাণ্য পর্যালোচনা করতে চলেছি আমরা বক্ষ্যমাণ পরিচ্ছেদে। আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “আমরা সবাই ভাই-ভাই। আমাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে এখতেলাফ থাকতে পারে। এবং এটা ছিল, আছে, এবং থাকবে। এর মানে এই নয় যে, আমিই একমাত্র জান্নাতের সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত, আর তারা সবাই বাতিল ফের্কা। এমন নয় বিষয়টা। সবার মাঝেই কল্যাণকর অনেক বিষয় আছে, আপনি কল্যাণকর বিষয়টা নিয়ে নেন, অকল্যাণকর বিষয়গুলো ছেড়ে দেন। ব্যস, সিম্পল!” [দেখুন: https://youtu.be/tKe_Hh9D-UM (২৭:৩৭ মিনিট থেকে ২৮:০০ মিনিট পর্যন্ত)]

আবু ত্বহা আরেকটি বক্তব্যেও অনুরূপভাবে বলেছেন, “আরেকটা মূলনীতি আছে, যা আমি চেষ্টা করি মেনে চলার যে, প্রত্যেকের মাঝে আপনি কিছু ভালো জিনিস পাবেন। যে আপনাকে দুএকটা বাজে কথা বলছে, বা ভুল বুঝছে, বা আপনার সমালোচনা করছে, তার মধ্যেও আপনি দেখবেন, দুএকটা ভালো জিনিস আছে। আছে না? ওইটা আপনি নিয়ে নেন। ওই ভালোটুকু আপনি নেন। সে আপনাকে বকা দিয়েছে, বা গালি দিয়েছে, বা তোহমত দিয়েছে বলে তার ভালোটা নিবেন না — এমনটা করেন না। তার ভালোটুকু আপনি নিয়ে নেন উদার মনে। আর প্রত্যেকের মধ্যে আপনি দেখবেন, কিছু বিতর্কিত বিষয় আছে, যেটা খারাপ, এই খারাপগুলো আপনি নিবেন না। আপনি এড়িয়ে যাবেন। তখন দেখবেন, সবার মধ্যে আপনি একটা হৃদ্যতার বন্ধন তৈরি করতে পারবেন। অন্যথায় সম্ভব নয়।” [দেখুন: https://youtu.be/EcLBGzT_HEQ (৩৮:৫০ মিনিট থেকে ৩৯:৩৭ মিনিট)]
বক্তা আদনান নিজের কথার পক্ষে একটি দলিলের অশুদ্ধ প্রয়োগ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আর প্রত্যেকটা দল, প্রত্যেকটা ব্যক্তি-সংগঠনের —দেখবেন আপনি— অনেক ভালো ভালো বিষয় আছে। আছে না? ভালো না থাকলে কি এমনিই দাঁড়ায়ে গেছে তাঁরা? ভালো বিষয় অবশ্যই পাবেন আপনি। আমার ফিলোসফি হচ্ছে, আমি সবার ভালোটুকু খোলামনে নিতে রাজি আছি, সে যে-ই হোক না কেন। দলিল আছে আমার কাছে। সব দলিল দেওয়ার সময় নেই, একটা বলতেছি। আয়াতুল কুরসি পড়েন ঘুমানোর আগে। পড়েন তো? এটা পড়তে হয় ঘুমানোর আগে, কে বলছে আপনাকে? আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এটা কে বলে গেছে? শয়তান বলে গেছে, ইবলিস। আমাদের নবিজি কি বলছেন, ‘শয়তান বলছে, ওটা নেয়ার দরকার নাই?’ নবিজি বলছেন, ‘শয়তান, ও ছিল শয়তান, ইবলিস, ও বেশিরভাগ কথাই — প্রায় সব কথাই মিথ্যা বলে, কিন্তু এটা সে সত্য বলছে। এটার ওপর আমল করতে পার।’ এটা নবির মানহাজ। তাই যে কোনো ভাই, তার মধ্যে যে ভালোটুকু পাব, আমি নিয়ে নিব ইনশাআল্লাহ, সমস্যা নাই। আর আমার মধ্যেও খারাপি আছে, সবার মধ্যেই খারাপি আছে। ওই খারাপিগুলোকে খোলামনে ছাড়তে হবে এই সময়ে। অন্ততপক্ষে এই সময়ে। কারণ সারাবিশ্বে এখন আমরা নির্যাতিত।” [দেখুন: https://youtu.be/AaE7MOMjKwo (০:৫০ মিনিট থেকে ১:৫৪ মিনিট)]

বক্তা আদনান যে কোনো তাফসির পড়ার বিভ্রান্তিকর উপদেশ দিয়ে বলেছেন, “কুরআনের সাথে আপনাকে তাফসিরগুলো পড়তে হবে। আপনার কাছে যে তাফসিরটা ভালো মনে হয়, হোক সেটা জালালাইন অথবা মাআরেফুল কুরআন, অথবা ইবনে কাসির, যেটা আপনার কাছে বেস্ট মনে হয় — সেটাই পড়েন। আমি এখানে সংকীর্ণ মানসিকতা আর মানহাজ-মাজহাবের এই যে বিভক্তি এগুলো থেকে ঊর্ধ্বে চিন্তা করতে বলছি। এগুলোর ঊর্ধ্বে ওঠেন, আপনি পরিপূর্ণ জ্ঞান পাবেন, ইনশাআল্লাহ। একটা সম্প্রদায়ের সাথে কানেক্টেড হয়ে থাকলে বাকিদের নিকট থেকে আর জ্ঞান পাবেন না।” [দেখুন: https://youtu.be/ZSp-W4cuPBI (৩০:৪৯ মিনিট থেকে ৩১:২১ মিনিট)]

আরেক বক্তব্যে বক্তা আবু ত্বহা আদনান বিদাতের বড়ো বড়ো পথভ্রষ্ট ইমামদের এবং কুফরি দর্শন-চর্চাকারী দার্শনিকদের বইপুস্তক পড়ার ভ্রষ্টকারী উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “শাইখ ইমরান নজর হুসাইনেরও ইসলামিক ইকনোমিক্সের ওপর অনেক বই আছে। যেমন দ্য প্রোহিবিশন অফ রিবা, গোল্ড দিনার অ্যান্ড সিলভার দিরহাম, এরকম অনেক বই আছে। ইসলামিক অর্থনীতির ওপর যাদের পড়াশোনা আছে, ওই বইগুলো আপনি পড়েন। তাঁদের কাছ থেকে কীসের জ্ঞান নিবেন? অর্থনীতির জ্ঞান নিবেন। যে ইসলামিক ইকনোমিক্সে অনেক স্ট্রং বেইজ রাখে, তার কাছে আপনি অর্থনীতির জ্ঞান নিবেন। যে ফিকহের অনেক গভীর জ্ঞান রাখে, তার কাছে ফিকহের জ্ঞান নিবেন। যে তাফসিরের বেশি জ্ঞান রাখে, তাফসিরের জ্ঞান নিবেন। এভাবে পড়াশোনা করবেন। এরপরে যাবেন ইসলামিক ফিলোসফিতে। আপনি ইমাম গাযালির নাম শুনেছেন, ইবনু রুশদের নাম শুনেছেন, ইবনে সিনার নাম শুনেছেন। তাঁদের অনেক ফিলোসফিক্যাল বই আছে। এগুলো বাসায় পড়বেন।” [দেখুন: https://youtu.be/ybmJH9yuudM (৮:৪৭ মিনিট থেকে ৯:২৪ মিনিট]

সুপ্রিয় পাঠক, আমরা বক্তা আদনানের উল্লিখিত বিপথগামী বক্তব্যগুলোর পর্যালোচনা করব পাঁচটি ধাপে। ক্রমান্বয়ে পাঁচটি ধাপের আলোচনা পড়লে আপনি বক্তা আদনানের কথার ভয়াবহতা ও ভ্রান্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ। ধাপগুলো হলো— (১) বিদাতিদের নিকট থেকে শরিয়তের ইলম নেওয়া নিষিদ্ধ (২) ‘ভালোটা নিব, আর খারাপটা বাদ দিব’ – বলে জনসাধারণকে বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম নিতে বলা না-জায়েজ; এখানে কোন ধরনের বিষয়ে বিদাতি বলা হবে এবং কোন ধরনের মতবিরোধে বিদাতি বলা হবে না – তা নিয়ে আলোচনা করা হবে (৩) শয়তানের নিকট থেকে সাহাবি ইলম নিয়েছেন মর্মে উত্থাপিত সংশয়ের জবাব (৪) বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া ও লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ উলামাদের বক্তব্য (৫) ভ্রান্ত বক্তা আদনান কুফরি-দর্শনের বইপত্র পড়তে উৎসাহপ্রদান।

প্রথম ধাপ: বিদাতিদের নিকট থেকে শরিয়তের ইলম নেওয়া নিষিদ্ধ
সাধারণ মানুষ বা শরিয়তের ব্যাপারে প্রাজ্ঞতা লাভ করেনি এমন তালিবুল ইলম বিদাতিদের নিকট থেকে কোনোভাবেই শরিয়তের ইলম নিতে পারবে না। ‘শুধু ভালোটা নিব, আর খারাপটা বাদ দিব’ বলে ইলম নেওয়ার জন্য বিদাতিদের দ্বারস্থ হতে পারবে না। কারণ শরিয়ত বিষয়ে ভালো-খারাপের সম্যক জ্ঞান থাকলে তিনি আর সাধারণ মানুষ কিংবা প্রাথমিক স্তরের তালিবুল ইলমদের কাতারভুক্ত থাকতেন না, শরিয়ত বিষয়ে প্রাজ্ঞ জ্ঞানীদের অন্তর্গত হতেন। বিদাতির নিকট থেকে ইলম নেওয়া নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহয় অনেক দলিল বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে আমরা কয়েকটি দলিল পেশ করছি।

দলিল-১ মহান আল্লাহ বলেছেন, وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَىٰ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ “যখন তুমি দেখবে, লোকেরা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে বাতিল কথায় প্রবৃত্ত হয়েছে, তখন তুমি তাদের নিকট থেকে দূরে সরে যাবে, যতক্ষণ না তারা অন্য কোনো প্রসঙ্গে নিমগ্ন হয়। শয়তান যদি তোমাকে এটা বিস্মৃত করে তাহলে স্মরণ হওয়ার পর আর ওই জালিম লোকদের সাথে তুমি বসবে না।” [সুরা আনআম: ৬৮]

ইবনু আওন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, كَانَ مُحَمَّدٌ يَرَى أَنَّ هَذِهِ الْآيَةَ نَزَلَتْ فِيهِمْ: وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ؛ الأنعام: ٦٨؛ يَعْنِي أَهْلَ الْأَهْوَاء “তাবেয়ি মুহাম্মাদ বিন সিরিন মনে করতেন ‘যখন তুমি দেখবে, লোকেরা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে বাতিল কথায় প্রবৃত্ত হয়েছে, তখন তুমি তাদের নিকট থেকে দূরে সরে যাবে’ – মর্মের আয়াতটি বিদাতিদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।” [ইবনু বাত্তাহ কৃত আল-ইবানাহ আন শারিয়াতিল ফিরকাতিন নাজিয়াহ, বর্ণনা নং: ৫৪৫ ও ৫৪৬; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৯৬; তাহকিক: রিদা বিন নাআসান; দারুর রায়াহ (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৯৯৪ খ্রি./১৪১৫ হি. (২য় প্রকাশ)]
অর্থাৎ মহান আল্লাহ উক্ত আয়াতে বিদাতিদের মজলিস থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। এখন কেউ যদি বিদাতিদের নিকট থেকে শরিয়তের ইলম আহরণ করে, তাহলে সে কি তাদের থেকে দূরে থাকছে?

দলিল-২ মহান আল্লাহ বলেছেন, وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللَّهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوا مَعَهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلُهُمْ “নিশ্চয় তিনি কিতাবের মাধ্যমে তোমাদের আদেশ করছেন যে, তোমরা যখন শুনতে পাও, আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি অবিশ্বাস করা হচ্ছে এবং সেসবকে নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তখন তাদের সাথে উপবেশন করবে না, যে পর্যন্ত না তারা অন্য কথার আলোচনায় নিমগ্ন হচ্ছে; অন্যথায় তোমরাও তাদের সদৃশ হয়ে যাবে।” [সুরা নিসা: ১৪০]

প্রখ্যাত তাফসিরকারক ইমাম আবু জাফর আত-তাবারি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩১০ হি.) বলেছেন, وفي هذه الآية الدلالة الواضحة على النهي عن مجالسة أهل الباطل من كل نوع، من المبتدعة والفسَقة، عند خوضهم في باطلهم “এ আয়াতে এ মর্মে সুস্পষ্ট দলিল রয়েছে যে, বিদাতি ও ফাসিক লোকজন-সহ সকল ধরনের বাতিলপন্থি লোকের সাথে ওঠাবসা করা নিষিদ্ধ, যখন তারা লিপ্ত হয় তাদের বাতিল বিষয়ে।” [তাফসিরুত তাবারি, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৬০৩; তাহকিক: শাইখ আব্দুল্লাহ আত-তুর্কি; প্রকাশকাল: ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

বিদাতিদের সাথে ওঠাবসা করতেই যেখানে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে তাদের কাছে যেয়ে শরিয়তের ইলম নেওয়া কীরূপে বৈধ হতে পারে? তাদের বইপুস্তক পড়া কিংবা তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা কীভাবে শরিয়তসিদ্ধ হতে পারে?

দলিল-৩ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ سَمِعَ بِالدَّجَّالِ فَلْيَنْأَ عَنْهُ، فَوَاللَّهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَأْتِيهِ وَهُوَ يَحْسِبُ أَنَّهُ مُؤْمِنٌ فَيَتَّبِعُهُ، مِمَّا يَبْعَثُ بِهِ مِنَ الشُّبُهَاتِ “কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহর কসম, যে কোনো ব্যক্তি তার নিকট এলে সে সুনিশ্চিত মনে করবে যে, সে একজন ইমানদার। তথাপি সে দাজ্জালের দ্বারা তার মধ্যে জাগরিত সংশয়পূর্ণ বিষয়ের দরুন দাজ্জালের অনুসরণ করবে।” [আবু দাউদ, হা: ৪৩১৯; সনদ: সহিহ]
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.) বলেছেন, ومن هجر أهل البدع: ترك النظر في كتبهم خوفًا من الفتنة بها، أو ترويجها بين الناس، فالابتعاد عن مواطن الضلال واجب لقوله ﷺ، في الدجال: «مَنْ سَمِعَ بِالدَّجَّالِ فَلْيَنْأَ عَنْهُ، فَوَاللَّهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَأْتِيهِ وَهُوَ يَحْسِبُ أَنَّهُ مُؤْمِنٌ فَيَتَّبِعُهُ، مِمَّا يَبْعَثُ بِهِ مِنَ الشُّبُهَاتِ» رواه أبو داود قال الألباني: وأسناده صحيح. لكن إن كان الغرض من النظر في كتبهم معرفة بدعهم للرد عليها فلا بأس بذلك إن كان عنده من العقيدة الصحيحة ما يتحصن به وكان قادرًا على الرد عليهم، بل ربما كان واجبًا؛ لأن رد البدعة واجب وما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب “বিদাতিদের বর্জন করার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাদের বইপুস্তকের মাধ্যমে ফিতনাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় এবং সেগুলো মানুষের মধ্যে প্রচলিত হওয়ার আশঙ্কায় তা না পড়া। যাবতীয় ভ্রষ্টতার জায়গা থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব। যেহেতু নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জালের ব্যাপারে বলেছেন, ‘কেউ দাজ্জালের আগমনের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহর কসম, যে কোনো ব্যক্তি তার নিকট এলে সে সুনিশ্চিত মনে করবে যে, সে একজন ইমানদার। তথাপি সে দাজ্জালের দ্বারা তার মধ্যে জাগরিত সংশয়পূর্ণ বিষয়ের দরুন দাজ্জালের অনুসরণ করবে।’ আবূ দাউদ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন (হা: ৪৩১৯)। আলবানি বলেছেন, ‘হাদিসটির সনদ সহিহ।’

কিন্তু তাদের বইপুস্তক পড়ার পিছনে যদি তাদের বিদাতগুলো জানার উদ্দেশ্য থাকে, যাতে করে তাদের রদ করা যায়, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই। আর এটা (রদ) ওই ব্যক্তির জন্য, যার নিজেকে সুরক্ষিত করার মতো বিশুদ্ধ আকিদা আছে এবং যে তাদেরকে রদ করতে সক্ষম। বরং কখনো কখনো এই কাজ ওয়াজিব। কেননা বিদাতকে রদ করা ওয়াজিব। আর যা ব্যতীত ওয়াজিব পূর্ণ হয় না, সেটাও ওয়াজিব।” [ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ, শারহু লুমআতিল ইতিকাদ; পৃষ্ঠা: ১১১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ (বৈরুত) ও মাকতাবাতুর রুশদ (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

দলিল-৪ জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,
أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَتى رَسُولَ اللهِ ﷺ بِنُسْخَةٍ مِنْ التَّوْرَاةِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ هَذِهِ نُسْخَةٌ مِنْ التَّوْرَاةِ فَسَكَتَ فَجَعَلَ يَقْرَأُ وَوَجْهُ رَسُولِ اللهِ يَتَغَيَّرُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ ثَكِلَتْكَ الثَّوَاكِلُ مَا تَرَى مَا بِوَجْهِ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَنَظَرَ عُمَرُ إِلى وَجْهِ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَعُوذُ بِاللهِ مِنْ غَضَبِ اللهِ وَغَضَبِ رَسُولِه رَضِينَا بِاللهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِه لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوسى فَاتَّبَعْتُمُوهُ وَتَرَكْتُمُونِي لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِي لَاتَّبَعَنِي
“একদা উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাওরাত কিতাবের একটি পাণ্ডুলিপি এনে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসুল, এটা হলো তাওরাতের একটি পাণ্ডুলিপি।’ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাওরাত পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে (রাগে) রসুলুল্লাহ ﷺ এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হতে লাগল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, উমার, তোমার মায়েরা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক (আরবদের ব্যবহৃত তিরস্কারসূচক ইডিয়ম)! তুমি কি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবর্ণ মুখমণ্ডল দেখছ না? উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রসুলের চেহারার দিকে তাকালেন এবং (চেহারায় ক্রোধান্বিত ভাব লক্ষ করে) বললেন, ‘আমি আল্লাহর শাস্তি ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ হতে পানাহ চাচ্ছি। আমি ‘রব’ হিসেবে আল্লাহ প্রতি, দিন হিসেবে ইসলামের প্রতি এবং নবি হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সন্তুষ্ট আছি।’ তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! যদি (তাওরাতের নবি স্বয়ং) মুসা আলাইহিস সালামও তোমাদের মধ্যে থাকতেন, আর তোমরা তাঁর অনুসরণ করতে এবং আমাকে ত্যাগ করতে, তাহলে তোমরা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। মুসা আলাইহিস সালামও যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নবুয়তের যুগ পেতেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে তিনিও আমার অনুসরণ করতেন।” [দারিমি, হা: ৪৪৯; মিশকাত, হা: ১৯৪; সনদ: হাসান]

স্বয়ং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বইপুস্তক পড়া থেকে সতর্ক করেছেন, অথচ সেগুলো বিলকুল হকমুক্ত নয়। তাহলে বাতিল কথা আওড়ানো বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া বা তাদের থেকে শরিয়তের ইলম নেওয়া কি সিদ্ধ হতে পারে, যেমনটি আবু ত্বহা আদনান একাধিক বক্তব্যে বলেছেন?

এজন্য ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ বিদাতিদের কথাবার্তা শোনার ক্ষেত্রে খুবই কঠোর ছিলেন। নিম্নোক্ত বর্ণনাগুলো বিদাতিদের ব্যাপারে তাঁদের কঠোর অবস্থান এবং দিনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র শিথিল না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করে দেবে, ইনশাআল্লাহ।
বর্ণনা-১: আসমা বিন উবাইদ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪১ হি.] বলেন, دخل رجلان من أصحاب الأهواء على ابن سيرين فقالا: يا أبا بكر نحدثك بحديث؟ قال: لا، قالا: فنقرأ عليك آية من كتاب الله؟ قال: لا، لتقومان عني أو لأقومن. قال: فخرجا، فقال بعض القوم: يا أبا بكر، ما كان عليك أن يقرآ عليك آية من كتاب الله تعالى؟ قال: إني خشيت أن يقرآ علي آية فيحرفانها، فيقر ذلك في قلبي “দুজন বিদাতি তাবেয়ি মুহাম্মাদ বিন সিরিনের (মৃত: ১১০ হি.) নিকট প্রবেশ করে বলল, ‘হে আবু বকর, আমরা আপনার কাছে একটি হাদিস বর্ণনা করি?’ তিনি বললেন, ‘না।’ তখন তারা দুজন বলল, ‘তাহলে আমরা আপনাকে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাই?’ তিনি বললেন, ‘না; হয় তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে চলে যাবে, অথবা আমি উঠে যাব।’ বর্ণনাকারী বলছেন, তারা দুজন তখন প্রস্থান করে। উপস্থিত এক ব্যক্তি বলে ওঠে, ‘হে আবু বকর, আপনার কী ক্ষতি হতো, যদি তারা দুজন আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাত?’ ইবনু সিরিন বললেন, ‘নিশ্চয় আমি আশঙ্কা করেছি, তারা দুজন আমার কাছে একটি আয়াত পড়বে, অতঃপর তারা সে আয়াতে বিকৃতি সাধন করবে, ফলে তা গেঁথে যাবে আমার অন্তরে’।” [দারিমি, হা: ৪১১; সনদ: সহিহ (তাহকিক: হুসাইন সালিম আসাদ); ইবনু বাত্তাহ কৃত আল-ইবানাহ; বর্ণনা নং: ৩৯৮; লালাকায়ি, শারহু উসুলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ; বর্ণনা নং: ২৪২; আজুর্রি, আশ-শারিয়াহ; বর্ণনা নং: ৬২]

বর্ণনা-২: ইমাম সাল্লাম বিন আবু মুতি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৭৩ হি.) বলেন, أن رجلا من أهل الأهواء قال لأيوب: يا أبا بكر، أسألك عن كلمة؟ قال: فولى وهو يشير بأصبعه ولا نصف كلمة. وأشار لنا سعيد بخنصره اليمنى “তাবেয়ি আইয়ুব আস-সাখতিয়ানি রাহিমাহুল্লাহকে (মৃত: ১৩১ হি.) একজন বিদাতি বলল, ‘হে আবু বকর, আমি আপনাকে একটি শব্দ সম্পর্কে প্রশ্ন করি?’ বর্ণনাকারী বলেছেন, তখন তিনি দ্রুত প্রস্থান করলেন, এমতাবস্থায় তিনি তাঁর আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলছিলেন, আধা শব্দও নয়। বর্ণনকারী সায়িদ আমাদেরকে তাঁর ডান কনিষ্ঠা দিয়ে ইশারা করে দেখিয়েছেন।” [দারিমি, হা: ৪১২; সনদ: সহিহ (তাহকিক: হুসাইন সালিম আসাদ); ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাহ; বর্ণনা নং: ৪০২; লালাকায়ি, শারহু উসুলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ; বর্ণনা নং: ২৯১]

বর্ণনা-৩: শাইখুল ইসলাম ইমাম মামার রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৫৩ হি.) বলেছেন, كان ابن طاوس جالسًا فجاء رجل من المعتزلة فجعل يتكلم، قال فأدخل ابن طاوس أصبعيه في أذنيه، قال: وقال لإبنه: أي بني، أدخل أصبعيك في أذنيك وتشدد، ولا تسمع من كلامه شيئًا. قال معمر: يعني أن القلب ضعيف “একদা তাবেয়ি ইবনু তাউস (মৃত: ১৩২ হি.) উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় মুতাজিলি মতাদর্শের এক বিদাতি এসে কথা বলা শুরু করল। বর্ণনকারী বলেছেন, তখন ইবনু তাউস তাঁর দুকানে দুই আঙুল প্রবেশ করালেন এবং তাঁর ছেলের উদ্দেশে বললেন, “বেটা, তুমি তোমার দুকানে দুই আঙুল প্রবেশ করাও এবং চেপে ধরে থাকো, তুমি তাঁর সামান্য কথাও শুনো না।” মামার (তাঁর এই কাজের ব্যাখ্যা দিয়ে) বলেছেন, ‘অর্থাৎ অন্তর খুবই দুর্বল (আমরা তার কথা শুনলে আমাদের অন্তরে তা গেঁথে যেতে পারে)’।” [ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাহ; বর্ণনা নং: ৪০০; লালাকায়ি, শারহু উসুলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ; বর্ণনা নং: ২৪৮]

প্রিয় পাঠক, একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। সালাফগণ বিদাতিদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁদের কথা শুনেননি। যারা ছিলেন উম্মাহর শ্রেষ্ঠ ইমাম। তাঁরাই বিদাতিদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন, তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায়? এরপরেও আবু ত্বহা আদনানের মতো অপক্ব বক্তাদের মতো আমাদের এটা বলা কি সমীচীন হবে যে, আমরা বিদাতিদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শুনে শুধু ভালোটা নিব, খারাপটা নিব না?!

এমনকি কতিপয় ইমাম বিদাতিদের বইপুস্তক না পড়ার ব্যাপারে উলামাদের ইজমা তথা সর্ববাদিসম্মত অভিমত বর্ণনা করেছেন। তাঁরা বলেননি যে, তোমরা বিদাতিদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের কথাবার্তা শুনে তা থেকে হকটা গ্রহণ করো, আর খারাপ বিষয়গুলো বর্জন করো। ইমাম আবু মানসুর মামার বিন আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৪১৮ হি.) বলেছেন, ثم من السنة: ترك الرأي والقياس في الدين، وترك الجدال والخصومات، وترك مفاتحة القدرية وأصحاب الكلام وترك النظر في كتب الكلام وكتب النجوم، فهذه السنة التي اجتمعت عليها الأمة “অতঃপর সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে দিনের ক্ষেত্রে শরিয়তবিরোধী রায় ও কিয়াস বর্জন করা, তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা, তাকদির-অস্বীকারকারী সম্প্রদায় ও যুক্তিবিদ সম্প্রদায়ের মতবাদের আলোচনার আরম্ভ না করা এবং দর্শনশাস্ত্র ও জ্যোতিষশাস্ত্রের বইপুস্তক পাঠ বর্জন করা। এটি এমন সুন্নাহ, যে ব্যাপারে পুরো উম্মত ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।” [ইমাম আবুল কাসিম আল-আসবাহানি রাহিমাহুল্লাহ, আল-হুজ্জাহ ফি বায়ানিল মাহাজ্জাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৪২; গৃহীত: শাইখ খালিদ আয-যাফিরি কৃত ইজমাউল উলামা আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৬]

এতদ্‌ব্যতীত ইসলামের ইমামগণ বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের কথাবার্তা শোনা বর্জন করাকে সুন্নাহর মূলনীতি সাব্যস্ত করেছেন এবং এহেন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নসিহত করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু কুদামাহ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৬২০ হি.) বলেছেন, ومن السنة هجران أهل البدع ومباينتهم وترك الجدال والخصومات في الدين، وترك النظر في كتب المبتدعة، والإصغاء إلى كلامهم، وكل محدثة في الدين بدعة “সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত বিষয় হলো— বিদাতিদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দিনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা এবং বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের কথা শোনা বাদ দেওয়া। আর দিনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হলো বিদাত।” [ইমাম ইবনু কুদামাহ রাহিমাহুল্লাহ, লুমআতুল ইতিকাদ; পৃষ্ঠা: ৩৩]
ইমাম ইবনু মুফলিহ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৮৮৪ হি.) বলেছেন, ذكر الشيخ موفق الدين –رحمه الله– في المنع من النظر في كتب المبتدعة، قال: كان السلف ينهون عن مجالسة أهل البدع، والنظر في كتبهم والإستماع لكلامهم “শাইখ মুওয়াফফাকুদ্দিন ইবনু কুদামা রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৬২০ হি.) বিদাতিদের বইপুস্তক পাঠের নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে বলেছেন, সালাফগণ বিদাতিদের সাথে ওঠাবসা করতে, তাদের বইপুস্তক পড়তে এবং তাদের কথাবার্তা শুনতে নিষেধ করতেন।” [আল-আদাবুশ শারিয়া, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৩২; গৃহীত: ইজমাউল উলামা আলাল হাজরি ওয়াত তাহযিরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪-৭৫]

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] যখন এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন যে, “প্রত্যেক যে বিষয় আল্লাহর অবাধ্যতায় উদ্বুদ্ধ করে এবং আল্লাহর আনুগত্য করতে বাধা দেয়, সেটাই আল্লাহর অবাধ্যতার শামিল”, তখন তিনি বলেছেন, ومن هذا الباب سماع كلام أهل البدع، والنظر في كتبهم لمن يضره ذلك ويدعوه إلى سبيلهم وإلى معصية الله “এই বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে— ওই ব্যক্তি কর্তৃক বিদাতিদের কথাবার্তা শ্রবণ এবং তাদের বইপুস্তক পঠন, যা (শ্রবণ ও পঠন) তার ক্ষতি করে এবং তাকে তাদের (বিদাতিদের) পথের দিকে ও আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে আহ্বান করে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর মাজমুউ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ৩৩৬; গৃহীত: ইজমাউল উলামা আলাল হাজরি ওয়াত তাহযিরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪-৭৫]
·
দ্বিতীয় ধাপ: ‘ভালোটা নিব, আর খারাপটা বাদ দিব’ – বলে জনসাধারণকে বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম নিতে বলা না-জায়েজ

আবু ত্বহা আদনান সাহেব বিভিন্ন বক্তব্যে বহুবার বলেছেন, সংকীর্ণতা বাদ দিয়ে সকল মতাদর্শের ইসলামপন্থি ব্যক্তিবর্গের ভালো বিষয়গুলো নিতে হবে, এবং খারাপ বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে হবে। এ কথা বলে তিনি বাংলাদেশের প্রচলিত বিদাতি ঘরানার বক্তা ও দায়িদের নিকট থেকে ইলম নিতে উৎসাহিত করেছেন। অর্থাৎ বক্তা আদনানের বক্তব্য মোতাবেক মোটাদাগে বেরলভি, দেওবন্দি, তাবলিগ জামাত, জামায়াতে ইসলামি, চরমোনাই-সহ আরও যত বিদাতি গোষ্ঠী আছে, যারা নিজেদেরকে ইসলামের দিকে সম্পৃক্ত করে, এদের সবার কাছ থেকে শরিয়তের ইলম নিতে হবে। আর উক্ত ইলম নিতে গিয়ে ভালো বিষয়গুলো গ্রহণ করে খারাপ বিষয়গুলো বর্জন করতে হবে। নিম্নোক্ত দিকগুলোর মাধ্যমে আমরা উক্ত বাতিল মূলনীতির জবাব দিব।
প্রথমত, সাধারণভাবে বিদাতিদের নিকট থেকে শরিয়তের ইলম নেওয়া না-জায়েজ, যা আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি।
দ্বিতীয়ত, আলোচ্য মূলনীতি সালাফদের মানহাজ বিরোধী। কেননা তাঁরা এই মূলনীতি অনুসরণ করে ইলম গ্রহণ করেননি। বরং তাঁদের মূলনীতি ছিল—যার কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করা হবে, তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া এবং সে বিশ্বস্ত ও যোগ্য প্রমাণিত হওয়ার পরই কেবল তার কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করা। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺰَّﻣَﺎﻥِ ﺩَﺟَّﺎﻟُﻮﻥَ ﻛَﺬَّﺍﺑُﻮﻥَ ﻳَﺄْﺗُﻮﻧَﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻷَﺣَﺎﺩِﻳﺚِ ﺑِﻤَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﺴْﻤَﻌُﻮﺍ ﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻭَﻻَ ﺁﺑَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻓَﺈِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻫُﻢْ ﻻَ ﻳُﻀِﻠُّﻮﻧَﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﻳَﻔْﺘِﻨُﻮﻧَﻜُﻢْ “শেষ যুগে কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের কাছে এমন সব হাদিস নিয়ে আসবে, যা কখনো তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা শোনোনি। সুতরাং তাদের থেকে তোমরা নিজেরা দূরে থাকবে এবং তাদেরকেও তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তারা যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করতে পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনায় না ফেলতে পারে।” [সহিহ মুসলিম, হা: ৭; ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ: ৪]

প্রখ্যাত তাবেয়ি ইমাম মুহাম্মাদ বিন সিরিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১১০ হি.) বলেছেন, ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﺩِﻳﻦٌ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮُﻭﺍ ﻋَﻤَّﻦْ ﺗَﺄْﺧُﺬُﻭﻥَ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ “নিশ্চয় এ ইলম হলো দিন। কাজেই কার কাছ থেকে তোমরা দিন গ্রহণ করছ তা যাচাই করে নাও।” [সহিহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ: ৫]

শাইখুল ইসলাম হুজ্জাতুল উম্মাহ ইমাম মালিক বিন আনাস রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৭৯ হি.) বলেছেন, لا يؤخذ العلم عن أربعةٍ: سفيهٍ يُعلن السفهَ وإن كان أروى الناس، وصاحب بدعةٍ يدعو إلى هواه، ومن يكذب في حديث الناس وإن كنتُ لا أتَّهمه في الحديث، وصالحٌ عابدٌ فاضلٌ إذا كان لا يحفظ ما يحدِّث به “চার ধরনের লোক থেকে ইলম গ্রহণ করা যাবে না: (১) সেই নির্বোধ লোক, যে প্রকাশ্যে মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করে; যদিও সে লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনাকারী হয়। (২) সেই বিদাতি, যে তার প্রবৃত্তির দিকে মানুষকে আহ্বান করে। (৩) যে ব্যক্তি মানুষের সাথে কথাবার্তায় মিথ্যা বলে, যদিও আমি তাকে হাদীসের ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী বলে অভিযুক্ত করি না। (৪) সেই সৎকর্মপরায়ণ ইবাদতগুজার মহৎ বান্দা, যে নিজের বর্ণিত হাদীস স্মরণে রাখতে পারে না।” [ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ, সিয়ারু আলামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬২; মুআসসাসাতুর রিসালা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]

সুতরাং সত্যবাদী, দিনদার এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির কাছ থেকে ইলমে দিন শিক্ষা করা আবশ্যক, বিদাতির কাছ থেকে নয়।
তৃতীয়ত, এই সংশয়ের ব্যাপারে তাই বলব, যা বলেছেন সম্মাননীয় শাইখ খালিদ বিন দাহউয়ি আয-যাফিরি হাফিযাহুল্লাহ। তিনি বলেছেন, نعم، الحق يؤخذ من كل من قاله، والسلف الصالح لا يتوقفون عن قبول الحق، مع ذلك لم يقولوا خذ الحق من كتب أهل البدع واترك الباطل، بل نادوا بأعلى أصواتهم بتركها كلياً، بل وأوجبوا إتلافها، وذلك لأنّ الحق الموجود في كتب أهل البدع إنما هو مأخـوذ من الكتاب والسنّة، فوجب أن نأخذ الحق من مصادره الأصلية، التي لا يشوبها كدر ولا بدعة، إذ هي المعين الصافي والماء العذب “হ্যাঁ, যে ব্যক্তিই হক বলবে, তার কাছ থেকেই তা গ্রহণ করতে হবে। ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ হক গ্রহণ করা থেকে বিরত হতেন না। এতৎসত্ত্বেও তাঁরা কখনো বলেননি যে, তোমরা বিদাতিদের বইপুস্তক থেকে হকটা গ্রহণ করো, আর বাতিলটা বর্জন করো। বরং তাঁরা উচ্চকণ্ঠে বিদাতিদের বইপুস্তক বিলকুল বর্জনের আহ্বান করেছেন। এমনকি তাঁরা সেই বইপুস্তক ধ্বংস করা ওয়াজিব ঘোষণা করেছেন। এটা একারণে যে, বিদাতিদের বইপুস্তকে বিদ্যমান হক মূলত কিতাব ও সুন্নাহ থেকে গৃহীত। সুতরাং আমাদের জন্য হকের প্রকৃত উৎস থেকেই হক গ্রহণ করা ওয়াজিব, যে উৎসগুলোতে কোনো পঙ্কিলতা ও বিদাত সংমিশ্রিত হয়নি। যেহেতু এটাই হলো নির্মল ঝরনা এবং সুপেয় পানি।” [শাইখ খালিদ আয-যাফিরি হাফিযাহুল্লাহ, ইজমাউল উলামা আলাল হাজরি ওয়াত তাহযিরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৪; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

শাইখের এ কথায় রয়েছে অভাবনীয় শিক্ষা এবং সুন্নাহর সঠিক মূলনীতির উল্লেখ। সঠিক মূলনীতি হচ্ছে— “বিদাতিদের নিকট থেকে হক তালাশ করা যাবে না, তবে হক যারই নিকট থেকে আসুক না কেন তা গ্রহণ করতে হবে।” অর্থাৎ আমরা বলব না, যাও, বিদাতিদের বইপুস্তক পড়ে বা তাদের দারস শুনে ইলম হাসিল করো। তবে বিদাতি বা কাফিরের নিকট থেকেও যদি হক কথা আসে, তাহলে আমরা হকটা নিয়ে নিব, যদি আমরা নিশ্চিত জানতে পারে, বিষয়টি আসলেই হক। কিন্তু আমরা জানব কীভাবে? আমরা যদি আলিম হয়ে থাকি, কিংবা প্রাজ্ঞ তালিবুল ইলম হয়ে থাকি, তাহলে কুরআন-সুন্নাহ ও সাহাবিদের আদর্শ অনুযায়ী যাচাই করে সেটা গ্রহণ করে নিব। পক্ষান্তরে যাঁদের কাছে যাচাই করার জ্ঞান নেই, এমন সাধারণ মানুষদের অবশ্যই বড়ো বড়ো সালাফি উলামা ও প্রাজ্ঞ সালাফি তালিবুল ইলমের কাছে জিজ্ঞেস করে বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। এজন্যই সাধারণ মানুষ বিদাতিদের থেকে কোনোভাবেই ইলম নিতে যাবে না এবং যোগ্য উলামা ও প্রাজ্ঞ ছাত্ররাও বিনা প্রয়োজনে বিদাতিদের বইপুস্তক পড়বে না, আর তাঁদের লেকচার শুনবে না।

আলোচ্য পরিচ্ছেদের শুরুতে উল্লেখ করেছিলাম, আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “আমরা সবাই ভাই-ভাই। আমাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে এখতেলাফ থাকতে পারে। এবং এটা ছিল, আছে, এবং থাকবে। এর মানে এই নয় যে, আমিই একমাত্র জান্নাতের সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত, আর তারা সবাই বাতিল ফের্কা। এমন নয় বিষয়টা। সবার মাঝেই কল্যাণকর অনেক বিষয় আছে, আপনি কল্যাণকর বিষয়টা নিয়ে নেন, অকল্যাণকর বিষয়গুলো ছেড়ে দেন। ব্যস, সিম্পল!” [দেখুন: https://youtu.be/tKe_Hh9D-UM (২৭:৩৭ মিনিট থেকে ২৮:০০ মিনিট পর্যন্ত)]

এসব বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা শুনে সাধারণ মানুষ হিসেবে অনেক ভাই ও বোন মনে করতে পারেন, আরে হ্যাঁ, তাইতো। কিছু বিষয়ে মতবিরোধ হলেই যে সবাই বাতিল ফের্কা বা পথভ্রষ্ট দলের লোক হবে, বিষয়টি তো এমন নয়। কেউ যদি বলেও বসে, আল্লাহ সব জায়গায় আছেন, তাহলে তাতে যে মতবিরোধ হলো, এজন্য বাতিল ফের্কা বা বিদাতি বলা তো যাবে না! ভাইয়েরা, ভালো করে খেয়াল করুন। নামাজের মধ্যে বুকের ওপর হাত রাখব, না নাভির নিচে কিংবা তারাবির নামাজ বিশ রাকাত পড়ব, না আট রাকাত পড়ব — এসব বিষয়ের মতবিরোধ, আর কবিরা গুনাহ করার দরুন কাফির ফতোয়া দেওয়া অথবা আল্লাহকে সর্বত্র বিদ্যমান মনে করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে সৃষ্ট মতবিরোধ এক নয়। প্রথমে উল্লিখিতি বিষয় দুটো নিয়ে আহলুস সুন্নাহ তথা সালাফি উলামাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও পরবর্তী বিষয় দুটো বা সমমানের এরকম আরও বিষয়াদি নিয়ে সালাফি উলামাদের মধ্যে চোদ্দোশো বছরের ইতিহাসে কোনোদিন মতবিরোধ হয়নি।

এজন্য শেষোক্ত বিষয়গুলোর মত সমমানের বিষয়াবলির ক্ষেত্রে কেউ সালাফিদের সাথে মতবিরোধ করলে, তাদের ভুল মার্জনীয় হতে পারে না। এসব ভুলের কারণে একজন ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহর গণ্ডি থেকে খারিজ হয়ে পথভ্রষ্ট, বিদাতি ও বাতিল ফের্কার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। আর তাইতো দেশে প্রচলিত দেওবন্দি, বেরলভি, তাবলিগ জামাত, চরমোনাই, আটরশি, জামাতে ইসলামি প্রমুখ দল আহলুস সুন্নাহ থেকে খারিজ বিদাতি ফের্কা হিসেবে পরিগণিত। যেহেতু এদের সাথে সালাফিদের বিরোধ অমার্জনীয় মৌলিক বিষয়ের বিরোধ, ছোটোখাটো কোনো বিষয়ের মতবিরোধ নয়।

বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার জন্য অধমের অনূদিত একটি বইয়ে আমার লেখা একটি জরুরি ও লম্বা টীকা তুলে দিচ্ছি। আমাদের সবাইকে এই মূলনীতি মনে রাখতে হবে, “ইজতিহাদনির্ভর মাসআলায় বা সু্ন্নাহপন্থি উলামাদের মাঝে মতভেদ রয়েছে এমন মাসআলায় একজন অপরজনকে ফাসেক বা বিদাতি আখ্যা দিতে পারবে না।”

দিনের কিছু মাসআলা রয়েছে, যেসব মাসআলায় ইজতিহাদ করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মুজতাহিদ বিদ্বানগণ গবেষণা করতে পারেন। এসব মাসআলায় স্কলারলি রিসার্চ বা ইলমি গবেষণা করে মত প্রকাশ করার অবকাশ রয়েছে। বর্তমান সময়ে শাইখ সালিহ আল-ফাওযান, গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল আযিয আলুশ শাইখ, শাইখ আব্দুর রহমান বিন নাসির আল-বাররাক, শাইখ আব্দুল আযিয আর-রাজিহি, শাইখ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, শাইখ সালিহ আলুশ শাইখ প্রমুখের মতো সত্যিকারের আলিমদের এমন ইলমি গবেষণা তথা ইজতিহাদ করার ক্ষমতা রয়েছে। তো তাঁরা কিংবা তাঁদের মতো মুজতাহিদ বিদ্বানগণ যদি ইজতিহাদের অবকাশ রয়েছে এমন মাসআলায় ইজতিহাদ করে মত দেন, তাহলে কোনো একটি মত কেউ গ্রহণ করলে সে কখনোই বিরোধীর কাছে বিদাতি বা ফাসেক সাব্যস্ত হবে না। এমন মত গ্রহণ করার কারণে কাউকে বিদাতি বলা চলবে না। কারণ আমাদের উলামাগণ এ বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। সোজাকথায়, যেসব মাসআলায় সালাফি উলামাদের ইজমা নেই, সেসব মাসায়েলে কাউকে বিদাতি বা ফাসেক বলা চলবে না।

পক্ষান্তরে আরেক ধরনের মাসায়েল রয়েছে, যেগুলোতে ইজমা (মতৈক্য) সংঘটিত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে নতুন কেউ এসে ভিন্নমত প্রকাশ করতে পারবে না, আর প্রকাশ করলেও তা পরিত্যাজ্য বিবেচিত হবে। এসব মাসায়েল সাধারণত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মূলনীতি হয়ে থাকে। এগুলোর কথা আকিদা ও মানহাজের কিতাবে মূলনীতি হিসেবে চিহ্নিত করা থাকে এবং এগুলোর বিরোধিতা করার কারণে বিদাতি বলার নীতি প্রসিদ্ধ হয়ে থাকে। এসব মাসাআলায় তথা মূলনীতিতে কেউ আহলুস সুন্নাহর বিরোধিতা করলে তাকে বিদাতি গণ্য করা হবে। যেমন সাহাবিদের গালি দেওয়া, কবিরা গুনাহগার মুসলিমদের কাফির ফতোয়া দেওয়া, সুন্নাহকে আকিদার ক্ষেত্রে দলিল হিসেবে না মানা, মানবীয় বিবেককে কুরআন-হাদিসের ওপর প্রাধান্য দেওয়া, অলিদের কারামত অস্বীকার করা, ‘আল্লাহ ওপরে রয়েছেন, আরশের ওপর আরোহণ করেছেন, কুরআন আল্লাহর কথা – যা তিনি সত্যিকারার্থেই বলেছেন, আল্লাহর দুটো হাত আছে’ — এসব বিশেষণ অস্বীকার বা অপব্যাখ্যা করা, বিদাতিদের রদ করা না-জায়েজ মনে করা প্রভৃতি একেবারে মৌলিক বিষয়ের খেলাপ। এগুলো করলে ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ থেকে বের হয়ে যায়।

আমাদের আলোচ্য এই মূলনীতির উল্লেখ খোদ আকিদা ওয়াসিতিয়ার মধ্যেই পাবেন। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ খেলাফতের মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এখন অনেকে বলবেন, এই মূলনীতির দলিল কী? ভালো করে মনে রাখবেন, সাহাবিগণের আমলই আমাদের বক্তব্যের দলিল। সহিহ বুখারিতে বনু কুরাইযার হাদিসে আমরা দেখতে পাই, নবিজির আদেশ বুঝতে গিয়ে সাহাবিগণের আমলে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। তাঁরা দুরকম আমল করেন। তথাপি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো পক্ষকেই তিরস্কার করেননি। [সহিহ বুখারি, হা: ৯৪৬]

এমনকি ফিকহের কিতাবগুলোতে সাহাবিগণের মধ্যে সৃষ্ট অসংখ্য মতবিরোধ দেখতে পাবেন, অথচ এসবের কারণে তাঁরা একজন অপরজনকে বিদাতি বলেননি। কিন্তু সেই সাহাবিগণই যখন আল্লাহর নির্ধারিত তাকদির (পূর্বলিখিত ভাগ্য) অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে জানতে পারলেন, তখন তাদের থেকে নিজেদের মুক্ত ঘোষণা করলেন। সালাফগণ তাদের বিদাতি ফতোয়া দিলেন। কুরআনকে আল্লাহর বিশেষণমূলক কথা হিসেবে না মানার কারণে সালাফগণ মুতাজিলাদের বিদাতি ফতোয়া দিয়েছেন। মহান আল্লাহ যে বিভিন্ন সময়ে কুরআন বলেছেন, আর কুরআন যে স্রেফ আল্লাহর ভাব নয়, বরং তাঁর বলা কথা, তা অস্বীকার করার কারণে কুল্লাবি সম্প্রদায়কে আহমাদ বিন হাম্বালের মতো ইমামগণ বিদাতি বলেছেন।

কিন্তু ইজতিহাদনির্ভর মাসায়েল এমন নয়। এসবের কারণে কাউকে বিদাতি বলা যায় না। তবে উলামাদের সর্ববাদিসম্মত অভিমত নেই এমন কিছু মাসআলায় বিরোধী পক্ষের ভাইদের তিরস্কার বা নিন্দা করা যায়। অর্থাৎ ইজতিহাদনির্ভর মাসায়েল দু ধরনের।

এক. যেসব মাসায়েলে বিরোধীকে তিরস্কার করা ঠিক নয়, যেহেতু এসবের দলিল থেকে বিভিন্ন রকম সমঝ উদ্‌ঘাটিত হয়ে থাকে। যেমন: নামাজে সিজদায় যাওয়ার সময় মুসল্লি আগে হাঁটু দেবে না হাত দেবে, কিংবা রুকু থেকে উঠে পুনরায় হাত বাঁধবে না বাঁধবে না প্রভৃতির মতো মাসায়েল।

দুই. যেসব মাসায়েলে বিরোধীকে তিরস্কার করা যায়, যেহেতু একদম বাজে সমঝের কারণে কিংবা নিতান্তই দুর্বল দলিলের কারণে এসব মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। যেমন: একদল লোক ফরজ নামাজের পর জামাতবদ্ধ মুনাজাতকে জায়েজ বলছে। এরকম বিষয়ের দরুন ব্যক্তি বিদাতি হয় না, কিন্তু তাকে তিরস্কার করা যায়। আর আল্লাহই সম্যক অবগত।




লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,035Threads
Total Messages
16,600Comments
Total Members
3,422Members
Top