বক্তা আদনানের দলিলবিহীন বক্তব্য— মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন চোরের হাত কেটে দেবেন

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
343
Comments
476
Reactions
6,074
আবু ত্বহা আদনান একটি মাহফিলে বলেছেন, “প্যান্ডেলের মধ্য থেকে ইতোমধ্যে অনেকগুলো মোবাইল হারিয়ে গেছে। তো সবাই দয়া করে সতর্ক থাকেন। নিজ নিজ মোবাইল নিজের কাছে রাখেন। এই বেটাও মনে হয় আমলে সলেহের নিয়াতেই আসছে। শোনো ভাই, যে এই কাজগুলো করেছ, যদি আল্লাহকে ভয় করে থাক, চুপচাপ যেখান থেকে নিয়েছ চুপচাপ সেখানে রেখে চলে যাও। নাহলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে পরকালে একটা শাস্তি। আল্লাহ পাক কেয়ামতের মাঠে ওঠার সাথে সাথে তোমার ডানহাত কব্জি পর্যন্ত কেটে দিবেন। খুব সতর্ক।... চুরির শাস্তি কব্জি পর্যন্ত হাত কেটে ফেলা। শাস্তি হাত কেটে ফেলা, এটা ইসলামিক ল। এখানে বাস্তবায়িত নাই, কিন্তু এটা ল। আল্লাহ পাক এটা করবেন কিন্তু পরকালে।” [দেখুন: https://youtu.be/EcLBGzT_HEQ (৩০:৩১ মিনিট থেকে ৩১:৫০ মিনিট)]
কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ চোরের হাত কেটে দিবেন, এ কথা কুরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত হয়নি। এজন্য বক্তা আদনানের উক্ত কথা বিনা ইলমে আল্লাহর ব্যাপারে কথা বলার মতো ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর এরকম গায়েবি বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর দলিলবিহীন কথা বলা গর্হিত অপরাধ। এসব কথা বিশ্বাস করাও না-জায়েজ। বরং হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, কেয়ামতের দিন এর বিপরীতটাও ঘটতে পারে। আল্লাহ চোরকে মাফ করে দিতে পারেন।

উবাদা বিন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, বায়াত তথা আনুগত্যের অঙ্গীকার দিতে আসা সাহাবিদের উদ্দেশে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, بَايِعُونِي عَلَى أَنْ لاَ تُشْرِكُوا بِاللهِ شَيْئًا وَلاَ تَسْرِقُوا وَلاَ تَزْنُوا وَلاَ تَقْتُلُوا أَوْلاَدَكُمْ وَلاَ تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ وَلاَ تَعْصُوا فِي مَعْرُوفٍ فَمَنْ وَفَى مِنْكُمْ فَأَجْرُهُ عَلَى اللهِ وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا ثُمَّ سَتَرَهُ اللهُ فَهُوَ إِلَى اللهِ إِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ وَإِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ “তোমরা আমার নিকট এই মর্মে বায়াত করবে যে, আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে অংশী সাব্যস্ত করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করবে না এবং সৎকাজের আদেশপ্রাপ্ত হলে অবাধ্য হবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূর্ণ করবে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট রয়েছে। আর কেউ এর কোনো একটিতে লিপ্ত হলে এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্ফারা বা প্রায়শ্চিত্ত। আর কেউ এর কোনো একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ তা গোপন রাখলে, তা হবে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান, তাকে মার্জনা করবেন, আর যদি চান, তাকে শাস্তি প্রদান করবেন।” [সহিহুল বুখারি, হা: ১৮; সহিহ মুসলিম, হা: ১৭০৯]

বরং এক্ষেত্রে বলা যেত, মুসলিম ভাইয়ের জিনিস চুরি করার দরুন তাকে পরকালে চুরির সমপরিমাণ সওয়াব দিয়ে দিতে হবে, যেই বিভীষিকাময় দিনে সামান্য সওয়াবের আশায় মানুষ দিশেহারা বোধ করবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ নিয়ে নেয়, সেই দিন আসার পূর্বে যেই দিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো সৎকর্ম থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেওয়া হবে, আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে।” [সহিহুল বুখারি, হা: ২৪৪৯]

একদা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কি বলতে পার, অভাবী লোক কে?’ তারা বললেন, ‘আমাদের মাঝে যার দিরহাম ও ধনসম্পদ নেই, সে অভাবী লোক।’ তখন তিনি বললেন, إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ “আমার উম্মাতের মধ্যে সে-ই প্রকৃত অভাবী লোক, যে কেয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে এবং আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক আমল থেকে দেওয়া হবে, আরেকজনকে নেক আমাল থেকে দেওয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হক তার নেক আমল থেকে পূরণ করা না যায়, সেই ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার ওপর নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে।” [সহিহ মুসলিম, হা: ২৫৮১; সদ্ব্যবহার অধ্যায় (৪৬); পরিচ্ছেদ: ১৫]

এসব ভ্রান্ত বক্তার মনে রাখা উচিত, মহান আল্লাহ বলেছেন, قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ “তুমি বল, অবশ্যই আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপ কাজ, অন্যায় সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করা যে ব্যাপারে আল্লাহ কোনো দলিল অবতীর্ণ করেননি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই।” [সুরা আরাফ: ৩৩] আর অডিয়েন্সদেরও এদের থেকে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ আপনার-আমার দিন-ধর্ম আবু ত্বহা আদনানের মতো ভ্রান্ত বক্তাদের কাছে মোটেও নিরাপদ নয়। আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন। আমিন।




লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।​
 
Back
Top