সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
abdulazizulhakimgrameen

বিবাহ ও দাম্পত্য পাত্রী দেখা থেকে শুরু করে বিবাহ সম্পাদন করার যাবতীয় সুন্নাতী পদ্ধতি কি?

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
LV
12
 
Awards
23
Credit
17,653
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার জীবন ধারণের জন্য কিছু চাহিদা দিয়েছেন এবং চাহিদা মিটানোর পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। মানব জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ন্যায় জৈবিক চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ। এই চাহিদা পূরণের জন্য ইসলাম বিবাহের বিধান দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ)-কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তী বংশ বৃদ্ধির জন্য হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করে আদম (আঃ)-এর সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করেন। মানব জীবন প্রণালী পরিবর্তনের সাথে সাথে বিবাহের নিয়মেও পরিবর্তন ঘটেছে। অবশেষে শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) জাহেলী যুগের সকল কুসংস্কার দূর করে নারীদেরকে বিবাহের মাধ্যমে মর্যাদা দান করেছেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের মুসলমানগণ বিবাহের ইসলামী পদ্ধতি ভুলে অনেকটা বিধর্মীদের রসম-রেওয়াজের সাথে মিশে গেছে। আলোচ্য প্রবন্ধে বিবাহের গুরুত্ব ও নিয়ম-পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হ’ল:

◾ বিবাহের গুরুত্ব:
মহান আল্লাহ পৃথিবীর সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন [সূরা যারিয়াত ৫১/৪৯]। এমনকি লতা-পাতা, গাছ-পালাও (ইয়াসীন ৩৬/৩৬)। তেমনি মহান আল্লাহ মানুষকে নারী-পুরুষে বিভক্ত করেছেন [সূরা হুজুরাত ৪৯/১৩, নিসা ৪/১] এবং একে অপরের প্রতি আকর্ষণীয় করে দিয়েছেন। ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন, বসবাস ও জৈবিক চাহিদা পূরণের একমাত্র পন্থা হিসাবে বিবাহের প্রচলন করা হয়েছে। এজন্য প্রত্যেক অভিভাবককে তাদের অধীনস্থদের বিবাহের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা স্বামীহীন তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও’ [সূরা নূর ২৪/৩২]।

বিবাহের মাধ্যমে মানুষ তার দৃষ্টিকে সংযত করে যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যমে জান্নাতের পথ সুগম করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহয় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন ছিয়াম পালন করে। কেননা ছিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম’। [বুখারী/৫০৬৫; মুসলিম/১৪০০]।

অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন তোমরা স্নেহপরায়ণ বেশী সন্তান জন্ম দানকারিণীকে বিবাহ কর। কেননা আমি বেশী উম্মত নিয়ে (ক্বিয়ামতের দিন) গর্ব করব’। [আবূদাউদ হা/২০৫০; নাসাঈ হা/৩২২৭]।

বিবাহ করা সমস্ত নবীদের সুন্নাত। আল্লাহ বলেন, তোমার পূর্বে আমরা অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম’[রা‘দ ১৩/৩৮]।

রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীদের নিকট আগত তিন ব্যক্তির এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করার স্বার্থে বিবাহ না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন ‘আমি নারীদেরকে বিবাহ করি (সুতরাং বিবাহ করা আমার সুন্নাত)। অতএব যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়’। [বুখারী হা/৫০৬৩; মসুলিম হা/১৪০১]।

বিবাহের হুকুম:

অবস্থা ও পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিবাহের হুকুম ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন:

১. ওয়াজিব: যার শারীরিক শক্তিমত্তা, সক্ষমতা ও আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে এবং যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ ও পদস্খলনের আশংকা করে, তার জন্য বিবাহ করা ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحاً حَتَّى يُغْنِيَهُمْ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ‘যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে’ (নূর ২৪/৩৩)। কেননা আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং হারাম থেকে মুক্ত থাকা ওয়াজিব, যা বিবাহ ব্যতীত সম্ভব নয়’ (নূর ৩৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ‘কেননা এটা চোখ অবনমিত রাখে ও লজ্জাস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করে’।[বুখারী হা/৫০৬৬; মুসলিম হা/১৪০০; আবু দাঊদ হা/২০৪৬]

২. মুস্তাহাব: যার শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে এবং নিজেকে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে নিরাপদ রাখার ক্ষমতা আছে, তার জন্য বিবাহ করা মুস্তাহাব। তবে একাকী জীবন-যাপনের চেয়ে বিবাহ করা উত্তম। কেননা ইসলামে সন্ন্যাসব্রত বা বৈরাগ্য নেই।[ফিকহুস সুন্নাহ ৩/১৩০]

৩. হারাম: যার দৈহিক মিলনের সক্ষমতা ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণের সামর্থ্য নেই তার জন্য বিবাহ করা হারাম। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৩১)। অনুরূপভাবে যিনি যুদ্ধের ময়দানে বা কাফির-মুশরিক দেশে যুদ্ধরত থাকেন তার জন্য বিবাহ হারাম। কেননা সেখানে তার পরিবারের নিরাপত্তা থাকে না। তদ্রূপ কোন ব্যক্তির স্ত্রী থাকলে এবং অন্য স্ত্রীর মাঝে ইনছাফ করতে না পারার আশংকা করলে দ্বিতীয় বিবাহ করা হারাম। যেমন আল্লাহ বলেন, فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ‘আর যদি আশংকা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে’ (নিসা ৪/৩)শরহুল মুমতে‘, ১২/৯]

◾বিবাহের শর্তাবলী ও রুকন:
বিবাহের শর্ত হ’ল চারটি।
(১) পরস্পর বিবাহ বৈধ এমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন।
(২) উভয়ের সম্মতি। [মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬]।
(৩) মেয়ের ওলী থাকা। [তিরমিযী; মিশকাত হা/৩১৩০]।
(৪) দু’জন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকা। [ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৫৮]।

বিবাহের দু’টি রুকন হ’ল ঈজাব ও কবূল (নিসা ১৯)। উক্ত শর্তাবলীর কোন একটি পূরণ না হ’লে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। উল্লেখ্য যে, যে মেয়ের ওলী নেই, তার ওলী হবেন সরকার। [তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১৩১]।

◾বিবাহের নিয়ম-পদ্ধতি:
ইসলামের প্রতিটি কাজের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। বিবাহ তার ব্যতিক্রম নয়। বিবাহের সংক্ষিপ্ত নিয়ম হ’ল- উপযুক্ত বয়সের ছেলে-মেয়েকে তাদের অভিভাবক বিবাহের প্রস্তাব দিবেন। সম্ভব হ’লে ছেলে-মেয়ে একে অপরকে দেখে তাদের অভিমত জানাবে। উভয়ে একমত হ’লে নির্দিষ্ট দিনে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে মেয়ের অভিভাবক নির্দিষ্ট মহরের বিনিময়ে ছেলের সাথে মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব দিবেন। ছেলে কবুল বলে গ্রহণ করবে। যাকে আরবীতে ঈজাব ও কবূল বলা হয়। নিম্নে দলীলসহ বিবাহের বিস্তারিত নিয়ম উল্লেখ করা হ’ল:

◾পাত্র-পাত্রীর সম্মতি:
বিবাহের মূল হ’ল পাত্র-পাত্রী বা বর-কনে। যারা সারা জীবন একসাথে ঘর-সংসার করবে। সেকারণ বিবাহের পূর্বে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই কোন ছেলে-মেয়েকে তার অসম্মতিতে বিবাহ করতে বাধ্য উচিত নয়। আল্লাহ বলেন,‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে, তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে’ [নিসা ৪/১৯]।

নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, বিবাহিতা মেয়েকে তার পরামর্শ ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না এবং কুমারী মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, তার অনুমতি কিভাবে হবে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘চুপ থাকাই হচ্ছে তার অনুমতি’। [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬]।

◾অভিভাবকের সম্মতি:
ছেলে-মেয়ের সম্মতির পাশাপাশি অভিভাবকের সম্মতিরও প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে মেয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি যরূরী। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِىٍّ ‘অভিভাবক ছাড়া কোন বিবাহ নেই’। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারেমী, মিশকাত হা/৩১৩০]।

তিনি আরো বলেন,

যদি কোন নারী তার ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করে, তবে তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল। এইরূপ অবৈধ পন্থায় বিবাহিত নারীর সাথে সহবাস করলে তাকে মোহর দিতে হবে। কারণ স্বামী মোহরের বিনিময়ে তার লজ্জাস্থানকে ব্যবহার করেছে। যদি ওলীগণ বিবাদ করেন, তবে যার ওলী নেই তার ওলী দেশের শাসক’।[ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১৩১]।

◾পাত্র-পাত্রী দর্শন:

বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে দেখে নেওয়া উচিত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা বিবাহ কর সেই স্ত্রীলোক, যাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে’[নিসা ৪/৩]।

মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিবাহের প্রস্তাব করলাম। রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন,তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাকে দেখে নাও। কেননা এতে তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালবাসা জন্মাবে’। [ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১০৭]।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একজন লোক নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল যে, সে আনছারী একটি মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেছে। রাসূল (ছাঃ) বললেন,তাকে দেখেছ কি? কেননা আনছারদের লোকের চোখে দোষ থাকে’। [মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৯৮]।

পাত্রী দর্শনের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে পাত্রের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন মিলে ১০/১২ জনের একটি দল পাত্রীর বাড়ীতে যায়। তারা পাত্রীকে সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে, দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখার যে পদ্ধতি সমাজে প্রচলিত আছে, তা ইসলাম সম্মত নয়। বিবাহের পূর্বে পাত্র ব্যতীত অন্যদের এভাবে পাত্রী দেখা চোখের যেনার শামিল।

অন্যত্র ইবনে ওমর রাঃ থেকে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন কোন পুরুষ-মহিলা নির্জনে একত্রিত হয়, তখন তৃতীয়জন হিসাবে সেখানে শয়তান উপস্থিত হয়’। [আহমাদ. তিরমিযী হা/২১৬৫, ইবনে হিববান হা/৪৫৫৭, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৩০]।

◾পাত্র-পাত্রীর মধ্যে সমতা: বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার আগে লক্ষ্য করতে হবে পাত্র-পাত্রীর মধ্যে সমতা আছে কি-না। সম্পদ ও বংশ মর্যাদার সমতা হ’লে ভাল হয়, তবে যরূরী নয়। কিন্তু দ্বীনের বিষয়ে সমতা থাকা যরূরী। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘সাধারণতঃ মেয়েদের চারটি গুণ দেখে বিবাহ করা হয়- তার ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং ধর্ম। তোমরা ধার্মিক মেয়েকে অগ্রাধিকার দাও। অন্যথায় তোমাদের উভয় হস্ত অবশ্যই ধূলায় ধূসরিত হবে’। [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮২, ৩০৯০]।

আয়শা রাঃ থেকে রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَانْكِحُوا الأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ ‘তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর এবং সমতা দেখে বিবাহ কর’। [ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮]।

তবে বিবাহে সমতা হবে কেবল দ্বীনদারী ও চরিত্রের ক্ষেত্রে। যেমন আল্লামা নাছীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,ولكن يجب أن نعلم أن الكفاءة إنما هي في الدين والخلق فقط ‘তবে জানা আবশ্যক যে, সমতা হচ্ছে কেবল দ্বীনদারী ও চরিত্রের ক্ষেত্রে’। [সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৭-এর আলোচনা দ্র.]।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ تَرْضَوْنَ دِيْنَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوْهُ ‘যার দ্বীনদারী এবং উত্তম আচরণে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে বিবাহ দাও’ [তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০৯০]।

◾বিবাহে সাক্ষী: বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য ন্যায়পরায়ণ ঈমানদার দু’জন সাক্ষী থাকবে। সাক্ষীগণ মহরের পরিমাণ ও বরের স্বীকারোক্তি নিজ কানে শুনবেন। আল্লাহ বলেন, فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ أَوْ فَارِقُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ وَأَشْهِدُوْا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنكُمْ- ‘যখন তারা ইদ্দতে পৌঁছে যায়, তখন যথাবিধি তাদেরকে রেখে দিবে, নতুবা তাদেরকে যথাবিধি বিচ্ছিন্ন করে দিবে এবং তোমাদের মধ্য হ’তে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে’ (তালাক্ব ৬৫/২)। সাক্ষীগণ পুরুষই হ’তে হবে। একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা কিংবা চারজন মহিলা হ’লেও চলবে না। [শরহুল মুমতে আলা যাদিল মুসতাকনি ১২/৯৭ পৃঃ]

কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِىٍّ وَشَاهِدَىْ عَدْلٍ ‘বিবাহ সংগঠিত হবে না অভিভাবক ও দু’জন সাক্ষী ব্যতীত’।[বায়হাকী ৭/১১২, ইরওয়া হা/১৮৪৪, শরহুল মুমতে‘ ১২/৯৪।,]

◾মোহরানা নির্ধারণ: বিবাহের আগে মোহরানা নির্ধারণ করা এবং বিবাহের পর তা স্ত্রীকে দিয়ে দেওয়া ফরয। মহরানা পাত্রের সামর্থ্য অনুযায়ী নির্ধারণ করা উত্তম, আল্লাহ বলেন,তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা খুশী মনে প্রদান কর’ [নিসা ৪/৪]।

অন্যত্র তিনি বলেন,তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ [নিসা ৪/২৪]।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন ‘(বিবাহে) সবচেয়ে বড় শর্ত যেটা তোমরা পূর্ণ করবে, সেটা হ’ল যা দ্বারা তোমরা লজ্জাস্থানকে হালাল কর’।[তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩১৪৩]।

নগদে পরিশোধ করা সুন্নাত। তবে বাধ্যগত অবস্থায় মোহর কিছু বাকী রেখে বিবাহ করা জায়েয [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২০২]।

মোহর কম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তবে সেবচ্ছায় বেশী দেওয়া নিন্দনীয় নয়। মহানবী (সাঃ) তাঁর কোন স্ত্রী ও কন্যার মোহর ৪৮০ দিরহাম (১৪২৮ গ্রাম ওজনের রৌপ্যমুদ্রা) এর অধিক ছিল না।[ইরওয়াউল গালীল ১৯২৭]।

হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর মোহর ছিল একটি লৌহবর্ম। [সহীহ আবু দাউদ, আল্লামা আলবানী ১৮৬৫নং, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ১]।

হযরত আয়েশা বলেন, তাঁর মোহর ছিল ৫০০ দিরহাম (১৪৮৭,৫ গ্রাম ওজনের রৌপ্য মুদ্রা)। (সহীহ আবু দাউদ ১৮৫১নং)।

◾বিবাহের খুতবা:
বিবাহ পড়ানোর সুন্নাতী পদ্ধতি হ’ল, প্রথমে বিবাহের খুৎবা পড়তে হবে [মুগনী ৭/৬২]।

কোন বিয়েতে খুৎবা পূর্বে পাঠ করা না হ’লে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) সে বিবাহ অনুষ্ঠান ত্যাগ করতেন [আবুন নাজা, আল-ইক্বনা‘ ৩/১৬২; বাহূতী, কাশশাফুল কেনা‘ ৫/২১]।

কারণ হাদীছে খুৎবা শেষে প্রয়োজনীয় কথা বলতে বলা হয়েছে, যা হ’ল ঈজাব ও কবূল [দারেমী হা/২২০২; মিশকাত হা/৩১৪৯, সনদ ছহীহ]।

অতঃপর সাবালিকা হ’লে পূর্বেই মেয়ের সম্মতি নিয়ে দু’জন পরহেযগার ও ন্যায়পরায়ণ পুরুষ সাক্ষীর সম্মুখে মেয়ের পিতা বা তার সম্মতিক্রমে একজন বলবেন, আমি আমার মেয়েকে আপনার সাথে নগদ মোহরের বিনিময়ে বিবাহ দেওয়ার প্রস্তাব করছি। উত্তরে ছেলে বলবে, ‘আমি কবুল করলাম’ বা সম্মতিসূচক আল-হামদুলিল্লাহ বলবে। এভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর উপস্থিত সকলে পৃথক পৃথকভাবে সুন্নাতী দো‘আ পাঠ করবে
-بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِى خَيْرٍ، ‘
বা-রাকাল্লাহু লাক, ওয়া বা-রাকা আলাইক, ওয়া জামা‘আ বায়নাকুমা ফী খায়ের’। আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার উপরে বরকত দিন ও তোমাদের দু’জনকে কল্যাণের সাথে মিলিত করুন’ [আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৪৪৫]।

তারপর বিবাহ হচ্ছে একটি প্রকাশ্য সামাজিক অনুষ্ঠান। তাই বিয়ের অনুষ্ঠান সকলকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা বিবাহের অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার কর [ইবনু হিববান, ত্বাবারানী, ইরওয়া হা/১৯৯৩]।

◾বিবাহের পর করনীয়:

বাসর ঘর ও কনে সাজানো : বিয়ের পর বর-কনেকে একত্রে থাকার জন্য বাসর ঘরের ব্যবস্থা করা ও কনেকে সাজিয়ে সুন্দর করে বরের সামনে উপস্থিত করা সুন্নাত। [ইবনে মাজা১৮৭৬]।

বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য:

(১) স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগে হাত রেখে দো‘আ করা: আমর ইবনে শুয়াইব তার পিতা থেকে নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোন মহিলাকে বিবাহ করবে অথবা চাকর ক্রয় করবে, সে যেন তার কপালে হাত রেখে বিসমিল্লাহ পড়ে বলে, اَللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট তার মঙ্গল ও যে মঙ্গলের উপর তাকে সৃষ্টি করেছেন তা প্রার্থনা করছি। আর তার অমঙ্গল ও যে অমঙ্গলের উপর তাকে সৃষ্টি করেছেন তা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি’। [ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৫৮।]।

(২) স্বামী-স্ত্রী জামা‘আতে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করা: শাকীক (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি আগমন করল, তাকে আবু হারীয বলে ডাকা হ’ত। তারপর তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি একজন যুবতী কুমারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। আর আমি ভয় করছি যে, সে আমাকে অসন্তুষ্ট করবে। তারপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ বলেন, নিশ্চয়ই বন্ধুত্ব-ভালবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং রাগ-অসন্তুষ্টি শয়তানের পক্ষ থেকে। শয়তান ইচ্ছা করছে যে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা বৈধ করেছেন তা সে তোমাদের নিকট ঘৃণা সৃষ্টি করবে। সুতরাং সে (তোমার স্ত্রী) যখন তোমার কাছে আসবে তখন তাকে জামা‘আত সহকারে তোমার পিছনে দু’রাক‘আত ছালাত পড়তে নির্দেশ দিবে।[আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১৩১]।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, স্ত্রী স্বামীর কাছে গেলে স্বামী দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পিছনে দাঁড়াবে। অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে এবং বলবে, اَللّهُمَّ بَارِكْ لِىْ فِى أَهْلِىْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِىَّ- اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ بِخَيْرٍو فَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ- ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন এবং আমার ভিতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। হে আল্লাহ! আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযিক দিন আর আমার থেকে তাদেরকেও রিযিক দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্রে রাখুন। আর আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলে কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটান’। [মুসলিম হা/১৬৭৪, মুসনাদে আহমাদ হা/২১৫১১]।

(৩) সহবাসকালে দো‘আ পাঠ: ইবনে আব্বাস থেকে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ স্ত্রীর কাছে আসলে সে যেন বলে, بِسْمِ اللهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শায়তা-না ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা’। অর্থ: ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যে সন্তান দান করবেন তাদের শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুন’[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬]।

(৪) সহবাসের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সময় ও জায়গা থেকে বিরত থাকা: বিবাহের পর মহিলা ঋতুবতী হ’লে সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং মহিলাদের পিছন দ্বারে সহবাস করা যাবে না। আবু হুরাইরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী মহিলার সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর পিছনপথে সঙ্গম করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করল’। [মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৭]।

(৫) স্ত্রী সহবাসের পর ঘুমানোর পূর্বে ওযূ করা: সহবাসের পরে ঘুমাতে ও পানাহার করতে চাইলে কিংবা পুনরায় মিলিত হ’তে চাইলে মাঝে ওযূ করে নেওয়া সুন্নাত। ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির থেকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনأ ‘তিন ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা আসে না; কাফের ব্যক্তির লাশ, জাফরান ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র ব্যক্তি যতক্ষণ না সে ওযূ করে’। [মুসলিম হা/১৪২১, তিরমিযী, নাসাঈ, বুলূগুল মারাম হা/৯৮৫]।

◾বিবাহের অলীমাহ বা খানাপিনা:

অলীমাহ বা বউভোজ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা
শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ একদল ওলামা ওয়াজিব বলেছেন [মুসনাদে আহমদ, তাবঃ, ত্বাহাবী , প্রভৃতি,আদাবুয যিফাফ ১৪৪পৃঃ]।

তবে নিঃসন্দেহে অলীমাহ গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ
যদিও বা একটি মাত্র ছাগল যবেহ করা হয়।[সহীহ বুখারী, মুসলিম, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৪৯ পৃঃ]।

এই ভোজ অনুষ্ঠান তিন দিন পর্যন্ত করা চলে।[আবু ইয়া’লা প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৪৬ পৃঃ]।

এই ভোজের অধিক হকদার দ্বীনদার পরহেযগার মুসলিমরা। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,মুমিন ছাড়া কারো সঙ্গী হয়ো না এবং পরহেযগার ব্যক্তি ছাড়া তোমার খাদ্য যেন অন্য কেউ না খেতে পায়।’’ [(আবু দাঊদ, তিরমিযী, হাকেম , মুসনাদে আহমদ, আদাবুয যিফাফ ১৬৪ পৃঃ]।

অলীমার জন্য গোশত হওয়া জরুরী নয়। যে কোন খাদ্য দ্বারা এই মিলনোৎসব পালন করা যায়। [আদাবুয যিফাফ ১৫১ পৃঃ]।

গরীব মানুষদের অলীমা-ভোজে অর্থ বা খাদ্যাদি দিয়ে অংশ গ্রহণ করা ধনী মানুষদের জন্য মুস্তাহাব। [বুখারী, মুসলিম ইত্যাদি, আদাবুয যিফাফ ১৫২ পৃঃ]।

এই ভোজে বেছে বেছে ধনীদেরকে নিমন্ত্রণ করা এবং গরীব মানুষদের (যারা অপরকে খাওয়াতে পারে না তাদের)কে বাদ দেওয়া হলে এর খাদ্য নিকৃষ্টতম খাদ্যে পরিগণিত হয়। [মুসলিম, বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৫৩পৃঃ]।

অলীমার জন্য আমন্ত্রিত হলে উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব। যে ব্যক্তি বিনা ওজরে এমন ভোজে উপস্থিত হয় না, সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্য। [বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৫৪পৃঃ]। আল্লাহু আলাম।



উত্তর প্রদানে:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।​
 
Last edited by a moderator:

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,350Threads
Total Messages
17,210Comments
Total Members
3,679Members
Latest Messages
Shajib AuzidLatest member
Top