নেট ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু উপদেশ...
শায়খ রবী' আল-মাদখালী হাফিযাহুল্লাহ তার كتاب الذريعة- এ নেট ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন:
"ভাইয়েরা, বর্তমানে ওয়েবসাইটগুলো সালাফিয়াতের নামে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা ও ভ্রষ্ট মতবাদের ভারে জর্জরিত। এই কারণেই বিদআতীরা সালাফীদের তুচ্ছ জ্ঞান করে, তাদের আমল দেখে বগল বাজায়!!!
তো আমি সালাফী ভাইদের এসব তুচ্ছতাচ্ছিল্যের প্রেক্ষিতে আল্লাহর প্রতি তাওবা করার, মহান লক্ষ্যে মহৎ মাধ্যম ব্যবহারের এবং হিকমত ও উত্তম উপদেশ দানের নছীহত করছি।
তাদের আরো বলব: তোমাদের মধ্যে যারা তাফসীর বিষয়ে পারদর্শী তারা তাফসীর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট করবে; আকীদা সংক্রান্ত, হুকুম-আহকাম সংক্রান্ত, আদব-আখলাক সংক্রান্ত, সর্বোপরি দ্বীনী উপকারী বিষয়ে মানুষকে ব্যস্ত রাখবে। কেননা এটি একটি দাওয়াত।
অনুরূপভাবে, যারা হাদীছে দক্ষ তারা হাদীছের অর্থসংশ্লিষ্ট , হুকুম-আহকাম সংক্রান্ত, হালাল-হারামসহ হাদীছে অন্তর্ভুক্ত যাবতীয় শিক্ষণীয় বিষয়াবলী নিয়ে পোস্ট করবে।
মোটকথা, তোমরা দুনিয়াটা ইলমে পরিপূর্ণ করে দাও..!! কারণ, মানুষ এই ইলমের ক্ষেত্রে বড়ই মিসকীন!! কমেন্ট যুদ্ধ ও বাদানুবাদ শুধু সালাফী মানহাজকেই কলুষিত করে এবং মানুষের মাঝে একধরনের বীতশ্রদ্ধ ভাব আনে।
অনলাইনে হোক বা অফলাইনে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই হোক না কেন তর্ক-বিতর্ক পরিহার করো; মানুষের সামনে ইলমে নাফে' তুলে ধরো। মানুষের সাথে যেমন ঝগড়া বাদ দিবে তেমনি আত্মকলহ থেকেও বিরত থাকবে।
তোমরা এই বইয়ে পড়েছ যে, সালাফরা বাহাছ-মুনাযারা থেকে দূরে থাকতেন। একান্ত বাধ্য না হলে মুনাযারা করো না। আবার, একমাত্র আলেম মুনাযারা করবেন, যিনি বিদআতীদের মূলোৎপাটনে সক্ষম।
তোমরা আপোসে তর্কে লিপ্ত হয়োনা, কোনো ভুল হয়ে গেলেও তা আহলে ইলমের কাছে সমাধান চাও।
বাকযুদ্ধ থেকে বিরত থাক, কারণ এটা যেমন সালাফী দাওয়াতকে বাধাগ্রস্ত করেছে, তেমনি আহলুস-সুন্নাহর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর এই ক্ষতিকে ত্বরান্বিত করছে এইসব ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যমগুলি। যে-ই একটু বড় হয়, সে-ই এসব মাধ্যমে যোগ হয়।
✓✓তোমরা এসব বাদ দাও। ইলমের সাথে কথা বলো, তাহলে যেমন তোমরা সম্মানিত হবে, তেমনি তোমাদের দাওয়াতও বেগবান হবে।
✓✓যার ইলম নাই, সে যেমন নেটে লিখবে না তেমনি অন্যত্র লিখবে না।
✓তোমরা যাবতীয় হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকো; অন্যথায় তোমরা -আল্লাহর কসম- এই মহান দাওয়াতকে মেরে ফেলবে।
>তোমাদের কাছে আমার আশা থাকবে, কেউ যেন নেটের এই বিপদ বাড়াতে দুঃসাহস না দেখাও। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে সুন্নাহর উপর দৃঢ় রাখুন।
মনোযোগ দিয়ে শোনো ভাইসকল, যার ইলম ও হিকমাত আছে সে যেন নেটে লেখালেখি করে। (হতে পারে সেটা) তাফসীর; আর এই বিষয়টা অত্যন্ত প্রশস্ত, যার মধ্যে আকীদা, হুকুম-আহকাম, হালাল-হারাম ইত্যাদি বিষয়গুলো শামিল। যেন জ্ঞানের সাগর, আর তোমরা সেই সাগর থেকে এক অঞ্জলী পানি নিচ্ছ...!!
কিছু হাদীছ নাও, আলেমদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ব্যাখা করো আর মানুষের বাস্তবজীবনের সাথে মিলিয়ে দাও; আকীদা, ইবাদত, আদব-আখলাক ইত্যাদি যাবতীয় দিক; অত্যন্ত ধীর ও প্রজ্ঞাময় পন্থায়, যা মানুষের উপকারে আসে।
তোমরা তো জানোই সালাফিয়্যাত কিভাবে ক্রমবিকাশ লাভ করল, কিভাবে দুনিয়া এই আলোয় উদ্ভাসিত হলো। কিন্তু এখন কিনা সেই সালাফিয়্যাতই জুলুমের শিকার!!! উপরোক্ত উপদেশাবলী পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের বরকত দান করুন।
তো আমি তোমাদের বিশেষ করে অনলাইন-অফলাইনে সর্বাবস্থায় তর্ক-বিতর্ক পরিহার করার নছীহত করছি। যার ইলম আছে, তার বক্তব্য যেমন ইলমী, লিখনী যেমন ইলমী, তেমনি তার দাওয়াতও হবে দলীল-প্রমাণসহ ইলমী।
মতভেদ ও বিভক্তির যাবতীয় কার্যকারণ থেকে বিরত থাকো। নিজেদের মাঝে এগুলো উস্কে দিয়ো না।
কেউ ভুল করে ফেললে তা আলেমদের বরাবর সমাধানের জন্য পেশ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের বরকতময় করুন, তোমাদের সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার তাওফীক দিন, অন্তরে ভালোবাসার সৃষ্টি করুন..".(আমীন)
(শায়খ طلعت زهران এর পোস্ট থেকে অনূদিত।)
--ইয়াকুব বিন আবুল কালাম
১৯/০৫/১৪৪২হি