ভূমিকা : মানব জীবনের শুরুটা যেমন অসহায়ত্বের মধ্য দিয়ে শুরু হয়, তেমনি তার বার্ধক্যেও নেমে আসে চরম অসহায়ত্ব। বুদ্ধি-বিবেকে যেমন ঘটে চরম পরিবর্তন, তেমনি ঘটে দৈহিক গঠনেও। এক সময় সে দাড়িবিহীন ও স্বল্প চুলের অধিকারী থাকলেও সময়ের ব্যবধানে সে হয়ে যায় সাদা চুল ও দাড়ির অধিকারী। কিন্তু তার মন যেন বার্ধক্যে যেতে চায় না। সে যৌবনের জোশ ও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে বিভোর থাকতে চায়। কিন্তু পিতা ও সন্তানের মাঝে পার্থক্য করবে কিভাবে? এমন ভাবনা এসেছিল ইবরাহীম (আঃ)-এর সরল মনে। তিনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন, আল্লাহ এমন কিছু ব্যবস্থা করে দিন যাতে পিতা ও সন্তানের মাঝে পার্থক্য করা যায়। তিনি বার্ধক্যে উপনীত হ’লে তার চুল ও দাড়ি সাদা হয়ে গেল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ! এটা কি? তিনি বললেন, হে ইবরাহীম! এটা সম্মান।[1]
কিন্তু মানব মন এই শুভ্রতা চায় না। সে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। তাই ইবরাহীম (আঃ) দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করলেন। তিনিই প্রথম মেহেদী ব্যবহারকারী।[2] আর মুসলমানদের মধ্যে আবুবকরের পিতা আবু কুহাফা প্রথম খেযাব ব্যবহারকারী।[3] রাসূল (ﷺ) মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর অন্যান্য সুন্নাতের ন্যায় এই সুন্নাতটিকে পুনর্জীবিত করার জন্য তার গুটি কয়েক সাদা চুল ও দাড়িতেও মেহেদী ব্যবহার করেছিলেন। রাসূল (ﷺ) তাঁর সাহাবীগণকেও চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেজন্য চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করা সুন্নাত। এটি চুল ও দাড়ির সৌন্দর্যের মাধ্যম।
রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘যে ব্যক্তির চুল আছে, সে যেন তার যত্ন নেয়’।[4] চুলের যত্ন নেয়া অর্থ চুলের সৌন্দর্য বর্ধন করা, চুল পরিপাটি রাখা, তেল ব্যবহার করা, সাদা চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করা এবং তাকে এলোমেলো না রাখা ইত্যাদি।
চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহারে রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশনা :
জাবের (রাঃ) বলেন,
‘মক্কা বিজয়ের দিন আবু কুহাফাহ (রাঃ)-কে নিয়ে আসা হ’ল। তার চুল-দাড়ি ছিল ছাগামার (কাশফুলের) ন্যায় শুভ্র। সে সময় রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘একে একটা কিছু দিয়ে পরিবর্তন করে দাও, তবে কালো রং থেকে বিরত থাকবে’।[5]
অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘তাকে তার কোন এক স্ত্রীর নিকটে নিয়ে যাও। যাতে সে তার চুল-দাড়ির রঙ পরিবর্তন করে দেয়। অবশ্যই তোমরা কালো রং ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে’।[6]
আবু উমামা আল-বাহেলী (রাঃ) বলেন,
‘একদা রাসূল (ﷺ) আনছারী বৃদ্ধ সাহাবীগণের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের দাড়ি সাদা হয়ে গিয়েছিল। তাদের দেখে তিনি বললেন, হে আনছারের দল! তোমরা দাড়িকে লাল ও হলুদ রঙ্গে রঞ্জিত করো এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করো’।[7]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
‘ইহুদী ও নাছারারা খেযাব লাগায় না। অতএব তোমরা তাদের বিপরীত করবে’।[8]
তিনি আরো বলেছেন,
‘তোমরা (খেযাব দ্বারা) বার্ধক্যকে পরিবর্তন করে দাও এবং ইহূদীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করো না’।[9]
অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
‘বার্ধক্যকে পরিবর্তন করার জন্য সবচেয়ে উত্তম বস্ত্ত হ’ল মেহেদী ও কাতাম ঘাস’।[10]
আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন,
‘আমরা একদা রাসূল (ﷺ)-এর পাশে বসা ছিলাম। সে সময় তাঁর নিকট একদল ইহূদী প্রবেশ করল। তিনি তাদের সাদা দাড়ি দেখে বললেন, তোমরা কেন এগুলো পরিবর্তন কর না? তাকে বলা হ’ল যে, তারা এটা অপসন্দ করে। তখন তিনি বললেন, কিন্তু তোমরা পরিবর্তন করবে এবং কালো খেযাব ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে’।[11]
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
‘এই উক্তি প্রমাণ করে ইহূদীদের বিরোধী আমল করা ও তাদের সাথে সাদৃশ্য পোষণ না করার নির্দেশের উপর। কেননা যখন চুল-দাড়ি সাদা অবস্থায় রেখে তাদের সাথে সাদৃশ্য পোষণ করতে নিষেধ করা হ’ল যা আমাদের আদর্শ নয়, সেখানে চুল-দাড়িতে কালো খেযাব ব্যবহার করে সাদৃশ্য ঘটানো আরো মারাত্মক’।[12]
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,
‘শেষ পর্যন্ত রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশ স্থির ছিল আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করার এমনকি চুলের বিধানের ক্ষেত্রেও’ (জিলবাব ৯২ পৃ.)।
চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহারে রাসূল (ﷺ)-এর আমল :
ওছমান বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন,
‘আমরা উম্মে সালামার বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি আমাদেরকে নবী করীম (ﷺ)-এর চুল বের করে দেখালেন। আমরা দেখলাম, সেটা মেহেদী ও কাতাম ঘাস দ্বারা রঞ্জিত ছিল’।[13]
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,
‘নবী করীম (ﷺ) সিবতি চামড়ার তৈরি জুতা পরিধান করতেন এবং ওয়ার্স ঘাস ও জা‘ফরান দ্বারা নিজের দাড়িকে হলুদ রঙে রঞ্জিত করতেন। ইবনু ওমরও অনুরূপ করতেন’।[14] এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর দাড়িতে খেযাব লাগাতেন।
ইবনু ওমর (রাঃ)-এর আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, যায়েদ ইবনু আসলাম (রহঃ) বলেন,
‘ইবনু ওমর (রাঃ) তাঁর দাড়িতে হলুদ রঙের খেযাব লাগাতেন। এতে তার কাপড়েও ঐ রঙ লেগে যেত। তাকে প্রশ্ন করা হ’ল, আপনি হলুদ রঙ ব্যবহার করেন কেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এ রঙ ব্যবহার করতে দেখেছি এবং তাঁর নিকট এর চেয়ে প্রিয় অন্য কোন রঙ ছিল না। তিনি দাড়িতে খেযাব লাগানোর সময় তাঁর কাপড়ে, এমনকি পাগড়িতেও এ খেযাবের রঙ লেগে যেত’।[15]
আবু রিমছা (রাঃ) বলেন,
‘একদা আমি আমার পিতার সঙ্গে নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট যাই। নবী করীম (ﷺ)-এর কানের লতি পর্যন্ত দীর্ঘ বাবরী চুল মেহেদীর রঙে রঞ্জিত ছিল এবং তাঁর পরিধানে ছিল দু’টি সবুজ রঙের চাদর’।[16]
মুহাম্মাদ বিন আক্বীল বলেন,
‘আমি আনাস বিন মালেক (রাঃ)-এর নিকটে রাসূল (ﷺ)-এর খেযাব লাগানো চুল দেখেছি’।[17]
অপরদিকে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত একাধিক হাদীসে রাসূল (ﷺ)-এর খেযাব ব্যবহার না করার ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন- মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) বলেন,
‘আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী করীম (ﷺ) কি খেযাব লাগিয়েছেন? তিনি বললেন, বার্ধক্য তাকে অতি সামান্যই পেয়েছিল’।[18]
ইবনু সীরীন (রহঃ) আরো বলেন, আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হ’ল,
‘রাসূল (ﷺ) কি খেযাব লাগাতেন? তিনি বললেন, তিনি তো তেমন বার্ধক্য দেখেননি। তবে ইবনু ইদরীস (রহঃ) বলেন, তিনি [আনাস (রাঃ)] যেন কম বুঝাচ্ছিলেন। অবশ্য আবুবকর ও ওমর (রাঃ) মেহেদী এবং কাতাম ঘাস দ্বারা খেযাব লাগিয়েছেন’।[19]
আবু হুমাইদ বলেন, আনাস বিন মালেক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,
‘রাসূল (ﷺ) কি খেযাব লাগিয়েছিলেন? তিনি বললেন, না। বার্ধক্য তার সৌন্দর্যহানি করতে পারেনি। তাকে বলা হ’ল, হে আবু হামযা! এটা কি সৌন্দর্যহানি? তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকে এটা (চুল-দাড়ি সাদা হয়ে যাওয়াটা) অপসন্দ করে থাকে। আবুবকর (রাঃ) মেহেদী ও কাতাম ঘাস দ্বারা এবং ওমর (রাঃ) মেহেদী দ্বারা খেযাব লাগাতেন’।[20] অন্যত্র এসেছে,
‘আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর মাথায় এবং দাড়িতে বিশটির বেশি চুল পাকা ছিল না। আর আবুবকর (রাঃ) মেহেদী দ্বারা খেযাব লাগাতেন এবং ওমর (রাঃ) মেহেদী ও কাতাম ঘাস দ্বারা মিশ্রিত খেযাব লাগাতেন’।[21]
উভয় বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য মুহাদ্দিছীনে কেরাম বলেন, আনাস (রাঃ) হয়ত রাসূল (ﷺ)-এর অধিকাংশ দাড়ির দিকে লক্ষ্য করে খেযাব ব্যবহারের বিষয়টি নাকচ করেছেন। কেননা রাসূল (ﷺ)-এর গুটিকয়েক দাড়ি বা চুল সাদা হয়েছিল। সেই গুটিকয়েক সাদা চুলে তিনি খেযাব ব্যবহার করেছেন। আনাসের নিকট রাসূল (ﷺ)-এর খেযাব লাগানো দাড়ি মওজুদ থাকাটা এটিই প্রমাণ করে। সেটার কথাই ইবনু ওমর (রাঃ) বলেছেন। আবার অধিকাংশ চুল যা কালো ছিল সেগুলোতে খেযাব লাগাননি বিধায় আনাস (রাঃ) তা নাকচ করেছেন। ইবনু ওমর, উম্মে সালামা এবং আবু রামসাহ (রাঃ) থেকে খেযাব লাগানোর বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনার এই মর্মই নিতে হবে। অথবা যারা বলছেন, রাসূল (ﷺ) খেযাব ব্যবহার করেননি তাদের কথার উদ্দেশ্য হবে খেযাব ব্যবহার রাসূল (ﷺ)-এর নিয়মিত অভ্যাস ছিল না। বরং মাঝে-মধ্যে ব্যবহার করতেন।[22]
সেজন্য ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,
‘গ্রহণীয় মত হ’ল তিনি কোন কোন সময় মেহেদী ব্যবহার করেছেন এবং অধিক সময় মেহেদী ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন। ফলে প্রত্যেকে যা দেখেছে তাই বর্ণনা করেছেন। আর এ ব্যাপারে প্রত্যেক বর্ণনাকারীই সত্যবাদী’।[23]
চার খলীফা ও অন্যান্য সাহাবীগণের খেযাব ব্যবহার :
খোলাফায়ে রাশেদাসহ অন্যান্য সাহাবীগণের ব্যাপারে চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহারের কথা বর্ণিত হয়েছে।
আনাস (রাঃ) বলেন,
‘অবশ্য আবুবকর ও ওমর (রাঃ) মেহেদী এবং কাতাম ঘাস দ্বারা খেযাব লাগিয়েছেন’।[24]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
‘আর আবুবকর (রাঃ) মেহেদী ও কাতাম ঘাস দ্বারা খেযাব লাগিয়েছেন এবং ওমর (রাঃ) মেহেদী দ্বারা খেযাব লাগাতেন’।[25]
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘নবী করীম (ﷺ) মদীনায় এলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের মধ্যে আবুবকর (রাঃ) ছিলেন সবচেয়ে বয়স্ক। তিনি মেহেদী ও কাতাম ঘাস একত্র করে খেযাব লাগিয়েছিলেন। এতে তাঁর সাদা চুল টুকটুকে লাল রং ধারণ করেছিল’।[26]
তৃতীয় খলীফা ওছমান (রাঃ) মেহেদী ব্যবহারের সুন্নাতটিকে নিয়মিত পালন করতেন। আব্দুর রহমান ইবনু সা‘দ (রহঃ) বলেন,
‘আমি ওছমান (রাঃ)-কে উজ্জ্বল গাধার উপর আরোহী অবস্থায় দেখেছি। তিনি তার দাড়ি হলুদ রংয়ে রাঙিয়েছিলেন। এ সময় তিনি যাওরা টিলা নির্মাণ করছিলেন’।[27]
চতুর্থ খলীফা আলী (রাঃ)ও তাঁর দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করতেন। যেমন সাওয়াদা বিন হানযালা (রহঃ) বলেন,
‘আমি আলী (রাঃ)-এর দাড়ি হলুদ অবস্থায় দেখেছি’।[28]
অন্যান্য সাহাবীগণও খেযাব ব্যবহার করতেন। যেমন ‘আবু মালেক আল-আশজাঈ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি আমার পিতাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর সাথে আমাদের খেযাব ছিল ওয়ারস ও জা‘ফরান।[29]
এছাড়া আবু হুরায়রা,[30] আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর,[31] আনাস[32],
আবুল ‘আলিয়া, আবু সেওয়ার,[33] আবু সাঈদ খুদরী,[34] হাসান, হোসাইন,[35] রাফে‘ বিন খাদীজ[36], আবু ক্বাতাদা,[37] মুগীরাহ বিন শো‘বা (রাঃ)[38] আব্দুর রহমান বিন আবী বকর[39] সহ অধিকাংশ সাহাবীর মেহেদী ব্যবহারের কথা বর্ণিত হয়েছে।
বিদ্বানগণের অভিমত :
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,
‘পাকা চুল ও দাড়িতে লাল ও হলুদ খেযাব ব্যবহার করা সুন্নাত। এ ব্যাপারে আমাদের সাথীরা একমত’।[40]
ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) যখন কোন মেহেদী ব্যবহারকারীকে দেখতেন তিনি বলতেন,
‘অবশ্য আমি এমন একজন ব্যক্তিকে দেখছি যে মৃত সুন্নাতকে জীবিত করেছে। তিনি কাউকে মেহেদী ব্যবহার করতে দেখলে খুব খুশি হ’তেন’।[41]
ইমাম আহমাদ (রহঃ) আরো বলেন,
‘আমি কোন মেহেদী ব্যবহারকারী বৃদ্ধকে দেখলে আনন্দিত হই। তিনি জনৈক লোককে উপদেশ দিয়ে বলেন, তুমি খেযাব ব্যবহার কর না কেন? সে বলল, লজ্জা লাগে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাতের উপর আমল করতে লজ্জা পাও’?[42]
ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
‘চুল ও দাড়িতে লাল ও হলুদ রংয়ের খেযাব ব্যবহার করা পসন্দনীয় সুন্নাত’।[43]
বিশর বিন হারেছ (রহঃ) বলেন, আবুবকর মুহাম্মাদ ইবনু দাঊদ বললেন, তুমি কি খেযাব ব্যবহার কর? আমি বললাম, সময় পাই না। তিনি বললেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা এই শুভ্রতাকে পরিবর্তন কর। আবুবকর, ওমর, মুহাজির সাহাবীগণ ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও মেহেদী ব্যবহার করেছেন। রাসূল (ﷺ) মেহেদী ব্যবহারের ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যারা রাসূল (ﷺ)-এর আদর্শের উপর থাকবে না তাদের দ্বীনে কোন অংশ নেই’।[44]
হানাফী বিদ্বান ইবনু আবেদীন (রহঃ) বলেন, ‘বিশুদ্ধ মতে পুরুষদের জন্য চুল ও দাড়িতে খেযাব বা মেহেদী ব্যবহার করা মুস্তাহাব যদিও তা যুদ্ধের ময়দানের বাইরে হয়’।[45]
মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন,
‘খেযাব ব্যবহার করা সুন্নাত, যা রাসূল (ﷺ)-এর বাণী ও কর্ম দ্বারা প্রমাণিত’।[46]
ফাতাওয়া লাজনা দায়েমায় বলা হয়েছে, ‘নারী-পুরুষ সবার জন্য কালো রং ব্যতীত যে কোন রংয়ের খেযাব দ্বারা বার্ধক্যের চুল পরিবর্তন করা মুস্তাহাব। কারণ রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা এই বার্ধক্যের চুলকে পরিবর্তন কর এবং কালো খেযাব থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে’।[47] এটি মেহেদী দ্বারা পরিবর্তন হতে পারে বা কালো ব্যতীত যেকোন রং দ্বারা পরিবর্তন করা যেতে পারে’।[48]
শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘বার্ধক্যের চুলে খেযাব ব্যবহার করা নির্দেশিত সুন্নাত। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইহূদী, খ্রীষ্টানরা (চুল-দাড়ি) রং করে না। সুতরাং তোমরা তাদের বিরুদ্ধাচারণ কর’।[49] অতএব নারী ও পুরুষদের জন্য সুন্নাত হ’ল যখন সে বার্ধক্যে উপনীত হবে তখন সে লাল ও হলুদ খেযাব দ্বারা শুভ্রতা পরিবর্তন করবে’ (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব)।
শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন,
‘বার্ধক্যের চুলকে পরিবর্তন করা সুন্নাত। এ ব্যাপারে নবী (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটি কালো ব্যতীত যে কোন রং দ্বারা পরিবর্তন করা যাবে’।[50]
এছাড়া ছাহেবে ‘আওন, ছাহেবে তোহফা ও ইমাম শাওকানী চুল ও দাড়িতে খেযাব ব্যবহার করাকে মুস্তাহাব বলেছেন।[51] অতএব রাসূল (ﷺ)-এর আমল ও নির্দেশনা, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনে ইযামের আমল ও বিদ্বানগণের অভিমত দ্বারা প্রমাণিত হ’ল যে সাদা চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করা সুন্নাতে মুস্তাহাববা বা পসন্দনীয় সুন্নাত।
[1]. আদাবুল মুফরাদ হা/১২৫০; মিশকাত হা/৪৪৮৮।
[2]. দায়লামী, আল-ফিরদাউসু বে মা’ছুরিল খেযাব ১/২৯, হা/৪৬।
[3]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৮১৯।
[4]. আবুদাউদ হা/৪১৬৩; মিশকাত হা/৪৪৫০; সহীহাহ হা/৫০০।
[5]. মুসলিম হা/২১০২; মিশকাত হা/৪৪২৪; সহীহাহ হা/৪৯৬।
[6]. ইবনু মাজাহ হা/৩৬২৪; তামামুল মিন্নাহ ১/৮৫।
[7]. ত্ববারাণী কাবীর হা/৩১৬; সহীহাহ হা/২১১৬; সহীহুল জামে‘ হা/৪৮৮৭।
[8]. বুখারী হা/৫৮৯৯; মুসলিম হা/২১০৩; মিশকাত হা/৪৪২৩।
[9]. তিরমিযী হা/১৭৫২; মিশকাত হা/৪৪৫৫; সহীহাহ হা/৮৩৬।
[10]. তিরমিযী হা/১৭৫৩; মিশকাত হা/৪৪৫১; সহীহাহ হা/১৫০৯।
[11]. ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/১৪২; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৭৮৯, সনদ সহীহ, আলবানী, জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমাহ ১৯১ পৃ.।
[12]. ইকতিযাউ ছিরাতিল মুস্তাকীম ১/২০৩; জিলবাব ১৯১ পৃ.।
[13]. বুখারী হা/৫৮৯৭; মিশকাত হা/৪৪৮০।
[14]. নাসাঈ হা/৫২৪৪; আবূদাঊদ হা/৪২১০; মিশকাত হা/৪৪৫৩, সনদ সহীহ।
[15]. আবূদাউদ হা/৪০৬৪; নাসাঈ হা/৫০৮৫; মিশকাত হা/৪৪৭৯, সনদ সহীহ।
[16]. আবূদাউদ হা/৪২০৬; আহমাদ হা/১৭৫৩১, সনদ সহীহ।
[17]. তিরমিযী, মুখতাছার শামায়েল হা/৪১; জামালুদ্দীন মিযযী, তোহফাতুল আশরাফ হা/৯৭৪, সনদ হাসান।
[18]. বুখারী হা/৫৮৯৪।
[19]. মুসলিম হা/২৩৪১; আহমাদ হা/১৩১৬৫; মুশকিলুল আছার হা/৩৬৯১।
[20]. আহমাদ হা/১২৮৫১, ১২০৭৩, সনদ সহীহ।
[21]. আহমাদ হা/১১৯৮৩; মুসনাদুল বাযযার হা/৬৮৬৪, সনদ সহীহ।
[22]. আওনুল মা‘বূদ হা/৪২০৬-এর আলোচনা; ফাৎহুল বারী ৬/৫৭২।
[23]. নববী, শরহ মুসলিম ১৫/৯৫।
[24]. মুসলিম হা/২৩৪১; আহমাদ হা/১৩১৬৫; মুশকিলুল আছার হা/৩৬৯১।
[25]. আহমাদ হা/১১৯৮৩; মুসনাদুল বাযযার হা/৬৮৬৪, সনদ সহীহ।
[26]. বুখারী হা/৩৯২০; সহীহ ইবনু হিববান হা/৫৪৫৯।
[27]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৩৪, সনদ সহীহ, তাহক্বীক্ব : আবূ মুহাম্মাদ ওসামা বিন ইবরাহীম।
[28]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৩৬; ইমাম আহমাদ, ফাযাইলুছ সাহাবা হা/৯৩৬, সনদ সহীহ; তাহযীবুত তাহযীব রাবী নং ৪৭০।
[29]. আহমাদ হা/১৫৯২৩; ত্ববারাণী কাবীর হা/৭৬৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৭৭৮, সনদ সহীহ।
[30]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৩৫, সনদ হাসান; ইবনু আবী হাতেম, আল-জারহ ওয়াত-তা‘দীল রাবী নং ৩২৬।
[31]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৩৮, সনদ সহীহ, তাহক্বীক্ব আবূ মুহাম্মাদ ওছামা বিন ইবরাহীম হা/২৫৫২৮।
[32]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০০৭, সনদ সহীহ, হা/২৫৪৯৩, ২৫৫৩৪।
[33]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৪৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮১৬-১৭।
[34]. ত্ববারাণী কাবীর হা/৫৪২৯।
[35]. ত্ববারাণী কাবীর হা/২৭৮১; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮১৩, সনদ সহীহ।
[36]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/৪২৪০।
[37]. ত্ববারাণী কাবীর হা/৩২৭১।
[38]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৪৮।
[39]. মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮২৩।
[40]. আল-মাজমূ‘ ১/২৯৩-৯৪।
[41]. শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ১/১৫৫; ২/১১৯।
[42]. ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৬৮।
[43]. শারহু উমদাতিল ফিক্বহ ১/২৩৭।
[44]. ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৬৮।
[45]. রাদ্দুল মুহতার ৪/৪২২।
[46]. মিরক্বাত ৭/২৮১৭।
[47]. গায়াতুল মারাম হা/১০৫।
[48]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৪/১০৮।
[49]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪২৩।
[50]. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১১/১২০।
[51]. আওনুল মা‘বুদ ১১/১৭২; তোহফাতুল আহওয়াযী ৫/৩৫৪; নায়লুল আওতার ১/১৫২।
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
কিন্তু মানব মন এই শুভ্রতা চায় না। সে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। তাই ইবরাহীম (আঃ) দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করলেন। তিনিই প্রথম মেহেদী ব্যবহারকারী।[2] আর মুসলমানদের মধ্যে আবুবকরের পিতা আবু কুহাফা প্রথম খেযাব ব্যবহারকারী।[3] রাসূল (ﷺ) মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর অন্যান্য সুন্নাতের ন্যায় এই সুন্নাতটিকে পুনর্জীবিত করার জন্য তার গুটি কয়েক সাদা চুল ও দাড়িতেও মেহেদী ব্যবহার করেছিলেন। রাসূল (ﷺ) তাঁর সাহাবীগণকেও চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেজন্য চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করা সুন্নাত। এটি চুল ও দাড়ির সৌন্দর্যের মাধ্যম।
রাসূল (ﷺ) বলেন,
مَنْ كَانَ لَهُ شَعْرٌ فَلْيُكْرِمْهُ،
‘যে ব্যক্তির চুল আছে, সে যেন তার যত্ন নেয়’।[4] চুলের যত্ন নেয়া অর্থ চুলের সৌন্দর্য বর্ধন করা, চুল পরিপাটি রাখা, তেল ব্যবহার করা, সাদা চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করা এবং তাকে এলোমেলো না রাখা ইত্যাদি।
চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহারে রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশনা :
জাবের (রাঃ) বলেন,
أُتِيَ بِأَبِي قُحَافَةَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ وَرَأْسُهُ وَلِحْيَتُهُ كَالثَّغَامَةِ بَيَاضًا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: غَيِّرُوا هَذَا بِشَيْءٍ، وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ،
‘মক্কা বিজয়ের দিন আবু কুহাফাহ (রাঃ)-কে নিয়ে আসা হ’ল। তার চুল-দাড়ি ছিল ছাগামার (কাশফুলের) ন্যায় শুভ্র। সে সময় রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘একে একটা কিছু দিয়ে পরিবর্তন করে দাও, তবে কালো রং থেকে বিরত থাকবে’।[5]
অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন,
اذْهَبُوْا بِهِ إِلَى بَعْضِ نِسَائِهِ، فَلْتُغَيِّرْهُ، وَجَنِّبُوْهُ السَّوَادَ،
‘তাকে তার কোন এক স্ত্রীর নিকটে নিয়ে যাও। যাতে সে তার চুল-দাড়ির রঙ পরিবর্তন করে দেয়। অবশ্যই তোমরা কালো রং ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে’।[6]
আবু উমামা আল-বাহেলী (রাঃ) বলেন,
خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى مَشْيَخَةٍ مِنَ الأَنْصَارِ بِيضٌ لِحَاهُمْ فَقَالَ : يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ حَمِّرُوْا وَصَفِّرُوْا وَخَالِفُوا أَهْلَ الْكِتَابِ-
‘একদা রাসূল (ﷺ) আনছারী বৃদ্ধ সাহাবীগণের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের দাড়ি সাদা হয়ে গিয়েছিল। তাদের দেখে তিনি বললেন, হে আনছারের দল! তোমরা দাড়িকে লাল ও হলুদ রঙ্গে রঞ্জিত করো এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করো’।[7]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى لاَ يَصْبُغُونَ فَخَالِفُوهُمْ-
‘ইহুদী ও নাছারারা খেযাব লাগায় না। অতএব তোমরা তাদের বিপরীত করবে’।[8]
তিনি আরো বলেছেন,
غَيِّرُوْا الشَّيْبَ وَلَا تَشَبَّهُوْا بِاليَهُوْدِ-
‘তোমরা (খেযাব দ্বারা) বার্ধক্যকে পরিবর্তন করে দাও এবং ইহূদীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করো না’।[9]
অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ أَحْسَنَ مَا غَيَّرْتُمْ بِهِ الشَّيْبَ الْحِنَّاءُ وَالْكَتَمُ-
‘বার্ধক্যকে পরিবর্তন করার জন্য সবচেয়ে উত্তম বস্ত্ত হ’ল মেহেদী ও কাতাম ঘাস’।[10]
আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন,
كُنَّا يَوْمًا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَخَلَتْ عَلَيْهِ الْيَهُودُ فَرَآهُمْ بِيضَ اللِّحَى فَقَالَ: مَا لَكُمْ لَا تُغَيِّرُونَ؟ فَقِيلَ: إِنَّهُمْ يَكْرَهُونَ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَكِنَّكُمْ غَيِّرُوا وَإِيَّايَ السَّوَادَ،
‘আমরা একদা রাসূল (ﷺ)-এর পাশে বসা ছিলাম। সে সময় তাঁর নিকট একদল ইহূদী প্রবেশ করল। তিনি তাদের সাদা দাড়ি দেখে বললেন, তোমরা কেন এগুলো পরিবর্তন কর না? তাকে বলা হ’ল যে, তারা এটা অপসন্দ করে। তখন তিনি বললেন, কিন্তু তোমরা পরিবর্তন করবে এবং কালো খেযাব ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে’।[11]
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
وهذا اللفظ دل على الأمر بمخالفتهم والنهي عن مشابهتهم فإنه إذا نهى عن التشبه بهم في بقاء بيض الشيب الذي ليس من فعلنا،
‘এই উক্তি প্রমাণ করে ইহূদীদের বিরোধী আমল করা ও তাদের সাথে সাদৃশ্য পোষণ না করার নির্দেশের উপর। কেননা যখন চুল-দাড়ি সাদা অবস্থায় রেখে তাদের সাথে সাদৃশ্য পোষণ করতে নিষেধ করা হ’ল যা আমাদের আদর্শ নয়, সেখানে চুল-দাড়িতে কালো খেযাব ব্যবহার করে সাদৃশ্য ঘটানো আরো মারাত্মক’।[12]
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,
أن أمر النبي صلى الله عليه وسلم استقر أخيرًا على مخالفة أهل الكتاب حتى في الشعر،
‘শেষ পর্যন্ত রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশ স্থির ছিল আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করার এমনকি চুলের বিধানের ক্ষেত্রেও’ (জিলবাব ৯২ পৃ.)।
চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহারে রাসূল (ﷺ)-এর আমল :
ওছমান বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন,
دَخَلْنَا عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ فَأَخْرَجَتْ إِلَيْنَا مِنْ شَعْرِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا هُوَ مَخْضُوبٌ أَحْمَرُ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ-
‘আমরা উম্মে সালামার বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি আমাদেরকে নবী করীম (ﷺ)-এর চুল বের করে দেখালেন। আমরা দেখলাম, সেটা মেহেদী ও কাতাম ঘাস দ্বারা রঞ্জিত ছিল’।[13]
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَلْبَسُ النِّعَالَ السِّبْتِيَّةَ، وَيُصَفِّرُ لِحْيَتَهُ بِالْوَرْسِ، وَالزَّعْفَرَانِ، وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَفْعَلُ ذَلِكَ-
‘নবী করীম (ﷺ) সিবতি চামড়ার তৈরি জুতা পরিধান করতেন এবং ওয়ার্স ঘাস ও জা‘ফরান দ্বারা নিজের দাড়িকে হলুদ রঙে রঞ্জিত করতেন। ইবনু ওমরও অনুরূপ করতেন’।[14] এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর দাড়িতে খেযাব লাগাতেন।
ইবনু ওমর (রাঃ)-এর আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, যায়েদ ইবনু আসলাম (রহঃ) বলেন,
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ، كَانَ يَصْبُغُ لِحْيَتَهُ بِالصُّفْرَةِ حَتَّى تَمْتَلِئَ ثِيَابُهُ مِنَ الصُّفْرَةِ فَقِيلَ لَهُ لِمَ تَصْبُغُ بِالصُّفْرَةِ فَقَالَ إِنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْبُغُ بِهَا، وَلَمْ يَكُنْ شَيْءٌ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْهَا، وَقَدْ كَانَ يَصْبُغُ ثِيَابَهُ كُلَّهَا حَتَّى عِمَامَتَهُ،
‘ইবনু ওমর (রাঃ) তাঁর দাড়িতে হলুদ রঙের খেযাব লাগাতেন। এতে তার কাপড়েও ঐ রঙ লেগে যেত। তাকে প্রশ্ন করা হ’ল, আপনি হলুদ রঙ ব্যবহার করেন কেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এ রঙ ব্যবহার করতে দেখেছি এবং তাঁর নিকট এর চেয়ে প্রিয় অন্য কোন রঙ ছিল না। তিনি দাড়িতে খেযাব লাগানোর সময় তাঁর কাপড়ে, এমনকি পাগড়িতেও এ খেযাবের রঙ লেগে যেত’।[15]
আবু রিমছা (রাঃ) বলেন,
انْطَلَقْتُ مَعَ أَبِيْ نَحْوَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَإِذَا هُوَ ذُو وَفْرَةٍ بِهَا رَدْعُ حِنَّاءٍ، وَعَلَيْهِ بُرْدَانِ أَخْضَرَانِ،
‘একদা আমি আমার পিতার সঙ্গে নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট যাই। নবী করীম (ﷺ)-এর কানের লতি পর্যন্ত দীর্ঘ বাবরী চুল মেহেদীর রঙে রঞ্জিত ছিল এবং তাঁর পরিধানে ছিল দু’টি সবুজ রঙের চাদর’।[16]
মুহাম্মাদ বিন আক্বীল বলেন,
رَأَيْتُ شَعْرَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم َ عِنْدَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ مَخْضُوبًا،
‘আমি আনাস বিন মালেক (রাঃ)-এর নিকটে রাসূল (ﷺ)-এর খেযাব লাগানো চুল দেখেছি’।[17]
অপরদিকে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত একাধিক হাদীসে রাসূল (ﷺ)-এর খেযাব ব্যবহার না করার ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন- মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) বলেন,
سَأَلْتُ أَنَسًا أَخَضَبَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَمْ يَبْلُغِ الشَّيْبَ إِلاَّ قَلِيلاً-
‘আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী করীম (ﷺ) কি খেযাব লাগিয়েছেন? তিনি বললেন, বার্ধক্য তাকে অতি সামান্যই পেয়েছিল’।[18]
ইবনু সীরীন (রহঃ) আরো বলেন, আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হ’ল,
هَلْ خَضَبَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ رَأَى مِنَ الشَّيْبِ إِلاَّ قَالَ ابْنُ إِدْرِيْسَ كَأَنَّهُ يُقَلِّلُهُ وَقَدْ خَضَبَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ-
‘রাসূল (ﷺ) কি খেযাব লাগাতেন? তিনি বললেন, তিনি তো তেমন বার্ধক্য দেখেননি। তবে ইবনু ইদরীস (রহঃ) বলেন, তিনি [আনাস (রাঃ)] যেন কম বুঝাচ্ছিলেন। অবশ্য আবুবকর ও ওমর (রাঃ) মেহেদী এবং কাতাম ঘাস দ্বারা খেযাব লাগিয়েছেন’।[19]
আবু হুমাইদ বলেন, আনাস বিন মালেক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,
هَلْ خَضَبَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ لَمْ يَشِنْهُ الشَّيْبُ- قَالَ فَقِيلَ يَا أَبَا حَمْزَةَ وَشَيْنٌ هُوَ قَالَ فَقَالَ كُلُّكُمْ يَكْرَهُهُ وَخَضَبَ أَبُو بَكْرٍ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ وَخَضَبَ عُمَرُ بِالْحِنَّاءِ،
‘রাসূল (ﷺ) কি খেযাব লাগিয়েছিলেন? তিনি বললেন, না। বার্ধক্য তার সৌন্দর্যহানি করতে পারেনি। তাকে বলা হ’ল, হে আবু হামযা! এটা কি সৌন্দর্যহানি? তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকে এটা (চুল-দাড়ি সাদা হয়ে যাওয়াটা) অপসন্দ করে থাকে। আবুবকর (রাঃ) মেহেদী ও কাতাম ঘাস দ্বারা এবং ওমর (রাঃ) মেহেদী দ্বারা খেযাব লাগাতেন’।[20] অন্যত্র এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ لَمْ يَكُنْ فِى رَأْسِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلِحْيَتِهِ عِشْرُوْنَ شَعَرَةً بَيْضَاءَ وَخَضَبَ أَبُو بَكْرٍ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ وَخَضَبَ عُمَرُ بِالْحِنَّاءِ-
‘আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর মাথায় এবং দাড়িতে বিশটির বেশি চুল পাকা ছিল না। আর আবুবকর (রাঃ) মেহেদী দ্বারা খেযাব লাগাতেন এবং ওমর (রাঃ) মেহেদী ও কাতাম ঘাস দ্বারা মিশ্রিত খেযাব লাগাতেন’।[21]
উভয় বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য মুহাদ্দিছীনে কেরাম বলেন, আনাস (রাঃ) হয়ত রাসূল (ﷺ)-এর অধিকাংশ দাড়ির দিকে লক্ষ্য করে খেযাব ব্যবহারের বিষয়টি নাকচ করেছেন। কেননা রাসূল (ﷺ)-এর গুটিকয়েক দাড়ি বা চুল সাদা হয়েছিল। সেই গুটিকয়েক সাদা চুলে তিনি খেযাব ব্যবহার করেছেন। আনাসের নিকট রাসূল (ﷺ)-এর খেযাব লাগানো দাড়ি মওজুদ থাকাটা এটিই প্রমাণ করে। সেটার কথাই ইবনু ওমর (রাঃ) বলেছেন। আবার অধিকাংশ চুল যা কালো ছিল সেগুলোতে খেযাব লাগাননি বিধায় আনাস (রাঃ) তা নাকচ করেছেন। ইবনু ওমর, উম্মে সালামা এবং আবু রামসাহ (রাঃ) থেকে খেযাব লাগানোর বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনার এই মর্মই নিতে হবে। অথবা যারা বলছেন, রাসূল (ﷺ) খেযাব ব্যবহার করেননি তাদের কথার উদ্দেশ্য হবে খেযাব ব্যবহার রাসূল (ﷺ)-এর নিয়মিত অভ্যাস ছিল না। বরং মাঝে-মধ্যে ব্যবহার করতেন।[22]
সেজন্য ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,
وَالْمُخْتَارُ أَنَّهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَبَغَ فِي وَقْتٍ وَتَرَكَهُ فِي مُعْظَمِ الْأَوْقَاتِ فَأَخْبَرَ كُلٌّ بما رأى وهوصادق-
‘গ্রহণীয় মত হ’ল তিনি কোন কোন সময় মেহেদী ব্যবহার করেছেন এবং অধিক সময় মেহেদী ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন। ফলে প্রত্যেকে যা দেখেছে তাই বর্ণনা করেছেন। আর এ ব্যাপারে প্রত্যেক বর্ণনাকারীই সত্যবাদী’।[23]
চার খলীফা ও অন্যান্য সাহাবীগণের খেযাব ব্যবহার :
খোলাফায়ে রাশেদাসহ অন্যান্য সাহাবীগণের ব্যাপারে চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহারের কথা বর্ণিত হয়েছে।
আনাস (রাঃ) বলেন,
وَقَدْ خَضَبَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ-
‘অবশ্য আবুবকর ও ওমর (রাঃ) মেহেদী এবং কাতাম ঘাস দ্বারা খেযাব লাগিয়েছেন’।[24]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
وَخَضَبَ أَبُو بَكْرٍ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ وَخَضَبَ عُمَرُ بِالْحِنَّاءِ-
‘আর আবুবকর (রাঃ) মেহেদী ও কাতাম ঘাস দ্বারা খেযাব লাগিয়েছেন এবং ওমর (রাঃ) মেহেদী দ্বারা খেযাব লাগাতেন’।[25]
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ فَكَانَ أَسَنَّ أَصْحَابِهِ أَبُوْ بَكْرٍ فَغَلَفَهَا بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ حَتَّى قَنَأَ لَوْنُهَا-
‘নবী করীম (ﷺ) মদীনায় এলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের মধ্যে আবুবকর (রাঃ) ছিলেন সবচেয়ে বয়স্ক। তিনি মেহেদী ও কাতাম ঘাস একত্র করে খেযাব লাগিয়েছিলেন। এতে তাঁর সাদা চুল টুকটুকে লাল রং ধারণ করেছিল’।[26]
তৃতীয় খলীফা ওছমান (রাঃ) মেহেদী ব্যবহারের সুন্নাতটিকে নিয়মিত পালন করতেন। আব্দুর রহমান ইবনু সা‘দ (রহঃ) বলেন,
رَأَيْتُ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ وَهُوَ يَبْنِي الزَّوْرَاءَ، عَلَى بَغْلَةٍ شَهْبَاءَ مُصَفِّرًا لِحْيَتَهُ-
‘আমি ওছমান (রাঃ)-কে উজ্জ্বল গাধার উপর আরোহী অবস্থায় দেখেছি। তিনি তার দাড়ি হলুদ রংয়ে রাঙিয়েছিলেন। এ সময় তিনি যাওরা টিলা নির্মাণ করছিলেন’।[27]
চতুর্থ খলীফা আলী (রাঃ)ও তাঁর দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করতেন। যেমন সাওয়াদা বিন হানযালা (রহঃ) বলেন,
رَأَيْتُ عَلِيًّا أَصْفَرَ اللِّحْيَةِ
‘আমি আলী (রাঃ)-এর দাড়ি হলুদ অবস্থায় দেখেছি’।[28]
অন্যান্য সাহাবীগণও খেযাব ব্যবহার করতেন। যেমন ‘আবু মালেক আল-আশজাঈ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
سَمِعْتُ أَبِى وَسَأَلْتُهُ فَقَالَ كَانَ خِضَابُنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْوَرْسَ وَالزَّعْفَرَانَ
আমি আমার পিতাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর সাথে আমাদের খেযাব ছিল ওয়ারস ও জা‘ফরান।[29]
এছাড়া আবু হুরায়রা,[30] আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর,[31] আনাস[32],
আবুল ‘আলিয়া, আবু সেওয়ার,[33] আবু সাঈদ খুদরী,[34] হাসান, হোসাইন,[35] রাফে‘ বিন খাদীজ[36], আবু ক্বাতাদা,[37] মুগীরাহ বিন শো‘বা (রাঃ)[38] আব্দুর রহমান বিন আবী বকর[39] সহ অধিকাংশ সাহাবীর মেহেদী ব্যবহারের কথা বর্ণিত হয়েছে।
বিদ্বানগণের অভিমত :
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,
يُسَنُّ خِضَابُ الشَّيْبِ بِصُفْرَةٍ أَوْ حُمْرَةٍ اتَّفَقَ عَلَيْهِ أَصْحَابُنَا
‘পাকা চুল ও দাড়িতে লাল ও হলুদ খেযাব ব্যবহার করা সুন্নাত। এ ব্যাপারে আমাদের সাথীরা একমত’।[40]
ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) যখন কোন মেহেদী ব্যবহারকারীকে দেখতেন তিনি বলতেন,
إنِّي لَأَرَى رَجُلًا يُحْيِي مَيِّتًا مِنْ السُّنَّةِ، وَفَرِحَ بِهِ حِيْنَ رَآهُ صَبَغَ بِهَا،
‘অবশ্য আমি এমন একজন ব্যক্তিকে দেখছি যে মৃত সুন্নাতকে জীবিত করেছে। তিনি কাউকে মেহেদী ব্যবহার করতে দেখলে খুব খুশি হ’তেন’।[41]
ইমাম আহমাদ (রহঃ) আরো বলেন,
إنِّي لَأَرَى الشَّيْخَ الْمَخْضُوْبَ فَأَفْرَحُ بِهِ، وَذَاكَرَ رَجُلًا، فَقَالَ: لِمَ لَا تَخْتَضِبُ؟ فَقَالَ: أَسْتَحِي. قَالَ: سُبْحَانَ اللهِ، سُنَّةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
‘আমি কোন মেহেদী ব্যবহারকারী বৃদ্ধকে দেখলে আনন্দিত হই। তিনি জনৈক লোককে উপদেশ দিয়ে বলেন, তুমি খেযাব ব্যবহার কর না কেন? সে বলল, লজ্জা লাগে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাতের উপর আমল করতে লজ্জা পাও’?[42]
ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
فَأَمَّا خِضَابُهُ بِالْحُمْرَةِ وَالصُّفْرَةِ فَسُنَّةٌ مُسْتَحَبَّةٌ؛
‘চুল ও দাড়িতে লাল ও হলুদ রংয়ের খেযাব ব্যবহার করা পসন্দনীয় সুন্নাত’।[43]
বিশর বিন হারেছ (রহঃ) বলেন, আবুবকর মুহাম্মাদ ইবনু দাঊদ বললেন, তুমি কি খেযাব ব্যবহার কর? আমি বললাম, সময় পাই না। তিনি বললেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা এই শুভ্রতাকে পরিবর্তন কর। আবুবকর, ওমর, মুহাজির সাহাবীগণ ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও মেহেদী ব্যবহার করেছেন। রাসূল (ﷺ) মেহেদী ব্যবহারের ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যারা রাসূল (ﷺ)-এর আদর্শের উপর থাকবে না তাদের দ্বীনে কোন অংশ নেই’।[44]
হানাফী বিদ্বান ইবনু আবেদীন (রহঃ) বলেন, ‘বিশুদ্ধ মতে পুরুষদের জন্য চুল ও দাড়িতে খেযাব বা মেহেদী ব্যবহার করা মুস্তাহাব যদিও তা যুদ্ধের ময়দানের বাইরে হয়’।[45]
মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন,
الْخِضَابُ سُنَّةٌ ثَبَتَ قَوْلًا وَفِعْلًا،
‘খেযাব ব্যবহার করা সুন্নাত, যা রাসূল (ﷺ)-এর বাণী ও কর্ম দ্বারা প্রমাণিত’।[46]
ফাতাওয়া লাজনা দায়েমায় বলা হয়েছে, ‘নারী-পুরুষ সবার জন্য কালো রং ব্যতীত যে কোন রংয়ের খেযাব দ্বারা বার্ধক্যের চুল পরিবর্তন করা মুস্তাহাব। কারণ রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা এই বার্ধক্যের চুলকে পরিবর্তন কর এবং কালো খেযাব থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে’।[47] এটি মেহেদী দ্বারা পরিবর্তন হতে পারে বা কালো ব্যতীত যেকোন রং দ্বারা পরিবর্তন করা যেতে পারে’।[48]
শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘বার্ধক্যের চুলে খেযাব ব্যবহার করা নির্দেশিত সুন্নাত। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইহূদী, খ্রীষ্টানরা (চুল-দাড়ি) রং করে না। সুতরাং তোমরা তাদের বিরুদ্ধাচারণ কর’।[49] অতএব নারী ও পুরুষদের জন্য সুন্নাত হ’ল যখন সে বার্ধক্যে উপনীত হবে তখন সে লাল ও হলুদ খেযাব দ্বারা শুভ্রতা পরিবর্তন করবে’ (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব)।
শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন,
تغيير شعر الشيب سنة أمر به النبي صلى الله عليه وسلم، ويُغيَّره بكل لون ما عدا السواد،
‘বার্ধক্যের চুলকে পরিবর্তন করা সুন্নাত। এ ব্যাপারে নবী (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটি কালো ব্যতীত যে কোন রং দ্বারা পরিবর্তন করা যাবে’।[50]
এছাড়া ছাহেবে ‘আওন, ছাহেবে তোহফা ও ইমাম শাওকানী চুল ও দাড়িতে খেযাব ব্যবহার করাকে মুস্তাহাব বলেছেন।[51] অতএব রাসূল (ﷺ)-এর আমল ও নির্দেশনা, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনে ইযামের আমল ও বিদ্বানগণের অভিমত দ্বারা প্রমাণিত হ’ল যে সাদা চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করা সুন্নাতে মুস্তাহাববা বা পসন্দনীয় সুন্নাত।
[1]. আদাবুল মুফরাদ হা/১২৫০; মিশকাত হা/৪৪৮৮।
[2]. দায়লামী, আল-ফিরদাউসু বে মা’ছুরিল খেযাব ১/২৯, হা/৪৬।
[3]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৮১৯।
[4]. আবুদাউদ হা/৪১৬৩; মিশকাত হা/৪৪৫০; সহীহাহ হা/৫০০।
[5]. মুসলিম হা/২১০২; মিশকাত হা/৪৪২৪; সহীহাহ হা/৪৯৬।
[6]. ইবনু মাজাহ হা/৩৬২৪; তামামুল মিন্নাহ ১/৮৫।
[7]. ত্ববারাণী কাবীর হা/৩১৬; সহীহাহ হা/২১১৬; সহীহুল জামে‘ হা/৪৮৮৭।
[8]. বুখারী হা/৫৮৯৯; মুসলিম হা/২১০৩; মিশকাত হা/৪৪২৩।
[9]. তিরমিযী হা/১৭৫২; মিশকাত হা/৪৪৫৫; সহীহাহ হা/৮৩৬।
[10]. তিরমিযী হা/১৭৫৩; মিশকাত হা/৪৪৫১; সহীহাহ হা/১৫০৯।
[11]. ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/১৪২; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৭৮৯, সনদ সহীহ, আলবানী, জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমাহ ১৯১ পৃ.।
[12]. ইকতিযাউ ছিরাতিল মুস্তাকীম ১/২০৩; জিলবাব ১৯১ পৃ.।
[13]. বুখারী হা/৫৮৯৭; মিশকাত হা/৪৪৮০।
[14]. নাসাঈ হা/৫২৪৪; আবূদাঊদ হা/৪২১০; মিশকাত হা/৪৪৫৩, সনদ সহীহ।
[15]. আবূদাউদ হা/৪০৬৪; নাসাঈ হা/৫০৮৫; মিশকাত হা/৪৪৭৯, সনদ সহীহ।
[16]. আবূদাউদ হা/৪২০৬; আহমাদ হা/১৭৫৩১, সনদ সহীহ।
[17]. তিরমিযী, মুখতাছার শামায়েল হা/৪১; জামালুদ্দীন মিযযী, তোহফাতুল আশরাফ হা/৯৭৪, সনদ হাসান।
[18]. বুখারী হা/৫৮৯৪।
[19]. মুসলিম হা/২৩৪১; আহমাদ হা/১৩১৬৫; মুশকিলুল আছার হা/৩৬৯১।
[20]. আহমাদ হা/১২৮৫১, ১২০৭৩, সনদ সহীহ।
[21]. আহমাদ হা/১১৯৮৩; মুসনাদুল বাযযার হা/৬৮৬৪, সনদ সহীহ।
[22]. আওনুল মা‘বূদ হা/৪২০৬-এর আলোচনা; ফাৎহুল বারী ৬/৫৭২।
[23]. নববী, শরহ মুসলিম ১৫/৯৫।
[24]. মুসলিম হা/২৩৪১; আহমাদ হা/১৩১৬৫; মুশকিলুল আছার হা/৩৬৯১।
[25]. আহমাদ হা/১১৯৮৩; মুসনাদুল বাযযার হা/৬৮৬৪, সনদ সহীহ।
[26]. বুখারী হা/৩৯২০; সহীহ ইবনু হিববান হা/৫৪৫৯।
[27]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৩৪, সনদ সহীহ, তাহক্বীক্ব : আবূ মুহাম্মাদ ওসামা বিন ইবরাহীম।
[28]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৩৬; ইমাম আহমাদ, ফাযাইলুছ সাহাবা হা/৯৩৬, সনদ সহীহ; তাহযীবুত তাহযীব রাবী নং ৪৭০।
[29]. আহমাদ হা/১৫৯২৩; ত্ববারাণী কাবীর হা/৭৬৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৭৭৮, সনদ সহীহ।
[30]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৩৫, সনদ হাসান; ইবনু আবী হাতেম, আল-জারহ ওয়াত-তা‘দীল রাবী নং ৩২৬।
[31]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৩৮, সনদ সহীহ, তাহক্বীক্ব আবূ মুহাম্মাদ ওছামা বিন ইবরাহীম হা/২৫৫২৮।
[32]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০০৭, সনদ সহীহ, হা/২৫৪৯৩, ২৫৫৩৪।
[33]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৪৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮১৬-১৭।
[34]. ত্ববারাণী কাবীর হা/৫৪২৯।
[35]. ত্ববারাণী কাবীর হা/২৭৮১; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮১৩, সনদ সহীহ।
[36]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/৪২৪০।
[37]. ত্ববারাণী কাবীর হা/৩২৭১।
[38]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৪৮।
[39]. মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮২৩।
[40]. আল-মাজমূ‘ ১/২৯৩-৯৪।
[41]. শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ১/১৫৫; ২/১১৯।
[42]. ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৬৮।
[43]. শারহু উমদাতিল ফিক্বহ ১/২৩৭।
[44]. ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৬৮।
[45]. রাদ্দুল মুহতার ৪/৪২২।
[46]. মিরক্বাত ৭/২৮১৭।
[47]. গায়াতুল মারাম হা/১০৫।
[48]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৪/১০৮।
[49]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪২৩।
[50]. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১১/১২০।
[51]. আওনুল মা‘বুদ ১১/১৭২; তোহফাতুল আহওয়াযী ৫/৩৫৪; নায়লুল আওতার ১/১৫২।
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
Last edited: