‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রশ্নোত্তর কোনো মসজিদে সুন্নাহভিত্তিক সালাত আদায় করা না হলে সে মসজিদে সালাত আদায় করার বিধান

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
688
Comments
1,217
Solutions
17
Reactions
6,635
Credits
5,451
প্রশ্ন: পশ্চিমাঞ্চল, পোল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দেশের কিছু যুবক সেসব বিদআতীদের পেছনে সালাত আদায় করে না যারা সম্মিলিতভাবে দরুদ পাঠ করে বা সম্মিলিতভাবে কুরআন তিলাওয়াত করে বা কাতার সোজা করে না বা জোরে আমীন বলে না। তারা সেসব ইমামদের পেছনে সালাত আদায় করে না যারা সালাতের সুন্নাত পালন করে না।

জবাব: এমনটি করা সুন্নাতের খেলাফ। শরীআতের বিধিবিধান বাস্তবায়নে ইমামদের অবহেলা করার কারণে এবং সুন্নাতে মুহাম্মাদীর ব্যাপারে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে মসজিদ ত্যাগ করা কোনো সুন্নাহপন্থির জন্য জায়েয নয়। তবে বিদআতমুক্ত মসজিদে যাওয়ার জন্য এমন বিদআতওয়ালা মসজিদ বর্জন করা যেতে পারে। কিন্তু বিদআতের কারণে সমূলে মসজিদ বর্জন করার দৃষ্টান্ত হচ্ছে, একটি ভবন নির্মাণের জন্য একটি শহর ধ্বংস করা। কারণ, সালাত বা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মুসলিমদের সাথে জামাআতে মসজিদে আদায় করা ওয়াজিব। কোনো শরীআতসম্মত ওজর ছাড়া এ ওয়াজিব পালন না করা কোনো মুসলিমের জন্য জায়েয নয়। আর কিছু মুসল্লীর বা ইমামের স্বল্প বা অনেক সুন্নাহপরিপন্থি কাজের কারণে সমূলে মসজিদ বর্জন করা শরীআতসম্মত ওজর নয়। তবে হ্যাঁ, তখন বর্জন করা জায়েয হবে যখন তার বিকল্প বিদআতমুক্ত আরেকটি মসজিদে যাওয়া যাবে। যারা সুন্নাহ আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়, এমনটাই হচ্ছে তাদের আবশ্যকীয় দায়িত্ব।

কারণ, বর্তমান যুগে মুসলিমরা যদি ইমামদের সাথে এমন সূক্ষ্মপথ অবলম্বন করতে চায় এবং এভাবে তাদের যাচাই-বাছাই করতে যায়, তাহলে সকল মানুষকে বর্জন করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়াবে। কেননা এমন মসজিদ পাওয়া খুবই মুশকিল যে মসজিদ সকল প্রকার সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটা অসম্ভব বিষয়। প্রথমত সকল মসজিদ বা অধিকাংশ মসজিদ অস্বচ্ছ সম্পদ দ্বারা নির্মিত এবং সুন্নাহপরিপন্থি পদ্ধতিতে নির্মিত। বর্তমানে এমন মসজিদ-ই হয়তো পাওয়া যাবে না যে মসজিদ জাঁকজমক ও সুসজ্জিত নয়; এমনকী মক্কা ও মদীনাতেও, যেমনটি আপনারা জানেন। কাজেই যে মসজিদে বিদআত হয় সে মসজিদে সালাত আদায় করতে না চাইলে তারা কোথায় যাবে? এর অর্থ হচ্ছে মুসলিমদের সকল জামাআত তাদেরকে বর্জন করতে হবে এবং নিজেদের বাড়ির চার দেওয়ালের অবস্থান করতে হবে ও সেখানেই সালাত আদায় করতে হবে।

এসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সেসব হাদীস প্রযোজ্য যেসব হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জামাআতের বিরোধিতা করবে, সে জাহিলিয়াতের ন্যায় মৃত্যুবরণ করবে। আমরা বলবো, যে মসজিদে বেশি বিদআত হয় সে-মসজিদ বর্জন করে কম বিদআত হয় এমন মসজিদে যেতে পারে; আমরা বলছি না যে, সে মসজিদে যাবে যে মসজিদে কোনো বিদআত হয় না। কারণ, আজ এমন মসজিদের অস্তিত্ব নেই। তাই বলতে হবে, কিছু অকল্যাণ থেকে কিছু অকল্যাণ কম গুরুতর।

দেখা যায়, কাছের বা দূরের কোনো মসজিদে সুন্নাহ অনুযায়ী সালাত আদায় করা হয় কিন্তু তাতে আরেক সমস্যা―গোটা মসজিদ নকশা ও জাঁকজমকতায় পরিপূর্ণ। আর সে এ মসজিদে কোনো কর্তৃত্বও রাখে না।

আজকে মুসলিমদের অবস্থা তেমন, যেমনটি কিছু সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হকপথে অটল থেকে দৃঢ়ভাবে আমল করতে থাকো এবং আল্লাহর নৈকট্যার্জনের চেষ্টা করো।’[1] মসজিদে নববী রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে যেমন ছিলো, তেমন কেউ যদি খুঁজতে চায়, তাহলে পাবে না। তাহলে কি আল্লাহর সবচেয়ে পবিত্র স্থান বর্জন করে মানুষেরা বাড়িতে বসে থাকবে এবং মুসলিমদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবে? এক সহীহ হাদীসে এসেছে, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়, সবচেয়ে উত্তম জায়গা কোনটি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা কোনটি। তিনি বলেন, সবচেয়ে উত্তম জায়গা মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা বাজার।[2]

একজন মুসলিম এমন মসজিদ খুঁজবে যেখানে শরীআত পরিপন্থি কোনো কিছু নেই―এর অর্থ নয় যে, উত্তম জায়গা তথা মসজিদ বর্জন করবে। এমনটি জায়েয নয়। কারণ, আপনারা জানেন―আমি এ বিষয়ে লম্বা কথা বলতে চাচ্ছি না―যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিমদের সাথে মসজিদে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করতে উৎসাহিত করেছেন এবং এ ব্যাপারে অনেক তাকিদ দিয়েছেন। বরং আল্লাহ তাআলাও কুরআনে এ ব্যাপারে আদেশ দিয়েছেন,
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠিত করো, যাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো।[3]

কাজেই যারা মসজিদে সালাত পড়া থেকে দূরে থাকে বা মসজিদে সালাত পড়া বর্জন করে, তারা জ্ঞানের ওপর নেই। কারণ, তাদের জ্ঞান থাকলে তারা এই মূলনীতি জানতো যে, মুসলিমরা যখন দুই অকল্যাণের মুখোমুখি হয় তখন তুলনামূলক কম অকল্যাণটা গ্রহণ করে। তারা সেসব মসজিদেও সালাত আদায় করবে যেসব মসজিদের ক্ষেত্রে তাদের কেবল সামর্থ্য রয়েছে ভালো কাজের আদেশ দেওয়া এবং খারাপ থেকে নিষেধ করা; তারা হাত দ্বারা তা পরিবর্তন করার সক্ষমতা রাখে না। তারা যদি এসব মসজিদ বর্জন করে বাড়িতে সালাত আদায় করে তাহলে তারা উপরিউক্ত শরয়ী মূলনীতি পরিত্যাগ করলো―মুসলিমরা যখন দুই অকল্যাণের মুখোমুখি হয় তখন তুলনামূলক কম অকল্যাণটা গ্রহণ করে। আমি বলবো, কেউ যদি এমন মসজিদ পায় যেখানে সুন্নাহপরিপন্থি আমল তুলনামূলক কম হয় এবং উক্ত মসজিদে সালাত আদায় করার জন্য তার পাশের মসজিদ বর্জন করে, তাহলে এমনটি করতে আমরা তাকে আদেশ দিবো এবং আমরা আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী এ ব্যাপারে তাকে উৎসাহ প্রদান করবে। যারা জ্ঞানের প্রাথমিক স্তরে রয়েছে তাদের কেউ হয়তো সুনানু আবী দাউদে বর্ণিত একটি আসার পড়েছে। আসারটি হলো, আবদুল্লাহ ইবন উমার এক মসজিদে প্রবেশ করেন এবং শুনতে পান যে, একজন ব্যক্তি সালাতের জন্য এ বলে ডাক দিচ্ছে, সালাত, সালাত। আবদুল্লাহ ইবন উমার তা শুনে বলেন, চলো, আমরা এখান থেকে বেরিয়ে যাই। কারণ, এটি বিদআত।[4] আমাদের সিরিয়াতেও এমন হয়―আযানের পর জানালা খুলে জোর আওয়াজে রাস্তায় বলা হয়, হে মুসল্লীরা, সালাত; হে মুসল্লীরা, সালাত। যদি এমনটি বলতে হয় তাহলে আযানের সময় মুআযযিনের ‘হাইয়া আলাস-সলাহ’ এবং ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলা কি তামাশা ছিলো? এগুলো শরীআতে নতুন সংযোজন।

এ হাদীসের অর্থ নয়, সকল মসজিদ বর্জন করো এবং এমন মসজিদে যাও যেখানে কোনো বিদআত নেই। কাজেই প্রশ্নে উল্লিখিত যুবকদের জ্ঞান কম এবং তা সুন্নাহ ও ইবাদতের নামে সীমালঙ্ঘন। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রত্যেক কর্মে উদ্যম রয়েছে এবং প্রত্যেক উদ্যমের আছে নিরুদ্যমতা। সুতরাং যার নিরুদ্যমতা আমার সুন্নাহর গণ্ডির ভিতরেই থাকে, সে হিদায়াতপ্রাপ্ত আর যার নিরুদ্যমতা বিদআদের দিকে নিয়ে যায়, সে পথভ্রষ্ট।[5]

এসব যুবক যে-বিদআত সংশোধনের ক্ষমতা রাখে না সে-বিদআত থেকে পালিয়ে এমন বড় বিদআতে গিয়ে পড়ছে যার সংশোধনের ক্ষমতা নিজেরা রাখে। এভাবে তারা তারা আবূ নাওয়াসের কথায় গিয়ে পড়ছে, যে বলেছিলো, তারা আমাকে রোগের মাধ্যমে চিকিৎসা করছে।[6]

মূল: ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহি.)
- উস্তায আবদুল্লাহ মাহমুদ​


[1] সুনানুত তিরমিযী, ২০৬৭
[2] আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/১৭৪
[3] সূরা বাকারা, আয়াত: ৪৩
[4] সুনানু আবী দাউদ, ৫৩৮, হাদীসটিকে আলবানী গ্রহণযোগ্য বলেছেন।
[5] মুসনাদ আহমাদ, ৬৯৫৮; সহীহুত তারগীব, ৫৬
[6] তুরাসুল আলবানী ফিল মানহাজ, ৪০১-৪০৪ ২৮১৯
 
COMMENTS ARE BELOW

Share this page