• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রবন্ধ ঈমান ভঙ্গের প্রথম কারণ - শির্ক

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,264
Credits
6,308
শির্কের সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা হলো

أَنَّهُ تَشْرِيْكُ غَيْرِ اللَّهِ مَعَ اللَّهِ فِي الْعِبَادَةِ​

“ইবাদাতের মধ্যে মহান আল্লাহর সাথে গাইরুল্লাহকে অংশী বানানো।” [সুবুলুস সালাম শারহু নাওয়াক্বিদিল ইসলাম, শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায, পৃ. ২৮]

শির্কের বিস্তারিত সংজ্ঞা হলো-

وَأَمَّا الشَّرْكُ فَهُوَ: صَرْفُ شَيْءٍ مِنْ أَنْوَاعِ الْعِبَادَةِ لِغَيْرِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ​

অর্থাৎ, “শির্ক হলো, ইবাদাতের প্রকারের মধ্য থেকে কোনো ইবাদাত মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্য করা।” [দুরূসুন ফী শারহি নাওয়াক্বিদিল ইসলাম, শাইখ ড. সালিহ বিন ফাউযান আল-ফাউযান, পৃ. ৪১]

কুরআন ও সুন্নাহে বর্ণিত ইবাদাতসমূহ থেকে কোনো ইবাদাত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে করলে শির্কে আকবার হয়, ঈমান ও ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যায়। যেমন- আল্লাহ ছাড়া কারো উদ্দেশ্যে যবেহ করা, মান্নত করা, সিজদা করা, জীবিত বা মৃত ব্যক্তির নিকট দু'আ করা, সাহায্য চাওয়া প্রভৃতি। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ​

“আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদাত করবে।” [সূরা ৫১; আয-যারিয়াত ৫৬]

واعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ...​

“তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না।...” [সূরা ৪; আন-নিসা ৩৬]

وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِندَ الله​

“আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদাত করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী'।” [সূরা ১০; ইউনুস ১৮]

قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ ) لَا شَرِيكَ لَهُ​

“বল, ‘নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব'। 'তাঁর কোনো শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।...” [সূরা ৬; আল-আন'আম ১৬২-১৬৩]

শির্কের প্রকারভেদ

শির্ক দুই প্রকার। যথা-

১। শির্কে আকবার। বা বড় শির্ক ও শির্কে আসগার।​
২। বা ছোট শির্ক।​

(১) শির্কে আকবার বা বড় শিক

هُوَ صَرْفُ شَيْءٍ مِنْ أَنْوَاعِ الْعِبَادَةِ لِغَيْرِ اللَّهِ​

“মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদাত করা।” এ প্রকারের শির্ক ঈমান ও ইসলাম ভঙ্গের কারণ। এ জাতীয় শির্ক অনেক রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট দু'আ করা, বিপদে-আপদে সাহায্য চাওয়া, যবেহ করা, সিজদা করা, মান্নত করা, রুকু করা প্রভৃতি।

শির্কে আকবার-এর পরিণতি

এ ধরনের শির্ককারীর পরিণতি হলো-

(১) এ ব্যক্তি কাফির ও মুশরিক হয়ে যায়। এ ধরনের শির্ককারীর জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যায় এবং স্থায়ীভাবে জাহান্নামী হয়ে যায়। তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়, তার রক্ত ও সম্পদ হালাল হয়ে যায়।

(২) এ ব্যক্তির জন্য মহান আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْويهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّلِمِينَ مِنْ أَنْصَارِ​

“নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।” [সূরা ৫; আল-মায়িদাহ ৭২]

(৩) এ ধরনের শির্ককারী তাওবাবিহীন মারা গেলে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান।" [সূরা ৪; আন-নিসা ৪৮]

(৪) এ ব্যক্তির সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَبِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَ لَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَسِرِينَ (۳) بَلِ اللَّهَ فَاعْبُدُ وَكُنْ مِّنَ الشَّكِرِينَ​

“আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে; বরং তুমি আল্লাহরই ইবাদাত কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও।” [সূরা ৩৯; আয-যুমার ৬৫-৬৬]

ওযূ করার পর কেউ প্রস্রাব করলে যেমন ওযূ ভেঙে যায়, ঠিক তেমনিভাবে ঈমান আনার পর শির্ক করলে তার তাওহীদ ভেঙে যায়, এবং সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَوْ اشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ​

“আর যদি তারা র্শিক করত, তবে তারা যা আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেত।” [সূরা ৬; আল-আন'আম ৮৮]

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلِمَةً وَقُلْتُ أُخْرَى، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ مَاتَ وَهْوَ يَدْعُو مِنْ دُوْنِ اللَّهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ وَقُلْتُ أَنَا: مَنْ مَاتَ وَهُوَ لَا يَدْعُوْ لِلَّهِ نِدًّا دَخَلَ الْجَنَّةَ.​

অর্থাৎ, (বর্ণনাকারী বলেন,) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কথা বললেন, আর আমি একটি বললাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে আহ্বান করা অবস্থায় মারা যায়, সে জাহান্নামে যাবে।” আর আমি বললাম, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সঙ্গে কাউকে সমকক্ষ হিসেবে আহ্বান না করা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নাতে যাবে। [সহীহ বুখারী: ৪৪৯৭; সহীহ মুসলিম: ৯২]

(৫) এ ধরনের শির্ককারীর রক্ত ও সম্পদ বৈধ হয়ে যায়, তার বিরুদ্ধে জিহাদ ওয়াজিব হয়ে যায়। আবূ হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَيُؤْمِنُوا بِي وَبِمَا جِئْتُ بِهِ فَإِذَا فَعَلُوا ذُلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا بِحَقَّهَا وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللهِ»​

“আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই”- এ কথার সাক্ষ্য না দেয়া পর্যন্ত এবং আমার প্রতি ও আমি যা নিয়ে এসেছি তার প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। এগুলো মেনে নিলে তারা তাদের জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করবে- তবে শরীআতসম্মত কারণ ছাড়া। আর তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে।” [সহীহ মুসলিম: ২১]

এ ধরনের শির্ক অনেক রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট দু'আ করা, গাইরুল্লাহর নিকট বিপদ-আপদে সাহায্য চাওয়া, পরিত্রাণ চাওয়া, গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করা, মান্নত করা, সিজদা করা, রুকু করা প্রভৃতি।

(২) শির্কে আসগার বা ছোট শির্ক

এ প্রকারের শির্ক হলো, কুরআন ও সুন্নাহে এগুলোকে শির্ক হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে, কিন্তু এ ধরনের শির্ককারী ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না। এ ধরনের শির্ক দু'ভাবে হতে পারে-

প্রথমত: শাব্দিকভাবে। যেমন, মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করা। আবদুল্লাহ বিন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন,

مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ»​

“আল্লাহ তাআলার নাম ব্যতীত অন্য কিছুর নামে যে লোক শপথ করল, সে যেন কুফরী করল অথবা শির্ক করল।" [জামে— আত-তিরমিযী: ১৫৩৫; আবূ দাউদ: ৩২৫১; আলবানী বলেন, হাদীসটি সহীহ]

এভাবে বলা যে, যদি আল্লাহ ও আপনি না থাকতেন, আল্লাহ ও আপনি যা চান। এগুলো শব্দগত শির্কের অন্তর্ভুক্ত।

দ্বিতীয়ত: অন্তরের মধ্যে গোপনভাবে। এ ধরনের শির্ক অনেক রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা। রিয়া আবার দু ধরনের হতে পারে।

(ক) মুনাফিকদের রিয়া বা লোকদেখানো ইবাদাত। তারা অন্তরে কুফরী আকীদা পোষণ করতো, আর মানুষকে দেখানোর জন্য বাহ্যিকভাবে আমল করত। তাদের এ রিয়া কুফরী। কারণ তারা আল্লাহ তাআলার উপর ঈমানই আনত না, দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে বাহ্যিকভাবে কিছু নেক আমল করত। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَ مَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ ) يُخْدِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ )​

“আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, 'আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি', অথচ তারা মুমিন নয়। তারা আল্লাহকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। অথচ, তারা নিজদেরকেই ধোঁকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না।” [সূরা ২; আল-বাক্বারাহ ৮-৯]

(খ) মুসলিমদের রিয়া বা লোকদেখানো ইবাদাত। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে সতর্ক করেছেন। আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,

خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ، فَقَالَ: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِي مِنَ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ؟» قَالَ: قُلْنَا: بَلَى، فَقَالَ: «الشَّرْكُ الْخَفِيُّ، أَنْ يَقُوْمَ الرَّجُلُ يُصَلِّي، فَيُزَيِّنُ صَلَاتَهُ، لِمَا يَرَى مِنْ نَظَرِ رَجُلٍ​

“আমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন, আমরা তখন মাসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদের এমন বিষয় অবহিত করব না, যা আমার মতে তোমাদের জন্য মাসীহ দাজ্জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর? রাবী বলেন, আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বলেন, গুপ্ত শির্ক। মানুষ সালাত পড়তে দাঁড়ায় এবং লোকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুন্দরভাবে সালাত পড়ে।” [ইবন মাজাহ: ৪২০৪; আলবানী বলেন, হাদীসটি হাসান]

এ ধরনের রিয়া দ্বারা কুফরী হয় না। তবে ইখলাস বিনষ্ট হওয়ার কারণে আমলটি নষ্ট হয়ে যায়। কোনো নেক আমলের মাধ্যমে দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্য থাকলে তাও গোপনীয় শির্ক। আল্লাহ তাআলা বলেন,

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَوةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَقِ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيْهَا وَهُمْ فِيْهَا لَا يُبْخَسُونَ ) أُولَبِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ )​

“যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমি সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দেই এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। এরাই তারা, আখিরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই।” [সূরা ১১; হৃদ ১৫-১৬]

আবূ হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

تَعِسَ عَبْدُ الدَّيْنَارِ، وَالدَّرْهَمِ، وَالقَطِيفَةِ، وَالْحَمِيْصَةِ، إِنْ أُعْطِيَ رَضِيَ، وَإِنْ لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ​

“লাঞ্ছিত হোক দীনার ও দিরহামের গোলাম এবং চাদর-শালের গোলাম। তাকে দেয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়।” [সহীহ বুখারী : ২৮৮৬]

একজন মুসলিম একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যেই আমল করবে, এতে যদি দুনিয়ার কিছু আসে তা হবে মহান আল্লাহ প্রদত্ত রি। তবে যদি দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে আমল করে, তা নিন্দনীয় এবং ছোট শির্ক।

শির্কে আকবার ও শির্কে আসগারের মধ্যে পার্থক্য

(الْفَرْقُ بَيْنَ الشِّرْكِ الْأَكْبَرِ وَ الشِّرْكِ الْأَصْغَرِ)​

শির্কে আকবার ও শির্কে আসগারের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।

যেমন- (১) শির্কে আকবারের কারণে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়, কিন্তু শির্কে আসগারের কারণে ইসলাম থেকে বের হয় না, তবে কবীরা গুনাহ হবে, যা শির্কে আকবারের কারণ হতে পারে।

(২) শির্কে আকবার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেয়। আর শির্কে আসগারের মধ্যে যে আমলে রিয়া বা 'লোক দেখানোর উদ্দেশ্য' থাকে তা নষ্ট হয়ে যায়, রিয়ামুক্ত আমল নষ্ট হয় না।

বহুল প্রচলিত কয়েকটি শির্কে আকবার

কয়েকটি ইবাদাতের ক্ষেত্রে শির্কে আকবার বেশি হয়ে থাকে। এগুলো হলো-
(১) দু'আর শির্ক: মহান আল্লাহ বলেন,

فَإِذَا رَكِبُوا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجْهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُونَ )​

“তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে, তখন তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে স্থলে পৌঁছে দেন, তখনই তারা শির্কে লিপ্ত হয়।” [সূরা ২৯; আল-আনকাবূত ৬৫]

এ আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, বর্তমান যুগের মুশরিক পূর্বেকার যুগের মুশরিকদের চাইতে জঘন্য। কারণ, পূর্বেকার যুগের মুশরিক স্বাভাবিক অবস্থায় শির্ক করতো এবং বিপদগ্রস্ত অবস্থায় খালিসভাবে একমাত্র আল্লাহ তাআলার নিকটই দু'আ করত অর্থাৎ বিপদে শির্কমুক্ত হয়ে যেত, কিন্তু বর্তমান যুগে যারা শির্কে আকবার করে তারা সুখেও করে, দুঃখেও করে। সর্বাবস্থায় শির্ক করে।

ইবাদাতে শির্ক করলে ইবাদাতগুলো অর্থাৎ শুধু ঐ ইবাদাতটি নয়, সকল ইবাদাতই নষ্ট হয়ে যাবে।

(২) নিয়্যাত, ইরাদা ও ইচ্ছার শির্ক: মহান আল্লাহর বাণী-

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَوةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَتِ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيْهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ ) أُولَبِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَ حَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيْهَا وَ بَطِل مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ )​

“যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমি সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দেই এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। এরাই তারা, আখিরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা সেখানে যা করে তা বরবাদ হয়ে যাবে আর তারা যা করত, তা সম্পূর্ণ বাতিল।” [সূরা ১১; হৃদ ১৫-১৬]

(৩) আনুগত্যের শির্ক: মহান আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করে আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখের নির্দেশের আনুগত্য করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهَا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحْنَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ​

“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদাত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোনো (হক) ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র।” [সূরা ৯; আত-তাওবাহ ৩১]

(৪) ভালোবাসার শির্ক: মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُتِ الله​

“আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মতো ভালোবাসে।” [সূরা ২; আল-বাক্বারাহ ১৬৫]

ইমাম ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, মহান আল্লাহর ভালোবাসা চার রকমের হতে পারে। যথা-

(ক) মহান আল্লাহকে ভালোবাসা: ইয়াহুদী, মুশরিক এবং অন্যান্যরাও আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসে অর্থাৎ মহান আল্লাহকে সবাই ভালোবাসার দাবি করে।

(খ) মহান আল্লাহ যা ভালোবাসেন তা পছন্দ করা: এ প্রকার ভালোবাসা ঈমানের পরিচায়ক। যার মধ্যে এ ভালোবাসা বেশি সে আল্লাহ তাআলার নিকটও অধিক প্রিয়

(গ) মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা: এটিও ঈমানের পরিচায়ক।

(ঘ) মহান আল্লাহর সঙ্গে ভালোবাসা : এ প্রকারের ভালোবাসা শির্কী ভালোবাসা। মুশরিকগণ মহান আল্লাহর মতোই অন্যান্য মাবুদদের ভালোবাসে। [আত-তিবইয়ান শারহু নাওয়াক্বিদিল ইসলাম, শাইখ সুলাইমান বিন নাসির আল-আলওয়ান, পৃ. ১২-১৩]

(৫) মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে যবেহ করা। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্দিষ্ট নিয়মে পশুর রক্ত প্রবাহিত করাকে 'যবেহ' বলে। যার উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়, তার মহত্বকে সামনে রেখে, তার সামনে নিজের দীনতা প্রকাশ করে, তার নিকটবর্তী হওয়ার উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা একটি ইবাদাত। মহান আল্লাহ ছাড়া আর কারো উদ্দেশ্যে যবেহ করা হলে তা শির্কে আকবার বা বড় শির্ক হবে। এতে ঈমান ভেঙে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ إِنَّ صَلَاقٍ وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ ) لَا شَرِيكَ لَهُ
“বল, ‘নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব'। তাঁর কোনো শরীক নেই।” [সূরা ৬; আল-আন'আম ১৬২-১৬৩]

আলী ইবনু আবূ তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ»​

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করে, আল্লাহ তাকে লা'নত করেন।” [সহীহ মুসলিম: ১৯৭৮ ]

(৬) মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে মান্নত করা। মানুষ কোনো কিছু নিজের জন্য আবশ্যক করে নেওয়া অথবা মহান আল্লাহ যা ওয়াজিব করেননি, তা নিজের উপর ওয়াজিব করে নেওয়া, এটিকে শরীআতের পরিভাষায় মান্নত বলা হয়। যখন কোনো মানুষ মহান আল্লাহর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করে, তখন এটি পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। কারণ, তখন একটি ইবাদাতে পরিণত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, এটি

يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَدُّهُ مُسْتَطِيرًا​

“তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যার অকল্যাণ হবে সুবিস্তৃত।” [সূরা ৭৬; আল-ইনসান ৭]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلَا يَعْصِهِ​

“যে ব্যক্তি এরূপ মান্নত করে যে, সে আল্লাহ্র আনুগত্য করবে, সে যেন আল্লাহ্র আনুগত্য করে। আর যে মান্নত করে, সে আল্লাহ্ নাফরমানি করবে, সে যেন তাঁর নাফরমানি না করে।” [সহীহ বুখারী: ৬৬৯৬]

(৭) সাহায্য চাওয়া, আশ্রয় চাওয়ার শির্ক প্রভৃতি। সাধারণভাবে কোনো মৃত ব্যক্তির নিকট অথবা কোনো জীবিত ব্যক্তির নিকট কোনো গায়েবি বিষয়ের সাহায্য চাওয়া, যে সাহায্য সে করতে সক্ষম নয়। এ ধরনের সাহায্য চাওয়া শির্ক। কেননা, এ প্রকারের সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরে এ আকীদা জন্মে যে, বিশ্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে এ ব্যক্তির গোপন ক্ষমতা রয়েছে। কোনো মৃত অথবা জীবিত মানুষ বা জিনের নিকট আশ্রয় চাওয়া, যারা কোনো দিন আশ্রয় দিতে সক্ষম নয়। এ ধরনের আশ্রয় চাওয়া শির্ক।

মহান আল্লাহ বলেন,

وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنْسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا )​

“আর নিশ্চয়ই কতিপয় মানুষ কতিপয় জিনের আশ্রয় নিত। ফলে তারা তাদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল।” [সূরা ৭২; আল-জিন ৬]



আরও পড়ুন - ইসলাম ও ঈমান ভঙ্গের কারণ​
 
Top