Altruistic
Uploader
Salafi User
- Joined
- Nov 17, 2023
- Threads
- 407
- Comments
- 522
- Solutions
- 1
- Reactions
- 12,785
- Thread Author
- #1
আব্দুল্লাহ আর আব্দুর রহমান দুই প্রতিবেশী। একদা আব্দুর রহমান জানতে পারলো যে, আব্দুল্লাহ বিভিন্ন বিষয়ের ইসলামী অনলাইন কোর্সের লিংক শেয়ার করে থাকে এবং সকলকে শেয়ার করতে উৎসাহিত করে। তাই আব্দুর রহমান একদিন আব্দুল্লাহ এর সাথে সাক্ষাৎ করলো।
আব্দুর রহমান:- আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন ভাইজান?
আব্দুল্লাহ:- ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লহ। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
আব্দুর রহমান:- আলহামদুলিল্লাহ। আমিও ভালো আছি। আমি একটি কারণে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলাম। আমি শুনতে পেয়েছি যে, আপনি ইসলামী অনলাইন কোর্সের লিংক শেয়ার করে থাকেন এবং সকলকে শেয়ার করতে উৎসাহিত করেন এই সংবাদ কি সঠিক?
আব্দুল্লাহ:- জি ভাই। এটা একদম সঠিক। কি কোন সমস্যা আছে কি আপনার এই বিষয়টি নিয়ে?
আব্দুর রহমান:- হ্যাঁ। আমার মতে আপনি হারাম কার্যে জরিয়ে যাচ্ছেন। আপনি যখন সেই কোর্স গুলোতে যোগদান করেন তখন তারা আপনাকে এগুলো অনলাইনে শেয়ার না করার জন্য শর্ত আরোপ করেন। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে:-
وَعَن عَمْرو بن عَوْف الْمُزَنِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الصُّلْحُ جَائِزٌ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ إِلَّا صُلْحًا حَرَّمَ حَلَالًا أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا وَالْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ إِلَّا شَرْطًا حَرَّمَ حَلَالًا أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَأَبُو دَاوُدَ وَانْتَهَتْ رِوَايَته عِنْد قَوْله «شروطهم»
"আমর ইবনু ’আওফ আল্ মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমদের পরস্পর আপোস-মীমাংসাকে ইসলাম অনুমোদন করে। কিন্তু যে মীমাংসা হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে, তা জায়িয নয়। মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়িয হবে না। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও আবূ দাঊদ; আবূ দাঊদ বর্ণনা করেন ’শর্তসমূহ’ পর্যন্ত)।
(তিরমিযী ১৩৫২, আবূ দাঊদ ৩৫৯৪, ইবনু মাজাহ ২৩৫৩, ইরওয়া ১৪২০, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৬২, মিশকাত ২৯২৩)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শর্ত পূরণ করতে আদেশ দিয়েছেন এবং তা ভাঙতে নিষেধ করেছেন অথচ আপনি শর্ত দিয়ে তা ভেঙে ফেলছেন।
আব্দুল্লাহ:- জি ভাই। আপনার বর্ণিত হাদিসের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিও বলেছেন যে, إِلَّا شَرْطًا حَرَّمَ حَلَالًا أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا অর্থাৎ:-কিন্তু যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়িয হবে না। আপনি আরও একটি হাদীসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। হাদীসটি হলো:- وَحَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ الْهَمْدَانِيُّ حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامُ، بْنُ عُرْوَةَ أَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ دَخَلَتْ عَلَىَّ بَرِيرَةُ فَقَالَتْ إِنَّ أَهْلِي كَاتَبُونِي عَلَى تِسْعِ أَوَاقٍ فِي تِسْعِ سِنِينَ فِي كُلِّ سَنَةٍ أُوقِيَّةٌ . فَأَعِينِينِي . فَقُلْتُ لَهَا إِنْ شَاءَ أَهْلُكِ أَنْ أَعُدَّهَا لَهُمْ عَدَّةً وَاحِدَةً وَأُعْتِقَكِ وَيَكُونَ الْوَلاَءُ لِي فَعَلْتُ . فَذَكَرَتْ ذَلِكَ لأَهْلِهَا فَأَبَوْا إِلاَّ أَنْ يَكُونَ الْوَلاَءُ لَهُمْ فَأَتَتْنِي فَذَكَرَتْ ذَلِكَ قَالَتْ فَانْتَهَرْتُهَا فَقَالَتْ لاَهَا اللَّهِ إِذَا قَالَتْ . فَسَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلَنِي فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ " اشْتَرِيهَا وَأَعْتِقِيهَا وَاشْتَرِطِي لَهُمُ الْوَلاَءَ فَإِنَّ الْوَلاَءَ لِمَنْ أَعْتَقَ " . فَفَعَلْتُ - قَالَتْ - ثُمَّ خَطَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَشِيَّةً فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ قَالَ " أَمَّا بَعْدُ فَمَا بَالُ أَقْوَامٍ يَشْتَرِطُونَ شُرُوطًا لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللَّهِ مَا كَانَ مِنْ شَرْطٍ لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَهُوَ بَاطِلٌ وَإِنْ كَانَ مِائَةَ شَرْطٍ كِتَابُ اللَّهِ أَحَقُّ وَشَرْطُ اللَّهِ أَوْثَقُ مَا بَالُ رِجَالٍ مِنْكُمْ يَقُولُ أَحَدُهُمْ أَعْتِقْ فُلاَنًا وَالْوَلاَءُ لِي إِنَّمَا الْوَلاَءُ لِمَنْ أَعْتَقَ " .
"আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু ’আলা আল-হামদানী (রহঃ) ..... ’আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন বারীরা (রাযিঃ) আমার কাছে এল। এরপর সে বলল, আমার মনিব আমাকে প্রতি বছর একটি করে নয় বছরে নয়টি উকীয়্যাহ্ (চল্লিশ দিরহামে এক উকীয়াহ্) আদায় করার শর্তে আমাকে মুক্তি দানের ব্যাপারে লিখিত চুক্তি করেছে। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমি [আয়িশাহ (রাযিঃ)] তাকে বললাম, তোমার মনিব যদি এ শর্তে রাজী হয় যে তোমার মুক্তিপণ এক সঙ্গে আদায় করে দিলে তোমার ’ওয়ালা’ আমি পাব তাহলে আমি তোমাকে মুক্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে চাই। তখন বারীরাহ (রাযিঃ) এ বিষয়টি তার মুনিবের কাছে উঠালে তাদের জন্য ’ওয়ালা’ ব্যতিরেকে তারা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। এরপর সে আমার [আয়িশাহ্ (রাযিঃ)] এর কাছে এসে তাদের কথা বলল। তিনি বলেন, আমি তাকে ধমক দিয়ে বললামঃ তাহলে আল্লাহর কসম! আমি রাজী নই। আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি শুনলেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। তার কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম।
এরপর তিনি বললেনঃ হে ’আয়িশাহ! তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও এবং তাদের জন্য ওয়ালা’র শর্ত করে দাও। তবে নিশ্চয়ই ওয়ালা সে পাবে যে মুক্তি দান করে। আমি (আয়িশাহ) তাই করলাম। রাবী বলেনঃ এরপর সন্ধ্যা বেলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা ও তার মহিমা ঘোষণা করলেন। এরপর বললেনঃ লোকের অবস্থা কেমন অবস্থায় পৌছেছে যে, তারা এমন সব শর্ত দেয় যা আল্লাহর কিতাবে নেই। স্মরণ রাখ, যে শর্ত আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল বলে গণ্য, যদিও একশতবার শর্তারোপ করা হয়। আল্লাহর কিতাবের শর্তই যথার্থ সঠিক, আল্লাহর শর্তই সর্বাধিক সুদৃঢ়। তোমাদের মধ্যে কতক লোকের কী হয়েছে যে, তারা অপরকে বলে অমুককে মুক্ত করে দাও আর ’ওয়ালা গ্রহণ করব আমরা? অথচ ওয়ালা তো আসলে তারই পাওনা যে মুক্ত করে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৩৭, ইসলামিক সেন্টার ৩৬৩৭ হাদীস একাডেমী ৩৬৭১)
উপরোক্ত দুইটি হাদীস প্রমাণ করে যে, হারাম শর্ত মেনে নেওয়া বৈধ নয় বরং তা ভেঙে ফেলতে হবে। কেউ যদি হারাম শর্ত মেনে নিয়ে কোন কিছু গ্রহণ করে তাহলেও সেই ব্যক্তি এটি মান্য করতে বাধ্য নন যেমন আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহা করেছেন। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা তাদের জন্য ওয়ালার শর্ত করার পরও তিনি তা মান্য করেননি কারণ এটি একটি হারাম শর্ত এবং এইসব হারাম শর্তাবলীর কোন গুরুত্ব ইসলামে নেই।
আব্দুর রহমান:- কিভাবে এখানে শর্ত দেওয়া হারাম হলো একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?
আব্দুল্লাহ:- জি ভাই। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً
"আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও।" ( বুখারী ৩৪৬১)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন ইলম প্রচার করার জন্য। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ পালন করা সাধারণত ওয়াজিব হয়ে থাকে। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞান কে সীমাবদ্ধ করেননি। তিনি বলেছেন আমার পক্ষ হতে মানুষের কাছে একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও সেখানে আপনাকে কে শর্ত আরোপ করে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানগুলোকে সীমাবদ্ধ করার অধিকার দিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন তা আপনি বিভিন্ন কোর্স, বই ইত্যাদি থেকে মুখস্থ করে প্রচার করতে পরেন আবার লিংক শেয়ার করে স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে ইত্যাদি যে কোন ভাবে প্রচার করতে পারবেন। মুখস্থ করে প্রচার করলে তখন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিষেধ করেনা কিন্তু লিংক শেয়ার করে স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে প্রচার করলে তখন আসে যত নিষেধাজ্ঞা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইলম প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন তখন আপনি বিনা দ্বিধায় যেকোনো মাধ্যমে প্রচার করতে পারবেন। এবং যেকোন মাধ্যমে ইলম শিক্ষা করতে পারবেন। এই বিষয়ে সাহাবী ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে হাসান সনদে প্রমাণিত যে,
حدثنا طاهر بن خالد بن نزار الأيلي ، حدثني أبي ، عن إبراهيم بن طهمان ، عن خالد الحذاء ، عن عكرمة ، عن ابن عباس قال : « خذ الحكمة ممن سمعتها ، فإن الرجل ينطق بالحكمة ، وليس من أهلها ، فتكون كالرمية خرجت من غير رام »
(/390رواه الخرائطي في ( مساوئ الأخلاق ) : 378)
"যেখান থেকে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা শোনো, তা গ্রহণ করো। কারণ অনেক সময় একজন ব্যক্তি জ্ঞানপূর্ণ কথা বলে থাকে, যদিও সে জ্ঞানীদের অন্তর্ভুক্ত নাও হতে পারে। এমনটা সেই তীরের মতো যা তীরন্দাজ ব্যতীত অন্য কারও হাত থেকে নিক্ষেপ হয়েছে"। (মাসায়েলে আখলাক:৩৭৮/৩৯০। হাফেজ যুবায়ের আলী যাঈ রহিমাহুল্লাহ তার তাহকীক ও তাখরিজ কৃত উর্দু মিশকাতের ২১৬ নং হাদীসের অধিনে নিয়ে এসেছেন এবং এটাকে হাসান হাদীস বলেছেন)। ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু বলছেন যেখান থেকে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা শোনো, তা গ্রহণ করো সেখানে আজকালকার পশ্চিমা আইনের পাল্লায় পড়ে জ্ঞান কে বেঁধে রেখে তাকে সীমাবদ্ধ করার অধিকার দিল কে?
সুতরাং ইসলামী দ্বীনি জ্ঞানের প্রচার প্রসারের বিপরীতে শর্ত আরোপ করে তার প্রচার প্রসারে বাঁধা প্রদান করা হারাম। আর এরূপ হারাম শর্তাবলীর কোন গ্রহনযোগ্যতা ইসলামে নেই। তাই একজন মুসলিম যেখানেই জ্ঞান দেখবে সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে লুটে-পুটে খেয়ে নিবে এটাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম থেকে প্রমাণিত।
আব্দুর রহমান:- ঠিক আছে ভাই। আপনার কথা ঠিক যে ,মুখস্থ করে প্রচার করলে তখন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিষেধ করেনা কিন্তু লিংক শেয়ার করে স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে প্রচার করলে তখন তারা নিষেধ করে কারণ, এগুলোর পিছনে তাদের অনেক অর্থের খরচ হয়। যদি তারা এগুলোর অনুমোদন দেয় তাহলে তাদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:-
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَضَى أَنْ " لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ " .
"উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না।" (ইবনে মাযাহ ২৩৪০,আহমাদ ২২২৭২, সহীহাহ ২৫০, ইরওয়া ৮৯৬, গায়াতুল মারাম ৬৮)।
আপনার এরূপ কর্মকাণ্ডতে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এটা কি গুনাহের কাজ নয়?
আব্দুল্লাহ:- আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। আমাকে পূর্বে বলুন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার কারণে কোন মুসলিমের কি লোকসান গুনতে হয়?
আব্দুর রহমান:- কখনোও নয়। হয় সেই ব্যক্তি শহীদ হবে না হয় গাজী হবে লোকসান হওয়ার কোন সুযোগই নেই।
আব্দুল্লাহ:- ওওও আচ্ছা! জিহাদ করার জন্য নিজের জীবনের ক্ষতি হয় না!, নিজের ব্যবসা-চাকরি, কাজ-কারবার এর কোন ক্ষতি হয়! মানুষের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা জিহাদে ব্যয় করে লোকসান হয় না!
আব্দুর রহমান:- আআআ...। ঠিক আছে ভাই আপনার কথা ঠিক। কিন্তু তাদের এইসব ক্ষতির চেয়ে উপকার ১ কোটি গুণ বা অগণিত বেশি। তারা হয় শহীদ না হয় গাজী। তাই তো এগুলো ক্ষতির মধ্যে আসে না।
আব্দুল্লাহ:- আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। কত লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে ব্যয় করে যেমন কোন ক্ষতি হয় না ঠিক এভাবেই ইলম প্রচার করে কখনও কোন ক্ষতি হয় না। ইলম প্রচার করাও একটি জিহাদ সুতরাং এখানে ক্ষতির অজুহাত দেখানো একদম অগ্রহণযোগ্য বিষয়।
আব্দুর রহমান:- আচ্ছা ভাইজান। এটা কি চুরির মধ্যে পরবেনা?
আব্দুল্লাহ:- প্রথম কথা ইলম কোন সম্পদ নয় যে চুরির মধ্যে পরবে। দ্বিতীয়ত:- একটু সময়ের জন্য মেনে নিচ্ছি যে,ইলম হলো সম্পদ। তার পরেও তা চুরি বলে গণ্য হবে না। নিম্ন বর্ণিত উদাহরণটির প্রতি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন:-
" কোন ব্যক্তি তার জমি-জায়গা সকলের জন্য উন্মুক্ত ওয়ারিশ করে দিল। একজন ব্যক্তি এসে জমির উপরের আগাছা অনেক কষ্ট করে পরিষ্কার করলো তাতে বিজ বুনলো পানি দিল পরিচর্যা করলো এবং এটাকে সুরক্ষিত রাখতে কাটা তারের বেড়া দিল। এখন অন্য একজন ব্যক্তি যদি সেই কাঁটা তারের বেড়া ডিঙিয়ে জমিতে এসে কিছু খাদ্য খায় তাহলে কি সে অন্যায় কাজ করলো?
আব্দুর রহমান:- না। অন্যায় কেন হতে যাবে। যে ব্যাক্তি ডিঙিয়ে খাবার খেলো সেই ব্যক্তিও তো সেই জমির ওয়ারিশ তার কোন গুনাহ হবে না। আর যে এর প্রকৃত মালিক সেই ব্যক্তি তো সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তাই তা থেকে খাওয়া হলে গুনাহ হবে না।আর যে ব্যক্তি এতো পরিশ্রম করলো এর বদলায় এই পরিশ্রমী ব্যক্তি অনেক সওয়াবের অধিকারী হবেন।
আব্দুল্লাহ:- ঠিক এভাবেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য দ্বীনি জ্ঞানকে ওয়ারিশ হিসেবে উন্মুক্ত করে বিদায় নিয়েছেন। তার সেই জ্ঞান কেউ বিভিন্ন পাসওয়ার্ডের বেড়া মলাটের বেড়া দিয়ে যদি সংরক্ষিত করার পর কোন ব্যক্তি যদি সেই পাসওয়ার্ডের বেড়া মলাটের বেড়া ডিঙিয়ে তা গ্রহণ করে তাহলে কি তার গুনাহ হতে পারে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:-
إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ " .
"নিশ্চয়ই নবীগণ দ্বীনার ও দিরহাম (নগদ অর্থ) ওয়ারিসী স্বত্ব হিসাবে রেখে যাননি, বরং তাঁরা ওয়ারিসী স্বত্বরূপে রেখে গেছেন ইলম (জ্ঞান)। যে ব্যাক্তি তা গ্রহণ করলো, সে যেন একটি পূর্ণ অংশ লাভ করলো। ( ইবনে মাযাহ ২২৩, তিরমিজি ২৬৮২)। আর স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً
"আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও।" ( বুখারী ৩৪৬১)। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বেই অনুমতি দিয়ে বিদায় নিয়েছেন ইলম শিক্ষা করার ও প্রচার করার তাই কোন ব্যক্তির এই বিষয়টিতে অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়ার কোন গুরুত্ব নেই।এছাড়াও সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে যে,যেখান থেকে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা শোনো, তা গ্রহণ করো। পূর্বে এই হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে ইলম অর্জন করা প্রচার করা চুরি হতে পারে?
আব্দুর রহমান:- ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন।আমীন।
আব্দুল্লাহ:- আল্লাহ তাআলা আপনাকেও সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।
আব্দুর রহমান:- আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন ভাইজান?
আব্দুল্লাহ:- ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লহ। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
আব্দুর রহমান:- আলহামদুলিল্লাহ। আমিও ভালো আছি। আমি একটি কারণে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলাম। আমি শুনতে পেয়েছি যে, আপনি ইসলামী অনলাইন কোর্সের লিংক শেয়ার করে থাকেন এবং সকলকে শেয়ার করতে উৎসাহিত করেন এই সংবাদ কি সঠিক?
আব্দুল্লাহ:- জি ভাই। এটা একদম সঠিক। কি কোন সমস্যা আছে কি আপনার এই বিষয়টি নিয়ে?
আব্দুর রহমান:- হ্যাঁ। আমার মতে আপনি হারাম কার্যে জরিয়ে যাচ্ছেন। আপনি যখন সেই কোর্স গুলোতে যোগদান করেন তখন তারা আপনাকে এগুলো অনলাইনে শেয়ার না করার জন্য শর্ত আরোপ করেন। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে:-
وَعَن عَمْرو بن عَوْف الْمُزَنِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الصُّلْحُ جَائِزٌ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ إِلَّا صُلْحًا حَرَّمَ حَلَالًا أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا وَالْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ إِلَّا شَرْطًا حَرَّمَ حَلَالًا أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَأَبُو دَاوُدَ وَانْتَهَتْ رِوَايَته عِنْد قَوْله «شروطهم»
"আমর ইবনু ’আওফ আল্ মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমদের পরস্পর আপোস-মীমাংসাকে ইসলাম অনুমোদন করে। কিন্তু যে মীমাংসা হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে, তা জায়িয নয়। মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়িয হবে না। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও আবূ দাঊদ; আবূ দাঊদ বর্ণনা করেন ’শর্তসমূহ’ পর্যন্ত)।
(তিরমিযী ১৩৫২, আবূ দাঊদ ৩৫৯৪, ইবনু মাজাহ ২৩৫৩, ইরওয়া ১৪২০, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৬২, মিশকাত ২৯২৩)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শর্ত পূরণ করতে আদেশ দিয়েছেন এবং তা ভাঙতে নিষেধ করেছেন অথচ আপনি শর্ত দিয়ে তা ভেঙে ফেলছেন।
আব্দুল্লাহ:- জি ভাই। আপনার বর্ণিত হাদিসের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিও বলেছেন যে, إِلَّا شَرْطًا حَرَّمَ حَلَالًا أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا অর্থাৎ:-কিন্তু যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়িয হবে না। আপনি আরও একটি হাদীসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। হাদীসটি হলো:- وَحَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ الْهَمْدَانِيُّ حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامُ، بْنُ عُرْوَةَ أَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ دَخَلَتْ عَلَىَّ بَرِيرَةُ فَقَالَتْ إِنَّ أَهْلِي كَاتَبُونِي عَلَى تِسْعِ أَوَاقٍ فِي تِسْعِ سِنِينَ فِي كُلِّ سَنَةٍ أُوقِيَّةٌ . فَأَعِينِينِي . فَقُلْتُ لَهَا إِنْ شَاءَ أَهْلُكِ أَنْ أَعُدَّهَا لَهُمْ عَدَّةً وَاحِدَةً وَأُعْتِقَكِ وَيَكُونَ الْوَلاَءُ لِي فَعَلْتُ . فَذَكَرَتْ ذَلِكَ لأَهْلِهَا فَأَبَوْا إِلاَّ أَنْ يَكُونَ الْوَلاَءُ لَهُمْ فَأَتَتْنِي فَذَكَرَتْ ذَلِكَ قَالَتْ فَانْتَهَرْتُهَا فَقَالَتْ لاَهَا اللَّهِ إِذَا قَالَتْ . فَسَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلَنِي فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ " اشْتَرِيهَا وَأَعْتِقِيهَا وَاشْتَرِطِي لَهُمُ الْوَلاَءَ فَإِنَّ الْوَلاَءَ لِمَنْ أَعْتَقَ " . فَفَعَلْتُ - قَالَتْ - ثُمَّ خَطَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَشِيَّةً فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ قَالَ " أَمَّا بَعْدُ فَمَا بَالُ أَقْوَامٍ يَشْتَرِطُونَ شُرُوطًا لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللَّهِ مَا كَانَ مِنْ شَرْطٍ لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَهُوَ بَاطِلٌ وَإِنْ كَانَ مِائَةَ شَرْطٍ كِتَابُ اللَّهِ أَحَقُّ وَشَرْطُ اللَّهِ أَوْثَقُ مَا بَالُ رِجَالٍ مِنْكُمْ يَقُولُ أَحَدُهُمْ أَعْتِقْ فُلاَنًا وَالْوَلاَءُ لِي إِنَّمَا الْوَلاَءُ لِمَنْ أَعْتَقَ " .
"আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু ’আলা আল-হামদানী (রহঃ) ..... ’আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন বারীরা (রাযিঃ) আমার কাছে এল। এরপর সে বলল, আমার মনিব আমাকে প্রতি বছর একটি করে নয় বছরে নয়টি উকীয়্যাহ্ (চল্লিশ দিরহামে এক উকীয়াহ্) আদায় করার শর্তে আমাকে মুক্তি দানের ব্যাপারে লিখিত চুক্তি করেছে। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমি [আয়িশাহ (রাযিঃ)] তাকে বললাম, তোমার মনিব যদি এ শর্তে রাজী হয় যে তোমার মুক্তিপণ এক সঙ্গে আদায় করে দিলে তোমার ’ওয়ালা’ আমি পাব তাহলে আমি তোমাকে মুক্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে চাই। তখন বারীরাহ (রাযিঃ) এ বিষয়টি তার মুনিবের কাছে উঠালে তাদের জন্য ’ওয়ালা’ ব্যতিরেকে তারা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। এরপর সে আমার [আয়িশাহ্ (রাযিঃ)] এর কাছে এসে তাদের কথা বলল। তিনি বলেন, আমি তাকে ধমক দিয়ে বললামঃ তাহলে আল্লাহর কসম! আমি রাজী নই। আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি শুনলেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। তার কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম।
এরপর তিনি বললেনঃ হে ’আয়িশাহ! তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও এবং তাদের জন্য ওয়ালা’র শর্ত করে দাও। তবে নিশ্চয়ই ওয়ালা সে পাবে যে মুক্তি দান করে। আমি (আয়িশাহ) তাই করলাম। রাবী বলেনঃ এরপর সন্ধ্যা বেলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা ও তার মহিমা ঘোষণা করলেন। এরপর বললেনঃ লোকের অবস্থা কেমন অবস্থায় পৌছেছে যে, তারা এমন সব শর্ত দেয় যা আল্লাহর কিতাবে নেই। স্মরণ রাখ, যে শর্ত আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল বলে গণ্য, যদিও একশতবার শর্তারোপ করা হয়। আল্লাহর কিতাবের শর্তই যথার্থ সঠিক, আল্লাহর শর্তই সর্বাধিক সুদৃঢ়। তোমাদের মধ্যে কতক লোকের কী হয়েছে যে, তারা অপরকে বলে অমুককে মুক্ত করে দাও আর ’ওয়ালা গ্রহণ করব আমরা? অথচ ওয়ালা তো আসলে তারই পাওনা যে মুক্ত করে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৩৭, ইসলামিক সেন্টার ৩৬৩৭ হাদীস একাডেমী ৩৬৭১)
উপরোক্ত দুইটি হাদীস প্রমাণ করে যে, হারাম শর্ত মেনে নেওয়া বৈধ নয় বরং তা ভেঙে ফেলতে হবে। কেউ যদি হারাম শর্ত মেনে নিয়ে কোন কিছু গ্রহণ করে তাহলেও সেই ব্যক্তি এটি মান্য করতে বাধ্য নন যেমন আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহা করেছেন। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা তাদের জন্য ওয়ালার শর্ত করার পরও তিনি তা মান্য করেননি কারণ এটি একটি হারাম শর্ত এবং এইসব হারাম শর্তাবলীর কোন গুরুত্ব ইসলামে নেই।
আব্দুর রহমান:- কিভাবে এখানে শর্ত দেওয়া হারাম হলো একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?
আব্দুল্লাহ:- জি ভাই। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً
"আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও।" ( বুখারী ৩৪৬১)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন ইলম প্রচার করার জন্য। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ পালন করা সাধারণত ওয়াজিব হয়ে থাকে। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞান কে সীমাবদ্ধ করেননি। তিনি বলেছেন আমার পক্ষ হতে মানুষের কাছে একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও সেখানে আপনাকে কে শর্ত আরোপ করে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানগুলোকে সীমাবদ্ধ করার অধিকার দিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন তা আপনি বিভিন্ন কোর্স, বই ইত্যাদি থেকে মুখস্থ করে প্রচার করতে পরেন আবার লিংক শেয়ার করে স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে ইত্যাদি যে কোন ভাবে প্রচার করতে পারবেন। মুখস্থ করে প্রচার করলে তখন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিষেধ করেনা কিন্তু লিংক শেয়ার করে স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে প্রচার করলে তখন আসে যত নিষেধাজ্ঞা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইলম প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন তখন আপনি বিনা দ্বিধায় যেকোনো মাধ্যমে প্রচার করতে পারবেন। এবং যেকোন মাধ্যমে ইলম শিক্ষা করতে পারবেন। এই বিষয়ে সাহাবী ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে হাসান সনদে প্রমাণিত যে,
حدثنا طاهر بن خالد بن نزار الأيلي ، حدثني أبي ، عن إبراهيم بن طهمان ، عن خالد الحذاء ، عن عكرمة ، عن ابن عباس قال : « خذ الحكمة ممن سمعتها ، فإن الرجل ينطق بالحكمة ، وليس من أهلها ، فتكون كالرمية خرجت من غير رام »
(/390رواه الخرائطي في ( مساوئ الأخلاق ) : 378)
"যেখান থেকে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা শোনো, তা গ্রহণ করো। কারণ অনেক সময় একজন ব্যক্তি জ্ঞানপূর্ণ কথা বলে থাকে, যদিও সে জ্ঞানীদের অন্তর্ভুক্ত নাও হতে পারে। এমনটা সেই তীরের মতো যা তীরন্দাজ ব্যতীত অন্য কারও হাত থেকে নিক্ষেপ হয়েছে"। (মাসায়েলে আখলাক:৩৭৮/৩৯০। হাফেজ যুবায়ের আলী যাঈ রহিমাহুল্লাহ তার তাহকীক ও তাখরিজ কৃত উর্দু মিশকাতের ২১৬ নং হাদীসের অধিনে নিয়ে এসেছেন এবং এটাকে হাসান হাদীস বলেছেন)। ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু বলছেন যেখান থেকে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা শোনো, তা গ্রহণ করো সেখানে আজকালকার পশ্চিমা আইনের পাল্লায় পড়ে জ্ঞান কে বেঁধে রেখে তাকে সীমাবদ্ধ করার অধিকার দিল কে?
সুতরাং ইসলামী দ্বীনি জ্ঞানের প্রচার প্রসারের বিপরীতে শর্ত আরোপ করে তার প্রচার প্রসারে বাঁধা প্রদান করা হারাম। আর এরূপ হারাম শর্তাবলীর কোন গ্রহনযোগ্যতা ইসলামে নেই। তাই একজন মুসলিম যেখানেই জ্ঞান দেখবে সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে লুটে-পুটে খেয়ে নিবে এটাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম থেকে প্রমাণিত।
আব্দুর রহমান:- ঠিক আছে ভাই। আপনার কথা ঠিক যে ,মুখস্থ করে প্রচার করলে তখন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিষেধ করেনা কিন্তু লিংক শেয়ার করে স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে প্রচার করলে তখন তারা নিষেধ করে কারণ, এগুলোর পিছনে তাদের অনেক অর্থের খরচ হয়। যদি তারা এগুলোর অনুমোদন দেয় তাহলে তাদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:-
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَضَى أَنْ " لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ " .
"উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না।" (ইবনে মাযাহ ২৩৪০,আহমাদ ২২২৭২, সহীহাহ ২৫০, ইরওয়া ৮৯৬, গায়াতুল মারাম ৬৮)।
আপনার এরূপ কর্মকাণ্ডতে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এটা কি গুনাহের কাজ নয়?
আব্দুল্লাহ:- আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। আমাকে পূর্বে বলুন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার কারণে কোন মুসলিমের কি লোকসান গুনতে হয়?
আব্দুর রহমান:- কখনোও নয়। হয় সেই ব্যক্তি শহীদ হবে না হয় গাজী হবে লোকসান হওয়ার কোন সুযোগই নেই।
আব্দুল্লাহ:- ওওও আচ্ছা! জিহাদ করার জন্য নিজের জীবনের ক্ষতি হয় না!, নিজের ব্যবসা-চাকরি, কাজ-কারবার এর কোন ক্ষতি হয়! মানুষের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা জিহাদে ব্যয় করে লোকসান হয় না!
আব্দুর রহমান:- আআআ...। ঠিক আছে ভাই আপনার কথা ঠিক। কিন্তু তাদের এইসব ক্ষতির চেয়ে উপকার ১ কোটি গুণ বা অগণিত বেশি। তারা হয় শহীদ না হয় গাজী। তাই তো এগুলো ক্ষতির মধ্যে আসে না।
আব্দুল্লাহ:- আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। কত লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে ব্যয় করে যেমন কোন ক্ষতি হয় না ঠিক এভাবেই ইলম প্রচার করে কখনও কোন ক্ষতি হয় না। ইলম প্রচার করাও একটি জিহাদ সুতরাং এখানে ক্ষতির অজুহাত দেখানো একদম অগ্রহণযোগ্য বিষয়।
আব্দুর রহমান:- আচ্ছা ভাইজান। এটা কি চুরির মধ্যে পরবেনা?
আব্দুল্লাহ:- প্রথম কথা ইলম কোন সম্পদ নয় যে চুরির মধ্যে পরবে। দ্বিতীয়ত:- একটু সময়ের জন্য মেনে নিচ্ছি যে,ইলম হলো সম্পদ। তার পরেও তা চুরি বলে গণ্য হবে না। নিম্ন বর্ণিত উদাহরণটির প্রতি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন:-
" কোন ব্যক্তি তার জমি-জায়গা সকলের জন্য উন্মুক্ত ওয়ারিশ করে দিল। একজন ব্যক্তি এসে জমির উপরের আগাছা অনেক কষ্ট করে পরিষ্কার করলো তাতে বিজ বুনলো পানি দিল পরিচর্যা করলো এবং এটাকে সুরক্ষিত রাখতে কাটা তারের বেড়া দিল। এখন অন্য একজন ব্যক্তি যদি সেই কাঁটা তারের বেড়া ডিঙিয়ে জমিতে এসে কিছু খাদ্য খায় তাহলে কি সে অন্যায় কাজ করলো?
আব্দুর রহমান:- না। অন্যায় কেন হতে যাবে। যে ব্যাক্তি ডিঙিয়ে খাবার খেলো সেই ব্যক্তিও তো সেই জমির ওয়ারিশ তার কোন গুনাহ হবে না। আর যে এর প্রকৃত মালিক সেই ব্যক্তি তো সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তাই তা থেকে খাওয়া হলে গুনাহ হবে না।আর যে ব্যক্তি এতো পরিশ্রম করলো এর বদলায় এই পরিশ্রমী ব্যক্তি অনেক সওয়াবের অধিকারী হবেন।
আব্দুল্লাহ:- ঠিক এভাবেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য দ্বীনি জ্ঞানকে ওয়ারিশ হিসেবে উন্মুক্ত করে বিদায় নিয়েছেন। তার সেই জ্ঞান কেউ বিভিন্ন পাসওয়ার্ডের বেড়া মলাটের বেড়া দিয়ে যদি সংরক্ষিত করার পর কোন ব্যক্তি যদি সেই পাসওয়ার্ডের বেড়া মলাটের বেড়া ডিঙিয়ে তা গ্রহণ করে তাহলে কি তার গুনাহ হতে পারে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:-
إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ " .
"নিশ্চয়ই নবীগণ দ্বীনার ও দিরহাম (নগদ অর্থ) ওয়ারিসী স্বত্ব হিসাবে রেখে যাননি, বরং তাঁরা ওয়ারিসী স্বত্বরূপে রেখে গেছেন ইলম (জ্ঞান)। যে ব্যাক্তি তা গ্রহণ করলো, সে যেন একটি পূর্ণ অংশ লাভ করলো। ( ইবনে মাযাহ ২২৩, তিরমিজি ২৬৮২)। আর স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً
"আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও।" ( বুখারী ৩৪৬১)। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বেই অনুমতি দিয়ে বিদায় নিয়েছেন ইলম শিক্ষা করার ও প্রচার করার তাই কোন ব্যক্তির এই বিষয়টিতে অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়ার কোন গুরুত্ব নেই।এছাড়াও সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে যে,যেখান থেকে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা শোনো, তা গ্রহণ করো। পূর্বে এই হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে ইলম অর্জন করা প্রচার করা চুরি হতে পারে?
আব্দুর রহমান:- ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন।আমীন।
আব্দুল্লাহ:- আল্লাহ তাআলা আপনাকেও সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।