কাহিনি ইলমের কাছে যেতে হয়, ইলম কখনো কারও কাছে যায় না

  • Thread Author
একবার খলিফা হারুনুর রশিদ ইমাম মালিককে ডেকে পাঠানোর পরও আসেননি। দ্বিতীয় বার ডাকার পর দরবারে হাজির হলেন। খলিফা তখন তাকে বললেন, 'ইবনু আবি আমির, আমি আপনাকে ডেকে পাঠালাম; কিন্তু আপনি এলেন না! ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে।' ইমাম মালিক বললেন, 'আমিরুল মুমিনিন, আমি পর্যায়ক্রমে ইবনু শিহাব যুহরি এবং খারিজাহ ইবনু যায়িদের সূত্রে জানতে পেরেছি; তিনি তার পিতা যায়িদ ইবনু সাবিত থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে বসে ওহি লিখতাম। একদিন আমি থাকাকালে নিচের আয়াতটি অবতীর্ণ হয়-

"মুমিনদের মধ্যে যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে আর যারা জিহাদ ছেড়ে বসে থাকে, তারা সমান হতে পারে না।" [সূরা নিসা, আয়াত: ৯৫]

তখন অন্ধ সাহাবি ইবনু উম্মি মাকতুমও সেখানে ছিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি তো অন্ধ মানুষ। আল্লাহ তাআলা জিহাদের ফজিলত-সংক্রান্ত যে আয়াতটি মাত্র অবতীর্ণ করলেন; আমি কি তবে সে ফজিলত থেকে বঞ্চিত হব?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি জানি না।

তাদের এই কথোপকথনের সময়ও আমার কলম থেকে কালি ঝরছিল। ঠিক তখনই নবিজির মাঝে ওহি অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেল। তিনি আমাকে বললেন, যায়িদ, লেখো-'তবে যুক্তিসঙ্গত ওজর রয়েছে এমন কেউ ব্যতীত।' [সূরা নিসা, আয়াত: ৯৫]

আমিরুল মুমিনিন, মাত্র একটি বাক্যের জন্য জিবরিল পাঁচ হাজার বছরের পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। এমন জ্ঞানকে সম্মান করা কি উচিত নয়? আল্লাহ তাআলা জ্ঞানের মাধ্যমে আপনাকে খিলাফতের মতো সম্মানজনক একটি পদের দায়িত্ব দিয়েছেন। মেহেরবানি করে এই জ্ঞানকে কখনো অসম্মান ও অপমান করবেন না। অন্যথায় আল্লাহও আপনাকে অপদস্থ করবেন।

হারুনুর রশিদ তার অভিযোগ তুলে নিয়ে বলেন, আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন। আমরা আপনার ইলম দ্বারা উপকৃত হতে চাই। এহেন প্রস্তাব শুনে ইমাম মালিক জবাব দিলেন, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। তবে একটা কথা কী, ইলমের কাছে যেতে হয়, ইলম কখনো কারও কাছে যায় না। হারুনুর রশিদ খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলেন, ঠিক আছে। তাহলে আমরাই আপনার কাছে যাব। তবে আমরা যখন থাকব, তখন যেন সাধারণ মানুষ সেখানে না থাকে। কিছুটা গম্ভীর সুরে ইমাম মালিক মন্তব্য করেন, সাধারণ মানুষকে ইলম থেকে বঞ্চিত করা হলে, আল্লাহ তাআলা ইলমের মাঝে বারাকাহ রাখেন না। তখন ফকির-মিসকিন থেকে শুরু করে, আমির-উমারা ও রাজা-বাদশাহদের কেউই ইলম দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। হারুনুর রশিদ বলেন, ঠিক আছে, এটাও মানলাম। তবে আপনি আমাদের পড়ে শোনাবেন। ইমাম মালিক বলেন, আজ পর্যন্ত আমি কাউকে পড়ে শোনাইনি। এখন আর নতুন করে কাউকে শোনাতেও পারব না। হারুনুর রশিদ তখন অনুরোধ করেন, তাহলে বরং এমন কাউকে নিযুক্ত করে দিন, যে আমাদের পড়ে শোনাবে। ইমাম মালিক উত্তর দিলেন, হুম, এটা হতে পারে। এরপর থেকে হারুনুর রশিদ ইমাম মালিকের দারসে গিয়ে হাদিস শুনতেন। তার দারসে মাআন ইবনু ঈসা আল-ফাযারি হাদিস পড়ে শোনাতেন।

প্রথম দিন হারুনুর রশিদ দারসে প্রবেশ করলে ইমাম মালিক নিজের আসনে তাকে বসালেন। এরপর বললেন, আমিরুল মুমিনিন, আমার শহরের লোকেরা আল্লাহর জন্য বিনয় প্রকাশ করা খুবই পছন্দ করে। এ কথা শুনে হারুনুর রশিদ সঙ্গে সঙ্গে আসন থেকে নেমে বসেন।

[তারতিবুল মাদারিক, খন্ড : ১]
 
Back
Top