‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ আল-হাফীয নামের অর্থ ও ব্যাখ্যা

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,257
Credits
6,303
আল-হাফীয (মহা সংরক্ষণকারী)[1]:

গ্রন্থকার রহ. বলেছেন, আল-হাফীয হলেন যিনি সৃষ্টিজগতকে হিফাযত করেন, তাদেরকে সংরক্ষণ করেন, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তা তাঁর ইলম দ্বারা বেষ্টন করে রাখেন, তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে গুনাহ ও ধ্বংসে পতিত হওয়া থেকে হিফাযত করেন, তাদের চলা-ফেরা, কাজ-কর্মে দয়া করেন, বান্দার আমল ও প্রতিদান হিসেব করে রাখেন। আল-হাফীয নামটি দুটি অর্থ শামিল করে:

প্রথমত: বান্দার ভালো, মন্দ, আনুগত্য ও অবাধ্যতা সব ধরণের কাজ তিনি সংরক্ষণ করেন। কেননা তাঁর ইলম তাদের প্রকাশ্য ও গোপনীয় যাবতীয় কাজকে বেষ্টন করে রেখেছে। তিনি আগেই তা লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তিনি কিরামান কাতেবীন ফিরিশতাদ্বয়কে তাদের আমল লিপিবদ্ধ করতে নিয়োজিত করে রেখেছেন।

আল-হাফীযের এ অর্থে আল্লাহর ইলম তাদের প্রকাশ্য ও গোপন যাবতীয় আমলকে বেষ্টন করে রেখেছে বুঝায়, তাদের আমলসমূহ লাওহে মাহফুযে ও ফিরিশতাদের কিতাবে লিপিবদ্ধ করা আছে। এগুলোর পরিমাণ, পূর্ণতা, অপূর্ণতা, সাওয়াব ও শাস্তির পরিমাণ, অত:পর তাঁর দয়া ও ন্যায় বিচার অনুসারে তাদের পুরষ্কার ইত্যাদি সকল বিষয়ে তাঁর ইলম সব কিছুকে বেষ্টন করে রেখেছে প্রমাণ করে।

আল-হাফীযের দ্বিতীয় অর্থ: তাঁর সৃষ্টিকুলের যাবতীয় অপছন্দনীয় জিনিস থেকে তাদেরকে তিনি সংরক্ষণকারী। আল্লাহর হিফয দু’ধরণের। ‘আম তথা সর্ব সাধারণের জন্য হিফয এবং খাস তথা বিশেষ শ্রেণীর জন্য হিফয। তাঁর ‘আম তথা সকলের জন্য সাধারণ সংরক্ষণ বলতে বুঝায়, তিনি সৃষ্টিকুলের জন্য জীবিকা নির্বাহ, তাদের কাঠামো সংরক্ষণ, তাঁর হিদায়েতের দিকে চলা, তাঁর পথ নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের কল্যাণের দিকে পথ চলা ইত্যাদি। তাঁর সর্বময় সাধারণ হিদায়েতের ব্যাপারে তিনি বলেছেন,

﴿أَعۡطَىٰ كُلَّ شَيۡءٍ خَلۡقَهُۥ ثُمَّ هَدَىٰ٥٠﴾ [طه: ٥٠]​

“তিনি সকল বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সঠিক পথ নির্দেশ করেছেন।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৫০] অর্থাৎ তিনি প্রত্যেক মাখলুককে তাদের জন্য নির্ধারিত ও প্রয়োজনীয় সঠিক পথ নির্দেশ করেছেন। যেমন, পানাহার ও বিয়ে-শাদীর পথ নির্দেশ করেছেন এবং এসবের প্রতি চলার উপকরণ সৃষ্টি করেছেন। এমনিভাবে তাদেরকে তাদের অপছন্দনীয় ও ক্ষতিকর জিনিস প্রতিহত করার সক্ষমতা দান করেছেন। এ জাতীয় হিদায়েত সৎকার, বদকার; এমনকি সব সৃষ্টির জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।

তিনিই আসমান ও জমিনকে ধসে পড়া থেকে সংরক্ষণ করেন, তিনি তাঁর নানা নি‘আমত প্রদান করে সৃষ্টিকুলকে হিফাযত করেন, মানুষকে হিফাযতের জন্য তিনি সম্মানিত ফিরিশতা নিয়োজিত করেছেন, তারা আল্লাহর আদেশে তাদেরকে সংরক্ষণ করেন। অর্থাৎ তারা আল্লাহর আদেশে তাদের থেকে যাবতীয় ক্ষতিকর জিনিস প্রতিহত করেন। আল্লাহ যদি তাদের জন্য এ ব্যবস্থা না করতেন তাহলে সেসব জিনিস তাদেরকে ক্ষতি করত।

আল্লাহর দ্বিতীয় প্রকার বিশেষ হিফাযত হলো উপরোক্ত হিফাযত ছাড়াও তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে তাদের ঈমানের ক্ষতিকর জিনিস থেকে হিফাযত করেন অথবা যেসব কারণে তারা দ্বিধা-সন্দেহে, ফিতনা ও প্রবৃত্তির লালসায় পতিত হতে পারেন তিনি তাদের থেকে তা দূরীভূত করেন। ফলে তারা সেসব ক্ষতিকর জিনিস থেকে মুক্ত থাকে, তিনি তাদেরকে নিরাপদে ও সুস্থতার সাথে সেসব পথ থেকে বের করে নিয়ে আসেন।

এছাড়াও তিনি তাদেরকে তাদের শত্রু জীন ও ইনসানের অনিষ্টতা থেকেও সংরক্ষণ করেন। ফলে তারা তাদের শত্রুর উপর বিজয় লাভ করেন এবং তাদের ষড়যন্ত্রের প্রতিহত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ يُدَٰفِعُ عَنِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ٣٨﴾ [الحج : ٣٨]​

“নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদেরকে রক্ষা করেন।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩৮] এখানে মুমিনদের রক্ষাকরণ ব্যাপক অর্থে প্রযোজ্য। তিনি তাদেরকে দীন ও দুনিয়ার যাবতীয় ক্ষতিকর জিনিস থেকে তাদেরকে রক্ষা করেন। সুতরাং বান্দার ঈমানের স্তর অনুযায়ী আল্লাহর সুরক্ষা লাভ করবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ».​

“আল্লাহর (বিধানসমূহের) হিফাযত করবে, তিনি তোমার হিফাযত করবেন।”[2] অর্থাৎ তুমি আল্লাহর আদেশ পালন করা, নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা, তাঁর সীমারেখা অতিক্রম না করা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর বিধান রক্ষা করো, তাহলে আল্লাহ তোমার জীবন, দীন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও তিনি তাঁর দয়ায় যা কিছু তোমাকে দান করেছেন তা সংরক্ষণ করবেন।[3]


[1] এ নামটি আসমাউল হুসনা হওয়ার ব্যাপারে দলিল পাওয়া যায় না। তবে সিফাতের সিগাহয় আল-কুরআনে এভাবে এসেছে,

﴿وَرَبُّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٍ حَفِيظٞ٢١﴾ [سبا: ٢١]​

“আর তোমার রব সকল কিছুর হিফাযতকারী।” [সূরা সাবা’, আয়াত : ২১]

[2] মুসনাদ আহমাদ, ১/২৬৩; তিরমিযী, কিতাব সিফাতুল কিয়ামাহ, ৪/৬৬৭, হাদীস নং ২৫১৬, তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন; আহমাদ শাকির মুসনাদের তাহকীকে (৩/২৬৭১) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন; আলবানী রহ. মিশকাতের তাখরীজে (৩/১৪৫৯) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[3] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৫৯-৬১; তাওদীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১২২।
 
COMMENTS ARE BELOW

Share this page