মানবের উপনাম অমানব
লেখক : আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী
অবতরণিকা
উপমা, সাদৃশ্য বা তুলনা সকল ভাষাতেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উপমায় এক ধর্মবিশিষ্ট দুই ভিন্নজাতীয় বস্তুর সাদৃশ্য কথিত হয়। উপমানঃ যার সাথে উপমা দেওয়া হয়। যার মতো বলা হয়। উপমেয়ঃ উপমার বিষয়ীভূত, যা উপমিত, যার উপমা দেওয়া হয়। যেমন চাঁদের মতো মুখ। চাঁদ হল উপমান, আর মুখ হল উপমেয়। আমি বক্ষমাণ পুস্তিকার নাম দিয়েছি ‘মানবের উপমান অমানব’। এতে বুঝাতে চেয়েছি যে, কুরআন ও সুন্নাহতে মানবের কী কী উপমা বর্ণিত হয়েছে, যা অমানব বা মানব ছাড়া অন্য কিছু জড় বা জীব। সেই সকল উপমায় গুণ হিসাবে মানুষের প্রশংসা করা হয়েছে, আবার কোথাও নিন্দা করা হয়েছে। সুপ্রিয় পাঠকের খিদমতে তাই তুলে ধরার চেষ্টা করব, যাতে তিনি প্রশংসনীয় হতে পারেন এবং নিন্দনীয় চরিত্র বর্জন করতে অনুপ্রাণিত হতে সচেষ্ট হন। অবশ্যই খেয়াল রাখার কথা যে, উপমায় এক ধর্মবিশিষ্ট দুই ভিন্নজাতীয় বস্তুর সাদৃশ্য কথিত হয় ঠিকই, কিন্তু সর্বদিক থেকে নয়। কোনও একটা দিকে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলে উপমানের সাথে উপমেয়কে তুল্য করা হয়।যেমন বাঘের মতো নেতা। অর্থাৎ, শক্তি ও সামর্থ্যে বাঘের মতো। আর তার মানে এ নয় যে, ঐ নেতার বাঘের মতো লেজ আছে, চারটি পা আছে, গায়ে ডোরা- কাটা দাগ আছে ইত্যাদি। সুতরাং যে কোনও বস্তুর একটি বা একাধিক গুণ ও সাদৃশ্য দেখে তার সাথে কোন মানুষকে তুলনা করা হয়। আর যখন মানুষ বলা হয়, তখন নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষ, নারী বলা হলে নির্দিষ্ট শ্রেণী বা গুণের নারী, সকল মানুষ বা সকল নারী একই নিক্তিতে তুল্য হয় না; যদিও অনেক সময় জাতি শব্দ ব্যবহার করা হয়।
মানুষ বহুরূপী। প্রবাদে আছে, 'মানুষ মারা গেলে পচে যায়, আর বেঁচে থাকলে রূপ বদলায়।' সেই বহুরূপী মানুষের এক এক রূপের জন্য এক একটি উপমা ব্যবহার করা হয়। পৃথক পৃথক অবস্থা ও গুণের জন্য পৃথক পৃথক দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হয়; প্রশংসা করার জন্য অথবা নিন্দা প্রকাশ করার জন্য। কুরআন-হাদীসে তো আছেই, আমাদের সাহিত্য-শৈলী ও ভাষা-পরিভাষাতেও বহু উপমা ব্যবহার করা হয়। বিশেষ ক'রে মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রবাদ ও প্রবচনে যে সুন্দর বা অসুন্দর উপমা দেওয়া হয়েছে, তার অনেকটা উল্লেখ করার চেষ্টা করব।
প্রবাদ বাক্য একটি ছোট বাক্য, কিন্তু তাতে যা বলা হয়, তা বহু দিনের অভিজ্ঞতার ফসল। বহুল প্রচলিত এবং জনশ্রুতিতে বহুল শ্রুত পরম্পরাগত বাক্যে এমন বহু উদাহরণ পাওয়া যায়, যাতে আমরা অনেকানেক জ্ঞানলাভ করতে পারি।
প্রবাদে বলা হয়, 'উপদেশ অপেক্ষা দৃষ্টান্ত ভাল।' অর্থাৎ, সরাসরি উপদেশ না দিয়ে যদি উপমা ও উদাহরণ দিয়ে বুঝানো হয়, তাহলে তা সহজেই শ্রোতার বোধগম্য ও মান্য হয়।
আমি আশা করি, পাঠক উপকৃত হবেন এবং মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক মানব ও মানুষ রূপে গড়ে উঠতে তওফীক দেবেন।
বিনীত--- আব্দুল হামীদ আল ফাইযী আল-মাদানী
আল-মাজমাআহ,
সউদী আরব ১১/ ১১ /২০১৮, ৩/৩/১৪৪০