যে সকল ভুলের কারণে তাবলীগ জামায়াতের বিরোধিতা করা হয়
আরব উপদ্বীপের প্রখ্যাত আলেম শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ হাফিজাহুল্লাহকে তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি উক্ত প্রশ্নের উত্তরে তাবলীগ জামায়াতের কিছু ভুল ও বিভ্রান্তি সহজ ভাষায় উল্লেখ করেছেন। উক্ত ফতোয়ার সংক্ষিপ্ত অংশ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
প্রশংসা আল্লাহর জন্যে। “জামায়াত আল তাবলীগ” একটি ইসলামিক দল যারা ইসলামের জন্যে কাজ করছে। তাদের আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকার এই প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু অন্যান্য অনেক দলের মত তাদেরও কিছু ভুল রয়েছে এবং তাদের কিছু বিষয় লক্ষ্যণীয়। এখানে এ সকল বিষয়াদি আলোচনা করা হল। উল্লেখ্য এই ভুলগুলোর প্রকটতা তারা যে পরিবেশ কিংবা সমাজে অবস্থান করছে তার উপর নির্ভর করে কিছু কম বেশি হতে পারে। যে সমাজ ইলম ভিত্তিক এবং আলেমগণ বিদ্যমান ও আহলে সুন্নাহ আল জামায়াহ এর মাযহাব সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সেখানে এই ভুলগুলো অনেক কম। আবার অন্য কোন সমাজে এই ভুলগুলো বেশিও হতে পারে। তাদের কিছু ভুল হলঃ
১) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ এর আকিদাহ গ্রহণ না করা। এটা স্পষ্টভাবে দেখা যায়, তাদের সদস্যদের আকিদাগত পার্থক্য থেকে। এমনকি তাদের কিছু নেতাদের মাঝেও এই আকিদাগত পার্থক্য লক্ষ্যণীয়।
২) শরঈ জ্ঞানের প্রতি তারা মনোযোগ দেয় না।
৩) তারা কিছু কুরআনের আয়াত এমনভাবে ব্যাখ্যা করে যেভাবে আল্লাহ ইঙ্গিত করেন নি। উদাহরণ স্বরূপ তারা জিহাদের আয়াতগুলোকে এভাবে ব্যাখ্যা করেঃ “দাওয়াহর জন্যে বের হওয়া”। খুরুজ (বাইরে বের হওয়া) ইত্যাদি শব্দ বিশিষ্ট আয়াত সমূহকে তারা দাওয়াতের জন্যে বের হওয়া অর্থে ব্যাখ্যা করে থাকে।
৪) তারা তাদের দাওয়াতের জন্যে বের হওয়ার পদ্ধতিকে একটি ইবাদতে পরিণত করে। ফলে তারা কুরআনের ভুল উদ্ধৃতি দিতে শুরু করে তাদের এই নির্দিষ্ট কিছু দিনের এবং মাসের কার্যক্রমকে সমর্থন জানানোর জন্যে। এই পদ্ধতি, যা তারা মনে করে কুরআন ভিত্তিক দলিলের উপর প্রতিষ্ঠিত, সকল দেশ এবং পরিবেশে ছড়িয়ে আছে।
৫) তারা কিছু জিনিস করে থাকে যা শরীয়াতের বিরুদ্ধে যায়। যেমনঃ তাদের জন্যে দুয়া করার জন্যে কাউকে নিযুক্ত করা যখন দলটি দাওয়াতের জন্যে বের হয় এবং তারা মনে করে তাদের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা নির্ভর করে সেই নিযুক্ত লোকটি আন্তরিক (মুখলিস) কিনা এবং তার দুয়া কবুল কিংবা প্রত্যাখাত হয়েছে কিনা তার উপর।
৬) দঈফ (দূর্বল) এবং মাওযু (জাল) হাদীসের বহুল প্রচলন রয়েছে তাদের মাঝে এবং এটা তাদের সাথে বেমানান যারা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকার লক্ষ্য স্থির করেছে।
৭) তারা মুনকারাত (মন্দ কাজ) সম্পর্কে কথা বলে না, এই ভেবে যে, ভালো কাজে অংশগ্রহণ করাই যথেষ্ট। লোকজনের মাঝে যে সকল খারাপ কাজ বহুল প্রচলিত তা নিয়ে তারা কথা বলে না। অথচ এই উম্মতের স্লোগান হল, যা তারা পুনঃপুন বলে থাকে, তা হলঃ “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই হলো সফলকাম”। [ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৪]
তারাই হলো সফলকাম যারা সৎ কাজে অংশগ্রহণ করে এবং অন্যায় কাজে বারণ করে। যারা শুধুমাত্র দুইটির একটি করে তারা নয়।
৮) তাদের কেউ কেউ আত্ম-গরিমা এবং ঔদ্ধত্যের দোষে দুষ্ট, যার ফলে তারা অন্যদের ছোট করে দেখে। এমনকি আলেমদেরকেও তুচ্ছ জ্ঞান করে এবং তাদেরকে অলস, অকর্মঠ এবং রিয়াকার বলে থাকে। কাজেই আপনি তাদের দেখবেন তারা কিভাবে সফর করেছে এবং বের হয়েছিল এসব নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত থাকতে এবং তারা কি কি দেখেছিল তার বর্ণনা দিতে, যার ফলে উল্লেখিত অনাহূত ফল দেখা দেয়।
৯) তারা তাদের দাওয়াতের জন্যে বের হওয়াকে অনেক ইবাদতের থেকে শ্রেয়তর মনে করে থাকে। যেমনঃ জিহাদ এবং ইলম অন্বেষণ, যদিও এই কাজগুলোর কোন কোনটি ফরযে আইন কিংবা ফরযে কিফায়া হয়ে থাকে।
১০) তাদের অনেকে বেপরোয়া ফাতাওয়া প্রদান করে এবং তাফসীর এবং হাদীস আলোচনা করে। এর কারণ তারা তাদের প্রত্যেক সদস্যকে মানুষের সামনে বক্তব্য দিতে অনুমতি দান করে এবং বক্তা ব্যাখ্যা করে থাকে। এর ফলে তারা শরীয়াহ এর বিষয়সমূহ নিয়ে অজ্ঞতা সহকারে কথা বলে। অপরিহার্যভাবে তারা কোন ফিকহ এর অর্থ, হাদীস কিংবা আয়াত নিয়ে কথা বলে অথচ তারা এ সম্পর্কে কিছুই পড়ালেখা করেনি বা কোন আলেমের নিকট হতেও কিছু শুনেনি। এমনকি তাদের অনেকে নও-মুসলিম অথবা মাত্রই ইসলামের দিকে ফিরে এসেছে।
১১) তাদের অনেকে তাদের সন্তানাদি ও পরিবারের প্রতি উদাসীন। আমরা এই বিষয়ের তীব্রতা নিয়ে ৩০৪৩ নম্বর প্রশ্নে আলোচনা করেছি।
এ কারণে আলেমগণ তাদের সাথে লোকদের বের হতে অনুমতি দেন না, তারা ব্যতীত যারা আলেমদের সাহায্য করতে চায় কিংবা নিজেদের ভুলকে সংশোধন করতে চায়। আমরা জনসাধারণকে তাদের থেকে আলাদা করে দিব না বরং আমরা অবশ্যই তাদের ভুল সংশোধনে সচেষ্ট হবো এবং উপদেশ দিবো যেন তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে এবং তারা যেন কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে সঠিক থাকে।