সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

বদনজর সম্পর্কে ইসলামী আকীদা

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Threads
344
Comments
479
Reactions
5,067
Credits
3,446
বদনজরের কুপ্রভাব সম্পর্কে কুরআন থেকে দলীল
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ
وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِن بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِنْ أَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍ ۖ وَمَا أُغْنِي عَنكُم مِّنَ اللَّـهِ مِن شَيْءٍ ۖ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّـهِ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ ﴿٦٧﴾ وَلَمَّا دَخَلُوا مِنْ حَيْثُ أَمَرَهُمْ أَبُوهُم مَّا كَانَ يُغْنِي عَنْهُم مِّنَ اللَّـهِ مِن شَيْءٍ إِلَّا حَاجَةً فِي نَفْسِ يَعْقُوبَ قَضَاهَا ۚ وَإِنَّهُ لَذُو عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَاهُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿٦٨﴾
অর্থঃ সে বলল, ‘হে আমার ছেলেরা, তোমরা এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিপরীতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হুকুম একমাত্র আল্লাহরই। তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করছি এবং তাঁরই উপর যেন সকল তাওয়াক্কুলকারী তাওয়াক্কুল করে’। আর যখন তারা প্রবেশ করল, যেভাবে তাদের পিতা তাদেরকে আদেশ করেছিল, তা আল্লাহর হুকুমের বিপরীতে তাদের কোন উপকারে আসেনি, তবে তা ছিল ইয়া‘কূবের মনের একটি ইচ্ছা, যা সে ব্যক্ত করেছিল। আর সে ছিল জ্ঞানী, কারণ আমি তাকে শিখিয়েছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সূরা ইউসুফঃ ৬৭-৬৮)

হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) উপরোক্ত দু’টি আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন ইয়াকুব (আঃ) ইউসুফ (আঃ)-এর ভাই বিনইয়ামিনকে তার অন্য ভাইদের সাথে মিশরে পাঠিয়েছিলেন। আয়াতে ইয়াকুবের (আঃ) উক্ত নির্দেশনার ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) মুহাম্মাদ বিন কা’ব, মুজাহিদ, যাহহাক, কাতাদা এবং সুদ্দী (রাঃ) প্রমুখ বলেছেন যে, এমনটি তিনি বদ নজরের ভয়ে বলেছিলেন। কেননা তাঁর সন্তানরা খুবই সুন্দর সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। তাই তাদের উপর লোকদের বদনজরের আশঙ্কা করে উক্ত নির্দেশ দেন। কেননা বদনজরের ক্রিয়া বাস্তব; কিন্তু পরে তিনি এও বলেনঃ তবে এ ব্যবস্থা আল্লাহর তাকদীরকে প্রতিহত করতে পারবে না। তিনি যা চাবেন তাই হবে পরিশেষে তা তাদের জন্য বদনজর হতে প্রতিরোধক হিসেবেই আল্লাহর হুকুমে কাজ হয়েছিল। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ২/৪৮৫)

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَإِن يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ ﴿٥١﴾
অর্থঃ আর কাফিররা যখন উপদেশবাণী শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে, আর তারা বলে, ‘এ তো এক পাগল’। (সূরা কলামঃ ৫১)

হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, (ليزلقونك) “তোমার প্রতি বদনজর দিবে।” অর্থাৎ তারা তোমাকে হিংসার প্রতিফলন ঘটিয়ে রুগী বানিয়ে দিবে যদি আল্লাহর তোমার প্রতি হেফাযত না থাকে। আয়াতটি প্রমাণ বহন করে যে, বদনজরের কুপ্রভাবের বাস্তবতা রয়েছে, আল্লাহর হুকুমে। যেমন এ ব্যাপারে হাদীসও রয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৪১০)

বদনজরের কুপ্রভাব সম্পর্কে হাদীসসমূহ থেকে প্রমাণ
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) এরশাদ করেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ‏قال: قال رَسُوْ اللَّهِ ﷺ، ‏العَيْنُ حَقٌّ
বদ নজর সত্য। (বুখারীঃ ১০/২১৩) অর্থাৎ এর বাস্তবতা রয়েছে, এর কুপ্রভাব লেগে থাকে।

২. আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (ﷺ) বলেনঃ
استَعِيْذُوا بِاللّٰهِ مِنَ الْعَيْنِ فَإِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ
তোমরা বদ নজরের ক্রিয়া (খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর। কেননা তা সত্য। (ইবনে মাযাহঃ ৩৫০৮)

৩. ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ
العَيْنُ حَقٌّ وَلَو كَانَ شَيْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ لِسَبَقَتْهُ الْعَيْنُ، وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُوا
বদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য এমনকি যদি কোন বস্তু তকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। সুতরাং তোমাদেরকে যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে) গোসল করতে বলা হয় তখন তোমরা গোসল কর। (মুসলিমঃ ১৪/১৭১)

৪. আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট আবেদন করনে যে, জাফরের সন্তানদের নজর লাগে আমি কি তাদের জন্যে ঝাড়ফুঁক করব? উত্তর নবী (ﷺ) বললেনঃ

অর্থঃ হা! কোন বস্তু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদনজর তা অতিক্রম করত। (তিরমিযীঃ ২০৫৯, আহমদঃ ৬/৪৩৮)

৫. আবু যার (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ
إِنَّ الْعَيْنَ لَتُولَعُ بِالرَّجُلِ بِإِذْنِ اللّٰهِ حَتَّى يَصْعَدَ حَالِقًا فَيَتَرَدَّی مِنْهُ
ইমাম আহমদ ও আবু ইয়ালা বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসের সারমর্ম হল, নবী (ﷺ) বলেছেন, কোন ব্যক্তির যখন নজর লাগে তখন এত বেশি প্রভাবিত হয় যে, সে যেন কোন উঁচু স্থানে চড়ল অতঃপর কোন নজর দ্বারা হঠাৎ করে নীচে পড়ে গেল। (শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেনঃ ৮৮৯)

৬. ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ
العَيْنُ حَقٌّ تَسْتَنْزِلُ الْحَالِقَ
অর্থঃ বদ নজর 'সত্য তা যেন মানুষকে উপর থেকে নীচে ফেলে দেয়।

৭. জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
الْعَيْنُ تَدْخُلُ الرَّجُلَ القَبْرَ، وَتَدْخُلَ الْجَمَلَ القِدْرِ
অর্থঃ বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌছে দেয় এবং উটকে পাতিলে। (সহীহ আল জামেঃ শাইখ আলবানী (রহঃ) সহীহ বলেছেনঃ ১২৪৯)

অর্থাৎ মানুষের নজর লাগায় সে মৃত্যুবরণ করে, যার ফলে তাকে কবরে দাফন করা হয়। আর উটকে যখন বদ নজর লাগে তখন তা মৃত্যু পর্যায়ে পৌছে যায় তখন সেটা যবাই করে পাতিলে পাকানো হয়।

৮. জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ
أَكْثَرُ مَنْ يَمُوتُ مِنْ أُمَّتِى بَعْدَ قَضَاءِ اللّٰهِ وَقَدَرِهِ بِالْعَيْنِ
অর্থঃ আমার উম্মতের মধ্যে তাক্বদীরের মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃতু বদ নজর লাগার দ্বারা হবে। (বুখারী)

৯. আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) আমাকে বদ নজর থেকে বাঁচার জন্যে ঝাড়-ফুঁক করার নির্দেশ দিতেন। (বুখারীঃ ১০/১৭০, মুসলিমঃ ২১৯৫)

১০. আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) নজর থেকে হেফাযত ও বিষাক্ত প্রাণীর দংশন ও ক্ষত বিশিষ্ট রোগ থেকে রক্ষার জন্যে ঝাড়ফুঁকের অনুমতি প্রদান করেছেন। (মুসলিমঃ ২১৯৬)

১১. উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) তার ঘরে এক মেয়ে শিশুর চেহারায় দাগ দেখে তিনি বলেছেন যে, তার চেহারায় বদ নজরের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাকে ঝাড়ফুঁক করাও। (বুখারীঃ ১/১৭১, মুসলিমঃ ৯৭)

১২. জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) আলে হাযমকে সাপে দংশিত ব্যক্তির ঝাড়ফুঁকের অনুমতি প্রদান করেছেন। আর আসমা বিনতে উমাইসকে বললেন, কি ব্যাপার আমার ভাইয়ের সান্তানদেরকে দুর্বল দেখছি, তাদের কি কিছু হয়েছে? আসমা (রাঃ) বললেন না, কিছু হয়নি তবে বদ নজর তাদেরকে দ্রুত লেগে যায়। রাসূল (ﷺ) বললেন, তাদেরকে ঝাড়-ফুঁক করাও অতঃপর তাকে তাঁর সামনে নিয়ে আসা হলোঃ তিনি বলেন, তাদেরকে ঝাড়-ফুঁক কর। (ইমাম মুসলিম রেওয়ায়েত করেছেনঃ ২১৯৮)
 
Top