- Awards
- 14
- Credit
- 416
- Thread starter
- #1
সুন্নাহ অনুসরণে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর অবস্থান
ইমাম চথুষ্টয়ের প্রথম হলেন ইমাম আবূ হানীফা (৮০-১৫০ হিঃ) (রহ.)। সুন্নাহ অনুসরণে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর অবস্থান সম্পর্কে
তাঁর শিষ্যগণ তাঁর একাধিক বক্তব্য বর্ণনা করেন, সকল বক্তব্যের মূল কথা হল ইমামদের সুন্নাহ পরিপন্থী মতামতের তাকলীদ (অন্ধ অনুসরণ) বর্জন করে সহীহ হাদীস বা সুন্নাহ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
এ প্রসঙ্গে ইমাম সাহেবের কয়েকটি মূল্যবান বক্তব্য নিম্নে প্রদত্ত হলো :
১। ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন :
“কোন বিষয়ে যখন সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে, জেনে রেখ সেটাই (সহীহ হাদীসই) আমার মাযহাব বা মত ও পথ"
ইমাম সাহেবের এ বক্তব্য সহীহ সনদে প্রমাণিত, তাঁর এ বক্তব্য তাঁর সততা, জ্ঞানের সচ্ছতা এবং আল্লাহভীরুতার এক জলন্ত প্রমাণ। এ কথায় প্রমাণিত হয় যে, তিনি নিজেও সহীহ হাদীস পরিপন্থী কোন কথা ও কাজে অটল থাকতে চাননি এবং কোন অনুসারীকে তা পালনে সম্মতিও দেননি।
বরং যে যুগে ও যে স্থানে সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে তাহাই ইমামের মত ও পথ বলে ঘোষণা দিয়ে সহীহ হাদীস বিরোধী কথা ও কাজ বর্জনের
নির্দেশ জারি করেন। তাঁর একথায় প্রমাণিত হয় যে, সত্যিই তিনি হক্ব ইমাম ছিলেন এবং জীবনে ও মরণে সর্বদায় হজ্ব গ্রহণ করেছেন। তাই প্রচলিত মাযহাবের সহীহ হাদীস বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য কখনও ইমাম সাহেবকে দোষারূপ করা সমিচিন হবে না। বরং ইমাম সাহেবের এ হক্ বক্তব্য গ্রহণ না করে প্রচলিত মাযহাবের সহীহ হাদীস বিরোধী কথা ও কাজ ইমাম সাহেবের নামে প্রচার করে তা পালনীয় অপরিহার্য ফাতুয়া দিয়ে মাযহাবপন্থী আলিমরাই ইমাম আবূ হানীফার (রহ.) উপর যুলম করেছেন। ইমাম সাহেব সহীহ হাদীস বিরোধী কর্মকাণ্ড হতে মুক্ত হতে চাইলেও গোঁড়া মাযহাবপন্থীরা তাঁকে মুক্ত হতে দিতে চায় না। আল্লাহ ইমাম সাহেবকে যেরূপ হেদায়াত দিয়েছেন, মাযহাবপন্থীদেরও সেরূপ হেদায়াত দান
করুন। আমীন!
ইমাম সাহেব যেহেতু রাসূল হতে অধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীদের কাছে দীর্ঘদিন হাদীস শিক্ষার সুযোগ পান নি এবং সে যুগে প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থগুলিও সংকলণ হয়নি। তাই ইমাম সাহেবের এরূপ বক্তব্য সঠিক ও বাস্তব হওয়াই যুক্তি যুক্ত, কারণ হলো : তিনি রাসূল (ﷺ) হতে অধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীদের কাছে দীর্ঘদিন হাদীস শিক্ষার সুযোগ পাননি।
দ্বিতীয় কারণ হলো তাঁর যুগে প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থগুলিও সংকলিত হয়নি, যেমন সহীহ বুখারীর সংকলক ইমাম বুখারী (রহ.) জন্ম লাভ করেন ১৯৪ হিঃ । সহীহ মুসলিমের সংকলক ইমাম মুসলিম (রহ.) জন্ম লাভ করেন ২০৩ হি:, এমনিভাবে ইমাম আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ (রাহিমাহুমুল্লাহ) ইত্যাদি সকলেই ইমাম আবূ হানীফার (রহ.) মৃত্যুর ৪৪ বছর ও তারও পরে জন্ম গ্রহণ করেন, অত:পর তারা তাদের হাদীস গ্রন্থসমূহ সংকলণ করেন। তাই ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর শুভকামনা এই যে, এমন একদিন আসবে যেদিন হাদীস সংকলণ হবে, যঈফ (দূর্বল) হাদীস হতে সহীহ হাদীস চিহ্নিত হয়ে যাবে, তখন আর দূর্বল হাদীসের সমাদর থাকবেনা। সহীহ হাদীস উপস্থিত হলে ঈমানী দাবী হিসাবে শুধুমাত্র সহীহ হাদীসকেই আকঁড়ে ধরতে হবে। এ চিন্তা চেতনার আলোকেই তাঁর অমীয় বাণী “কোন বিষয়ে যখন সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে, জেনে রেখ সেটাই (সহীহ হদীসই) আমার মাযহাব বা মত ও পথ।”
২। ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন :
“আমরা আমাদের কথাগুলি কোন্ দলীল হতে গ্রহণ করেছি ইহা অবগত হওয়া ছাড়া আমাদের কথা বা ফাতাওয়া গ্রহণ করা কারো জন্য
বৈধ নয়"
অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “যে ব্যক্তি আমার দলীল অবগত নয়, তার পক্ষে আমার কথা অনুযায়ী ফতুয়া দেয়া সম্পূর্ণ হারাম।” এর সাথে অন্য বর্ণনায় বর্ধিত অংশ হল: “আমরা সাধারণ মানুষ আজকে এক ফাতাওয়া দেই, আবার আমীকাল তা প্রত্যাহার করে থাকি।”
অন্য বর্ণনায় রয়েছে। তিনি স্বীয় শিষ্য ইয়াকূব ইমাম আবূ ইউসুফ কে বলেন : “সাবধান তুমি আমার কাছে যা কিছুই শুন, সবই লিখ না, কারণ আমি আজ এক সিদ্ধান্ত নেই, আবার আগামীকাল তা প্রত্যাখ্যান করি । আবার আগামীকাল এক ফাতাওয়া বা সিদ্ধান্ত নেই, তার পরের দিন
তা প্রত্যাখ্যান করি।”
আলোচ্য বক্তব্য হতে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম সাহেব দলীল ভিত্তিক ফাতওয়া প্রদানে সচেষ্ট ছিলেন। প্রয়োজনের তাগীদে কোন বিষয়ে কিয়াসের আলোকে ফাতওয়া দিলেও দলীল বিহীন ও কিয়াস ভিত্তিক ফাতওয়া অনুযায়ী অন্যকে ফাতওয়া প্রদানের অনুমতি দেন নি, বরং হারাম করে দিয়েছেন। এসব প্রমাণ করে যে, প্রচলিত হানাফী মাযহাবের সহীহ হাদীস পরিপন্থী ইমামের নামে ফাতওয়া সমূহ প্রচার প্রসার করা না জায়েয ও হারাম। কারণ এ সমস্ত সহীহ হাদীস বিরোধী মাসায়েল প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয় এবং ইমাম সাহেবের প্রতি মানুষের অশ্রদ্ধার সুযোগ করে দেয়া হয়, অথচ ইমাম সাহেব (র:) এক্ষেত্রে কতইনা সতর্ক ও সচেতন।
ইমাম আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (র:) কতইনা সুন্দর কথা বলেছেন: “ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর যে সমস্ত কথা সহীহ হাদীস বিরোধী পাওয়া যায় সেগুলোর ক্ষেত্রে যদি ইমামের এরূপই অবস্থান হয়, অর্থাৎ তিনি সহীহ দাহীস পেয়েও ইচ্ছাকৃত ভাবে এরূপ ফাতাওয়া প্রদান করেননি, বরং না পাওয়া অবস্থায় এরূপ ফাতওয়া প্রদান করেছেন।
এটা অবশ্যই ইমাম সাহেবের গ্রহণযোগ্য ওজর। কারণ আল্লাহ তা'আলা সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেননি। সুতরাং ইমাম সাহেবকে দোষারূপ করা কখনও জায়েয হবে না। বরং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভাল আচরণ প্রদর্শন করতে হবে, কেননা তিনি মুসলমানদের ঐসব ইমামদের অন্যতম যারা দ্বীনের জন্য অবদান রেখেছেন। বরং অপরাধ ও অবৈধ কর্মে লিপ্ত হয়েছে তারা যারা ইমামের সহীহ হাদীস বিরোধী কথাগুলো কোঠর ভাবে আঁকড়ে ধরে অথচ এগুলো ইমামের মাযহাব নয়। কারণ সহীহ হাদীসই হল তাঁর মাযহাব। অতএব ইমাম সাহেব হলেন এক প্রান্তে, আর ঐসব অনুসারীরা হল আরেক প্রান্তে।”
৩। ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন :
“আমি যদি এমন কথা বলি যা আল্লাহ তা'আলার কিতাব কুরআন এবং রাসূল এর হাদীসের বিপরীত বা পরিপন্থী হয়, তখন আমার
কথাকে বর্জন কর (কুরআন ও হাদীসকে আঁকড়ে ধর)।"
যিনি ইমামুল মুসলিমিন তিনি কিভাবেই বা বলতে পারেন যে, কুরআন ও হাদীস ছেড়ে আমার কথাকেই আঁকড়ে ধর। অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অগ্রে কোন কিছু প্রাধান্য দিও না, আর আল্লাহকে ভয় কর।"
অতএব আল্লাহ ভীরু ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) অবশ্যই বলবেন যে, কুরআন ও হাদীস গ্রহণ কর এবং আমার কথা বর্জন কর। কিন্তু দুঃখের
বিষয় হল তথা কথিত হানাফী মাযহাব অনুসারী ভাইয়েরা ইমাম আবূ হানীফার (রহ.) দুহাই দিয়ে সহীহ হাদীস বিরোধী ফাওয়া আঁকড়ে ধরতে বদ্ধপরিকর। আল্লাহ আমাদের সকল গোঁড়ামী বর্জন করে কুরআন ও সহীহ হদীসের অনুসারী হওয়ার তাওফীক দান করুন! কোন ব্যক্তির
অন্ধ অনুসারী না হয়ে ইমাম আবূ হানীফার (রহ.) নির্দেশ ও উপদেশ অনুযায়ী কুরআন ও সহীহ হাদীস আঁকড়ে ধরার তাওফীক দান করুন!
আমীন!
৪। ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন :
“ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর সকল অনুসারীরা একমত যে, ইমাম আবূ হানীফার মত হল: যঈফ (দূর্বল ) হাদীস তাঁর কাছে কিয়াস ও অভিমতের চেয়েও অনেক উত্তম।”১৬১ কিয়াস ও অভিমতের চেয়ে যদি যঈফ হাদীস উত্তম ও প্রাধান্য যোগ্য হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে কিয়াস ও অভিমতের বিপরীত সহীহ হাদীস পেলে তা মানা অপরিহার্য ফরয। এবং সহীহ হাদীস পেলে কিয়াস ও অভিমত বর্জন করাও ফরয।
৫। ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন :
“সাবধান! তোমরা আল্লাহর দ্বীনে নিজেদের অভিমত প্রয়োগ করা হতে বিরত থাক। সকল অবস্থাতেই সুন্নাহর অনুসরণ কর। যে ব্যক্তি সুন্নাহ হতে বের হবে সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
ইমাম সাহেবের এ বক্তব্য মানুষের হিদায়াত ও পথভ্রষ্টতার মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করে। অর্থাৎ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে থাকাই হল হিদায়াত। (১১১ ইবনুল কাইয়্যিম ই'লুল মুয়ারিঈন- ১/৮২ ১০২ শা'রানী- মীযানে কুবরা-১/৯ পৃঃ। আর সুন্নাহ বর্জন করে কোন ব্যক্তি, দল, তারীকা ও মাযহাবের অনুসরণ করাই হল পথভ্রষ্টতা। ইমাম সাহেবের এ বক্তব্যের পরও কিভাবে তাঁর দুহাই দিয়ে সহীহ হাদীসকে বর্জন করে মাযহাবী গোঁড়ামির আশ্রয় নিয়ে থাকে? আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দান করুন এবং সকল মত ও পথ বর্জন করে শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণের তাওফীক দান করুন! আমীন!
শায়খ আলবানী (রহ.) সিফাতু সালাতিন নাবী ৪৭,৪৮ পূঃ। | আল ফুলানী- ইকাযুল সূরা আল হুজরাত- আয়াত ১ ইবনু আব্দিল বার আল ইনতিকা গ্রন্থে ১৪৫ পৃ:, ইলামুল মুয়া'কিঈন- ২/৩০৯ পৃ: ইবনু আবিদিন আল বাহর আল রয়িক এর হাশিয়ায়-৬/২৯৩ পৃ: আশারানী- আল মিযান- ১/৫৫ পৃ:। শায়খ আল ফুলানী- ইকাফুল হিমাম- ৫২ পৃ: ইমাম যুফার হতে সহীহ সনদে প্রমাণিত। শায়খ আলবানী (রহ.) সিফাতু সালাতিন্নবী, ইবনু আ'বিদীন আল বাহর আর রায়িক এর হাশিয়ায়-১/৩৬ পৃঃ, এবং রাসমুল মুফতী-১/৪ পৃ:। শাইখ সালিহ আল ফুগানী- ইকাফুল হিয়াম-৬২
ইমাম চথুষ্টয়ের প্রথম হলেন ইমাম আবূ হানীফা (৮০-১৫০ হিঃ) (রহ.)। সুন্নাহ অনুসরণে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর অবস্থান সম্পর্কে
তাঁর শিষ্যগণ তাঁর একাধিক বক্তব্য বর্ণনা করেন, সকল বক্তব্যের মূল কথা হল ইমামদের সুন্নাহ পরিপন্থী মতামতের তাকলীদ (অন্ধ অনুসরণ) বর্জন করে সহীহ হাদীস বা সুন্নাহ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
এ প্রসঙ্গে ইমাম সাহেবের কয়েকটি মূল্যবান বক্তব্য নিম্নে প্রদত্ত হলো :
১। ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন :
إذا صح الحديث فهو مذهبي
“কোন বিষয়ে যখন সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে, জেনে রেখ সেটাই (সহীহ হাদীসই) আমার মাযহাব বা মত ও পথ"
ইমাম সাহেবের এ বক্তব্য সহীহ সনদে প্রমাণিত, তাঁর এ বক্তব্য তাঁর সততা, জ্ঞানের সচ্ছতা এবং আল্লাহভীরুতার এক জলন্ত প্রমাণ। এ কথায় প্রমাণিত হয় যে, তিনি নিজেও সহীহ হাদীস পরিপন্থী কোন কথা ও কাজে অটল থাকতে চাননি এবং কোন অনুসারীকে তা পালনে সম্মতিও দেননি।
বরং যে যুগে ও যে স্থানে সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে তাহাই ইমামের মত ও পথ বলে ঘোষণা দিয়ে সহীহ হাদীস বিরোধী কথা ও কাজ বর্জনের
নির্দেশ জারি করেন। তাঁর একথায় প্রমাণিত হয় যে, সত্যিই তিনি হক্ব ইমাম ছিলেন এবং জীবনে ও মরণে সর্বদায় হজ্ব গ্রহণ করেছেন। তাই প্রচলিত মাযহাবের সহীহ হাদীস বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য কখনও ইমাম সাহেবকে দোষারূপ করা সমিচিন হবে না। বরং ইমাম সাহেবের এ হক্ বক্তব্য গ্রহণ না করে প্রচলিত মাযহাবের সহীহ হাদীস বিরোধী কথা ও কাজ ইমাম সাহেবের নামে প্রচার করে তা পালনীয় অপরিহার্য ফাতুয়া দিয়ে মাযহাবপন্থী আলিমরাই ইমাম আবূ হানীফার (রহ.) উপর যুলম করেছেন। ইমাম সাহেব সহীহ হাদীস বিরোধী কর্মকাণ্ড হতে মুক্ত হতে চাইলেও গোঁড়া মাযহাবপন্থীরা তাঁকে মুক্ত হতে দিতে চায় না। আল্লাহ ইমাম সাহেবকে যেরূপ হেদায়াত দিয়েছেন, মাযহাবপন্থীদেরও সেরূপ হেদায়াত দান
করুন। আমীন!
ইমাম সাহেব যেহেতু রাসূল হতে অধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীদের কাছে দীর্ঘদিন হাদীস শিক্ষার সুযোগ পান নি এবং সে যুগে প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থগুলিও সংকলণ হয়নি। তাই ইমাম সাহেবের এরূপ বক্তব্য সঠিক ও বাস্তব হওয়াই যুক্তি যুক্ত, কারণ হলো : তিনি রাসূল (ﷺ) হতে অধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীদের কাছে দীর্ঘদিন হাদীস শিক্ষার সুযোগ পাননি।
দ্বিতীয় কারণ হলো তাঁর যুগে প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থগুলিও সংকলিত হয়নি, যেমন সহীহ বুখারীর সংকলক ইমাম বুখারী (রহ.) জন্ম লাভ করেন ১৯৪ হিঃ । সহীহ মুসলিমের সংকলক ইমাম মুসলিম (রহ.) জন্ম লাভ করেন ২০৩ হি:, এমনিভাবে ইমাম আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ (রাহিমাহুমুল্লাহ) ইত্যাদি সকলেই ইমাম আবূ হানীফার (রহ.) মৃত্যুর ৪৪ বছর ও তারও পরে জন্ম গ্রহণ করেন, অত:পর তারা তাদের হাদীস গ্রন্থসমূহ সংকলণ করেন। তাই ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর শুভকামনা এই যে, এমন একদিন আসবে যেদিন হাদীস সংকলণ হবে, যঈফ (দূর্বল) হাদীস হতে সহীহ হাদীস চিহ্নিত হয়ে যাবে, তখন আর দূর্বল হাদীসের সমাদর থাকবেনা। সহীহ হাদীস উপস্থিত হলে ঈমানী দাবী হিসাবে শুধুমাত্র সহীহ হাদীসকেই আকঁড়ে ধরতে হবে। এ চিন্তা চেতনার আলোকেই তাঁর অমীয় বাণী “কোন বিষয়ে যখন সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে, জেনে রেখ সেটাই (সহীহ হদীসই) আমার মাযহাব বা মত ও পথ।”
২। ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন :
"لا يحل لأحد أن يأخذ بقولنا ما لم يعلم من أين أخذناه" وفي روايـة : حرام على من لم يعرف ذليلي أن يفتى بكلامي" وزاد في رواية : "فإننا بشر، تقول والقول اليوم وترجع عنه غدا" وفي أخري : "ويحك يا يعقوب ! (هو أبو يوسف) لا تكتب كل ما تسمع مني، فإني قد أرى الرأي اليوم وأثركه غـدا وأرى الرأي غدا وأتركه بعد غد"
“আমরা আমাদের কথাগুলি কোন্ দলীল হতে গ্রহণ করেছি ইহা অবগত হওয়া ছাড়া আমাদের কথা বা ফাতাওয়া গ্রহণ করা কারো জন্য
বৈধ নয়"
অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “যে ব্যক্তি আমার দলীল অবগত নয়, তার পক্ষে আমার কথা অনুযায়ী ফতুয়া দেয়া সম্পূর্ণ হারাম।” এর সাথে অন্য বর্ণনায় বর্ধিত অংশ হল: “আমরা সাধারণ মানুষ আজকে এক ফাতাওয়া দেই, আবার আমীকাল তা প্রত্যাহার করে থাকি।”
অন্য বর্ণনায় রয়েছে। তিনি স্বীয় শিষ্য ইয়াকূব ইমাম আবূ ইউসুফ কে বলেন : “সাবধান তুমি আমার কাছে যা কিছুই শুন, সবই লিখ না, কারণ আমি আজ এক সিদ্ধান্ত নেই, আবার আগামীকাল তা প্রত্যাখ্যান করি । আবার আগামীকাল এক ফাতাওয়া বা সিদ্ধান্ত নেই, তার পরের দিন
তা প্রত্যাখ্যান করি।”
আলোচ্য বক্তব্য হতে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম সাহেব দলীল ভিত্তিক ফাতওয়া প্রদানে সচেষ্ট ছিলেন। প্রয়োজনের তাগীদে কোন বিষয়ে কিয়াসের আলোকে ফাতওয়া দিলেও দলীল বিহীন ও কিয়াস ভিত্তিক ফাতওয়া অনুযায়ী অন্যকে ফাতওয়া প্রদানের অনুমতি দেন নি, বরং হারাম করে দিয়েছেন। এসব প্রমাণ করে যে, প্রচলিত হানাফী মাযহাবের সহীহ হাদীস পরিপন্থী ইমামের নামে ফাতওয়া সমূহ প্রচার প্রসার করা না জায়েয ও হারাম। কারণ এ সমস্ত সহীহ হাদীস বিরোধী মাসায়েল প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয় এবং ইমাম সাহেবের প্রতি মানুষের অশ্রদ্ধার সুযোগ করে দেয়া হয়, অথচ ইমাম সাহেব (র:) এক্ষেত্রে কতইনা সতর্ক ও সচেতন।
ইমাম আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (র:) কতইনা সুন্দর কথা বলেছেন: “ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর যে সমস্ত কথা সহীহ হাদীস বিরোধী পাওয়া যায় সেগুলোর ক্ষেত্রে যদি ইমামের এরূপই অবস্থান হয়, অর্থাৎ তিনি সহীহ দাহীস পেয়েও ইচ্ছাকৃত ভাবে এরূপ ফাতাওয়া প্রদান করেননি, বরং না পাওয়া অবস্থায় এরূপ ফাতওয়া প্রদান করেছেন।
এটা অবশ্যই ইমাম সাহেবের গ্রহণযোগ্য ওজর। কারণ আল্লাহ তা'আলা সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেননি। সুতরাং ইমাম সাহেবকে দোষারূপ করা কখনও জায়েয হবে না। বরং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভাল আচরণ প্রদর্শন করতে হবে, কেননা তিনি মুসলমানদের ঐসব ইমামদের অন্যতম যারা দ্বীনের জন্য অবদান রেখেছেন। বরং অপরাধ ও অবৈধ কর্মে লিপ্ত হয়েছে তারা যারা ইমামের সহীহ হাদীস বিরোধী কথাগুলো কোঠর ভাবে আঁকড়ে ধরে অথচ এগুলো ইমামের মাযহাব নয়। কারণ সহীহ হাদীসই হল তাঁর মাযহাব। অতএব ইমাম সাহেব হলেন এক প্রান্তে, আর ঐসব অনুসারীরা হল আরেক প্রান্তে।”
৩। ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন :
"إذا قلت قولا يخالف كتاب الله تعالى وخبر الرسول ﷺ فائركوا قولي
“আমি যদি এমন কথা বলি যা আল্লাহ তা'আলার কিতাব কুরআন এবং রাসূল এর হাদীসের বিপরীত বা পরিপন্থী হয়, তখন আমার
কথাকে বর্জন কর (কুরআন ও হাদীসকে আঁকড়ে ধর)।"
যিনি ইমামুল মুসলিমিন তিনি কিভাবেই বা বলতে পারেন যে, কুরআন ও হাদীস ছেড়ে আমার কথাকেই আঁকড়ে ধর। অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেন:
يا أيها الذين آمنوا لا تقدموا بين يدي الله ورسوله واتقوا الله
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অগ্রে কোন কিছু প্রাধান্য দিও না, আর আল্লাহকে ভয় কর।"
অতএব আল্লাহ ভীরু ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) অবশ্যই বলবেন যে, কুরআন ও হাদীস গ্রহণ কর এবং আমার কথা বর্জন কর। কিন্তু দুঃখের
বিষয় হল তথা কথিত হানাফী মাযহাব অনুসারী ভাইয়েরা ইমাম আবূ হানীফার (রহ.) দুহাই দিয়ে সহীহ হাদীস বিরোধী ফাওয়া আঁকড়ে ধরতে বদ্ধপরিকর। আল্লাহ আমাদের সকল গোঁড়ামী বর্জন করে কুরআন ও সহীহ হদীসের অনুসারী হওয়ার তাওফীক দান করুন! কোন ব্যক্তির
অন্ধ অনুসারী না হয়ে ইমাম আবূ হানীফার (রহ.) নির্দেশ ও উপদেশ অনুযায়ী কুরআন ও সহীহ হাদীস আঁকড়ে ধরার তাওফীক দান করুন!
আমীন!
৪। ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন :
"وأصحاب أبي حنيفة رحمه الله مجمعون على أن مذهب أبي حنيفة أن ضعيف الحديث عنده أولى من القياس والرأي"
“ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর সকল অনুসারীরা একমত যে, ইমাম আবূ হানীফার মত হল: যঈফ (দূর্বল ) হাদীস তাঁর কাছে কিয়াস ও অভিমতের চেয়েও অনেক উত্তম।”১৬১ কিয়াস ও অভিমতের চেয়ে যদি যঈফ হাদীস উত্তম ও প্রাধান্য যোগ্য হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে কিয়াস ও অভিমতের বিপরীত সহীহ হাদীস পেলে তা মানা অপরিহার্য ফরয। এবং সহীহ হাদীস পেলে কিয়াস ও অভিমত বর্জন করাও ফরয।
৫। ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেন :
إياكم والقول في دين الله بالرائ، وعليكم باتباع السنة، فمن خرج عنها ضل
“সাবধান! তোমরা আল্লাহর দ্বীনে নিজেদের অভিমত প্রয়োগ করা হতে বিরত থাক। সকল অবস্থাতেই সুন্নাহর অনুসরণ কর। যে ব্যক্তি সুন্নাহ হতে বের হবে সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
ইমাম সাহেবের এ বক্তব্য মানুষের হিদায়াত ও পথভ্রষ্টতার মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করে। অর্থাৎ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে থাকাই হল হিদায়াত। (১১১ ইবনুল কাইয়্যিম ই'লুল মুয়ারিঈন- ১/৮২ ১০২ শা'রানী- মীযানে কুবরা-১/৯ পৃঃ। আর সুন্নাহ বর্জন করে কোন ব্যক্তি, দল, তারীকা ও মাযহাবের অনুসরণ করাই হল পথভ্রষ্টতা। ইমাম সাহেবের এ বক্তব্যের পরও কিভাবে তাঁর দুহাই দিয়ে সহীহ হাদীসকে বর্জন করে মাযহাবী গোঁড়ামির আশ্রয় নিয়ে থাকে? আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দান করুন এবং সকল মত ও পথ বর্জন করে শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণের তাওফীক দান করুন! আমীন!
শায়খ আলবানী (রহ.) সিফাতু সালাতিন নাবী ৪৭,৪৮ পূঃ। | আল ফুলানী- ইকাযুল সূরা আল হুজরাত- আয়াত ১ ইবনু আব্দিল বার আল ইনতিকা গ্রন্থে ১৪৫ পৃ:, ইলামুল মুয়া'কিঈন- ২/৩০৯ পৃ: ইবনু আবিদিন আল বাহর আল রয়িক এর হাশিয়ায়-৬/২৯৩ পৃ: আশারানী- আল মিযান- ১/৫৫ পৃ:। শায়খ আল ফুলানী- ইকাফুল হিমাম- ৫২ পৃ: ইমাম যুফার হতে সহীহ সনদে প্রমাণিত। শায়খ আলবানী (রহ.) সিফাতু সালাতিন্নবী, ইবনু আ'বিদীন আল বাহর আর রায়িক এর হাশিয়ায়-১/৩৬ পৃঃ, এবং রাসমুল মুফতী-১/৪ পৃ:। শাইখ সালিহ আল ফুগানী- ইকাফুল হিয়াম-৬২
কিতাব: সুন্নতে রাসুল ও চার ইমামের অবস্থান
আবু আব্দুল্লাহ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
আবু আব্দুল্লাহ শহীদুল্লাহ খান মাদানী