Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
❏ তৃতীয় ধাপ: শয়তানের নিকট থেকে সাহাবি ইলম নিয়েছেন মর্মে উত্থাপিত সংশয়ের জবাব
বক্তা আবু ত্বহা আদনান— শয়তান কর্তৃক আয়াতুল কুরসির মাহাত্ম্য বর্ণনার হাদিসটি দিয়ে নিজের বাতিল কথার পক্ষে দলিল দিয়েছেন। যে হাদিসে বলা হয়েছে, শয়তান আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে রাতের বেলা আয়াতুল কুরসি পাঠের মর্যাদা বর্ণনা করেছিল। সেই আমল আজও জারি আছে মুসলিম সমাজে। যেহেতু নবিজি উক্ত আমল-সংক্রান্ত ইলমের ব্যাপারে সায় দিয়েছিলেন। সুতরাং শয়তানের নিকট থেকে ইলম নেওয়া গেলে ইসলামপন্থি সকল দলের লোকদের থেকে ইলম নেওয়া যাবে!
আমরা উক্ত সংশয়ের জবাব দেওয়া আগে ঘটনাটির সারসংক্ষেপ বলে নিই। একবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যাকাতুল ফিতরের মাল পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরপর তিন রাতে শয়তান মানুষের রূপ ধরে সেই মাল চুরি করতে এসে আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে ধৃত হয়েছিল। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে প্রতিবারই সে অনেক অনুনয়-বিনয় করে এবং বলে যে, ‘আমি খুবই দরিদ্র।’ শেষদিন আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন তাকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যেতে চান, তখন সে বলে, ‘আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব, যা দিয়ে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন।’ আবু হুরাইরা বললেন, ‘সেটা কী?’ শয়তান বলল, ‘যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। এতে করে আল্লাহর তরফ থেকে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ ফলে তিনি তাকে ছেড়ে দেন। পরদিন সকালে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষয়টি জানালে তিনি বললেন, “সাবধান! এ কথা সে তোমাকে সত্য বলেছে বটে, কিন্তু সে মহামিথ্যুক (أَمَا إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ)।” [সহিহ বুখারি, হা: ২৩১১]
বিদাতিদের নিকট ইলম নেওয়াকে বৈধ জ্ঞানকারী ব্যক্তিবর্গ এই হাদিস থেকে দলিলগ্রহণ করে বলে, আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু শয়তানের নিকট থেকে ইলম নিয়েছেন। সুতরাং বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম নেওয়া জায়েজ।
আমরা বলছি, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু শয়তানের নিকট থেকে ইলম নিয়েছেন, এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ সাহাবি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু শয়তানের কথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই কথার সত্যায়ন করার পরই তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সরাসরি শয়তানের কথা শুনে তার ওপর আমল করা শুরু করে দেননি। এছাড়াও তাদের এই দলিলগ্রহণ যে বাতিল, তা উম্মাহর শ্রেষ্ঠ আলিমগণও বলেছেন।
আলিমগণের বক্তব্য: ❝শয়তানের সাথে সাহাবি আবু হুরাইরার ঘটনায় কি বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম গ্রহণের দলিল রয়েছে?❞
১ম বক্তব্য: যুগশ্রেষ্ঠ ফাকিহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহকে (মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.) প্রশ্ন করা হয়, “শয়তানের সাথে আবু হুরাইরার ঘটনা থেকে কি এই দলিল গৃহীত হবে যে, কাফির বা বিদাতিও যদি হক নিয়ে আসে তাহলে তা গ্রহণ করতে হবে এবং তার কথা সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে রদ করা যাবে না?” শাইখ জবাবে বলেন, “আবু হুরাইরা কল্যাণের অভিলাষী ছিলেন। অনুরূপভাবে অন্যান্য সাহাবিগণও এরূপ ছিলেন। তিনি কথাটি তখনই গ্রহণ করেছিলেন, যখন তিনি তা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন এবং নবিজি সে কথাটি সত্যায়ন করেছিলেন।”
প্রশ্নকারী পুনরায় বলেন, “আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে কাফির বা বিদাতির নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করার ইস্যু।” শাইখ জবাব দেন, “এটি... ভিন্ন বিষয়। কেননা এই দলিলে আবু হুরাইরা (শয়তানের) কথাটি কেবল তখনই গ্রহণ করেছিলেন, যখন তিনি তা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন এবং নবিজি ওই মহান আয়াতটির ব্যাপারে সে কথা সত্যায়ন করেছিলেন।” [দ্র.: https://tinyurl(ডট)com/y9nnrpmx; শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট– binbaz(ডট)org(ডট)sa এর আর্টিকেল লিংক]
·
২য় বক্তব্য: ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—
৩য় বক্তব্য: প্রখ্যাত ফাকিহ ও মুহাদ্দিস, আশ-শাইখুল আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সায়িদ রাসলান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৯৫৫ খ্রি.) বলেছেন,
এই ধাপের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো, বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম নেওয়ার ব্যাপারে আবু ত্বহা আদনানের ব্যক্তীকৃত বাতিল মূলনীতির পক্ষে আদনান সাহেব যে দলিল দিয়েছেন, সেটার প্রয়োগও অসার ও বাতিল সাব্যস্ত হলো। আল্লাহুল মুস্তাআন।
চতুর্থ ধাপ: বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া ও লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে উলামাদের বক্তব্য
আমরা বক্ষ্যমাণ পরিচ্ছেদের প্রারম্ভেই দেখেছি, আবু ত্বহা আদনান বিদাতিদের বইপুস্তক পড়তে উৎসাহিত করেন এবং কুফরি দর্শনের বইপত্র পড়ার নির্দেশনা দেন। জনগণকে যে কোনো তাফসিরের বই পড়তে বলেন, যেটা তাদের কাছে ভালো লাগে! উদাহরণ হিসেবে বলেন, তাফসিরে ইবনু কাসির, তাফসিরে জালালাইন ও তাফসিরে কাশশাফ। অথচ বহু তাফসির গ্রন্থ আছে, যেগুলো কুখ্যাত বিদাতি মতাদর্শে ভরপুর। যেমন তাফসিরে জালালাইন, তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন, তাফসিরে কাশশাফ, তাফসির ফি যিলালিল কুরআন, তাফহিমুল কুরআন প্রভৃতি। সাধারণ জনগণের জন্য এসব তাফসির পড়ার কোনো বৈধতা নেই। প্রয়োজন ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাজ্ঞ তালিবুল ইলম ও উলামাগণ এসব পড়ার অনুমতি পেতে পারেন।
জ্ঞাতব্য যে, বাংলা ভাষায় তাফসিরে জালালাইনের আকিদাগত ভুল ও তার পর্যালোচনা নিয়ে লিখন-জগতের দিকপাল খ্যাত শাইখ আব্দুল হামিদ ফাইযি মাদানি হাফিযাহুল্লাহর চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ একটি বই আছে, আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন। বইটির নাম— ‘তফসিরে জালালাইন : একটি সমীক্ষা।’ তদ্রুপ ফি যিলালিল কুরআনের আকিদাগত ভুল ও তার পর্যালোচনা নিয়ে প্রখ্যাত নাজদি বিদ্বান আল্লামা আব্দুল্লাহ আদ-দুওয়ায়িশ রাহিমাহুল্লাহর লেখা বই আছে। বইটির নাম— ‘আল-মাওরিদুয যুলাল ফিত তাম্বিহি আলা আখতায়িয যিলাল।’
সাধারণ জনগণ ও তালিবুল ইলমগণ নির্বিঘ্নে পড়তে পারেন, এরকম কয়েকটি সালাফি তাফসিরের নাম বলে দিচ্ছি আমরা। প্রসিদ্ধ কিছু সালাফি তাফসির হচ্ছে— তাফসিরে তাবারি, তাফসিরে বাগাবি, তাফসিরে ইবনু কাসির, তাফসিরে আদওয়াউল বায়ান, তাফসিরে সাদি, তাফসিরে ইবনু উসাইমিন, তাফসিরুল মুইয়াসসার, তাফসিরে আহসানুল বায়ান, দ্য নোবল কুরআন (ইংরেজি) প্রভৃতি। বাংলা ভাষায় অ্যাভেইলেবল এমন কিছু নির্ভরযোগ্য তাফসির— তাফসিরে ইবনু কাসির, তাফসিরুল মুইয়াসসার, তাফসিরে আহসানুল বায়ান, তাফসিরে জাকারিয়া, তাফসিরে ফাতহুল মাজীদ প্রভৃতি।
সুপ্রিয় পাঠক, আরেকটি বিষয়ে ইঙ্গিত না করে পারছি না। আবু ত্বহা আদনান সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সমুদয় তাফসির পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু একবার ভাবুন তো, এতে কি ঐক্য ও সংহতি কায়েম হবে, না সৃষ্টি হবে প্রবল মতবিরোধ? কারণ মওদুদি সাহেব তাঁর তাফহিমুল কুরআনে এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন, যা ফি যিলালিল কুরআনের বিরোধী, আবার মাআরেফুল কুরআনের বহু তাফসির ইমাম ইবনু কাসিরের লেখা তাফসিরের বিরোধী। তদ্রুপ তাফসিরে কাশশাফের অনেক কথাবার্তা বহু বাতিল তাফসিরকাকও মানবেন না। একজন তাফসিরকারক মুতাজিলি ফের্কার প্রচারক, তো আরেকজন আশারি ফের্কার প্রচারক! এভাবে যার যেটা ভালো লাগে এমন তাফসির পড়ে ঐক্য কীরূপে সাধিত হবে, সেটা বোঝা মুশকিল। আপনিই বলুন, এটা কি সুস্থ মস্তিকপ্রসূত কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে?
বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম নেওয়ার নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করে ফেলেছি। এখন আমরা বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া ও লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে সামসময়িক যুগশ্রেষ্ঠ উলামাদের বক্তব্য পেশ করার পরেই চলে যাব বক্তা আদনানের শেষোক্ত বক্তব্যটির পর্যালোচনায় এবং সেখানে আমরা দর্শনের বইপত্র পড়ার বিধান এবং আদনান কর্তৃক উল্লিখিত দার্শনিকদের হালহকিকত বিবৃত করব, ইনশাআল্লাহ। বিদাতিদের বইপত্র পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে সামসময়িক আলিমদের অনেক ফতোয়া রয়েছে। আমরা এখানে আহলুস সুন্নাহর শ্রেষ্ঠ আলিমগণের পাঁচটি ফতোয়া উপস্থাপন করছি।
এক. বিদাতিদের দারসে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.) সুস্পষ্ট ফতোয়া—
السؤال: ما حكم حضور دروس أهل البدع؟
উত্তর: “কেউ যদি বিদাতিদের সাথে (ইলমি) বিতর্ক করার জন্য এবং তাদের কাছে হক ও সঠিক বিষয় তুলে ধরার জন্য তাদের দারসে উপস্থিত হয়, তবে তা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে কেউ যদি তাদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করতে চায়, তবে সে যেন তাদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন না করে। যদিও তা আকিদাহ ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ের জ্ঞান হয়; যদিও সে তাদের কাছে নাহু (আরবি ব্যাকরণশাস্ত্র) ও বালাগাত (অলংকারশাস্ত্র) অধ্যয়ন করে। তুমি তাদের নিকটবর্তী হবে না। কেননা তারা তেলের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দেয় (অর্থাৎ ক্ষতিকর বিষয় আকর্ষণীয় মোড়কে উপস্থাপন করে)। অনুরূপভাবে তুমি যখন তাদের কাছে উপস্থিত হবে, তখন হয়তো তোমার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি ধোঁকায় পতিত হবে। ফলে বলবে, তাদের দারসে উপস্থিত হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।” [ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ, লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ; ১৬২ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: আল-আসার (alathar) ডট নেট]
দুই. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—
উত্তর: “বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে যে ব্যক্তি তাদেরকে রদ করতে চায় এবং তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করতে চায়, তার জন্য জায়েজ আছে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ, আল-আজউয়িবাতুল মুফিদা আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদিদা; পৃষ্ঠা: ৭০; দারুল মিনহাজ (কায়রো) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৪ হিজরি (৩য় প্রকাশ)]
তিন. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ প্রদত্ত আরেকটি ফতোয়া—
উত্তর: “আলহামদুলিল্লাহ, আহলুস সুন্নাহ বিদ্যমান রয়েছে এবং তাদের বইপুস্তকও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু অন্বেষণ ও আগ্রহের প্রয়োজন আছে। তুমি বিদাতিদের ওপর এবং তাদের বইপুস্তকের ওপর নির্ভর কোরো না। তুমি তাদের বইপুস্তকের ওপর নির্ভর কোরো না। কেননা সেগুলো প্রাণঘাতী বিষমিশ্রিত খাদ্যের মতো।” [দ্র.: https://ar(ডট)alnahj(ডট)net/audio/1512.]
·
চার. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল আল্লামা ইমাম আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ আল-বদর হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—
উত্তর: “বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করার জন্য জায়েজ, যাতে করে তা (ভ্রষ্টতা) থেকে সতর্ক থাকা যায়।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=p5G4gb0oEJM (অডিয়ো ক্লিপ)]
·
পাঁচ. মদিনার বিশিষ্ট ফাকিহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসুলবিদ আশ-শাইখুল আল্লামা ইমাম উবাইদ বিন আব্দুল্লাহ আল-জাবিরি হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৭ হি.) বিদাতিদের কিতাব পড়ার তিনটি বিধান বর্ণনা করে বলেছেন, “বিদাতিদের বই পড়ার তিনটি বিধান রয়েছে। যথা:
এক. যে বই বিদাতে পরিপূর্ণ এবং তাতে কোনো সুন্নাহ নেই, যেমন: কুলাইমির ‘উসুলুল কাফি’ এবং রাফিদি শিয়াদের অন্যান্য বই। এমন বই পড়া হারাম। তবে কোনো সামর্থবান আলিম যদি কোনো সম্প্রদায়কে তাদের বই দিয়ে রদ করতে চান (তাহলে জায়েজ)। তোমরা কি শুনেছ? শর্ত হলো দুটি: (১) সামর্থবান আলিম হতে হবে (২) আর তিনি তাদের বই দিয়ে তাদেরকে রদ করার ইচ্ছা করবেন।
দুই. যে বই সুন্নাত ও বিদাত মিশ্রিত। এই বইও সামর্থবান আলিম ছাড়া অন্য কারও জন্য পড়া জায়েজ নয়; এমন আলিম যিনি সহিহ-দয়িফ, ভালো-মন্দ, সুন্নাত-বিদাত প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন। এমন বইয়ের উদাহরণ হলো— যামাখশারির ‘তাফসিরে কাশশাফ।’ যামাখশারি ছিল কট্টর মুতাজিলি, আর ধূর্ত কূটকৌশলী, সে তার মুতাজিলি আকিদা বইয়ে প্রবিষ্ট করত। আলিমদের মধ্যে যারা সামর্থবান, তাঁরা এই বইয়ে উল্লিখিত শব্দার্থ, অলঙ্কারশাস্ত্র, আরবি ভাষার চমৎকার বাক্যবিন্যাস-শাস্ত্র, ভাষাবিজ্ঞান, নাহুশাস্ত্র প্রভৃতি থেকে উপকার লাভ করতে পারেন; যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর কাছে সহিহ-দয়িফ, ভালো-মন্দ, সুন্নাত-বিদাত প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করার সক্ষমতা থাকে।
দুই. যে বই বিদাত থেকে মুক্ত। বইয়ের লেখক বিদাতি, কিন্তু বইয়ে কোনো বিদাত নেই। যেমন কেউ ফিকহশাস্ত্রের বই লিখেছে, পবিত্রতা, ব্যবসাবাণিজ্য প্রভৃতির ক্ষেত্রে বই লিখেছে এবং বইয়ে কোনো বিদাত প্রবিষ্ট করেনি। সে বলে, ‘আমার (অন্য) কোনো ব্যাপার নেই, আমি জীবিকা নির্বাহের জন্য বই লিখি, আমি এই বইয়ের মাধ্যমে রিজিক অন্বেষণ করি।’ সে হয়তো কোনো হাদিসগ্রন্থের অধ্যায়গুলো বিন্যস্ত করে, হাদিসের নম্বর দেয় এবং তাতে কোনো বিদাত প্রবেশ করায় না। যদি কোনো সামর্থবান আলিম এই বই পড়ার পরামর্শ দেন, তাহলে আমিও তোমাকে তা অধ্যয়ন করার পরামর্শ দিই। আর সেই আলিম তোমাকে বলেন যে, ‘অমুক লোকের এই বইয়ে কোনো বিদাত নেই। সেটা আমি পড়েছি এবং নিরীক্ষা করেছি। অমুক বইয়ে কোনো বিদাত নেই।’ তাহলে এই বই পড়ায় কোনো আপত্তি নেই।” [দ্র.: www.ajurry(ডট)com/Kotob-Manhag.htm; গৃহীত: https://tinyurl(ডট)com/yb9qkdzx (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট)]
শেষোক্ত ফতোয়ায় বিদাতিদের বইপুস্তক পড়ার ব্যাপারে তাফসিলি তথা সুবিস্তারিত হুকুম বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আমি পাঠক মহোদয়কে উক্ত ফতোয়ার প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে অনুরোধ করছি। সাধারণ জনগণ ও প্রাথমিক পর্যায়ের তালিবুল ইলমদের জন্য এই ফতোয়া পুরোপুরি প্রযোজ্য হবে। পক্ষান্তরে প্রয়োজন ও যোগ্যতার ভিত্তিতে উলামা ও জ্ঞানবান তালিবুল ইলমদের জন্য বিদাতিদের বইপত্র পড়া জায়েজ হয়ে থাকে, যা আমরা ইতোমধ্যে বলেছি।
❏ পঞ্চম ধাপ: ভ্রান্ত বক্তা আদনান কুফরি-দর্শনের বইপত্র পড়তে উৎসাহপ্রদান
এবার আসি দর্শনের বইপত্র পড়ার বিষয়ে। আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “শাইখ ইমরান নজর হুসাইনেরও ইসলামিক ইকনোমিক্সের ওপর অনেক বই আছে। যেমন দ্য প্রোহিবিশন অফ রিবা, গোল্ড দিনার অ্যান্ড সিলভার দিরহাম, এরকম অনেক বই আছে। ইসলামিক অর্থনীতির ওপর যাদের পড়াশোনা আছে, ওই বইগুলো আপনি পড়েন।... এরপরে যাবেন ইসলামিক ফিলোসফিতে। আপনি ইমাম গাযালির নাম শুনেছেন, ইবনু রুশদের নাম শুনেছেন, ইবনে সিনার নাম শুনেছেন। তাঁদের অনেক ফিলোসফিক্যাল বই আছে। এগুলো বাসায় পড়বেন।” [দেখুন: https://youtu.be/ybmJH9yuudM (৮:৪৭ মিনিট থেকে ৯:২৪ মিনিট]
ইমরান নজর হুসাইন ইন্দো-ত্রিনিদাদিয়ান বংশোদ্ভূত একজন পথভ্রষ্ট ধর্মপ্রচারক, যিনি আমেরিকায় অবস্থান করেন। সানডে অবজারভার পত্রিকার তথ্য মোতাবেক ইমরান নজর সাহেব দশ বছর ধরে আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তরের পাশে জুমার খুতবা দেন! [দ্রষ্টব্য: Wayback Machine http://www.sundayobserver.lk/2003/07/13/new50.html.]
এই মানুষের ভ্রষ্টতার সংখ্যা অনেক। তিনি মনে করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ব্যাখ্যা করেননি, বরং আমাদেরকে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা জেনে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন!
ভ্রষ্টকারী বক্তা ও লেখক ইমরান নজর হুসাইন বলেছেন, “We say to the Salafi, and we’ve been saying it for all this time, all these months in our lectures that, no brother you’re wrong. There are verses from the Quran that could not be understood. Not by the Aslaaf. And Nabi Muhammad alaihe salaam did not provide the explanation, and today we are the ones that have to use knowledge and insight to recognize what Allah is saying. And when we provide that interpretation of the Quran notice my brother salafi that the overwhelming majority of people are accepting our interpretation as correct.
অর্থাৎ আমরা সালাফিদের বলে থাকি এবং আমাদের লেকচারগুলোর মাধ্যমে আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি, ভাইয়েরা, তোমরা ভুলের মধ্যে আছ। কুরআনের এমন কিছু আয়াত আছে, যেগুলো সালাফদের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। আর নবি মুহাম্মাদ আলাইহিস সালাম সেসবের ব্যাখ্যাও দিয়ে যাননি। এজন্য বর্তমান সময়ে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমাদেরকে বুঝে নিতে হবে, আল্লাহ কী বলছেন। সালাফি ভাইয়েরা আমার, ভালোভাবে লক্ষ করুন, আমরা যখন (নিজেদের পক্ষ থেকে) কুরআনের ব্যাখ্যা দিচ্ছি, তখন—অভিভূতকারী এক ব্যাপার পরিলক্ষিত হচ্ছে—সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সঠিক হিসেবে মেনে নিচ্ছে আমাদের ব্যাখ্যাকে।” [দেখুন: https://youtu.be/1zLRrV3W_LY (৫১:০৮ মিনিট থেকে ৫২:০৩ মিনিট)]
কী ভয়ংকর কথা! আল্লাহর পানা চাই এদের মতো বিভ্রান্ত থেকে! সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ তাবেয়িদের অন্যতম ইমাম আবু আব্দুর রহমান আস-সুলামি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, حَدَّثَنَا مَنْ كَانَ يُقْرِئُنَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ، أَنَّهُمْ كَانُوا يَقْتَرِئُونَ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ عَشْرَ آيَاتٍ، فَلَا يَأْخُذُونَ فِي الْعَشْرِ الْأُخْرَى حَتَّى يَعْلَمُوا مَا فِي هَذِهِ مِنَ الْعِلْمِ وَالْعَمَلِ، قَالُوا: فَعَلِمْنَا الْعِلْمَ وَالْعَمَلَ “নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেসব সাহাবি (উসমান বিন আফফান ও ইবনু মাসউদের মতো বিদ্বান সাহাবি) আমাদের কুরআন পড়িয়েছেন, তাঁরা আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে তাঁরা দশটি করে আয়াত শিখতেন। পরবর্তী দশ আয়াত তাঁরা ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করতেন না, যতক্ষণ না তাঁরা জেনে নিতেন, চলতি দশ আয়াতের মধ্যে ইলম ও আমলের কী কী বিষয় রয়েছে। তাঁরা বলেছেন, আমরা ইলম এবং আমল দুটোই শিখেছি।” [মুসনাদু আহমাদ, হা: ২৩৪৮২; খণ্ড: ৩৮; পৃষ্ঠা: ৪৬৬; ইবনু আবি শাইবা, খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৪৬০-৪৬১; সনদ: হাসান (তাহকিক: শুয়াইব আরনাউত)]
সাহাবিরা পুরো কুরআনের ব্যাখ্যা জানতেন। স্বয়ং নবিজি তাঁদেরকে শিখিয়েছেন। সালাফ তথা সাহাবি, তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়িদের ব্যাখ্যার বাইরে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কুরআন-সুন্নাহ বুঝলে যে কোনো ব্যক্তি সরল পথ থেকে বিচ্যুত ও ভ্রষ্ট হিসেবে পরিগণিত হবে। যারা সালাফদের ব্যাখ্যার বাইরে নিজেদের অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা করে, এরা নিজেরা পথভ্রষ্ট এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্টকারী। সম্ভবত ইমরান নজর হুসাইনের এরকম বিভ্রান্তির মাধ্যমে আবু ত্বহা আদনান প্রভাবিত হয়েছেন। যে কারণে তিনিও কুরআন-সুন্নাহর উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন এবং মনে করেন, এরকম ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। এ বিষয়ে আমরা দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে কিঞ্চিৎ আলোচনা করেছিলাম। সামনে অষ্টম অধ্যায়ে এ সম্পর্কে আরও আলোচনা আসবে, ইনশাআল্লাহ।
দেখুন, হেদায়েতপ্রাপ্তির জন্য সাহাবিদের মতো ইমান আনাকে আবশ্যক করেছেন মহান আল্লাহ। সুতরাং কেউ যদি হেদায়েত পেতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই সাহাবিগণের মতো ইমান আনতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا ۖ وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ “অনন্তর তোমরা যেভাবে ইমান এনেছ, তারাও যদি সেভাবে ইমান আনে, তাহলে অবশ্যই তারা হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা বিমুখ হয়ে যায় তাহলে তারা শুধু বিরুদ্ধাচরণেই ফিরে যাবে; অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতিকূলে তোমাকে যথেষ্ট করবেন। বস্তুত তিনিই সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” [সুরা বাকারা: ১৩৭]
সুতরাং সাহাবিদের সমঝের বাইরে গিয়ে যারা কুরআনের ব্যাখ্যা দেয়, এরা সাহাবিদের মতো ইমান আনতে পারেনি। এজন্য এদের থাকা সাবধান থাকা জরুরি। তদুপরি যারা সালাফদের বুঝ ব্যতিরেকে কুরআন-সুন্নাহর ব্যাখ্যা প্রদান করে, এদের জন্য জাহান্নামের ঘোষণা দিয়েছেন মহান আল্লাহ। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেছেন, وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا “যে ব্যক্তি হেদায়েত প্রকাশিত হওয়ার পরও রসুলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে দগ্ধ করব জাহান্নামে, কতইনা মন্দ সে আবাস!” [সুরা নিসা: ১১৫]
আয়াতে ‘মুমিনগণ’ বলতে সাহাবি ও তাঁদের প্রকৃত অনুসারী সালাফগণ উদ্দিষ্ট। কারণ তাঁরাই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মুমিন। এজন্য আয়াতটি উল্লেখ করার পর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হি.) বলেছেন, وقَدْ شَهِدَ اللَّهُ لِأصْحابِ نَبِيِّهِ ﷺ ومَن تَبِعَهُمْ بِإحْسانِ بِالإيمانِ. فَعُلِمَ قَطْعًا أنَّهُمْ المُرادُ بِالآيَةِ الكَرِيمَةِ “স্বয়ং আল্লাহ তাঁর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিবর্গ ও তাঁদের সত্যিকারের অনুসারীবৃন্দের ব্যাপারে ইমানের সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ থেকে অকাট্যভাবে জানা যায়, উক্ত আয়াতে কারিমায় তাঁদেরকেই বোঝানো হয়েছে।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২; তাহকিক: আব্দুর রহমান বিন কাসিম; কিং ফাহাদ গ্লোরিয়াস কুরান প্রিন্টিং কমপ্লেক্স কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১৬ হি./১৯৯৫ খ্রি.]
কোনো সম্প্রদায় যদি সালাফদের বুঝ না মানে, তাহলে ইসলামের নামে নতুন-নতুন দলের উদ্ভব হতে থাকবে। যেমন ইতঃপূর্বে খারেজি, শিয়া, কাদারিয়া, মুরজিয়া, জাহমিয়া, মুতাজিলা, কুল্লাবিয়্যা, আশারিয়া, মাতুরিদিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে, যারা সবাই কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণের দাবি করেছিল নিজেদের সমঝ অনুযায়ী। কারণ সবার সমঝ একরকম নয়। ইমরান নজরের কথা মোতাবেক আমরা কার সমঝ মানব? তাঁর সমঝ একরকম, আশারিয়া ফের্কার সমঝ একরকম, ইখওয়ানিদের সমঝ একরকম, তাবলিগ জামাতের সমঝ একরকম। এভাবে কোনোদিন কেউ সার্বজনীন ও সুষ্ঠু সমাধানে আসতে পারবে না। এজন্য কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণের ক্ষেত্রে সমঝ গ্রহণ করতে হবে পূর্ববর্তী সালাফদের তথা সাহাবি ও তাঁদের প্রকৃত অনুসারীদের।
হয়তো এরকম বাতিল নীতি গ্রহণের কারণেই ভ্রষ্টকারী কথাবার্তা বলা মানুষ ইমরান নজর হুসাইন নিজের বাতিল মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বজনগৃহীত সহিহুল বুখারির হাদিসকে জাল আখ্যা দিয়েছেন এবং সেই হাদিসকে ‘ডাস্টবিনে ফেলার উপযোগী’ বলেছেন! [দেখুন: https://m.youtube.com/watch?v=hrRID3Caf5A (৫৯:০০ মিনিট থেকে ০১:০১:৪৩ মিনিট)]
আরেক বক্তব্যে ভ্রষ্টকারী বিদাতি-গুরু ইমরান নজর সাহেব বিবাহিত ব্যভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করার শরয়ি বিধানকে অস্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, স্রেফ প্রকাশ্যে চাবুক মারতে হবে, রজম (পাথর মেরে হত্যা) করা যাবে না। রজম করার বিধান আগে ছিল, কিন্ত পরবর্তীতে তদস্থলে চাবুক মারার বিধান দেওয়া হয়। [দেখুন: https://youtu.be/DYDry_QyhTM (০১:১০:০০ মিনিট থেকে)] অথচ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন এবং তাঁর তিরোধানের পরে খোলাফায়ে রাশেদিনের সাহাবিগণও রজম করেছেন। [সহিহুল বুখারি, হা: ৬৪৪২; সহিহ মুসলিম, হা: ১৬৯১]
এজন্য বিবাহিত ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীকে রজম করতে হবে, এই বিধানের প্রতি স্বীকৃতিকে আমরা বিশুদ্ধ আকিদার অংশ মনে করি। [দেখুন: ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল বিরচিত উসুলুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৭; শাইখ আহমাদ আন-নাজমির ব্যাখ্যা-সংবলিত শারহু উসুলিস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৯৮; আদ-দারুল আসারিয়্যা (কায়রো) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
এরকম ভ্রষ্টকারী বিপথগামী বিদাতি-গুরুর বই জনসাধারণকে পড়তে বলা তাদেরকে ভ্রষ্টতার পথে আহ্বান করারই নামান্তর। যা করে চলেছেন বিভ্রান্ত বক্তা আবু ত্বহা আদনান। আল্লাহ তাঁকে হেদায়েত দিন এবং তাঁর গোমরাহি থেকে মুসলিম উম্মতকে হেফাজত করুন।
অপরপক্ষে দর্শনশাস্ত্রের বইপুস্তক পড়তে বলা আরেক গোমরাহি। কারণ আবু ত্বহা আদনান যেসব দার্শনিকের নাম নিয়েছেন, যেমন গাযালি, ইবনু রুশদ, ইবনু সিনা, এদের দর্শন মানে সুনিশ্চিত কুফরি দর্শন। এরা যেই দর্শন চর্চা করেছে, তা সরাসরি আল্লাহদ্রোহী কাফির গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল প্রমুখের দর্শন থেকে গৃহীত। নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক। দর্শনচর্চার প্রভাবে ইবনু সিনার মতো নামধারী মুসলিম দার্শনিকরা আল্লাহর সমস্ত গুণাবলি অস্বীকার করত, মহাবিশ্বকে অন্তহীন আদি (যার কোনো শুরু নেই) মনে করত, শারীরিক পুনরুত্থানকে অস্বীকার করত এবং আল্লাহ যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রতিটি বিষয়ের জ্ঞান রাখে সেটা অস্বীকার করত। আস্তাগফিরুল্লাহ! [দেখুন: হাফিয ইবনু হাজার আল-আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ বিরচিত লিসানুল মিযান, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৯১-২৯৩]
এজন্য যারা এসব দর্শন চর্চা করে, তাদের ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ২০৪ হি.) বলেছিলেন, حُكْمِي فِي أَهْلِ الْكَلَامِ أَنْ يُضْرَبُوا بِالْجَرِيدِ وَالنِّعَالِ، وَيُطَافَ بِهِمْ فِي الْعَشَائِرِ وَالْقَبَائِلِ، وَيُقَالُ: هَذَا جَزَاءُ مَنْ تَرَكَ الْكِتَابَ وَالسُّنَّةَ وَأَقْبَلَ عَلَى الْكَلَامِ “দার্শনিকদের ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এদেরকে জুতো ও খেজুর-ডাল দিয়ে পেটাতে হবে এবং গোত্রে-গোত্রে এদেরকে নিয়ে ঘুরতে হবে। আর বলতে হবে, এই হলো তাদের শাস্তি, যারা কুরআন-সুন্নাহ ত্যাগ করে দর্শনচর্চায় ঝুঁকেছে।” [ইবনু আব্দিল বার্র কৃত জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাদলিহ, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৯৪১; ইবনু তাইমিয়া কৃত আল-ফাতওয়া আল-হামাবিয়্যা আল-কুবরা, পৃষ্ঠা: ৫৫৫; যাহাবি কৃত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২৪৫; ইবনু আবিল ইয কৃত শারহুত তাহাবিয়্যা, পৃষ্ঠা: ২৪]
আবু ত্বহা আদনানের মতো যেসব বিভ্রান্ত বক্তা গ্রিকদের থেকে ধার করা কুফরি দর্শন চর্চার দিকে মানুষদের আহ্বান করে, এরা কি ইমাম শাফেয়ির ফায়সালা অনুযায়ী জুতোপেটা খাওয়ার হকদার নয়? সম্মাননীয় পাঠকের হাতেই অর্পণ করলাম এটা বুঝে নেওয়ার ভার। এতদ্ব্যতীত দর্শনচর্চার নিন্দা-সমালোচনায় সু্ন্নাহপন্থি ইমামদের আরও অনেক বক্তব্য আছে, কিন্তু কলেবর সংক্ষেপের জন্য সেসব মূল্যবান বক্তব্য উল্লেখ করা থেকে আমরা বিরত থাকছি।
এখন আমরা সংক্ষেপে আবু ত্বহা আদনানের ব্যক্তীকৃত তিনজন দার্শনিকের চালচিত্র জেনে নিই। প্রথমে জানব, দার্শনিক ইবনু সিনার (মৃত: ৪২৭ হি.) ব্যাপারে। কারণ তিনজনের মধ্যে যুগ-কাল ও দর্শনচর্চায় সে-ই ছিল অগ্রবর্তী। সু্ন্নাহপন্থিদের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭৪৮ হি.) ইবনে সিনার ব্যাপারে বলেছেন, له كتاب (الشفاء) وغيره وأشياء لا تحتمل وقد كفّره الغزالي في كتاب (المنقذ من الضلال) وكفّر الفارابي “তার রয়েছে আশ-শিফা ও অন্যান্য গ্রন্থ এবং এমন কিছু বিষয়, যা কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখে না। গাযালি ‘আল-মুনকিয মিনাদ দালাল’ গ্রন্থে তাকে কাফির বলেছেন এবং ফারাবিকেও কাফির বলেছেন।” [যাহাবি কৃত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ১৭; পৃষ্ঠা: ৫৩৫; মুআসসাসাতুর রিসালা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম ইবনুস সালাহ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৬৪৩ হি.) বলেছেন, لم يكن من علماء الإسلام بل كان شيطاناً من شياطين الإنس “সে ইসলামের আলিমদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বরং সে ছিল মনুষ্য শয়তানদের মধ্যকার একটি শয়তান।” [ফাতাওয়া ইবনিস সালাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২০৯; ইবনুল ইমাদ আল-হাম্বালি কৃত শাযারাতুয যাহাব ফি আখবারি মান যাহাব, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৩৭]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হি.) বলেছেন, وكذلك ابن سينا وغيره، يذكر من التنقص بالصحابة ما ورثه من أبيه وشيعته القرامطة “অনুরূপভাবে ইবনু সিনা প্রমুখ সাহাবিদের ব্যাপারে মানহানিকর কথাবার্তা বলে থাকে, যা ইবনু সিনা তার পিতা ও কারামিতা শিয়াদের নিকট থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছে।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১০৩]
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭৫১ হি.) ইবনু সিনার ব্যাপারে লিখেছেন, فكان من القرامطة الباطنية الذين لا يؤمنون بمبدأ ولا معاد ولا رب ولا رسول مبعوث جاء من عند الله تعالى “সে কারামিতা বাতিনি শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত, যারা সৃষ্টির উদ্ভাবন ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে না, এবং রবের প্রতি ও আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রসুলের প্রতিও ইমান রাখে না।” [ইগাসাতুল লাহফান, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১০৩১; শাইখ বাকার আবু যাইদের মেথাডলজি অনুযায়ী তাহকিককৃত, তাহকিক করেছেন শাইখ মুহাম্মাদ উযায়ের শামস; আল-রাজিহি চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে দারু আলামিল ফাওয়ায়িদ (মক্কা) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪৩২ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
যারা ইবনে সিনার প্রশংসা করে তাদের ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ ফাকিহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—
পরবর্তীতে আগমন ঘটে দার্শনিক ইবনু রুশদ সাহেবের (মৃত: ৫৯৫ হি.)। ইবনু রুশদের ভয়ানক কুফরি আকিদার দরুন তাকে গণবয়কট করা হয়েছিল এবং তার জীবদ্দশাতেই তার দার্শনিক বইগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। ইবনে সিনার মতো ইবনু রুশদও এরিস্টটলের দর্শন অনুসরণ করত এবং এরিস্টটলীয় দর্শনের ব্যাখ্যা দিত। গাযালির সাথে ইবনু রুশদের আকিদাগত বিরোধ ছিল। এজন্য গাযালির খণ্ডন করে এরিস্টটলীয় দর্শনের পক্ষে ইবনু রুশদ কিতাব লিখেছিল। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হি.) দার্শনিক ইবনু রুশদের ব্যাপারে বলেছেন, هو من أتبع الناس لأقوال أرسطو “সে ছিল এরিস্টটলের মতবাদগুলোর সবচেয়ে বড়ো অনুসারীদের অন্যতম।” [ইবনু তাইমিয়া কৃত বায়ানু তালবিসিল জাহমিয়্যা, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪০৩; সৌদি ধর্মমন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কিং ফাহাদ গ্লোরিয়াস কুরান প্রিন্টিং কমপ্লেক্স কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৬ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেছেন, وابْنُ سِينا وأمْثالُهُ لَمّا عَرَفُوا أنَّ كَلامَ الرَّسُولِ لا يَحْتَمِلُ هَذِهِ التَّأْوِيلاتِ الفَلْسَفِيَّةَ؛ بَلْ قَدْ عَرَفُوا أنَّهُ أرادَ مَفْهُومَ الخِطابِ: سَلَكَ مَسْلَكَ التَّخْيِيلِ وقالَ: إنّهُ خاطَبَ الجُمْهُورَ بِما يُخَيَّلُ إلَيْهِمْ؛ مَعَ عِلْمِهِ أنَّ الحَقَّ فِي نَفْسِ الأمْرِ لَيْسَ كَذَلِكَ. فَهَؤُلاءِ يَقُولُونَ: إنّ الرُّسُلَ كَذَبُوا لِلْمَصْلَحَةِ. وهَذا طَرِيقُ ابْنِ رُشْدٍ الحَفِيدِ وأمْثالِهِ مِن الباطِنِيَّةِ “ইবনে সিনা ও তার সমমনা লোকেরা যখন উপলব্ধি করেছিল, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথার এসব দার্শনিক ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, এমনকি এটাও উপলব্ধি করেছিল যে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলত কথার বাহ্যিক সমঝই উদ্দেশ্য করেছেন, তখন তারা খেয়াল-দেখানোর মতাদর্শ অবলম্বন করল এবং বলল, নবিজি আম জনসাধারণের মনে যা উদ্রেক হয় সে অনুযায়ীই তাদের উদ্দেশ্যে শরিয়তের কথা বলেছেন। যদিও তিনি জানতেন, জনগণের উদ্দেশ্যে বলা এসব কথা সত্যিকারের হক নয়! এরা (দার্শনিকরা) বলত, রসুলগণ কল্যাণের স্বার্থে এসব বিষয়ে মিথ্যা বলেছেন। এটাই ছিল দার্শনিক ইবনু রুশদ ও তার সমমনা বাতিনি ফের্কাভুক্ত লোকদের মতাদর্শ।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ১৫৭; তাহকিক: আব্দুর রহমান বিন কাসিম; কিং ফাহাদ গ্লোরিয়াস কুরান প্রিন্টিং কমপ্লেক্স কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১৬ হি./১৯৯৫ খ্রি.]
অর্থাৎ ইবনু রুশদ ও ইবনে সিনার মতো কাফির-গুরুদের মতে রসুলগণ জনগণকে বোঝানোর জন্য মিথ্যা বলেছেন, যখন তাঁরা জানিয়েছেন, মহান আল্লাহ আরশের ওপর ওঠেছেন, প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তিনি দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, কেয়ামতের দিন সকল আসমান আল্লাহর ডান হাতে থাকবে, পুরো পৃথিবী আল্লাহর হাতের কব্জায় থাকবে! এগুলো রসুলগণ বললেও এসব বিষয় প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়! নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক।
আশারি দার্শনিক আবু হামিদ আল-গাযালি (মৃত: ৫০৫ হি.) ছিলেন দার্শনিক ইবনু রুশদের আগের জামানার মানুষ। তিনি ইবনে সিনার দর্শন দ্বারা চরমভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। বিদাতি ফের্কা আশারি মতবাদের বিরাট খাদেম ছিলেন গাযালি। তবে মনে করা হয়, জীবন-সায়াহ্নে পৌঁছে ভ্রান্ত-দর্শনচর্চার জন্য তিনি অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং সালাফদের বিশুদ্ধ আকিদায় ফিরে এসেছিলেন।
তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘ইহইয়াউ উলুমিদ্দিনের’ ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
আবু ত্বহা আদনান-সহ আমাদের সবারই সর্বদা মনে রাখা উচিত, ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাব, নবিজির সুন্নাহ এবং সালাফদের সমঝই যথেষ্ট। দ্বাদশ হিজরি শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের সুযোগ্য পৌত্র ইমাম আব্দুর রাহমান বিন হাসান আলুশ শাইখ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১২৮৫ হি./১৮৬৯ খ্রি.) বলেছেন, ومن له نهمة في طلب الأدلة على الحق، ففي كتاب الله، وسنّة رسوله، ما يكفي ويشفي؛ وهما سلاح كل موحد ومثبت، لكن كتب أهل السنّة تزيد الراغب وتعينه على الفهم وعندكم من مصنفات شيخنا -رحمه الله- ما يكفي مع التأمل؛ فيجب عليكم هجر أهل البدع، والإنكار عليهم “হকের দলিল অন্বেষণে যার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কিতাব ও তদীয় রসুলের সুন্নাহতেই যথেষ্ট ও সন্তোষজনক উপাদান রয়েছে। এই দুটি জিনিস (কিতাব ও সুন্নাহ) প্রত্যেক তাওহিদবাদী ও দৃঢ়পদ জ্ঞানীর অস্ত্র। কিন্তু আহলুস সুন্নাহর রচিত গ্রন্থাবলি আগ্রহী ব্যক্তিকে পাথেয় যোগায় এবং (কিতাব ও সুন্নাহ) বুঝতে সাহায্য করে। তোমাদের কাছে আমাদের শাইখ রাহিমাহুল্লাহর গ্রন্থাবলি রয়েছে, চিন্তাভাবনা করে পড়লে এগুলো আমাদের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং তোমাদের জন্য বিদাতিদের বর্জন করা এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক।” [আদ-দুরারুস সানিয়্যা, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২১১; তাহকিক: আল্লামা আব্দুর রহমান বিন কাসিম রাহিমাহুল্লাহ]
আল্লাহ আমাদেরকে শাইখ রাহিমাহুল্লাহর উক্ত মূল্যবান কথা বোঝার এবং তা আমলে বাস্তবায়ন করার তৌফিক দিন। আমিন।
বক্তা আবু ত্বহা আদনান— শয়তান কর্তৃক আয়াতুল কুরসির মাহাত্ম্য বর্ণনার হাদিসটি দিয়ে নিজের বাতিল কথার পক্ষে দলিল দিয়েছেন। যে হাদিসে বলা হয়েছে, শয়তান আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে রাতের বেলা আয়াতুল কুরসি পাঠের মর্যাদা বর্ণনা করেছিল। সেই আমল আজও জারি আছে মুসলিম সমাজে। যেহেতু নবিজি উক্ত আমল-সংক্রান্ত ইলমের ব্যাপারে সায় দিয়েছিলেন। সুতরাং শয়তানের নিকট থেকে ইলম নেওয়া গেলে ইসলামপন্থি সকল দলের লোকদের থেকে ইলম নেওয়া যাবে!
আমরা উক্ত সংশয়ের জবাব দেওয়া আগে ঘটনাটির সারসংক্ষেপ বলে নিই। একবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যাকাতুল ফিতরের মাল পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরপর তিন রাতে শয়তান মানুষের রূপ ধরে সেই মাল চুরি করতে এসে আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে ধৃত হয়েছিল। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে প্রতিবারই সে অনেক অনুনয়-বিনয় করে এবং বলে যে, ‘আমি খুবই দরিদ্র।’ শেষদিন আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন তাকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যেতে চান, তখন সে বলে, ‘আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব, যা দিয়ে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন।’ আবু হুরাইরা বললেন, ‘সেটা কী?’ শয়তান বলল, ‘যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। এতে করে আল্লাহর তরফ থেকে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ ফলে তিনি তাকে ছেড়ে দেন। পরদিন সকালে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষয়টি জানালে তিনি বললেন, “সাবধান! এ কথা সে তোমাকে সত্য বলেছে বটে, কিন্তু সে মহামিথ্যুক (أَمَا إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ)।” [সহিহ বুখারি, হা: ২৩১১]
বিদাতিদের নিকট ইলম নেওয়াকে বৈধ জ্ঞানকারী ব্যক্তিবর্গ এই হাদিস থেকে দলিলগ্রহণ করে বলে, আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু শয়তানের নিকট থেকে ইলম নিয়েছেন। সুতরাং বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম নেওয়া জায়েজ।
আমরা বলছি, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু শয়তানের নিকট থেকে ইলম নিয়েছেন, এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ সাহাবি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু শয়তানের কথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই কথার সত্যায়ন করার পরই তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সরাসরি শয়তানের কথা শুনে তার ওপর আমল করা শুরু করে দেননি। এছাড়াও তাদের এই দলিলগ্রহণ যে বাতিল, তা উম্মাহর শ্রেষ্ঠ আলিমগণও বলেছেন।
আলিমগণের বক্তব্য: ❝শয়তানের সাথে সাহাবি আবু হুরাইরার ঘটনায় কি বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম গ্রহণের দলিল রয়েছে?❞
১ম বক্তব্য: যুগশ্রেষ্ঠ ফাকিহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহকে (মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.) প্রশ্ন করা হয়, “শয়তানের সাথে আবু হুরাইরার ঘটনা থেকে কি এই দলিল গৃহীত হবে যে, কাফির বা বিদাতিও যদি হক নিয়ে আসে তাহলে তা গ্রহণ করতে হবে এবং তার কথা সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে রদ করা যাবে না?” শাইখ জবাবে বলেন, “আবু হুরাইরা কল্যাণের অভিলাষী ছিলেন। অনুরূপভাবে অন্যান্য সাহাবিগণও এরূপ ছিলেন। তিনি কথাটি তখনই গ্রহণ করেছিলেন, যখন তিনি তা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন এবং নবিজি সে কথাটি সত্যায়ন করেছিলেন।”
প্রশ্নকারী পুনরায় বলেন, “আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে কাফির বা বিদাতির নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করার ইস্যু।” শাইখ জবাব দেন, “এটি... ভিন্ন বিষয়। কেননা এই দলিলে আবু হুরাইরা (শয়তানের) কথাটি কেবল তখনই গ্রহণ করেছিলেন, যখন তিনি তা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন এবং নবিজি ওই মহান আয়াতটির ব্যাপারে সে কথা সত্যায়ন করেছিলেন।” [দ্র.: https://tinyurl(ডট)com/y9nnrpmx; শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট– binbaz(ডট)org(ডট)sa এর আর্টিকেল লিংক]
·
২য় বক্তব্য: ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—
السؤال: بعض أهل البدع يحتج بحديث أبي هريرة أنه يجوز الدراسة على أهل البدع لكون أبا هريرة أخذ العلم من الشيطان.
الجواب: أخذ العلم من الرسول ﷺ، ما أخذ عن الشيطان، الرسول هو الذي أخبره بذلك، ولم يأخذ هذا عن الشيطان، ولم يعتمد على قول الشيطان، وإنما اعتمد على قول الرسول ﷺ: (صدقك وهو كذوب). هذا من الإستدلال الباطل، هذا الكلام من الإستدلال الباطل، نعم.
প্রশ্ন: “কতিপয় বিদাতি আবু হুরাইরার হাদিসকে এই বিষয়ের প্রমাণস্বরূপ পেশ করেছে যে, বিদাতিদের কাছে অধ্যয়ন করা বৈধ; কারণ আবু হুরাইরা শয়তানের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করেছেন।”
উত্তর: “তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করেছেন, শয়তানের নিকট থেকে নয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করেছিলেন যে, কথাটি সত্য। তিনি এটা শয়তানের নিকট থেকে গ্রহণ করেননি। তিনি শয়তানের কথার ওপর নির্ভরও করেননি। বরং তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথার ওপর নির্ভর করেছেন, ‘সে তোমাকে সত্য বলেছে, কিন্তু সে মহামিথ্যুক।’ এটি বাতিল ইস্তিদলালের (দলিলগ্রহণের) অন্তর্ভুক্ত। এই কথা বাতিল ইস্তিদলালের অন্তর্ভুক্ত।” [দ্র.: https://ar(ডট)alnahj(ডট)net/audio/1135.]
الجواب: أخذ العلم من الرسول ﷺ، ما أخذ عن الشيطان، الرسول هو الذي أخبره بذلك، ولم يأخذ هذا عن الشيطان، ولم يعتمد على قول الشيطان، وإنما اعتمد على قول الرسول ﷺ: (صدقك وهو كذوب). هذا من الإستدلال الباطل، هذا الكلام من الإستدلال الباطل، نعم.
প্রশ্ন: “কতিপয় বিদাতি আবু হুরাইরার হাদিসকে এই বিষয়ের প্রমাণস্বরূপ পেশ করেছে যে, বিদাতিদের কাছে অধ্যয়ন করা বৈধ; কারণ আবু হুরাইরা শয়তানের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করেছেন।”
উত্তর: “তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করেছেন, শয়তানের নিকট থেকে নয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করেছিলেন যে, কথাটি সত্য। তিনি এটা শয়তানের নিকট থেকে গ্রহণ করেননি। তিনি শয়তানের কথার ওপর নির্ভরও করেননি। বরং তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথার ওপর নির্ভর করেছেন, ‘সে তোমাকে সত্য বলেছে, কিন্তু সে মহামিথ্যুক।’ এটি বাতিল ইস্তিদলালের (দলিলগ্রহণের) অন্তর্ভুক্ত। এই কথা বাতিল ইস্তিদলালের অন্তর্ভুক্ত।” [দ্র.: https://ar(ডট)alnahj(ডট)net/audio/1135.]
৩য় বক্তব্য: প্রখ্যাত ফাকিহ ও মুহাদ্দিস, আশ-শাইখুল আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সায়িদ রাসলান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৯৫৫ খ্রি.) বলেছেন,
بعض أهل الزيغ والضلال يقول: نحن نتعلم من أهل البدع والضلال والزيغ والهوى لأننا نتعلم حتى من الشيطان، بدليل أن أبا هريرة رضي الله عنه أطلق ذلك الشيطان لما قال له ما قال بشأن آية الكرسي، هؤلاء يريدون أن يتعلموا من الشيطان، فليتعلموا من الشيطان، وأما أهل السنة فيقولون لولا النبي ﷺ اعتمد هذا الذي قاله الشيطان ما التفتنا إليه، لولا أن النبي ﷺ قال: (صدقك) فاعتمده ما قبلناه. فأهل الزيغ والضلال، ختم الله على قلوبهم، يقولون: نأخذ من كل أحد، ولو من الشيطان! خذوا من الشيطان.
“কতিপয় ভ্রষ্ট বিপথগামী বলে, আমরা পথভ্রষ্ট বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করব। এমনকি আমরা খোদ শয়তানের নিকট থেকেও ইলম গ্রহণ করব। এই দলিলের ভিত্তিতে যে, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু ওই শয়তানকে ছেড়ে দিয়েছিলেন, যখন সে তাঁকে আয়াতুল কুরসির মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলেছিল। তারা শয়তানের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করতে চায়! তো তোমরা শয়তানের নিকট থেকেই ইলম গ্রহণ করো! পক্ষান্তরে আহলুস সুন্নাহর ব্যক্তিবর্গ বলে, যদি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়তানের কথার স্বীকৃতি না দিতেন, তাহলে আমরা ওই কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপও করতাম না। যদি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সে তোমাকে সত্য বলেছে’—কথাটি বলে সে কথার স্বীকৃতি না দিতেন, তাহলে আমরা তা গ্রহণ করতাম না। কিন্তু ভ্রষ্ট বিপথগামীদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন। ফলে তারা বলে, আমরা প্রত্যেকের নিকট থেকে ইলম নিব, যদি সে শয়তান হয় তবুও। তাহলে যাও, তোমরা শয়তানের নিকট থেকেই ইলম নাও!” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=qDppy7R-LkU (ভিডিয়ো ক্লিপ)]এই ধাপের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো, বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম নেওয়ার ব্যাপারে আবু ত্বহা আদনানের ব্যক্তীকৃত বাতিল মূলনীতির পক্ষে আদনান সাহেব যে দলিল দিয়েছেন, সেটার প্রয়োগও অসার ও বাতিল সাব্যস্ত হলো। আল্লাহুল মুস্তাআন।
চতুর্থ ধাপ: বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া ও লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে উলামাদের বক্তব্য
আমরা বক্ষ্যমাণ পরিচ্ছেদের প্রারম্ভেই দেখেছি, আবু ত্বহা আদনান বিদাতিদের বইপুস্তক পড়তে উৎসাহিত করেন এবং কুফরি দর্শনের বইপত্র পড়ার নির্দেশনা দেন। জনগণকে যে কোনো তাফসিরের বই পড়তে বলেন, যেটা তাদের কাছে ভালো লাগে! উদাহরণ হিসেবে বলেন, তাফসিরে ইবনু কাসির, তাফসিরে জালালাইন ও তাফসিরে কাশশাফ। অথচ বহু তাফসির গ্রন্থ আছে, যেগুলো কুখ্যাত বিদাতি মতাদর্শে ভরপুর। যেমন তাফসিরে জালালাইন, তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন, তাফসিরে কাশশাফ, তাফসির ফি যিলালিল কুরআন, তাফহিমুল কুরআন প্রভৃতি। সাধারণ জনগণের জন্য এসব তাফসির পড়ার কোনো বৈধতা নেই। প্রয়োজন ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাজ্ঞ তালিবুল ইলম ও উলামাগণ এসব পড়ার অনুমতি পেতে পারেন।
জ্ঞাতব্য যে, বাংলা ভাষায় তাফসিরে জালালাইনের আকিদাগত ভুল ও তার পর্যালোচনা নিয়ে লিখন-জগতের দিকপাল খ্যাত শাইখ আব্দুল হামিদ ফাইযি মাদানি হাফিযাহুল্লাহর চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ একটি বই আছে, আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন। বইটির নাম— ‘তফসিরে জালালাইন : একটি সমীক্ষা।’ তদ্রুপ ফি যিলালিল কুরআনের আকিদাগত ভুল ও তার পর্যালোচনা নিয়ে প্রখ্যাত নাজদি বিদ্বান আল্লামা আব্দুল্লাহ আদ-দুওয়ায়িশ রাহিমাহুল্লাহর লেখা বই আছে। বইটির নাম— ‘আল-মাওরিদুয যুলাল ফিত তাম্বিহি আলা আখতায়িয যিলাল।’
সাধারণ জনগণ ও তালিবুল ইলমগণ নির্বিঘ্নে পড়তে পারেন, এরকম কয়েকটি সালাফি তাফসিরের নাম বলে দিচ্ছি আমরা। প্রসিদ্ধ কিছু সালাফি তাফসির হচ্ছে— তাফসিরে তাবারি, তাফসিরে বাগাবি, তাফসিরে ইবনু কাসির, তাফসিরে আদওয়াউল বায়ান, তাফসিরে সাদি, তাফসিরে ইবনু উসাইমিন, তাফসিরুল মুইয়াসসার, তাফসিরে আহসানুল বায়ান, দ্য নোবল কুরআন (ইংরেজি) প্রভৃতি। বাংলা ভাষায় অ্যাভেইলেবল এমন কিছু নির্ভরযোগ্য তাফসির— তাফসিরে ইবনু কাসির, তাফসিরুল মুইয়াসসার, তাফসিরে আহসানুল বায়ান, তাফসিরে জাকারিয়া, তাফসিরে ফাতহুল মাজীদ প্রভৃতি।
সুপ্রিয় পাঠক, আরেকটি বিষয়ে ইঙ্গিত না করে পারছি না। আবু ত্বহা আদনান সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সমুদয় তাফসির পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু একবার ভাবুন তো, এতে কি ঐক্য ও সংহতি কায়েম হবে, না সৃষ্টি হবে প্রবল মতবিরোধ? কারণ মওদুদি সাহেব তাঁর তাফহিমুল কুরআনে এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন, যা ফি যিলালিল কুরআনের বিরোধী, আবার মাআরেফুল কুরআনের বহু তাফসির ইমাম ইবনু কাসিরের লেখা তাফসিরের বিরোধী। তদ্রুপ তাফসিরে কাশশাফের অনেক কথাবার্তা বহু বাতিল তাফসিরকাকও মানবেন না। একজন তাফসিরকারক মুতাজিলি ফের্কার প্রচারক, তো আরেকজন আশারি ফের্কার প্রচারক! এভাবে যার যেটা ভালো লাগে এমন তাফসির পড়ে ঐক্য কীরূপে সাধিত হবে, সেটা বোঝা মুশকিল। আপনিই বলুন, এটা কি সুস্থ মস্তিকপ্রসূত কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে?
বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম নেওয়ার নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করে ফেলেছি। এখন আমরা বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া ও লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে সামসময়িক যুগশ্রেষ্ঠ উলামাদের বক্তব্য পেশ করার পরেই চলে যাব বক্তা আদনানের শেষোক্ত বক্তব্যটির পর্যালোচনায় এবং সেখানে আমরা দর্শনের বইপত্র পড়ার বিধান এবং আদনান কর্তৃক উল্লিখিত দার্শনিকদের হালহকিকত বিবৃত করব, ইনশাআল্লাহ। বিদাতিদের বইপত্র পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে সামসময়িক আলিমদের অনেক ফতোয়া রয়েছে। আমরা এখানে আহলুস সুন্নাহর শ্রেষ্ঠ আলিমগণের পাঁচটি ফতোয়া উপস্থাপন করছি।
এক. বিদাতিদের দারসে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.) সুস্পষ্ট ফতোয়া—
السؤال: ما حكم حضور دروس أهل البدع؟
الجواب: إذا كان يحضر دروس أهل البدعة من أجل أن يناقشهم ويبين لهم الحق والصواب فهو واجب. وإذا كان يريد أن يتعلم منهم فلا يتعلم منهم، حتى لو كان في غير العقيدة، حتى لو كان يدرسهم في النحو أو البلاغة. لا تـقـربهم؛ لأنهـم قد يدسون السم في الدسم، وأيضاً إذا حضرتهم ربما يغتر بك أحد من الناس؛ يقول هؤلاء ليس في حضور دروسهم بأس.
প্রশ্ন: “বিদাতিদের দারসে উপস্থিত হওয়ার বিধান কী?”উত্তর: “কেউ যদি বিদাতিদের সাথে (ইলমি) বিতর্ক করার জন্য এবং তাদের কাছে হক ও সঠিক বিষয় তুলে ধরার জন্য তাদের দারসে উপস্থিত হয়, তবে তা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে কেউ যদি তাদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করতে চায়, তবে সে যেন তাদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন না করে। যদিও তা আকিদাহ ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ের জ্ঞান হয়; যদিও সে তাদের কাছে নাহু (আরবি ব্যাকরণশাস্ত্র) ও বালাগাত (অলংকারশাস্ত্র) অধ্যয়ন করে। তুমি তাদের নিকটবর্তী হবে না। কেননা তারা তেলের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দেয় (অর্থাৎ ক্ষতিকর বিষয় আকর্ষণীয় মোড়কে উপস্থাপন করে)। অনুরূপভাবে তুমি যখন তাদের কাছে উপস্থিত হবে, তখন হয়তো তোমার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি ধোঁকায় পতিত হবে। ফলে বলবে, তাদের দারসে উপস্থিত হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।” [ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ, লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ; ১৬২ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: আল-আসার (alathar) ডট নেট]
দুই. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—
السؤال: ما هو القول الحق في قراءة كتب المبتدعة، وسماع أشرطتهم؟
الجواب: لا يجوز قراءة كتب المبتدعة ولا سماع أشرطتهم إلا لمن يريد أن يرد علهم ويبين ضلالهم.
প্রশ্ন: “বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে হক কথা কী?”الجواب: لا يجوز قراءة كتب المبتدعة ولا سماع أشرطتهم إلا لمن يريد أن يرد علهم ويبين ضلالهم.
উত্তর: “বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে যে ব্যক্তি তাদেরকে রদ করতে চায় এবং তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করতে চায়, তার জন্য জায়েজ আছে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ, আল-আজউয়িবাতুল মুফিদা আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদিদা; পৃষ্ঠা: ৭০; দারুল মিনহাজ (কায়রো) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৪ হিজরি (৩য় প্রকাশ)]
তিন. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ প্রদত্ত আরেকটি ফতোয়া—
السؤال: هل يجوز طلب العلم من أهل البدعة وقراءة كتبهم لعدم وجود كتب أهل السنة في بلدي؟
الجواب: الحمد الله، أهل السنة موجودون وكتبهم موجودة، لكن يحتاج [كلام غير واضح] إلى طلب وحرص، ولا تعتمد على أهل البدع وكتب المبتدعة، لا تعتمد عليها، لأنها كالغذاء المسموم القاتل، نعم.
প্রশ্ন: “আমার দেশে আহলুস সুন্নাহর বইপুস্তক না থাকার কারণে বিদাতিদের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করা এবং তাদের বইপুস্তক পড়া কি বৈধ হবে?”الجواب: الحمد الله، أهل السنة موجودون وكتبهم موجودة، لكن يحتاج [كلام غير واضح] إلى طلب وحرص، ولا تعتمد على أهل البدع وكتب المبتدعة، لا تعتمد عليها، لأنها كالغذاء المسموم القاتل، نعم.
উত্তর: “আলহামদুলিল্লাহ, আহলুস সুন্নাহ বিদ্যমান রয়েছে এবং তাদের বইপুস্তকও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু অন্বেষণ ও আগ্রহের প্রয়োজন আছে। তুমি বিদাতিদের ওপর এবং তাদের বইপুস্তকের ওপর নির্ভর কোরো না। তুমি তাদের বইপুস্তকের ওপর নির্ভর কোরো না। কেননা সেগুলো প্রাণঘাতী বিষমিশ্রিত খাদ্যের মতো।” [দ্র.: https://ar(ডট)alnahj(ডট)net/audio/1512.]
·
চার. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল আল্লামা ইমাম আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ আল-বদর হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—
السؤال: كثير من طلاب العلم يقول: إن الحق يأخذ من كلام كل أحد حتى من المبتدع، فيجوز القراءة في كتب أهل البدع والإستماع لأشرطتهم.
الجواب: ما يجوز القراءة في كتب أهل البدع والإستماع لأشرطتهم، إلا لبيان ما عندهم من الضلال، حتى يحذر ذلك.
প্রশ্ন: “অসংখ্য তালিবুল ইলম বলছে, নিশ্চয় হক প্রত্যেকের কথা থেকে গ্রহণ করতে হবে, যদিও সে বিদাতি হয়। সুতরাং বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ।”الجواب: ما يجوز القراءة في كتب أهل البدع والإستماع لأشرطتهم، إلا لبيان ما عندهم من الضلال، حتى يحذر ذلك.
উত্তর: “বিদাতিদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করার জন্য জায়েজ, যাতে করে তা (ভ্রষ্টতা) থেকে সতর্ক থাকা যায়।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=p5G4gb0oEJM (অডিয়ো ক্লিপ)]
·
পাঁচ. মদিনার বিশিষ্ট ফাকিহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসুলবিদ আশ-শাইখুল আল্লামা ইমাম উবাইদ বিন আব্দুল্লাহ আল-জাবিরি হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৭ হি.) বিদাতিদের কিতাব পড়ার তিনটি বিধান বর্ণনা করে বলেছেন, “বিদাতিদের বই পড়ার তিনটি বিধান রয়েছে। যথা:
এক. যে বই বিদাতে পরিপূর্ণ এবং তাতে কোনো সুন্নাহ নেই, যেমন: কুলাইমির ‘উসুলুল কাফি’ এবং রাফিদি শিয়াদের অন্যান্য বই। এমন বই পড়া হারাম। তবে কোনো সামর্থবান আলিম যদি কোনো সম্প্রদায়কে তাদের বই দিয়ে রদ করতে চান (তাহলে জায়েজ)। তোমরা কি শুনেছ? শর্ত হলো দুটি: (১) সামর্থবান আলিম হতে হবে (২) আর তিনি তাদের বই দিয়ে তাদেরকে রদ করার ইচ্ছা করবেন।
দুই. যে বই সুন্নাত ও বিদাত মিশ্রিত। এই বইও সামর্থবান আলিম ছাড়া অন্য কারও জন্য পড়া জায়েজ নয়; এমন আলিম যিনি সহিহ-দয়িফ, ভালো-মন্দ, সুন্নাত-বিদাত প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন। এমন বইয়ের উদাহরণ হলো— যামাখশারির ‘তাফসিরে কাশশাফ।’ যামাখশারি ছিল কট্টর মুতাজিলি, আর ধূর্ত কূটকৌশলী, সে তার মুতাজিলি আকিদা বইয়ে প্রবিষ্ট করত। আলিমদের মধ্যে যারা সামর্থবান, তাঁরা এই বইয়ে উল্লিখিত শব্দার্থ, অলঙ্কারশাস্ত্র, আরবি ভাষার চমৎকার বাক্যবিন্যাস-শাস্ত্র, ভাষাবিজ্ঞান, নাহুশাস্ত্র প্রভৃতি থেকে উপকার লাভ করতে পারেন; যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর কাছে সহিহ-দয়িফ, ভালো-মন্দ, সুন্নাত-বিদাত প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করার সক্ষমতা থাকে।
দুই. যে বই বিদাত থেকে মুক্ত। বইয়ের লেখক বিদাতি, কিন্তু বইয়ে কোনো বিদাত নেই। যেমন কেউ ফিকহশাস্ত্রের বই লিখেছে, পবিত্রতা, ব্যবসাবাণিজ্য প্রভৃতির ক্ষেত্রে বই লিখেছে এবং বইয়ে কোনো বিদাত প্রবিষ্ট করেনি। সে বলে, ‘আমার (অন্য) কোনো ব্যাপার নেই, আমি জীবিকা নির্বাহের জন্য বই লিখি, আমি এই বইয়ের মাধ্যমে রিজিক অন্বেষণ করি।’ সে হয়তো কোনো হাদিসগ্রন্থের অধ্যায়গুলো বিন্যস্ত করে, হাদিসের নম্বর দেয় এবং তাতে কোনো বিদাত প্রবেশ করায় না। যদি কোনো সামর্থবান আলিম এই বই পড়ার পরামর্শ দেন, তাহলে আমিও তোমাকে তা অধ্যয়ন করার পরামর্শ দিই। আর সেই আলিম তোমাকে বলেন যে, ‘অমুক লোকের এই বইয়ে কোনো বিদাত নেই। সেটা আমি পড়েছি এবং নিরীক্ষা করেছি। অমুক বইয়ে কোনো বিদাত নেই।’ তাহলে এই বই পড়ায় কোনো আপত্তি নেই।” [দ্র.: www.ajurry(ডট)com/Kotob-Manhag.htm; গৃহীত: https://tinyurl(ডট)com/yb9qkdzx (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট)]
শেষোক্ত ফতোয়ায় বিদাতিদের বইপুস্তক পড়ার ব্যাপারে তাফসিলি তথা সুবিস্তারিত হুকুম বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আমি পাঠক মহোদয়কে উক্ত ফতোয়ার প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে অনুরোধ করছি। সাধারণ জনগণ ও প্রাথমিক পর্যায়ের তালিবুল ইলমদের জন্য এই ফতোয়া পুরোপুরি প্রযোজ্য হবে। পক্ষান্তরে প্রয়োজন ও যোগ্যতার ভিত্তিতে উলামা ও জ্ঞানবান তালিবুল ইলমদের জন্য বিদাতিদের বইপত্র পড়া জায়েজ হয়ে থাকে, যা আমরা ইতোমধ্যে বলেছি।
❏ পঞ্চম ধাপ: ভ্রান্ত বক্তা আদনান কুফরি-দর্শনের বইপত্র পড়তে উৎসাহপ্রদান
এবার আসি দর্শনের বইপত্র পড়ার বিষয়ে। আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “শাইখ ইমরান নজর হুসাইনেরও ইসলামিক ইকনোমিক্সের ওপর অনেক বই আছে। যেমন দ্য প্রোহিবিশন অফ রিবা, গোল্ড দিনার অ্যান্ড সিলভার দিরহাম, এরকম অনেক বই আছে। ইসলামিক অর্থনীতির ওপর যাদের পড়াশোনা আছে, ওই বইগুলো আপনি পড়েন।... এরপরে যাবেন ইসলামিক ফিলোসফিতে। আপনি ইমাম গাযালির নাম শুনেছেন, ইবনু রুশদের নাম শুনেছেন, ইবনে সিনার নাম শুনেছেন। তাঁদের অনেক ফিলোসফিক্যাল বই আছে। এগুলো বাসায় পড়বেন।” [দেখুন: https://youtu.be/ybmJH9yuudM (৮:৪৭ মিনিট থেকে ৯:২৪ মিনিট]
ইমরান নজর হুসাইন ইন্দো-ত্রিনিদাদিয়ান বংশোদ্ভূত একজন পথভ্রষ্ট ধর্মপ্রচারক, যিনি আমেরিকায় অবস্থান করেন। সানডে অবজারভার পত্রিকার তথ্য মোতাবেক ইমরান নজর সাহেব দশ বছর ধরে আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তরের পাশে জুমার খুতবা দেন! [দ্রষ্টব্য: Wayback Machine http://www.sundayobserver.lk/2003/07/13/new50.html.]
এই মানুষের ভ্রষ্টতার সংখ্যা অনেক। তিনি মনে করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ব্যাখ্যা করেননি, বরং আমাদেরকে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা জেনে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন!
ভ্রষ্টকারী বক্তা ও লেখক ইমরান নজর হুসাইন বলেছেন, “We say to the Salafi, and we’ve been saying it for all this time, all these months in our lectures that, no brother you’re wrong. There are verses from the Quran that could not be understood. Not by the Aslaaf. And Nabi Muhammad alaihe salaam did not provide the explanation, and today we are the ones that have to use knowledge and insight to recognize what Allah is saying. And when we provide that interpretation of the Quran notice my brother salafi that the overwhelming majority of people are accepting our interpretation as correct.
অর্থাৎ আমরা সালাফিদের বলে থাকি এবং আমাদের লেকচারগুলোর মাধ্যমে আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি, ভাইয়েরা, তোমরা ভুলের মধ্যে আছ। কুরআনের এমন কিছু আয়াত আছে, যেগুলো সালাফদের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। আর নবি মুহাম্মাদ আলাইহিস সালাম সেসবের ব্যাখ্যাও দিয়ে যাননি। এজন্য বর্তমান সময়ে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমাদেরকে বুঝে নিতে হবে, আল্লাহ কী বলছেন। সালাফি ভাইয়েরা আমার, ভালোভাবে লক্ষ করুন, আমরা যখন (নিজেদের পক্ষ থেকে) কুরআনের ব্যাখ্যা দিচ্ছি, তখন—অভিভূতকারী এক ব্যাপার পরিলক্ষিত হচ্ছে—সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সঠিক হিসেবে মেনে নিচ্ছে আমাদের ব্যাখ্যাকে।” [দেখুন: https://youtu.be/1zLRrV3W_LY (৫১:০৮ মিনিট থেকে ৫২:০৩ মিনিট)]
কী ভয়ংকর কথা! আল্লাহর পানা চাই এদের মতো বিভ্রান্ত থেকে! সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ তাবেয়িদের অন্যতম ইমাম আবু আব্দুর রহমান আস-সুলামি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, حَدَّثَنَا مَنْ كَانَ يُقْرِئُنَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ، أَنَّهُمْ كَانُوا يَقْتَرِئُونَ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ عَشْرَ آيَاتٍ، فَلَا يَأْخُذُونَ فِي الْعَشْرِ الْأُخْرَى حَتَّى يَعْلَمُوا مَا فِي هَذِهِ مِنَ الْعِلْمِ وَالْعَمَلِ، قَالُوا: فَعَلِمْنَا الْعِلْمَ وَالْعَمَلَ “নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেসব সাহাবি (উসমান বিন আফফান ও ইবনু মাসউদের মতো বিদ্বান সাহাবি) আমাদের কুরআন পড়িয়েছেন, তাঁরা আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে তাঁরা দশটি করে আয়াত শিখতেন। পরবর্তী দশ আয়াত তাঁরা ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করতেন না, যতক্ষণ না তাঁরা জেনে নিতেন, চলতি দশ আয়াতের মধ্যে ইলম ও আমলের কী কী বিষয় রয়েছে। তাঁরা বলেছেন, আমরা ইলম এবং আমল দুটোই শিখেছি।” [মুসনাদু আহমাদ, হা: ২৩৪৮২; খণ্ড: ৩৮; পৃষ্ঠা: ৪৬৬; ইবনু আবি শাইবা, খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৪৬০-৪৬১; সনদ: হাসান (তাহকিক: শুয়াইব আরনাউত)]
সাহাবিরা পুরো কুরআনের ব্যাখ্যা জানতেন। স্বয়ং নবিজি তাঁদেরকে শিখিয়েছেন। সালাফ তথা সাহাবি, তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়িদের ব্যাখ্যার বাইরে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কুরআন-সুন্নাহ বুঝলে যে কোনো ব্যক্তি সরল পথ থেকে বিচ্যুত ও ভ্রষ্ট হিসেবে পরিগণিত হবে। যারা সালাফদের ব্যাখ্যার বাইরে নিজেদের অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা করে, এরা নিজেরা পথভ্রষ্ট এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্টকারী। সম্ভবত ইমরান নজর হুসাইনের এরকম বিভ্রান্তির মাধ্যমে আবু ত্বহা আদনান প্রভাবিত হয়েছেন। যে কারণে তিনিও কুরআন-সুন্নাহর উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন এবং মনে করেন, এরকম ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। এ বিষয়ে আমরা দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে কিঞ্চিৎ আলোচনা করেছিলাম। সামনে অষ্টম অধ্যায়ে এ সম্পর্কে আরও আলোচনা আসবে, ইনশাআল্লাহ।
দেখুন, হেদায়েতপ্রাপ্তির জন্য সাহাবিদের মতো ইমান আনাকে আবশ্যক করেছেন মহান আল্লাহ। সুতরাং কেউ যদি হেদায়েত পেতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই সাহাবিগণের মতো ইমান আনতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا ۖ وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ “অনন্তর তোমরা যেভাবে ইমান এনেছ, তারাও যদি সেভাবে ইমান আনে, তাহলে অবশ্যই তারা হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা বিমুখ হয়ে যায় তাহলে তারা শুধু বিরুদ্ধাচরণেই ফিরে যাবে; অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতিকূলে তোমাকে যথেষ্ট করবেন। বস্তুত তিনিই সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” [সুরা বাকারা: ১৩৭]
সুতরাং সাহাবিদের সমঝের বাইরে গিয়ে যারা কুরআনের ব্যাখ্যা দেয়, এরা সাহাবিদের মতো ইমান আনতে পারেনি। এজন্য এদের থাকা সাবধান থাকা জরুরি। তদুপরি যারা সালাফদের বুঝ ব্যতিরেকে কুরআন-সুন্নাহর ব্যাখ্যা প্রদান করে, এদের জন্য জাহান্নামের ঘোষণা দিয়েছেন মহান আল্লাহ। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেছেন, وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا “যে ব্যক্তি হেদায়েত প্রকাশিত হওয়ার পরও রসুলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে দগ্ধ করব জাহান্নামে, কতইনা মন্দ সে আবাস!” [সুরা নিসা: ১১৫]
আয়াতে ‘মুমিনগণ’ বলতে সাহাবি ও তাঁদের প্রকৃত অনুসারী সালাফগণ উদ্দিষ্ট। কারণ তাঁরাই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মুমিন। এজন্য আয়াতটি উল্লেখ করার পর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হি.) বলেছেন, وقَدْ شَهِدَ اللَّهُ لِأصْحابِ نَبِيِّهِ ﷺ ومَن تَبِعَهُمْ بِإحْسانِ بِالإيمانِ. فَعُلِمَ قَطْعًا أنَّهُمْ المُرادُ بِالآيَةِ الكَرِيمَةِ “স্বয়ং আল্লাহ তাঁর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিবর্গ ও তাঁদের সত্যিকারের অনুসারীবৃন্দের ব্যাপারে ইমানের সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ থেকে অকাট্যভাবে জানা যায়, উক্ত আয়াতে কারিমায় তাঁদেরকেই বোঝানো হয়েছে।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২; তাহকিক: আব্দুর রহমান বিন কাসিম; কিং ফাহাদ গ্লোরিয়াস কুরান প্রিন্টিং কমপ্লেক্স কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১৬ হি./১৯৯৫ খ্রি.]
কোনো সম্প্রদায় যদি সালাফদের বুঝ না মানে, তাহলে ইসলামের নামে নতুন-নতুন দলের উদ্ভব হতে থাকবে। যেমন ইতঃপূর্বে খারেজি, শিয়া, কাদারিয়া, মুরজিয়া, জাহমিয়া, মুতাজিলা, কুল্লাবিয়্যা, আশারিয়া, মাতুরিদিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে, যারা সবাই কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণের দাবি করেছিল নিজেদের সমঝ অনুযায়ী। কারণ সবার সমঝ একরকম নয়। ইমরান নজরের কথা মোতাবেক আমরা কার সমঝ মানব? তাঁর সমঝ একরকম, আশারিয়া ফের্কার সমঝ একরকম, ইখওয়ানিদের সমঝ একরকম, তাবলিগ জামাতের সমঝ একরকম। এভাবে কোনোদিন কেউ সার্বজনীন ও সুষ্ঠু সমাধানে আসতে পারবে না। এজন্য কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণের ক্ষেত্রে সমঝ গ্রহণ করতে হবে পূর্ববর্তী সালাফদের তথা সাহাবি ও তাঁদের প্রকৃত অনুসারীদের।
হয়তো এরকম বাতিল নীতি গ্রহণের কারণেই ভ্রষ্টকারী কথাবার্তা বলা মানুষ ইমরান নজর হুসাইন নিজের বাতিল মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বজনগৃহীত সহিহুল বুখারির হাদিসকে জাল আখ্যা দিয়েছেন এবং সেই হাদিসকে ‘ডাস্টবিনে ফেলার উপযোগী’ বলেছেন! [দেখুন: https://m.youtube.com/watch?v=hrRID3Caf5A (৫৯:০০ মিনিট থেকে ০১:০১:৪৩ মিনিট)]
আরেক বক্তব্যে ভ্রষ্টকারী বিদাতি-গুরু ইমরান নজর সাহেব বিবাহিত ব্যভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করার শরয়ি বিধানকে অস্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, স্রেফ প্রকাশ্যে চাবুক মারতে হবে, রজম (পাথর মেরে হত্যা) করা যাবে না। রজম করার বিধান আগে ছিল, কিন্ত পরবর্তীতে তদস্থলে চাবুক মারার বিধান দেওয়া হয়। [দেখুন: https://youtu.be/DYDry_QyhTM (০১:১০:০০ মিনিট থেকে)] অথচ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন এবং তাঁর তিরোধানের পরে খোলাফায়ে রাশেদিনের সাহাবিগণও রজম করেছেন। [সহিহুল বুখারি, হা: ৬৪৪২; সহিহ মুসলিম, হা: ১৬৯১]
এজন্য বিবাহিত ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীকে রজম করতে হবে, এই বিধানের প্রতি স্বীকৃতিকে আমরা বিশুদ্ধ আকিদার অংশ মনে করি। [দেখুন: ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল বিরচিত উসুলুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৭; শাইখ আহমাদ আন-নাজমির ব্যাখ্যা-সংবলিত শারহু উসুলিস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৯৮; আদ-দারুল আসারিয়্যা (কায়রো) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
এরকম ভ্রষ্টকারী বিপথগামী বিদাতি-গুরুর বই জনসাধারণকে পড়তে বলা তাদেরকে ভ্রষ্টতার পথে আহ্বান করারই নামান্তর। যা করে চলেছেন বিভ্রান্ত বক্তা আবু ত্বহা আদনান। আল্লাহ তাঁকে হেদায়েত দিন এবং তাঁর গোমরাহি থেকে মুসলিম উম্মতকে হেফাজত করুন।
অপরপক্ষে দর্শনশাস্ত্রের বইপুস্তক পড়তে বলা আরেক গোমরাহি। কারণ আবু ত্বহা আদনান যেসব দার্শনিকের নাম নিয়েছেন, যেমন গাযালি, ইবনু রুশদ, ইবনু সিনা, এদের দর্শন মানে সুনিশ্চিত কুফরি দর্শন। এরা যেই দর্শন চর্চা করেছে, তা সরাসরি আল্লাহদ্রোহী কাফির গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল প্রমুখের দর্শন থেকে গৃহীত। নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক। দর্শনচর্চার প্রভাবে ইবনু সিনার মতো নামধারী মুসলিম দার্শনিকরা আল্লাহর সমস্ত গুণাবলি অস্বীকার করত, মহাবিশ্বকে অন্তহীন আদি (যার কোনো শুরু নেই) মনে করত, শারীরিক পুনরুত্থানকে অস্বীকার করত এবং আল্লাহ যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রতিটি বিষয়ের জ্ঞান রাখে সেটা অস্বীকার করত। আস্তাগফিরুল্লাহ! [দেখুন: হাফিয ইবনু হাজার আল-আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ বিরচিত লিসানুল মিযান, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৯১-২৯৩]
এজন্য যারা এসব দর্শন চর্চা করে, তাদের ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ২০৪ হি.) বলেছিলেন, حُكْمِي فِي أَهْلِ الْكَلَامِ أَنْ يُضْرَبُوا بِالْجَرِيدِ وَالنِّعَالِ، وَيُطَافَ بِهِمْ فِي الْعَشَائِرِ وَالْقَبَائِلِ، وَيُقَالُ: هَذَا جَزَاءُ مَنْ تَرَكَ الْكِتَابَ وَالسُّنَّةَ وَأَقْبَلَ عَلَى الْكَلَامِ “দার্শনিকদের ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এদেরকে জুতো ও খেজুর-ডাল দিয়ে পেটাতে হবে এবং গোত্রে-গোত্রে এদেরকে নিয়ে ঘুরতে হবে। আর বলতে হবে, এই হলো তাদের শাস্তি, যারা কুরআন-সুন্নাহ ত্যাগ করে দর্শনচর্চায় ঝুঁকেছে।” [ইবনু আব্দিল বার্র কৃত জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাদলিহ, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৯৪১; ইবনু তাইমিয়া কৃত আল-ফাতওয়া আল-হামাবিয়্যা আল-কুবরা, পৃষ্ঠা: ৫৫৫; যাহাবি কৃত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২৪৫; ইবনু আবিল ইয কৃত শারহুত তাহাবিয়্যা, পৃষ্ঠা: ২৪]
আবু ত্বহা আদনানের মতো যেসব বিভ্রান্ত বক্তা গ্রিকদের থেকে ধার করা কুফরি দর্শন চর্চার দিকে মানুষদের আহ্বান করে, এরা কি ইমাম শাফেয়ির ফায়সালা অনুযায়ী জুতোপেটা খাওয়ার হকদার নয়? সম্মাননীয় পাঠকের হাতেই অর্পণ করলাম এটা বুঝে নেওয়ার ভার। এতদ্ব্যতীত দর্শনচর্চার নিন্দা-সমালোচনায় সু্ন্নাহপন্থি ইমামদের আরও অনেক বক্তব্য আছে, কিন্তু কলেবর সংক্ষেপের জন্য সেসব মূল্যবান বক্তব্য উল্লেখ করা থেকে আমরা বিরত থাকছি।
এখন আমরা সংক্ষেপে আবু ত্বহা আদনানের ব্যক্তীকৃত তিনজন দার্শনিকের চালচিত্র জেনে নিই। প্রথমে জানব, দার্শনিক ইবনু সিনার (মৃত: ৪২৭ হি.) ব্যাপারে। কারণ তিনজনের মধ্যে যুগ-কাল ও দর্শনচর্চায় সে-ই ছিল অগ্রবর্তী। সু্ন্নাহপন্থিদের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭৪৮ হি.) ইবনে সিনার ব্যাপারে বলেছেন, له كتاب (الشفاء) وغيره وأشياء لا تحتمل وقد كفّره الغزالي في كتاب (المنقذ من الضلال) وكفّر الفارابي “তার রয়েছে আশ-শিফা ও অন্যান্য গ্রন্থ এবং এমন কিছু বিষয়, যা কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখে না। গাযালি ‘আল-মুনকিয মিনাদ দালাল’ গ্রন্থে তাকে কাফির বলেছেন এবং ফারাবিকেও কাফির বলেছেন।” [যাহাবি কৃত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ১৭; পৃষ্ঠা: ৫৩৫; মুআসসাসাতুর রিসালা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম ইবনুস সালাহ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৬৪৩ হি.) বলেছেন, لم يكن من علماء الإسلام بل كان شيطاناً من شياطين الإنس “সে ইসলামের আলিমদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বরং সে ছিল মনুষ্য শয়তানদের মধ্যকার একটি শয়তান।” [ফাতাওয়া ইবনিস সালাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২০৯; ইবনুল ইমাদ আল-হাম্বালি কৃত শাযারাতুয যাহাব ফি আখবারি মান যাহাব, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৩৭]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হি.) বলেছেন, وكذلك ابن سينا وغيره، يذكر من التنقص بالصحابة ما ورثه من أبيه وشيعته القرامطة “অনুরূপভাবে ইবনু সিনা প্রমুখ সাহাবিদের ব্যাপারে মানহানিকর কথাবার্তা বলে থাকে, যা ইবনু সিনা তার পিতা ও কারামিতা শিয়াদের নিকট থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছে।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১০৩]
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭৫১ হি.) ইবনু সিনার ব্যাপারে লিখেছেন, فكان من القرامطة الباطنية الذين لا يؤمنون بمبدأ ولا معاد ولا رب ولا رسول مبعوث جاء من عند الله تعالى “সে কারামিতা বাতিনি শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত, যারা সৃষ্টির উদ্ভাবন ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে না, এবং রবের প্রতি ও আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রসুলের প্রতিও ইমান রাখে না।” [ইগাসাতুল লাহফান, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১০৩১; শাইখ বাকার আবু যাইদের মেথাডলজি অনুযায়ী তাহকিককৃত, তাহকিক করেছেন শাইখ মুহাম্মাদ উযায়ের শামস; আল-রাজিহি চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে দারু আলামিল ফাওয়ায়িদ (মক্কা) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪৩২ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
যারা ইবনে সিনার প্রশংসা করে তাদের ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ ফাকিহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—
السؤال: ما رأيكم فيمن يثني على ابن سينا ويجعله من علماء المسلمين؟
الجواب: هذا بين أمرين: إما إنه جاهل ولا يدري عن حال ابن سينا، وهذا لا يحق له أن يتكلم، بل يجب عليه أن يسكت. وإما إنه عالم بحال ابن سينا وكفرياته، فيكون مقرًّا له على ذلك، فيكون حكمه مثل حكم ابن سينا، والعياذ بالله؛ لأنه أقره على ذلك وزكاه. والأمر خطير جدًّا. لكن بعض الناس يثني على ابن سينا من ناحية أنه طبيب فقط، وهذه حرفة دنيوية، هو طبيب، وفي الكفار من هو أحذق منه في الطب، فلماذا يخص ابن سينا؟ يقولون: لأنه ينتسب للإسلام، وهذا مفخرة للإسلام. نقول: الإسلام بريء منه، والإسلام غني عنه. والحاصل: أنه لا يُمدح ولا يزكَّى؛ لأنه باطني من الباطنية، فيلسوف ملحد، يقول بجواز قدم العالم.
প্রশ্ন: “যে ব্যক্তি ইবনে সিনার প্রশংসা করে এবং তাকে মুসলিম জনতার আলিমদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করে, তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?”
উত্তর: “সে দুটি বিষয়ের কোনো একটির আওতাভুক্ত হবে। (১) হয় সে একজন অজ্ঞ লোক, যে ইবনে সিনার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। তার এই বিষয়ে কথা বলার কোনো অধিকার নেই, বরং তার জন্য এ বিষয়ে চুপ থাকা ওয়াজিব। (২) আর না হয় সে ইবনে সিনা এবং তার কুফরি বিষয়াবলি সম্পর্কে জানে, কিন্তু সে তাকে সেই কুফরির ব্যাপারে সমর্থন করে। এক্ষেত্রে তার হুকুম ইবনে সিনার হুকুমের মতোই। আল্লাহর কাছে এ থেকে পানা চাই। কেননা সে তাকে তার কুফরির ব্যাপারে সমর্থন করছে। এটি খুবই বিপজ্জনক বিষয়। কিন্তু কিছু লোক ইবনে সিনার প্রশংসা করে, এই দৃষ্টিকোণ থেকে যে, সে একজন চিকিৎসাবিদ। এটি একটি দুনিয়াবি পেশা। সে একজন চিকিৎসক। কাফিরদের মধ্যে তার চেয়েও বিজ্ঞ চিকিৎসক আছে। কিন্তু কেন ইবনে সিনাকে (প্রশংসার ব্যাপারে) খাস করা হয়? তারা বলে, কারণ সে ইসলামের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। এটা ইসলামের জন্য একটি গৌরবের বিষয়। আমরা বলি, ইসলাম তার থেকে মুক্ত এবং ইসলাম তার থেকে অমুখাপেক্ষী। মোটকথা, তার প্রশংসা করা যাবে না এবং তার গুণকীর্তন করা যাবে না। কেননা সে একজন বাতিনি এবং নাস্তিক দার্শনিক। সে বলত, মহাবিশ্ব হলো অনন্ত আদি (যার কোনো শুরু নেই)।” [আত-তালিকুল মুখতাসার আলাল কাসিদাতিন নুনিয়্যা; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৩২৮]الجواب: هذا بين أمرين: إما إنه جاهل ولا يدري عن حال ابن سينا، وهذا لا يحق له أن يتكلم، بل يجب عليه أن يسكت. وإما إنه عالم بحال ابن سينا وكفرياته، فيكون مقرًّا له على ذلك، فيكون حكمه مثل حكم ابن سينا، والعياذ بالله؛ لأنه أقره على ذلك وزكاه. والأمر خطير جدًّا. لكن بعض الناس يثني على ابن سينا من ناحية أنه طبيب فقط، وهذه حرفة دنيوية، هو طبيب، وفي الكفار من هو أحذق منه في الطب، فلماذا يخص ابن سينا؟ يقولون: لأنه ينتسب للإسلام، وهذا مفخرة للإسلام. نقول: الإسلام بريء منه، والإسلام غني عنه. والحاصل: أنه لا يُمدح ولا يزكَّى؛ لأنه باطني من الباطنية، فيلسوف ملحد، يقول بجواز قدم العالم.
প্রশ্ন: “যে ব্যক্তি ইবনে সিনার প্রশংসা করে এবং তাকে মুসলিম জনতার আলিমদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করে, তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?”
পরবর্তীতে আগমন ঘটে দার্শনিক ইবনু রুশদ সাহেবের (মৃত: ৫৯৫ হি.)। ইবনু রুশদের ভয়ানক কুফরি আকিদার দরুন তাকে গণবয়কট করা হয়েছিল এবং তার জীবদ্দশাতেই তার দার্শনিক বইগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। ইবনে সিনার মতো ইবনু রুশদও এরিস্টটলের দর্শন অনুসরণ করত এবং এরিস্টটলীয় দর্শনের ব্যাখ্যা দিত। গাযালির সাথে ইবনু রুশদের আকিদাগত বিরোধ ছিল। এজন্য গাযালির খণ্ডন করে এরিস্টটলীয় দর্শনের পক্ষে ইবনু রুশদ কিতাব লিখেছিল। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হি.) দার্শনিক ইবনু রুশদের ব্যাপারে বলেছেন, هو من أتبع الناس لأقوال أرسطو “সে ছিল এরিস্টটলের মতবাদগুলোর সবচেয়ে বড়ো অনুসারীদের অন্যতম।” [ইবনু তাইমিয়া কৃত বায়ানু তালবিসিল জাহমিয়্যা, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪০৩; সৌদি ধর্মমন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কিং ফাহাদ গ্লোরিয়াস কুরান প্রিন্টিং কমপ্লেক্স কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৬ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেছেন, وابْنُ سِينا وأمْثالُهُ لَمّا عَرَفُوا أنَّ كَلامَ الرَّسُولِ لا يَحْتَمِلُ هَذِهِ التَّأْوِيلاتِ الفَلْسَفِيَّةَ؛ بَلْ قَدْ عَرَفُوا أنَّهُ أرادَ مَفْهُومَ الخِطابِ: سَلَكَ مَسْلَكَ التَّخْيِيلِ وقالَ: إنّهُ خاطَبَ الجُمْهُورَ بِما يُخَيَّلُ إلَيْهِمْ؛ مَعَ عِلْمِهِ أنَّ الحَقَّ فِي نَفْسِ الأمْرِ لَيْسَ كَذَلِكَ. فَهَؤُلاءِ يَقُولُونَ: إنّ الرُّسُلَ كَذَبُوا لِلْمَصْلَحَةِ. وهَذا طَرِيقُ ابْنِ رُشْدٍ الحَفِيدِ وأمْثالِهِ مِن الباطِنِيَّةِ “ইবনে সিনা ও তার সমমনা লোকেরা যখন উপলব্ধি করেছিল, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথার এসব দার্শনিক ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, এমনকি এটাও উপলব্ধি করেছিল যে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলত কথার বাহ্যিক সমঝই উদ্দেশ্য করেছেন, তখন তারা খেয়াল-দেখানোর মতাদর্শ অবলম্বন করল এবং বলল, নবিজি আম জনসাধারণের মনে যা উদ্রেক হয় সে অনুযায়ীই তাদের উদ্দেশ্যে শরিয়তের কথা বলেছেন। যদিও তিনি জানতেন, জনগণের উদ্দেশ্যে বলা এসব কথা সত্যিকারের হক নয়! এরা (দার্শনিকরা) বলত, রসুলগণ কল্যাণের স্বার্থে এসব বিষয়ে মিথ্যা বলেছেন। এটাই ছিল দার্শনিক ইবনু রুশদ ও তার সমমনা বাতিনি ফের্কাভুক্ত লোকদের মতাদর্শ।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ১৫৭; তাহকিক: আব্দুর রহমান বিন কাসিম; কিং ফাহাদ গ্লোরিয়াস কুরান প্রিন্টিং কমপ্লেক্স কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১৬ হি./১৯৯৫ খ্রি.]
অর্থাৎ ইবনু রুশদ ও ইবনে সিনার মতো কাফির-গুরুদের মতে রসুলগণ জনগণকে বোঝানোর জন্য মিথ্যা বলেছেন, যখন তাঁরা জানিয়েছেন, মহান আল্লাহ আরশের ওপর ওঠেছেন, প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তিনি দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, কেয়ামতের দিন সকল আসমান আল্লাহর ডান হাতে থাকবে, পুরো পৃথিবী আল্লাহর হাতের কব্জায় থাকবে! এগুলো রসুলগণ বললেও এসব বিষয় প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়! নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক।
আশারি দার্শনিক আবু হামিদ আল-গাযালি (মৃত: ৫০৫ হি.) ছিলেন দার্শনিক ইবনু রুশদের আগের জামানার মানুষ। তিনি ইবনে সিনার দর্শন দ্বারা চরমভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। বিদাতি ফের্কা আশারি মতবাদের বিরাট খাদেম ছিলেন গাযালি। তবে মনে করা হয়, জীবন-সায়াহ্নে পৌঁছে ভ্রান্ত-দর্শনচর্চার জন্য তিনি অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং সালাফদের বিশুদ্ধ আকিদায় ফিরে এসেছিলেন।
তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘ইহইয়াউ উলুমিদ্দিনের’ ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
والْإِحْيَاءُ فِيهِ فَوَائِدُ كَثِيرَةٌ؛ لَكِنْ فِيهِ مَوَادُّ مَذْمُومَةٌ فَإِنَّهُ فِيهِ مَوَادُّ فَاسِدَةٌ مِنْ كَلَامِ الْفَلَاسِفَةِ تَتَعَلَّقُ بِالتَّوْحِيدِ وَالنُّبُوَّةِ وَالْمَعَادِ فَإِذَا ذَكَرَ مَعَارِفَ الصُّوفِيَّةِ كَانَ بِمَنْزِلَةِ مَنْ أَخَذَ عَدُوًّا لِلْمُسْلِمِينَ أَلْبَسَهُ ثِيَابَ الْمُسْلِمِينَ. وَقَدْ أَنْكَرَ أَئِمَّةُ الدِّينِ عَلَى أَبِي حَامِدٍ هَذَا فِي كُتُبِهِ. وَقَالُوا: مَرَّضَهُ الشِّفَاءُ يَعْنِي شِفَاءَ ابْنِ سِينَا فِي الْفَلْسَفَةِ. وَفِيهِ أَحَادِيثُ وَآثَارٌ ضَعِيفَةٌ؛ بَلْ مَوْضُوعَةٌ كَثِيرَةٌ. وَفِيهِ أَشْيَاءُ مِنْ أَغَالِيطِ الصُّوفِيَّةِ وَتُرَّهَاتِهِمْ.
“ইহইয়া কিতাবে অনেক ফলপ্রসূ বিষয় আছে। কিন্তু এতে নিন্দনীয় বিষয়ও রয়েছে। তাওহিদ, নবুয়ত ও পরকাল বিষয়ে দার্শনিকদের বক্তব্য রয়েছে এতে, যেগুলো মূলত নানাবিধ বিভ্রান্ত বিষয়। তিনি (গাযালি) যখন সুফিদের মারেফতি বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন, তখন এমন পর্যায়ে চলে গেছেন, যেন তিনি মুসলিমদের কোনো শত্রুকে ধরে মুসলিমদের পোশাক চড়িয়েছেন তার গায়ে। দিনের ইমামগণ এসব গ্রন্থের ব্যাপারে আবু হামিদের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘ইবনে সিনার লেখা দর্শন-গ্রন্থ ‘আশ-শিফা’ তাকে রোগাগ্রস্ত করেছে।’ ইহইয়া কিতাবে রয়েছে অনেক জইফ হাদিস, বরং প্রচুর জাল হাদিসও রয়েছে তাতে। এছাড়াও তাতে রয়েছে সুফিদের নানাবিধ ভ্রান্তিকর বিষয় ও বাজে জিনিসপত্র।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৫৫১-৫৫২]
ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন গ্রন্থে দুনিয়াবিমুখতা, ইবাদতের জন্য সাধনার মতো অনেক ভালো জিনিস রয়েছে। কিন্তু এই ভালোটুকু পাওয়ার আশায় সাধারণ জনগণের জন্য এই বই পড়ার অনুমতি দেন না সু্ন্নাহপন্থি উলামায়ে কেরাম। তবে কথিত আছে, الغزالي مات وكتاب «الصحيح» للبخاري على صدره “গাযালি মারা গিয়েছেন, এমতাবস্থায় তাঁর বুকের ওপরে ছিল সহিহুল বুখারি।” এই বিখ্যাত কথাটি অনেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া, ইমাম ইবনু কাসির, ইমাম ইবনু আবিল ইয আল-হানাফি, মোল্লা আলি কারি হানাফি, ইমাম সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী, ইমাম মুহাম্মাদ আল-আমিন আশ-শানকিতি-সহ আরও অনেকে। এ থেকে মনে করা হয়, ইহইয়া-সহ আরও কিতাবে গাযালি যেসব বিভ্রান্তিকর আকিদা পেশ করেছিলেন, সেগুলো থেকে তিনি তওবা করে ফিরে এসেছেন শেষ জীবনে। [দেখুন: মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৭২-৭৩; বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৫৫; শারহুত তাহাবিয়্যা, পৃষ্ঠা: ১৭৭; আত-তাজুল মুকাল্লাল মিন মাআসিরিত তিরাযিল আখিরি ওয়াল আওয়্যাল, পৃষ্ঠা: ৩৭১; আদাওয়াউল বায়ান, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৪৭৫]“ইহইয়া কিতাবে অনেক ফলপ্রসূ বিষয় আছে। কিন্তু এতে নিন্দনীয় বিষয়ও রয়েছে। তাওহিদ, নবুয়ত ও পরকাল বিষয়ে দার্শনিকদের বক্তব্য রয়েছে এতে, যেগুলো মূলত নানাবিধ বিভ্রান্ত বিষয়। তিনি (গাযালি) যখন সুফিদের মারেফতি বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন, তখন এমন পর্যায়ে চলে গেছেন, যেন তিনি মুসলিমদের কোনো শত্রুকে ধরে মুসলিমদের পোশাক চড়িয়েছেন তার গায়ে। দিনের ইমামগণ এসব গ্রন্থের ব্যাপারে আবু হামিদের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘ইবনে সিনার লেখা দর্শন-গ্রন্থ ‘আশ-শিফা’ তাকে রোগাগ্রস্ত করেছে।’ ইহইয়া কিতাবে রয়েছে অনেক জইফ হাদিস, বরং প্রচুর জাল হাদিসও রয়েছে তাতে। এছাড়াও তাতে রয়েছে সুফিদের নানাবিধ ভ্রান্তিকর বিষয় ও বাজে জিনিসপত্র।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৫৫১-৫৫২]
আবু ত্বহা আদনান-সহ আমাদের সবারই সর্বদা মনে রাখা উচিত, ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাব, নবিজির সুন্নাহ এবং সালাফদের সমঝই যথেষ্ট। দ্বাদশ হিজরি শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের সুযোগ্য পৌত্র ইমাম আব্দুর রাহমান বিন হাসান আলুশ শাইখ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১২৮৫ হি./১৮৬৯ খ্রি.) বলেছেন, ومن له نهمة في طلب الأدلة على الحق، ففي كتاب الله، وسنّة رسوله، ما يكفي ويشفي؛ وهما سلاح كل موحد ومثبت، لكن كتب أهل السنّة تزيد الراغب وتعينه على الفهم وعندكم من مصنفات شيخنا -رحمه الله- ما يكفي مع التأمل؛ فيجب عليكم هجر أهل البدع، والإنكار عليهم “হকের দলিল অন্বেষণে যার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কিতাব ও তদীয় রসুলের সুন্নাহতেই যথেষ্ট ও সন্তোষজনক উপাদান রয়েছে। এই দুটি জিনিস (কিতাব ও সুন্নাহ) প্রত্যেক তাওহিদবাদী ও দৃঢ়পদ জ্ঞানীর অস্ত্র। কিন্তু আহলুস সুন্নাহর রচিত গ্রন্থাবলি আগ্রহী ব্যক্তিকে পাথেয় যোগায় এবং (কিতাব ও সুন্নাহ) বুঝতে সাহায্য করে। তোমাদের কাছে আমাদের শাইখ রাহিমাহুল্লাহর গ্রন্থাবলি রয়েছে, চিন্তাভাবনা করে পড়লে এগুলো আমাদের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং তোমাদের জন্য বিদাতিদের বর্জন করা এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক।” [আদ-দুরারুস সানিয়্যা, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২১১; তাহকিক: আল্লামা আব্দুর রহমান বিন কাসিম রাহিমাহুল্লাহ]
আল্লাহ আমাদেরকে শাইখ রাহিমাহুল্লাহর উক্ত মূল্যবান কথা বোঝার এবং তা আমলে বাস্তবায়ন করার তৌফিক দিন। আমিন।
লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।