আপনি নিজ পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দিচ্ছেন ; অথচ তারা এতটুকুও কর্ণপাত করছে না, এমতাবস্থায় আপনার করণীয় কি হতে পারে ? এ সম্পর্কে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন সৌদি উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য জনাব মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
তারা যদি একেবারেই সালাত না পড়ে তাহলে তারা কাফির, মুরতাদ ও শরীয়তের গন্ডী থেকে বহিষ্কৃত। তাদের সাথে বসবাস করা আপনার জন্য জায়েয হবে না। তবে ধৈর্যের সাথে তাদেরকে বার বার দাওয়াত দিতে হবে। হয়তো কোন এক সময় আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে হিদায়েত দিয়ে দিবেন। কুর'আন, হাদীস, সাহাবাদের বাণী ও বিশুদ্ধ দৃষ্টিকোণ সালাত ত্যাগকারী কাফির হওয়া প্রমাণ করে।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
“অতএব তারা যদি তাওবা করে নেয় এবং সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদেরই মুসলিম ভাই”। (সূরা তাওবা : ১১)
অত্র আয়াত এটাই বুঝায় যে, তারা যদি এ কাজগুলো সম্পাদন না করে তাহলে তারা মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর এটা সবারই জানা কথা যে, গুনাহ যত বড়ই হোক না কেন তা মুসলিম ভ্রাতৃত্যবোধকে বিনষ্ট করে না। তবে তখনই ভ্রাতৃত্যবোধ বিনষ্ট হয় যখন কেউ ইসলামের গণ্ডী থেকে বের হয়ে যায়। রাসূল (স) ইরশাদ করেনঃ
“কোন ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মাঝে ব্যবধান শুধু সালাত না পড়ারই। যে সালাত ছেড়ে দিলো সে কাফির হয়ে গেলো”।১
রাসূল (স) আরো বলেনঃ
“আমাদের ও কাফিরদের মাঝে ব্যবধান শুধু সালাতেরই। যে সালাত ত্যাগ করলো সে কাফির হয়ে গেলো”।২
"উমর (রা:) বলেনঃ
“সালাত ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফির”।৩
'আলী (রা:) বলেনঃ
“যে সালাত পড়ে না সে কাফির”।৪
আব্দুল্লাহ বিন্ মাসউদ (রা:) বলেনঃ
“যে সালাত পড়ে না সে মুসলিম নয়”।৫
আব্দুল্লাহ্ বিন শাক্বীক তাবেয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
“সাহাবায়ে কেরাম সালাত ছাড়া অন্য কোন আমল পরিত্যাগ করাকে কুফুরী মনে করতেন না”।৬
কোন সুস্থ্য মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তি ও এমন মনে করবে না যে, কারো অন্তরে এতটুকু হলেও ঈমান আছে অথচ সে সালাতের গুরুত্ব ও আবশ্যকতা জেনে শুনেও বরাবরই সালাত পড়ছে না।
যারা সালাত ত্যাগকারীকে কাফির বলে না তাদের প্রমাণাদি গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তা চারের এক অবস্থা থেকে খালি নয়। তা নিম্নরূপঃ
১. তারা যে প্রমাণাদি নিজের সপক্ষে উল্লেখ করে তা আদৌ তাদের সপক্ষে নয়।
২. প্রমাণগুলোতে এমন বিশেষণের উল্লেখ রয়েছে যা পাওয়া গেলে কেউ সালাত না পড়ে থাকতে পারে না।
৩. প্রমাণগুলোতে এমন অবস্থার উল্লেখ রয়েছে যা পাওয়া গেলে কোন ব্যক্তি সালাত না পড়লে তাকে অপারগ মনে করা হয়।
৪. প্রমাণগুলোর ব্যাপকতা রয়েছে যদ্দরুন সালাত ত্যাগকারী কাফির হওয়ার হাদীসগুলো কর্তৃক ও গুলোকে নির্দিষ্ট করতে হবে।
এ ছাড়া ও কোন প্রমাণে এমন উল্লেখ নেই যে, সালাত ত্যাগকারী মু'মিন অথবা সে জান্নাতে যাবে বা সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে ইত্যাদি । যদ্দরুন কুফর শব্দকে অকৃতজ্ঞতা তথা ছোট ধরণের কুফর কর্তৃক ব্যাখ্যা দেয়ার কোন মানে হয় না ।
যখন আমরা জানতে পারলাম; সালাত ত্যাগকারী সত্যিকারার্থে কাফির তখন তার উপর মুরতাদের শরয়ী বিধানগুলো অনিবার্যভাবে প্রযোজ্য।
১. (মুসলিম, হাদীস ৮২ তিরমিযী, হাদীস ২৬১৯ ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৭)
২. (তিরমিযী, হাদীস ২৬২১ ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৮ মুস্তাদ্রাক, হাদীস ১১ আহমাদ, হাদীস ২২৯৮৭ বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১ ইবনে হিব্বান / ইহ্সান, হাদীস ১৪৫৪ ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস ৩০৩৯৬ দারাকুত্বনী ২/৫২)
৩. (বায়হাকী, হাদীস ১৫৫৯, ৬২৯১)
৪. (বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১)
৫. (বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১)
৬. (তিরমিযী, হাদীস ২৬22)
তারা যদি একেবারেই সালাত না পড়ে তাহলে তারা কাফির, মুরতাদ ও শরীয়তের গন্ডী থেকে বহিষ্কৃত। তাদের সাথে বসবাস করা আপনার জন্য জায়েয হবে না। তবে ধৈর্যের সাথে তাদেরকে বার বার দাওয়াত দিতে হবে। হয়তো কোন এক সময় আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে হিদায়েত দিয়ে দিবেন। কুর'আন, হাদীস, সাহাবাদের বাণী ও বিশুদ্ধ দৃষ্টিকোণ সালাত ত্যাগকারী কাফির হওয়া প্রমাণ করে।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
فَانْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ
“অতএব তারা যদি তাওবা করে নেয় এবং সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদেরই মুসলিম ভাই”। (সূরা তাওবা : ১১)
অত্র আয়াত এটাই বুঝায় যে, তারা যদি এ কাজগুলো সম্পাদন না করে তাহলে তারা মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর এটা সবারই জানা কথা যে, গুনাহ যত বড়ই হোক না কেন তা মুসলিম ভ্রাতৃত্যবোধকে বিনষ্ট করে না। তবে তখনই ভ্রাতৃত্যবোধ বিনষ্ট হয় যখন কেউ ইসলামের গণ্ডী থেকে বের হয়ে যায়। রাসূল (স) ইরশাদ করেনঃ
بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلَاةِ
“কোন ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মাঝে ব্যবধান শুধু সালাত না পড়ারই। যে সালাত ছেড়ে দিলো সে কাফির হয়ে গেলো”।১
রাসূল (স) আরো বলেনঃ
العَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَر
“আমাদের ও কাফিরদের মাঝে ব্যবধান শুধু সালাতেরই। যে সালাত ত্যাগ করলো সে কাফির হয়ে গেলো”।২
"উমর (রা:) বলেনঃ
لَا حَظَّ فِي الإِسْلَامِ لَمِنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ
“সালাত ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফির”।৩
'আলী (রা:) বলেনঃ
مَنْ لَمْ يُصَلِّ فَهُوَ كَافِرٌ
“যে সালাত পড়ে না সে কাফির”।৪
আব্দুল্লাহ বিন্ মাসউদ (রা:) বলেনঃ
مَنْ لَمْ يُصَلِّ فَلَا دِيْنَ لَهُ
“যে সালাত পড়ে না সে মুসলিম নয়”।৫
আব্দুল্লাহ্ বিন শাক্বীক তাবেয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
كَانَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ لا يَرَوْنَ شَيْئاً مِنْ الْأَعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ
“সাহাবায়ে কেরাম সালাত ছাড়া অন্য কোন আমল পরিত্যাগ করাকে কুফুরী মনে করতেন না”।৬
কোন সুস্থ্য মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তি ও এমন মনে করবে না যে, কারো অন্তরে এতটুকু হলেও ঈমান আছে অথচ সে সালাতের গুরুত্ব ও আবশ্যকতা জেনে শুনেও বরাবরই সালাত পড়ছে না।
যারা সালাত ত্যাগকারীকে কাফির বলে না তাদের প্রমাণাদি গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তা চারের এক অবস্থা থেকে খালি নয়। তা নিম্নরূপঃ
১. তারা যে প্রমাণাদি নিজের সপক্ষে উল্লেখ করে তা আদৌ তাদের সপক্ষে নয়।
২. প্রমাণগুলোতে এমন বিশেষণের উল্লেখ রয়েছে যা পাওয়া গেলে কেউ সালাত না পড়ে থাকতে পারে না।
৩. প্রমাণগুলোতে এমন অবস্থার উল্লেখ রয়েছে যা পাওয়া গেলে কোন ব্যক্তি সালাত না পড়লে তাকে অপারগ মনে করা হয়।
৪. প্রমাণগুলোর ব্যাপকতা রয়েছে যদ্দরুন সালাত ত্যাগকারী কাফির হওয়ার হাদীসগুলো কর্তৃক ও গুলোকে নির্দিষ্ট করতে হবে।
এ ছাড়া ও কোন প্রমাণে এমন উল্লেখ নেই যে, সালাত ত্যাগকারী মু'মিন অথবা সে জান্নাতে যাবে বা সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে ইত্যাদি । যদ্দরুন কুফর শব্দকে অকৃতজ্ঞতা তথা ছোট ধরণের কুফর কর্তৃক ব্যাখ্যা দেয়ার কোন মানে হয় না ।
যখন আমরা জানতে পারলাম; সালাত ত্যাগকারী সত্যিকারার্থে কাফির তখন তার উপর মুরতাদের শরয়ী বিধানগুলো অনিবার্যভাবে প্রযোজ্য।
১. (মুসলিম, হাদীস ৮২ তিরমিযী, হাদীস ২৬১৯ ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৭)
২. (তিরমিযী, হাদীস ২৬২১ ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৮ মুস্তাদ্রাক, হাদীস ১১ আহমাদ, হাদীস ২২৯৮৭ বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১ ইবনে হিব্বান / ইহ্সান, হাদীস ১৪৫৪ ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস ৩০৩৯৬ দারাকুত্বনী ২/৫২)
৩. (বায়হাকী, হাদীস ১৫৫৯, ৬২৯১)
৪. (বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১)
৫. (বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১)
৬. (তিরমিযী, হাদীস ২৬22)