সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

শাসক সিরিজ - ৫ ( কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার বিধান)

কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার বিধান।

উপস্থাপকঃ কিছু ছাত্র ভাইয়ের পক্ষ থেকে প্রশ্ন এসেছে, কমিউনিস্ট সরকার শাসিত দেশে (বিদ্রোহের) শরয়ী হুকুম কি? তারা কয়েকটি বছর চেষ্টা চালিয়েছে যুবকদেরকে এই কুফরী কমিউনিস্ট শাসন পরিবর্তনের প্রশিক্ষণ দিতে, এমনকি তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বড় সংখ্যক যুবক যোগার করতে সক্ষম হয়েছে। বেশি সংখ্যক ছেলেরাই খুব ভালোভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং তারা বিশুদ্ধ আকীদা ধারণ করে। তারা এমন অস্ত্রের প্রস্তুতি নিয়েছে, যেগুলোতে সমস্যা নেই।
তারা কি এখন এই কুফরী শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেবে নাকি কুফরী শাসিত হয়েই থাকবে?

আর জিহাদের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সেই দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অপহরণ করার হুকুম কি?

শায়খঃ প্রশ্নটি এই উপমা মনে করিয়ে দিচ্ছে, "জ্বর বাড়ছে, তাপমাত্রা কমছে"!! অর্থাৎ অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। কোনো সংস্কার ও সংশোধনই সম্ভব নয় একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদ্ধতির অনুকরণ ছাড়া -সেটা যে ধরনেরই হোক না কেন, বিশেষত এই ভয়ঙ্কর বৈপ্লবিক সংস্কার, প্রশ্নে যেটার প্রতি ইশারা করা হয়েছে-। যেখানে সব মুসলিমই প্রতিটি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ রাসূলের অনুসরণ করবে।

কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا​
(নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য তোমাদের রাসূলের মাঝেই নিহিত রয়েছে অতিউত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহর (সাক্ষাতের), পরকালীন দিবসের আশা করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে।) -সূরা আহযাব, ২১।
এই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, রাসূল ﷺ আমাদের সব বিষয়েই আদর্শ ছোট হোক বা বড়।

অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব খুতবা পাঠ করতেন সেগুলোতে বলতেন: "অতঃপর, সবচেয়ে উত্তম বাণী হলো আল্লাহর বাণী। এবং সর্বোত্তম পথনির্দেশিকা হচ্ছে রাসূলের পথনির্দেশিকা।"

বিষয়টা যেহেতু এরকমই, সেহেতু প্রতিটি মুসলিম অথবা ইসলামী দলকে আবশ্যিকভাবে তাদের সামনে রাসূলের পদ্ধতি রাখতে হবে, তারা যে কাজই করতে চাহে না কেন। খেয়াল করবে যে, রাসূল ﷺ কি এভাবে করেছেন? যাতে করে তারা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারে।

এটা একটা প্রাথমিক ধারণা, শুধুমাত্র জেনে রাখার জন্য নয়; বরং যুবকদের মনে একদম বদ্ধমূল করে রাখতে হবে এটাকে। তারা যে কাজই করতে যাবে, সেটাতেই তারা রাসূলের পথনির্দেশিকা খেয়াল করবে।

এখন "ইতিহাস পুনরাবৃত্তিময়" কথাটি বাস্তব হয়েছে। আমরা এখন শাসকদের জুলুম ও কাফেরদের থেকে নেওয়া আইন কানুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি; যেসব কাফেররা মুসলিম দেশগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, চলে যাওয়ার সময় তাদের পিছনে তারা ঐ সমস্ত আল্লাহর হুকুম বিরোধী আইন কানুন রেখে গেছে। এখনো শাসকরা ঐসব আল্লাহর হুকুম বিরোধী আইন দিয়েই দেশ শাসন করছে!!
আমাদের অভিযোগ এটা, এছাড়াও এইসমস্ত আল্লাহর হুকুম বিরোধী আইন দিয়েই আমাদেরকে চালাচ্ছে, আমরা জুলুম, জেল, হত্যা ইত্যাদিতে আক্রান্ত হচ্ছি। এগুলো তো সবার জানা ফিতনা।

আমরা এই ফিতনা থেকে মুক্তি চাই। এই ধরনের শাসকদের থেকে বের হতে চাই, যেগুলো আল্লাহর শরীয়ত বিরোধী; সেটা কমিউনিস্ট হোক আর ডেমোক্রেটিক, ইসলাম বিরোধী যে ধরনের বিচার ব্যবস্থাই হোক না কেন। আমরা এসব থেকে মুক্তি চাই। কিন্তু মুক্তির উপায় কি?

মুক্তির উপায় একমাত্র রাসূল ﷺ এর পদ্ধতিতেই। রাসূল ﷺ মক্কায় তাগুত শাসনের অধীনে ছিলেন দীর্ঘ ১৩টি বছর। এই তেরো বছর তিনি কী করেছেন? শুধু মানুষকে লা-শরীক আল্লাহর জন্য ইবাদতের প্রতি মানুষকে ডেকেছেন, তাদেরকে স্বীয় রবের শরীয়ত সম্পর্কে জানানো ও (এই সভ্যতায় মানুষকে) সভ্যকরণের চেষ্টা চালিয়েছেন; এছাড়া আর কিছুই করেননি তিনি। পরিস্থিতি কঠিন হয়ে গেলে তিনি মুসলিমদেরকে হাবশায় হিজরত করতে নির্দেশ দিলেন; কারণ সেখানে একজন নাজ্জাশী নামে পরিচিত একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিল। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, যারা এই নির্যাতনকারী শাসনের অধীনে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবে না, তারা যেন স্বাধীনতা ও ন্যায়পরায়ণতার ঐ দেশে হিজরত করে। এর পূর্ণ বিবরণ সীরাতের গ্রন্থগুলোতে আছে।

এরপর তো খোদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ই মদীনায় হিজরত করতে আদিষ্ট হলেন; এটা হয়েছিল আকাবার শপথের মাধ্যমে সেখানকার আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী কিছু ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে, যাদের প্রতি রাসূল ﷺ নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। মদীনায় তার অনুসারীগণ একটা ভালো অবস্থানে রয়েছে, এই অবস্থায় তিনি সেখানে হিজরত করলেন। সেখানেই তাদের এই দাওয়াত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, মদীনার অধিকাংশ বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যায়। এরপর মদীনায় -মুশরিকদের সাথে যুদ্ধের পাশাপাশি- মুসলিমদের ও মক্কা থেকে আগত মুশরিকদের মাঝে -যারা এই মহান দাওয়াতকে সমূলে বিনাশ করতে এসেছিল- বিভিন্ন যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আরো যেসব ঘটনা রয়েছে সীরাত গ্রন্থগুলোতে।

এখন আমরা ঐসব যুবকদের কর্মকাণ্ড দেখে অবাক হই, যারা রাসূলের পদ্ধতির বিরুদ্ধাচরণ করে জিহাদের ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়ো করে -অথচ এটা একদিন হবেই-।

কিন্তু এই জিহাদের পূর্বের কিছু বিষয় রয়েছে, যা পূরণ হতে হবে; তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, ইসলাম সম্পর্কে বিশুদ্ধ বুঝ এবং পূর্ণরূপে ঐসব মুসলিমদের উপর বাস্তবায়ন করা। যদি এইরকম সঠিক বুঝ সম্পন্ন ও নিজেদের মাঝে বাস্তবায়নকারী মুসলিমদের সংখ্যা বারো হাজারে পৌঁছে, তখন তাদেরকে আর যেচে পড়ে বিদ্রোহ করতে হবে না, বরং তাদের উপরই হামলা আসবে; যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ঘটেছিল। তারা এইসব মুসলিমদের উপর হামলে পড়বে, এমনকি মুসলিমরা সেখান থেকে হিজরত করতে বাধ্য হতে পারে -সেই হিজরত তাদেরকে পূর্বের চেয়েও শক্তিশালী হওয়ার জন্য বা অন্য দেশে তাদের জামা'আতকে শক্তিশালী করার জন্য হোক-। তবে (খেয়াল রাখতে হবে) এগুলো সবই আল্লাহর হাতে। কিন্তু এখানে মুখ্য বিষয় হলো, প্রশ্নোল্লিখিত জিহাদ ও আল্লাহর বিধান বাদে অন্য বিধান দিয়ে বিচারকারীদের মূলোৎপাটন করতে গেলে অবশ্যই ইসলামের সঠিক বুঝ লাগবে, পাশাপাশি মুসলিমদেরকে এর পূর্ণ অনুসারী হতে হবে।

কিন্তু আমার বিশ্বাস, -দুঃখজনক হলেও সত্য যে- এখনকার কোনো মুসলিম ভূখন্ডেই এই ধরনের লোকবল পাওয়া যাবে না। কেননা, তাদের (তথাকথিত ইসলামী দলগুলোর) কার্যক্রম সম্পূর্ণ গোপনে, তার মানে হলো: এদের জামা'আতও গঠন হবে না, শক্তিও প্রকাশ পাবে না। নাহলে তারা কেন চাঁদহীন রাতের অন্ধকারে তাদের কার্যক্রম চালায়, কেন তারা অন্যান্য (সাধারণ) মুসলমানদের সহযোগিতা নেয় না?!! যেসব মুসলিমরা তাদের সাথে একতাবদ্ধ হত তাদের (কথিত) সরল ইসলামী রূপরেখাতে এবং সঠিক ইসলাম বাস্তবায়নে!!!

আপনারা হয়তোবা জানেন, কোনো এক মুসলিম দেশে বিশেষ একটি জামা'আত বা দল এই উদ্দেশ্যে কার্যক্রম শুরু করেছিল, কিন্তু ফলাফল শুধু এটাই হয়েছিল যে, দাওয়াত পিছে গেছে।

যেমন সর্বশেষ আমার মাতৃভূমি সিরিয়াতে ঘটে যাওয়া। বা'সীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাগ্নি জ্বলে উঠেছিলো, অথচ এই বা'সী মতবাদ নিঃসন্দেহে অনৈসলামিক আইন, বরং এটা কুফরী আইন। সিরিয়ার মুসলিমরাই জানত না যে, এখানে একটা গোপন ইসলামী দল আছে!! যদি তারা নিজেদের অবস্থানের ঘোষণা দিত, তাহলে আখিরাতমুখী সব মুসলিমই তাদের দলে যোগ দিত। কিন্তু ফলাফল কি ছিল?? আপনারা সবাই জানেন যে, এই আন্দোলনকে একদম মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে, নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ হাজার হাজার মুসলিমের রক্ত প্রবাহিত হয়েছে, বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে, এমনকি মসজিদকে মুসল্লীসহ ধ্বংস করা হয়েছে।

কেন??
কারণ তারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূল ﷺ এর নীতি অবলম্বন করেনি।

এজন্যই আমরা উক্ত প্রশ্নের জবাবে সংক্ষিপ্ত ভাষায় বলি: আমরা কোনো ধরনের বৈপ্লবিক আন্দোলনের উপদেশ কাউকে দেই না দুইটি কারণে:
১) রাসূল ﷺ এর পথনির্দেশের বিরোধী হওয়ার কারণে এবং
২) এগুলো পরীক্ষিত, কোনো ধরনের সফলতা ও সার্থকতা আসেনি এইসব আন্দোলনে।

অতএব অন্যের থেকে শিক্ষা নেওয়ার মানসিকতা থাকলে নেওয়া উচিত। এটাই প্রশ্নের জবাব।"


ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী রহিমাহুল্লাহ।
সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর।

গৃহীত,
জামি'উ তুরাসিল আলবানী ফীল আকীদাতি ওয়াল মানহাজ, ২/৩২৪-৩২৭।
 
Top