‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

ভ্রান্তি নিরসন রাসূলের কথা বা হাদীস ওহি হবার কয়েকটি প্রমাণ - পর্ব ১

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
689
Comments
1,225
Solutions
17
Reactions
6,668
Credits
5,528
হাদীস ওহি তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, এ সম্পর্কিত কয়েকটি দলীল নিচে দেওয়া হলো:

দলীল-১ আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِذْ تَقُوْلُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَنْ يَكْفِيَكُمْ أنْ يُمدَّكُمْ رَبُّكُمْ بثَلَثَةِ أَلْفِ مِنَ الْمُلْئِكَةِ مُنْزَلِينَ
“আপনি যখন মুমিনদেরকে বলতে লাগলেন, তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের রব আসমান থেকে তিন হাজার মালাইকা (ফেরেশতা) নাযিল করবেন।[১]

আয়াতটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই আয়াতটি নাযিলের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সান্ত্বনা স্বরূপ সাহাবিদেরকে (রা.) তিন হাজার মালাইকার সাহায্যের খবর দিয়েছিলেন। কেননা কুরআন মাজীদের কোথাও তিনহাজার মালাইকার সাহায্যের খবর নবিকে উক্ত আয়াতটির পূর্বে স্বতন্ত্রভাবে জানানোর কথা বলা হয়নি। সুতরাং সুস্পষ্ট হলো, কুরআনে বর্ণিত ওহি ছাড়াও স্বতন্ত্র ওহি ছিল। যা দ্বারা নবি (ﷺ) কে এই সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল।

দলীল-২ আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنْتَ عَلَيْهَا إِلَّا لِنَعْلَمَ مَنْ يَتَّبِعُ الرَّسُوْلَ مِمَّنْ يَنْقَلِبُ عَلَى عَقِبَيْهِ
“(হে রাসূল!) আপনি যে কিবলার উপর ছিলেন, তাকে আমি এজন্যেই কিবলা করেছিলাম, যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কে রাসূলের অনুসারী থাকে আর কে উলটো পথে (কুফরির দিকে) চলে।”

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, বায়তুল মুকাদ্দাসকে কিবলা করার হুকুম আল্লাহ তাআলাই দিয়েছিলেন। অথচ সেই হুকুমটি কুরআন মাজীদে নেই। সুতরাং সুস্পষ্ট হয়, বায়তুল মুকাদ্দাসকে কিবলা নির্ধারণের হুকুম কুরআন মাজীদ ছাড়া অন্য কোনো ওহি ছিল।

মুনকিরীনে হাদীসদের (হাদীস অস্বীকারকারীদের) পর্যায়ক্রমিক তিনটি চক্রান্ত-

ক. প্রথম চক্রান্ত: মুনকিরীনে হাদীস আলোচ্য আয়াতটির জবাবে প্রথমে বলেছিল: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাওরাত অনুসরণে বায়তুল মুকাদ্দাসকে কিবলা নির্ধারণ করেছিলেন। কেননা তাওরাতের এই হুকুমটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছিল। সুতরাং উক্ত আয়াতটিতে আল্লাহ তাআলা সেই হুকুমের প্রতি ইশারা করেছেন।

খ. দ্বিতীয় চক্রান্ত: অতঃপর বলল, আলোচ্য আয়াতে কাবাকে কিবলা করার হুকুমের দিকে ইশারা করা হয়েছে। তখন তরজমা করা হলো-
“আপনি যে কিবলার দিকে মুখ করেন, তার-ই হুকুম আল্লাহ তাআলা দিয়েছিলেন।” অর্থাৎ আয়াতটিতে বায়তুল মুকাদ্দাসকে কিবলা বানানোর বর্ণনা আয়াতটিতে নেই। যেহেতু বায়তুল মুকাদ্দাসকে কিবলা বানানোর বর্ণনা আয়াতটিতে নেই, সেহেতু সেদিকে মুখ করার প্রশ্নই অবান্তর। অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাসকে কিবলা বানানোর ব্যাপারে কোনো ওহিই আসে নি।

গ. তৃতীয় চক্রান্ত: সবশেষে তারা বলল: কিবলা কখনই পরিবর্তন হয়নি। নবুওয়াতের প্রথম থেকেই কাবাকে কিবলা বানানোর হুকুম ছিল।

নিজেদের প্রথম দুটি ভুলের খণ্ডন তো স্বয়ং মুনকিরীনের হাদীসগণই করেছেন। সুতরাং কেবল তৃতীয় চক্রান্তের সমাধান দিচ্ছি।...

১। কুরআন মাজীদে কিবলা পরিবর্তন সম্পর্কে বর্ণনা আছে। সুতরাং ‘কিবলা পরিবর্তন' অস্বীকার প্রকারান্তরে কুরআনের আয়াতকেই অস্বীকার। এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সহজ পদ্ধতি উদ্ভুত হলো যে— ‘কুরআনের আয়াতের অর্থই পরিবর্তন করে দাও।' ফলে (মুনকিরীনে হাদীসের দৃষ্টিতে) সবধরনের জটিলতা দূর হয়ে গেল। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا
“আমি আপনাকে সে কিবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন।”

এই আয়াতটি থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, কিবলা পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু মুনকিরীনে হাদীসগণ আয়াতটির এমন অর্থ করেছে, যার ফলে কিবলা পরিবর্তনের মর্মই নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

তাদের তরজমা হলো: “আমি আপনাকে এই কিবলার মুতাওয়াল্লি করেছি, যে কিবলা আপনি পছন্দ করেছেন।”

কী ভয়ানক বিকৃতি! আয়াতাংশটির পূর্বে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ
“আমি আপনাকে বার বার (ওহির অপেক্ষায়) আপনার চেহারাকে আসমানের দিকে তাকাতে দেখি।”

এই আয়াতাংশটিকে তারা নিম্নরূপ পন্থায় বিকৃত করেছে: “আমি দেখছি আপনার অন্তরে বার বার এ চিন্তায় জাগছে (যে কাবার দিকে আমি মুখ করছি তা আমার দখলে নেই)।”

কী অদ্ভূত ও বিচিত্র অনুবাদ! যেখানে না চেহারার তরজমা করা হয়েছে, আর না আসমানের তরজমা করা হয়েছে। অর্থাৎ তরজমাটি নিজেই বিকৃত। এভাবে অন্যান্য আয়াতের অর্থও পরিবর্তন করা হয়েছে।

যখন দুটি প্রতিবন্ধকতাই হটিয়ে দেওয়া হলো, তখন রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেল। আর পূর্বোক্ত আলোচনা দ্বারা হাদীস ওহি হওয়া সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো।

কিবলা পরিবর্তনকে অস্বীকার করা সঠিক নয়: মুনকিরীনে হাদীসদের কিবলা পরিবর্তনকে নিম্নোক্ত কারণে অস্বীকার করা সঠিক নয়:

* কুরআনুল কারীমের অর্থ বিকৃত করার চেষ্টা করতে হয়।

* সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিমের ঐকমত্য হাদীসসমূহ ও অন্যান্য সহীহ হাদীসের অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা ও সত্যনিষ্ঠতা অস্বীকার করতে হয়, যা বাতিল (সত্যকে অস্বীকার করার নামান্তর)।

* ইতিহাস অস্বীকার করা। অথচ এ সমস্ত লোকেরাই সত্য ইতিহাসকে খুবই মর্যাদা দিয়ে থাকে।

* যে মসজিদটিতে একই সাথে একই ওয়াক্তের সালাত দুই কিবলার দিকে মুখ করে আদায় করা হয়— তা আজও অস্তিত্বমান রয়েছে। অর্থাৎ সালাত শুরু করা হয়েছিল বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে, এবং ঐ সালাতের মধ্যেই কাবার দিকে মুখ করা হয়েছিল। সেই মসজিদটির নাম ‘মসজিদে কিবলাতাইন'। এই মসজিদ ‘কিবলা পরিবর্তন' হওয়ার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।

* কুরআন মাজীদে কাবার দিকে মুখ করার কারণে ইয়াহুদিরা অভিযোগ করে যে, সে কেন নিজের পূর্ববর্তী কিবলা থেকে মুখ ফেরালো? এই অভিযোগ তো তখনই সম্ভব, যখন কিবলা পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া হয়। অন্যথায় যদি নবুওয়াতের শুরুতেই তিনি (ﷺ) ইবরাহীম (আঃ)-এর কিবলার দিকে মুখ করতেন, তাহলে তো অভিযোগ করার কোনো সুযোগই ছিল না।

কুরআন মাজীদের মনগড়া তরজমা কেবল সহীহ হাদীস ও সত্য ইতিহাসকেই অস্বীকৃতি জানায় না বরং স্বয়ং কুরআনের নিম্নোক্ত তরজমার সাথেও সম্পূর্ণ বেমানান। আল্লাহ তাআলা বলেন:
سَيَقُولُ السُّفَهَاء مِنَ النَّاسِ مَا وَلاهُمْ عَن قِبْلَتِهِمُ الَّتِي كَانُوا عَلَيْهَا
“এখন নির্বোধেরা বলবে: কীসে তাদেরকে এই কিবলা থেকে মুখ ফিরিয়ে দিলো, যার উপর তারা ছিল?”
অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
فَوَلِ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ
“(হে রাসূল!) আপনি আপনার চেহারা মসজিদুল হারামের দিকে করুন। আর আপনি যেখানেই থাকুন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করুন।”

সুস্পষ্ট হলো, এখানে কাবার মুতাওয়াল্লি বানানোর মর্ম সম্পূর্ণ ভুল। এখানে তো এক কিবলা থেকে অন্য কিবলার দিকে মুখ ফেরানোর ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং কিবলা পরিবর্তনকে অস্বীকার করা সুস্পষ্ট বাতিল হিসেবে প্রমাণিত হলো।




১. সূরা আলে ইমরান: ১২৪।
২. সূরা বাকারা: ১৪৩।
৩. সূরা বাকারা: ১৪৪।
৪. সূরা বাকারা: ১৪৪।
৫. হাদীস সংকলন ও যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে তা পৃথিবীর কোনো ইতিহাস সংকলনে করা হয়নি। এমনকী এ যামানায় হাদীস যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ধারের পদ্ধতি ও পর্যাপ্ত দলীলপত্র বর্তমান। কিন্তু প্রাচীন ইতিহাসগত মতপার্থক্য ও বিভ্রান্তির ক্ষেত্রে সেটা প্রায় অসম্ভব। (সংকলক)
৬. সূরা বাকারা: ১৪২।
৭. সূরা বাকারা: ১৪৪, প্রথমাংশের অনুরূপ: ১৫০।
 
Last edited:

Share this page