সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
S

ইলম ও দাওয়াত রজব মাস সম্পর্কে কতিপয় জাল ও যঈফ হাদিস

shipa

Inquisitive

Q&A Master
Salafi User
LV
13
 
Awards
23
Credit
1,076
লোকমুখে, ইন্টারনেটে বা বিভিন্ন ইসলামিক বই -পুস্তকে অনেক হাদিস প্রচলিত রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু হাদিস মুহাদ্দিসদের মানদণ্ডে সহিহ নয় আর কিছু হাদিস এমন রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

এ ধরণের কতিপয় হাদিস সম্পর্কে নিম্নে পর্যালোচনা পেশ করা হলো:

রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি দুর্বল হাদীস:
  • “জান্নাতে একটি নহর আছে যাকে বলা হয় রজব। যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোযা রাখবে তাকে সেই নহরের পানি পান করতে দেয়া হবে।”
ইবনে হাজার রহ. বলেন: হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, আবুল কাসেম আত তাইমী তার আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে, হাফেয আসপাহানী ফাযলুস সিয়াম কিতাবে, বাইহাকী, ফাযায়েলুল আওকাত কিতাবে, ইবনু শাহীন আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে।

এ হাদীসটি দুর্বল। ইবনুল জাওযী ইলালুল মুতানাহিয়া গ্রন্থে বলেন: এ হাদীসের বর্ণনা সূত্রে একাধিক অজ্ঞাত রাবী রয়েছে। তাই এ হাদীসের সনদ দুর্বল। তবে বানোয়াট বলার মত পরিস্থিতি নেই। এর আরও কয়েকটি সূত্র রয়েছে কিন্তু সেগুলোতেও একাধিক অজ্ঞাত বর্ণনাকারী রয়েছে। [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব (পৃষ্ঠা নং ৯, ১০ ও ১১), আল ইলালুল মুতানাহিয়া, (২য় খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)।]
  • “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ও বাল্লিগনা রামাযান।”
“হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রামাযান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।” (মুসনাদ আহমাদ ১/২৫৯) - হাদীসটি দুর্বল।

এ হাদীসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন: মুনকারুল হাদীস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন: চিনি না এই ব্যক্তি কে? আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন: মুনকারুল হাদীস।

কুনা গ্রন্থে বলেন: “তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন: তার বর্ণিত কোন হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)
  • “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানের পরে রজব ও শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে রোযা রাখেন নি।” (বাইহাকী)
হাফেয ইবনে হাজার বলেন: উক্ত হাদীসটি মুনকার। কারণে, এর সনদের ইউসুফ বিন আতিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে খুব দূর্বল। (তাবয়ীনুল আজাব ১২ পৃষ্ঠা)

রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি জাল হাদীস:
  • রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রামাযান আমার উম্মতের মাস।”
এটি জাল হাদীস।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, উক্ত হাদীসটি বর্ণনাকারীদের মধ্যে আবু বকর আন নাক্কাশ নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে কুরআনের মুফাসসির। কিন্তু লোকটি জাল হাদীস রচনাকারী এবং চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জাল।

ইবনে দেহিয়া বলেন: এই হাদীসটি জাল। (তাবয়ীনুল আজব, ১৩-১৫ পৃষ্ঠা) এছাড়াও উক্ত হাদীসকে জাল বলে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী তার আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৫-২০৬) এবং ইমাম সানয়ানী মাওযূআত কিতাবে (৬১ পৃষ্ঠা) এবং সূয়ূতী তার আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৪)।
  • কুরআনের মর্যাদা সকল যিকির-আযকারের উপর যেমন রজব মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের উপর তেমন।”
হাদীসটি বানোয়াট।

ইবনে হাজার আসকালানী উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, এই হাদীসটি সনদের রাবীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য একজন ছাড়া। তার নাম হল, সিকতী। আর এ লোকটিই হল বিপদ। কেননা, সে একজন বিখ্যাত জাল হাদীস রচনাকারী। (তাবয়ীনুল আজাব: ১৭ পৃষ্ঠা)
  • রজব মাসে যে ব্যক্তি তিনটি রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার আমলনামায় একমাস রোযা রাখার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন, আর যে ব্যক্তি সাতটি রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দিবেন।”
হাদীসটি জাল।

এটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৬), সূয়ূতী আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৫), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (১০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২২৮) এবং তাবয়ীনুল আজাব কিতাবে (১৮ পৃষ্ঠা)।
  • “যে ব্যক্তি রজবের প্রথম তারিখে মাগরিব সালাত আদায় করত: বিশ রাকায়াত নামায পড়বে, প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহা এবং সূরা ইখলাস একবার করে পড়বে এবং প্রতি দু রাকায়াত পরপর সালাম ফিরিয়ে মোট দশ সালামে বিশ রাকায়াত পূর্ণ করবে তোমরা কি জানেন তার সওয়াব কি?…তিনি বলেন: আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাজত করবেন এবং তার পরিবার, সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততীকে হেফাজত করবেন, কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন এবং বিনা হিসেব ও বিনা শাস্তিতে বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত পার করাবেন।”
এটি একটি বানোয়াট হাদীস।

(দ্রষ্টব্য: ইবনুল জাউযী তার মাওযূয়াত (২/১২৩), তাবয়ীনুল আজাব (২০ পৃষ্ঠা), আল ফাওয়াইদুল মাজমূয়াহ (৪৭পৃষ্ঠা, জাল হাদীস নং ১৪৪)।)
  • “যে ব্যক্তি রজব মাসে রোযা রাখবে এবং চার রাকায়াত নামায পড়বে সে জান্নাতে তার নির্ধারিত আসন না দেখে মৃত্যু বরণ করবে না।”

হাদীসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/১২৪), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (৪৭ পৃষ্ঠা) এবং তাবয়ীনুল আজাব, (২১ পৃষ্ঠা)।


مأخوذ من كتاب البدع الحولية
‘আলবিদা আল হাউলিয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স,মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,সউদী আরব​
 
Last edited by a moderator:

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,349Threads
Total Messages
17,209Comments
Total Members
3,678Members
Latest Messages
Md. Nur HabibLatest member
Top