- Joined
- Jan 3, 2023
- Threads
- 653
- Comments
- 796
- Reactions
- 6,953
- Thread Author
- #1
প্রথম প্রতিবন্ধকতা: খাবার, পানীয় ও পোশাকে হারামের আধিক্য
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এই বলেছেন, “আল্লাহ পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন; আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের ওই নির্দেশই দিয়েছেন, যা তিনি দিয়েছিলেন নবি দের কে। আল্লাহ তা'আলা বলেন—
ওহে রাসূল গণ! পাক-পবিত্র জিনিস খাও এবং সৎকাজ করো। তোমরা যা-কিছুই করো কেন, আমি তা ভালোভাবেই জানি।” (সূরা আল-মু'মিনূন ২৩:৫১)
তিনি (আরও) বলেছেন-
“হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহর ইবাদাতকারী হয়ে থাকো, তা হলে যে-সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস আমি তোমাদের দিয়েছি, সেগুলো খাও এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।” (সূরা আল-বাকারাহ ২:১৭২)
এরপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের দরুন যার চুল উশকোখুশকো, চেহারা ধুলামলিন; সে হাত দুটি আকাশের দিকে তুলে ধরে বলছে ‘রব আমার! রব। আমার!' কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম, আর তার পরিপুষ্টি হয়েছে হারাম দিয়ে; তা হলে, কীভাবে তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে? [মুসলিম, ১০১৫]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু রজব উল্লেখ করেছেন যে, বলা হয়—আল্লাহ কেবল ওই আমল গ্রহণ করেন যা পবিত্র, আর রিয়া [মানুষকে দেখানোর উদ্দেশে ভালো কাজ করার নাম ‘রিয়া']-সহ সব ধরনের দোষ থেকে পরিচ্ছন্ন; আর (দান হিসেবে তিনি কেবল ওই সম্পদই গ্রহণ করেন, যা পবিত্র ও হালাল, কারণ ‘পবিত্র’ বিশেষণটি কথা, কাজ ও বিশ্বাস—এ সব কিছুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১/২৫৯] এ কথার উদ্দেশ্য হলো, রাসূল গণ ও তাদের নিজ নিজ উম্মাহকে হালাল খাবার খাওয়া এবং নোংরা ও হারাম থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর, দোয়া কবুল না হয়ে বাতিল হওয়ার বিষয়টি (উপরিউক্ত) হাদীসের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে; এর কারণ ছিল হারামের আধিক্য—খাবার, পানীয়, পোশাক ও পরিপুষ্টি সব কিছুতে হারাম। এ জন্য হালাল খাওয়া ও হারাম থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে সাহাবিগণ ও সৎ বান্দারা ছিলেন সর্বোচ্চ মাত্রায় উৎসাহী।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আবু বকর -এর এক গোলাম আয় করে তাকে দিতেন, আর আবু বকর (রাঃ) ওই আয় থেকে অংশবিশেষ খেতেন। একদিন সে। একটি জিনিস নিয়ে আসলে, আবু বকর (রাঃ) তা খান। এরপর ওই গোলাম তাকে বলে, “আপনি কি জানেন, এটি কী?” আবু বকর (রাঃ) বলেন, “কী এটি?” সে বলে, “আমি জাহিলি যুগে মানুষের ভবিষ্যদ্বাণী করতাম। আসলে আমি ভবিষ্যৎ জানি না! আমি কেবল এক লোককে প্রতারিত করেছি; বিনিময়ে সে আমাকে এটি দিয়েছে। আর এ হলো সেই বস্তু, যা থেকে আপনি একটু খেয়েছেন।” তখন আবু বকর ও (গলার মধ্যে) হাত ঢুকিয়ে পেটের ভেতরের সব খাবার বের করে দেন। [বুখারি, ৩৮৪২]
আবু নুআইমের হিলইয়াতুল আউলিয়া গ্রন্থের একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, তখন আবু বকর -কে বলা হলো, “আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন! এক লুকমার জন্য এ সব (খাবার বের করে দিলেন)?” আবূ বকর (রাঃ) বলেন, “এটি বের করতে যদি আমার জীবন চলে যেত, তার পরও আমি এটি বের করতাম। (কারণ) আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, ‘হারাম দিয়ে যে দেহ বেড়ে ওঠে, জাহান্নামই তার জন্য অধিক উপযুক্ত। আমার ভয় হচ্ছিল, এ লুকমা থেকে আমার দেহের কোনও অংশের প্রবৃদ্ধি হয়। কিনা।” [আবূ নুআইম, হিলইয়া, ১/৩১]
এ পরিচ্ছেদের (মূল) হাদীসে ওই ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, হারাম-ভক্ষণে যার সম্পৃক্ততা অনেক বেশি। সে কিন্তু এমন চারটি কাজ করেছিল, যেগুলো করলে (সাধারণত) দোয়া কবুল হয়:
প্রথমত: সে দীর্ঘ সফর করেছে।
দ্বিতীয়ত: তার পোশাক ও সুরত ছিল জরাজীর্ণ।
আর নবি (ﷺ) বলেছেন, “কিছু লোক আছে এমন, যার চুল উশকোখুশকো, কারও দুয়ারে গেলে দারওয়ান তাকে তাড়িয়ে দেবে, (কিন্তু) সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে কিছু বলে, আল্লাহ অবশ্যই তার কসম পুরা করবেন।” [মুসলিম, ২৬২২]
তৃতীয়ত: সে তার হাত দুটি আকাশের দিকে প্রসারিত করেছে। [আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন] “তোমাদের রব লাজুক ও মহানুভব; তাঁর বান্দা যখন তার কাছে দু' হাত তোলে, তখন তিনি হাত দুটিকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। [আবু দাউদ, ১৪৮৮, সামগ্রিকভাবে হাসান]
চতুর্থত: সে আল্লাহ তা'আলার রুবুবিয়্যাত (প্রভুত্ব)-এর কথা বারবার উল্লেখ করে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া করেছে; আর দোয়া কবুলের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ। উপায়। এ সব সত্ত্বেও, নবি (ﷺ) বলেছেন, “তা হলে কীভাবে তার দোয়া কবুল হবে?” এ প্রশ্নটি মূলত বিস্ময় ও প্রত্যাখ্যান অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১/২ ৬৯-২৭৫]
তাই মুসলিম বান্দার উচিত সকল গোনাহ ও অবাধ্যতার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা ফিরিয়ে দেওয়া, যাতে তার মধ্যে আর বড় রকমের কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকে, যা তার দোয়া কবুলের সামনে বাধা হয়ে দাড়ায়।
দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতা: দ্রুত ফল না পাওয়ায় দোয়া বন্ধ করে দেওয়া
দোয়া কবুলের সামনে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো—মানুষ খুব দ্রুত ফল চায়, আর দোয়া কবুল হতে দেরি হলে, সে দোয়া বন্ধ করে দেয়। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২/৪০৩] এ কাজটিকে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দোয়া কবুলের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যাতে দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও দোয়া কবুলের ব্যাপারে বান্দা আশাহত না হয়; কারণ আল্লাহ তা'আলা সেসব লোককে পছন্দ করেন, যারা আন্তরিকতার সঙ্গে একনাগাড়ে দোয়া করে যেতে থাকে। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২/৪০৩]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কেউ আল্লাহকে ভাকলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে, যতক্ষণ না সে অধৈর্য হয়ে বলে ওঠে— ‘আল্লাহকে তো ডাকলাম, কিন্তু কোনও সাড়া তো পাওয়া গেল না!” [বুখারি, ৬৩৪০]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেন, “বান্দা তাড়াহুড়া না করলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হতে থাকবে, যদি না সে গোনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য কোনও দোয়া করে।” জিজ্ঞাসা করা হলো, “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) (দোয়ার মধ্যে) তাড়াহুড়া কী?” নবি (ﷺ) বলেন, “আল্লাহকে ডাকলাম, আবারও ডাকলাম, কিন্তু আমার ডাকে তো সাড়া দিতে দেখলাম না!—এ কথা বলে কেউ যদি হতাশ হয়ে দোয়া বন্ধ করে দেয় (তা হলে সেটি হবে তাড়াহুড়া)” [মুসলিম, ২৭৩৫]
তাই, বান্দার উচিত দোয়ায় সাড়া না পেলেও তাড়াহুড়া না করা, কারণ আল্লাহ কয়েকটি কারণে সাড়া দিতে দেরি করেন: হয় (দোয়া কবুলের) শর্তাবলি পূরণ হয়নি, অথবা কোনও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, কিংবা এমন কিছু কারণ আছে যা বান্দার জন্য কল্যাণকর, কিন্তু সে তা জানে না। সুতরাং, দোয়ায় সাড়া না পেলে বান্দার উচিত নিজের অবস্থাকে পুনর্বিবেচনা করা, সকল অবাধ্যতা থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং ত্বরিত ও বিলম্বিত—যে কোনও কল্যাণে খুশি থাকা। আল্লাহ তা'আলা বলেন—
"দুনিয়ায় সুস্থ পরিবেশ বহাল করার পর আর সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। আল্লাহকেই ডাকো ভীতি ও আশা-সহকারে৷ নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীল লোকৰে নিকটবর্তী৷” (সূরা আল-আ'রাফ ৭:৫৬)
বান্দা যতক্ষণ আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া করা অব্যাহত রাখবে এবং সাড়া পাওয়ার ব্যাপারে নিরবচ্ছিন্ন আশাবাদ ধরে রাখবে, সে ততক্ষণ দোয়া কবুল হওয়ার কাছাকাছি অবস্থান করবে। যে-ব্যক্তি আন্তরিকতার সঙ্গে দরজায় করাঘাত করতে থাকে, অচিরেই তার জন্য দরজা খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২/৪০৪]
কখনও কখনও সাড়া পেতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে; যেমন ইয়াকূব (আঃ) তাঁর ছেলে। ইউসুফ (আঃ) কে ফিরে পাওয়ার জন্য যে দোয়া করেছিলেন, আল্লাহ তা'আলা দেরি করে তাতে সাড়া দিয়েছেন; ঠিক তেমনিভাবে কষ্ট-অপসারণের জন্য আইয়ূব (আঃ) যে দোয়া করেছিলেন, দীর্ঘ সময় পর আল্লাহ তাতে সাড়া দিয়েছেন। কখনও কখনও প্রার্থনাকারী যা চায়, তাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দেওয়া হয়; আবার কখনও কখনও তার কাছ থেকে এমন অনিষ্ট সরিয়ে নেওয়া হয়, যা তার চাওয়া-বস্তুর চেয়ে অনেক উত্তম। [ইবনু বায, মাজমূ' ফাতাওয়া, ১/২৬১]
তৃতীয় প্রতিবন্ধকতা: অবাধ্যতা ও হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া
কখনও কখনও হারাম কাজে লিপ্ত হলে, সেটি দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২/২৭৫] এ জন্য পূর্ববর্তী বিদ্বানদের কেউ কেউ বলেছেন, “গোনাহের মাধ্যমে রাস্তা বন্ধ করে রেখে, দোয়া কবুল হতে দেরি হচ্ছে কেন—এই প্রশ্ন তোলে না!' এ বিষয়টিকে কোনও এক কবি ব্যক্ত করেছেন এভাবে:
প্রতিটি কষ্টের সময় আল্লাহকে ডাকি, এরপর কষ্ট দূর হলে তাকে ভুলে যাই; কীভাবে আশা করি দোয়া কবুল হবে, এর রাস্তা তাো গোনাহ দিয়ে বন্ধ করে রেখেছি।
কোনও সন্দেহ নেই যে, গাফিলতিতে মজে থাকা এবং হারাম কামনায় পতিত হওয়া হলো। কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকার অন্যতম কারণ। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন—
“আসলে আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও জাতির অবস্থা বদলান না, যতক্ষণ না তারা। নিজেরা নিজেদের গুণাবলি বদলে ফেলে৷ আর আল্লাহ যখন কোনও জাতিকে দুর্ভাগ্যকবলিত করার ফায়সালা করে ফেলেন, তখন কারও রদ করায় তা রদ হতে পারে না এবং আল্লাহর মোকাবিলায় এমন জাতির কোনও সহায় ও সাহায্যকারী হতে পারে না।” (সূরা আর-রাদ ১৩:১১)
চতুর্থ প্রতিবন্ধকতা: যে-কাজ করা আবশ্যক, তা ছেড়ে দেওয়া
ভালো কাজ সম্পাদন করা যেমন দোয়া কবুল হওয়ার একটি কারণ, তেমনিভাবে আবশ্যক। কর্ম ছেড়ে দেওয়াও দোয়া কবুলের পথে একটি বাধা। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১/২৭৫] নবি (ﷺ) এর একটি হাদীসে এ ভাব। ফুটে ওঠেছে:
হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেন, “শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং অবশ্যই খারাপ কাজে নিষেধ করবে, নতুবা এর দরুন আল্লাহ অচিরেই তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন; এরপর তোমরা তাঁর কাছে দোয়া করবে, কিন্তু তোমাদের ডাকে কোনও সাড়া দেওয়া হবে না।” [তিরমিযি, ২১৬৯, হাসান]
পঞ্চম প্রতিবন্ধকতা: আল্লাহ তা'আলার প্রজ্ঞা, ফলে তিনি প্রার্থিত বস্তুর চেয়ে অধিক। উত্তম কিছু দেন
আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেছেন, “কোনও মুসলিম যদি আল্লাহর। কাছে এমন দোয়া করে, যার মধ্যে কোনও পাপ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের বিষয় নেই, তা হলে আল্লাহ তাকে তিনটির যে কোনও একটি অবশ্যই দেবেন:
১. হয় দ্রুত তাকে তার দোয়ার ফল দেওয়া হবে, অথবা
২. এটিকে তার আখিরাতের জন্য জমা রাখা হবে, নতুবা
৩. তার কাছ থেকে অনুরূপ কোনও অনিষ্ট দূর করে দেওয়া হবে।”
(এ কথা শুনে) সাহাবিগণ বলেন, “তা হলে আমরা বেশি বেশি দোয়া করব!” নবি (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর দয়া তোমাদের দোয়ার চেয়ে অনেক বেশি! [আহমাদ, ৩/১৮, ১১১ ৩৩, ইসনাদটি সহীহ]
মানুষ মাঝেমধ্যে মনে করে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হয়নি; অথচ হয় সে যা চেয়েছে, তাকে এর চেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে; অথবা তার কাছ থেকে যেসব বিপদ-মুসিবত ও রোগব্যাধি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা তার প্রার্থিত জিনিস থেকে অধিক উত্তম; কিংবা তার কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন দেবেন। [ইবনু বায, মাজমূ' ফাতাওয়া, ১/২৫৮-২৬৮]
Source: duaruqyah.com
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এই বলেছেন, “আল্লাহ পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন; আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের ওই নির্দেশই দিয়েছেন, যা তিনি দিয়েছিলেন নবি দের কে। আল্লাহ তা'আলা বলেন—
ওহে রাসূল গণ! পাক-পবিত্র জিনিস খাও এবং সৎকাজ করো। তোমরা যা-কিছুই করো কেন, আমি তা ভালোভাবেই জানি।” (সূরা আল-মু'মিনূন ২৩:৫১)
তিনি (আরও) বলেছেন-
“হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহর ইবাদাতকারী হয়ে থাকো, তা হলে যে-সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস আমি তোমাদের দিয়েছি, সেগুলো খাও এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।” (সূরা আল-বাকারাহ ২:১৭২)
এরপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের দরুন যার চুল উশকোখুশকো, চেহারা ধুলামলিন; সে হাত দুটি আকাশের দিকে তুলে ধরে বলছে ‘রব আমার! রব। আমার!' কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম, আর তার পরিপুষ্টি হয়েছে হারাম দিয়ে; তা হলে, কীভাবে তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে? [মুসলিম, ১০১৫]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু রজব উল্লেখ করেছেন যে, বলা হয়—আল্লাহ কেবল ওই আমল গ্রহণ করেন যা পবিত্র, আর রিয়া [মানুষকে দেখানোর উদ্দেশে ভালো কাজ করার নাম ‘রিয়া']-সহ সব ধরনের দোষ থেকে পরিচ্ছন্ন; আর (দান হিসেবে তিনি কেবল ওই সম্পদই গ্রহণ করেন, যা পবিত্র ও হালাল, কারণ ‘পবিত্র’ বিশেষণটি কথা, কাজ ও বিশ্বাস—এ সব কিছুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১/২৫৯] এ কথার উদ্দেশ্য হলো, রাসূল গণ ও তাদের নিজ নিজ উম্মাহকে হালাল খাবার খাওয়া এবং নোংরা ও হারাম থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর, দোয়া কবুল না হয়ে বাতিল হওয়ার বিষয়টি (উপরিউক্ত) হাদীসের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে; এর কারণ ছিল হারামের আধিক্য—খাবার, পানীয়, পোশাক ও পরিপুষ্টি সব কিছুতে হারাম। এ জন্য হালাল খাওয়া ও হারাম থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে সাহাবিগণ ও সৎ বান্দারা ছিলেন সর্বোচ্চ মাত্রায় উৎসাহী।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আবু বকর -এর এক গোলাম আয় করে তাকে দিতেন, আর আবু বকর (রাঃ) ওই আয় থেকে অংশবিশেষ খেতেন। একদিন সে। একটি জিনিস নিয়ে আসলে, আবু বকর (রাঃ) তা খান। এরপর ওই গোলাম তাকে বলে, “আপনি কি জানেন, এটি কী?” আবু বকর (রাঃ) বলেন, “কী এটি?” সে বলে, “আমি জাহিলি যুগে মানুষের ভবিষ্যদ্বাণী করতাম। আসলে আমি ভবিষ্যৎ জানি না! আমি কেবল এক লোককে প্রতারিত করেছি; বিনিময়ে সে আমাকে এটি দিয়েছে। আর এ হলো সেই বস্তু, যা থেকে আপনি একটু খেয়েছেন।” তখন আবু বকর ও (গলার মধ্যে) হাত ঢুকিয়ে পেটের ভেতরের সব খাবার বের করে দেন। [বুখারি, ৩৮৪২]
আবু নুআইমের হিলইয়াতুল আউলিয়া গ্রন্থের একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, তখন আবু বকর -কে বলা হলো, “আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন! এক লুকমার জন্য এ সব (খাবার বের করে দিলেন)?” আবূ বকর (রাঃ) বলেন, “এটি বের করতে যদি আমার জীবন চলে যেত, তার পরও আমি এটি বের করতাম। (কারণ) আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, ‘হারাম দিয়ে যে দেহ বেড়ে ওঠে, জাহান্নামই তার জন্য অধিক উপযুক্ত। আমার ভয় হচ্ছিল, এ লুকমা থেকে আমার দেহের কোনও অংশের প্রবৃদ্ধি হয়। কিনা।” [আবূ নুআইম, হিলইয়া, ১/৩১]
এ পরিচ্ছেদের (মূল) হাদীসে ওই ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, হারাম-ভক্ষণে যার সম্পৃক্ততা অনেক বেশি। সে কিন্তু এমন চারটি কাজ করেছিল, যেগুলো করলে (সাধারণত) দোয়া কবুল হয়:
প্রথমত: সে দীর্ঘ সফর করেছে।
দ্বিতীয়ত: তার পোশাক ও সুরত ছিল জরাজীর্ণ।
আর নবি (ﷺ) বলেছেন, “কিছু লোক আছে এমন, যার চুল উশকোখুশকো, কারও দুয়ারে গেলে দারওয়ান তাকে তাড়িয়ে দেবে, (কিন্তু) সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে কিছু বলে, আল্লাহ অবশ্যই তার কসম পুরা করবেন।” [মুসলিম, ২৬২২]
তৃতীয়ত: সে তার হাত দুটি আকাশের দিকে প্রসারিত করেছে। [আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন] “তোমাদের রব লাজুক ও মহানুভব; তাঁর বান্দা যখন তার কাছে দু' হাত তোলে, তখন তিনি হাত দুটিকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। [আবু দাউদ, ১৪৮৮, সামগ্রিকভাবে হাসান]
চতুর্থত: সে আল্লাহ তা'আলার রুবুবিয়্যাত (প্রভুত্ব)-এর কথা বারবার উল্লেখ করে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া করেছে; আর দোয়া কবুলের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ। উপায়। এ সব সত্ত্বেও, নবি (ﷺ) বলেছেন, “তা হলে কীভাবে তার দোয়া কবুল হবে?” এ প্রশ্নটি মূলত বিস্ময় ও প্রত্যাখ্যান অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১/২ ৬৯-২৭৫]
তাই মুসলিম বান্দার উচিত সকল গোনাহ ও অবাধ্যতার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা ফিরিয়ে দেওয়া, যাতে তার মধ্যে আর বড় রকমের কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকে, যা তার দোয়া কবুলের সামনে বাধা হয়ে দাড়ায়।
দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতা: দ্রুত ফল না পাওয়ায় দোয়া বন্ধ করে দেওয়া
দোয়া কবুলের সামনে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো—মানুষ খুব দ্রুত ফল চায়, আর দোয়া কবুল হতে দেরি হলে, সে দোয়া বন্ধ করে দেয়। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২/৪০৩] এ কাজটিকে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দোয়া কবুলের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যাতে দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও দোয়া কবুলের ব্যাপারে বান্দা আশাহত না হয়; কারণ আল্লাহ তা'আলা সেসব লোককে পছন্দ করেন, যারা আন্তরিকতার সঙ্গে একনাগাড়ে দোয়া করে যেতে থাকে। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২/৪০৩]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কেউ আল্লাহকে ভাকলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে, যতক্ষণ না সে অধৈর্য হয়ে বলে ওঠে— ‘আল্লাহকে তো ডাকলাম, কিন্তু কোনও সাড়া তো পাওয়া গেল না!” [বুখারি, ৬৩৪০]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেন, “বান্দা তাড়াহুড়া না করলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হতে থাকবে, যদি না সে গোনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য কোনও দোয়া করে।” জিজ্ঞাসা করা হলো, “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) (দোয়ার মধ্যে) তাড়াহুড়া কী?” নবি (ﷺ) বলেন, “আল্লাহকে ডাকলাম, আবারও ডাকলাম, কিন্তু আমার ডাকে তো সাড়া দিতে দেখলাম না!—এ কথা বলে কেউ যদি হতাশ হয়ে দোয়া বন্ধ করে দেয় (তা হলে সেটি হবে তাড়াহুড়া)” [মুসলিম, ২৭৩৫]
তাই, বান্দার উচিত দোয়ায় সাড়া না পেলেও তাড়াহুড়া না করা, কারণ আল্লাহ কয়েকটি কারণে সাড়া দিতে দেরি করেন: হয় (দোয়া কবুলের) শর্তাবলি পূরণ হয়নি, অথবা কোনও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, কিংবা এমন কিছু কারণ আছে যা বান্দার জন্য কল্যাণকর, কিন্তু সে তা জানে না। সুতরাং, দোয়ায় সাড়া না পেলে বান্দার উচিত নিজের অবস্থাকে পুনর্বিবেচনা করা, সকল অবাধ্যতা থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং ত্বরিত ও বিলম্বিত—যে কোনও কল্যাণে খুশি থাকা। আল্লাহ তা'আলা বলেন—
"দুনিয়ায় সুস্থ পরিবেশ বহাল করার পর আর সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। আল্লাহকেই ডাকো ভীতি ও আশা-সহকারে৷ নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীল লোকৰে নিকটবর্তী৷” (সূরা আল-আ'রাফ ৭:৫৬)
বান্দা যতক্ষণ আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া করা অব্যাহত রাখবে এবং সাড়া পাওয়ার ব্যাপারে নিরবচ্ছিন্ন আশাবাদ ধরে রাখবে, সে ততক্ষণ দোয়া কবুল হওয়ার কাছাকাছি অবস্থান করবে। যে-ব্যক্তি আন্তরিকতার সঙ্গে দরজায় করাঘাত করতে থাকে, অচিরেই তার জন্য দরজা খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২/৪০৪]
কখনও কখনও সাড়া পেতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে; যেমন ইয়াকূব (আঃ) তাঁর ছেলে। ইউসুফ (আঃ) কে ফিরে পাওয়ার জন্য যে দোয়া করেছিলেন, আল্লাহ তা'আলা দেরি করে তাতে সাড়া দিয়েছেন; ঠিক তেমনিভাবে কষ্ট-অপসারণের জন্য আইয়ূব (আঃ) যে দোয়া করেছিলেন, দীর্ঘ সময় পর আল্লাহ তাতে সাড়া দিয়েছেন। কখনও কখনও প্রার্থনাকারী যা চায়, তাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দেওয়া হয়; আবার কখনও কখনও তার কাছ থেকে এমন অনিষ্ট সরিয়ে নেওয়া হয়, যা তার চাওয়া-বস্তুর চেয়ে অনেক উত্তম। [ইবনু বায, মাজমূ' ফাতাওয়া, ১/২৬১]
তৃতীয় প্রতিবন্ধকতা: অবাধ্যতা ও হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া
কখনও কখনও হারাম কাজে লিপ্ত হলে, সেটি দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২/২৭৫] এ জন্য পূর্ববর্তী বিদ্বানদের কেউ কেউ বলেছেন, “গোনাহের মাধ্যমে রাস্তা বন্ধ করে রেখে, দোয়া কবুল হতে দেরি হচ্ছে কেন—এই প্রশ্ন তোলে না!' এ বিষয়টিকে কোনও এক কবি ব্যক্ত করেছেন এভাবে:
প্রতিটি কষ্টের সময় আল্লাহকে ডাকি, এরপর কষ্ট দূর হলে তাকে ভুলে যাই; কীভাবে আশা করি দোয়া কবুল হবে, এর রাস্তা তাো গোনাহ দিয়ে বন্ধ করে রেখেছি।
কোনও সন্দেহ নেই যে, গাফিলতিতে মজে থাকা এবং হারাম কামনায় পতিত হওয়া হলো। কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকার অন্যতম কারণ। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন—
“আসলে আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও জাতির অবস্থা বদলান না, যতক্ষণ না তারা। নিজেরা নিজেদের গুণাবলি বদলে ফেলে৷ আর আল্লাহ যখন কোনও জাতিকে দুর্ভাগ্যকবলিত করার ফায়সালা করে ফেলেন, তখন কারও রদ করায় তা রদ হতে পারে না এবং আল্লাহর মোকাবিলায় এমন জাতির কোনও সহায় ও সাহায্যকারী হতে পারে না।” (সূরা আর-রাদ ১৩:১১)
চতুর্থ প্রতিবন্ধকতা: যে-কাজ করা আবশ্যক, তা ছেড়ে দেওয়া
ভালো কাজ সম্পাদন করা যেমন দোয়া কবুল হওয়ার একটি কারণ, তেমনিভাবে আবশ্যক। কর্ম ছেড়ে দেওয়াও দোয়া কবুলের পথে একটি বাধা। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১/২৭৫] নবি (ﷺ) এর একটি হাদীসে এ ভাব। ফুটে ওঠেছে:
হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেন, “শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং অবশ্যই খারাপ কাজে নিষেধ করবে, নতুবা এর দরুন আল্লাহ অচিরেই তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন; এরপর তোমরা তাঁর কাছে দোয়া করবে, কিন্তু তোমাদের ডাকে কোনও সাড়া দেওয়া হবে না।” [তিরমিযি, ২১৬৯, হাসান]
পঞ্চম প্রতিবন্ধকতা: আল্লাহ তা'আলার প্রজ্ঞা, ফলে তিনি প্রার্থিত বস্তুর চেয়ে অধিক। উত্তম কিছু দেন
আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেছেন, “কোনও মুসলিম যদি আল্লাহর। কাছে এমন দোয়া করে, যার মধ্যে কোনও পাপ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের বিষয় নেই, তা হলে আল্লাহ তাকে তিনটির যে কোনও একটি অবশ্যই দেবেন:
১. হয় দ্রুত তাকে তার দোয়ার ফল দেওয়া হবে, অথবা
২. এটিকে তার আখিরাতের জন্য জমা রাখা হবে, নতুবা
৩. তার কাছ থেকে অনুরূপ কোনও অনিষ্ট দূর করে দেওয়া হবে।”
(এ কথা শুনে) সাহাবিগণ বলেন, “তা হলে আমরা বেশি বেশি দোয়া করব!” নবি (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর দয়া তোমাদের দোয়ার চেয়ে অনেক বেশি! [আহমাদ, ৩/১৮, ১১১ ৩৩, ইসনাদটি সহীহ]
মানুষ মাঝেমধ্যে মনে করে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হয়নি; অথচ হয় সে যা চেয়েছে, তাকে এর চেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে; অথবা তার কাছ থেকে যেসব বিপদ-মুসিবত ও রোগব্যাধি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা তার প্রার্থিত জিনিস থেকে অধিক উত্তম; কিংবা তার কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন দেবেন। [ইবনু বায, মাজমূ' ফাতাওয়া, ১/২৫৮-২৬৮]
Source: duaruqyah.com
Last edited: