সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Golam Rabby

ফাযায়েলে আমল যেসব আমল করলে জিহাদের নেকী পাওয়া যায়

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
715
Comments
847
Reactions
7,590
Credits
3,759
সরাসরি জিহাদে অংশগ্রহণ না করলেও এমন কিছু আমল রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়ন করলে জিহাদের ন্যায় নেকী পাওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো-

পিতা-মাতার খিদমত করা। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর নিকট এসে জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুমতি চাইল। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার পিতা-মাতা জীবিত আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘যাও তাদের (সেবার) মধ্যে জিহাদ করো’ (সহীহ বুখারী, হা/৩০০৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৪৯; আবুদাঊদ, হা/২৫২৯; নাসাঈ, হা/৩১০৩; তিরমিযী, হা/১৬৭১; মিশকাত, হা/৩৮১৭)।

জিহাদের জন্য সম্পদ দান করা। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ‘গাযী তাঁর জিহাদের পূর্ণ ছওয়াব লাভ করবে আর জিহাদের জন্য সম্পদ দানকারী সম্পদ প্রদান ও জিহাদ উভয়টির ছওয়াব লাভ করবে’ (আবুদাঊদ, হা/২৫২৬; মিশকাত, হা/৩৮৪২)।

যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের নেক আমল। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ‘(বছরের) যে কোনো দিনের সৎ আমলের চেয়ে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল মহান আল্লাহর নিকটে অধিকতর প্রিয়’। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল (ছা.)! আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়েও? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়েও। তবে সেই ব্যক্তির কথা স্বতন্ত্র, যে তার জান-মাল নিয়ে জিহাদে বের হয়েছে এবং কোনো একটিও নিয়ে ফিরে আসেনি (সে শহীদ হয়ে যায়)’ (আবুদাঊদ, হা/২৪৩৮; তিরমিযী, হ/৭৫৭; ইবনু মাজাহ, হা/১৭২৭; মিশকাত, হা/১৪৬০, সনদ সহীহ)।

আওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করা। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার নবী করীম (ছা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নিকটে সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, ‘সময়মত সালাত আদায় করা’। রাবী বলেন, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘তারপর পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা’। ইবনে মাসঊদ (রা.) বললেন, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা’ (সহীহ বুখারী, হা/৫২৭; সহীহ মুসলিম, হা/৮৫; তিরমিযী, হা/১৮৯৮; নাসাঈ, হা/৬১০; মিশকাত, হা/৫৬৮)

এক সালাতের পর অপর সালাতের জন্য অপেক্ষমান থাকা। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ‘এক সালাতের পরে আরেক সালাতের জন্য অপেক্ষমান ব্যক্তি সেই অশ্বারোহী সৈনিকের মতো আল্লাহর পথে যার কোমরে ঘোড়ার লাগাম শক্ত করে বাধা আছে। ফেরেশতাম-লী তার জন্য রহমত প্রার্থনা করতে থাকেন, যতক্ষণ না তার ওযূ টুটে যায় অথবা মুছাল্লা ছেড়ে উঠে পড়ে আর সে যেন সীমান্ত প্রহরার মহান কাজে নিয়োজিত’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬২৫; তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৮১৪৪, সনদ হাসান)।

বিধবা ও মিসকীনদের সহযোগিতা করা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকীনদের ভরণ-পোষণের জন্য চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ অথবা সারাদিন ছিয়াম পালনকারী ও সারারাত (তাহাজ্জুদ) সালাত আদায়কারীর সমান ছওয়াবের অধিকারী’ (তিরমিযী, হা/১৯৬৯; নাসাঈ, হা/২৫৭৭; ইবনু মাজাহ, হা/২১৪০, সনদ সহীহ)।

যাকাত সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত থাকা। রাফে‘ ইবনে খাদীজ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘সততার সাথে যাকাত আদায়কারী ব্যক্তি আল্লাহর পথের গাযী সৈনিকের মতো মর্যাদাসম্পন্ন, যতক্ষণ না সে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে’ (আবুদাঊদ, হা/২৯৩৬; তিরমিযী, হা/৬৪৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৮০৯; সহীহুল জামে‘, হা/৪১১৭; মিশকাত, হা/১৭৮৫, সহীহ হাদীস)।

দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করা। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণে বেরিয়ে পড়ে, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় আছে বলে গণ্য হবে’ (সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮৮, সনদ হাসান লি গায়রিহী)।

হজ্জ ও ওমরাহ করা। শিফা বিনতে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ছা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে চাই। তখন তিনি (ছা.) বললেন, ‘আমি কি তোমাকে এমন এক জিহাদের সন্ধান দেব, যাতে কোনো কষ্ট নেই? আমি বললাম, অবশ্যই। তিনি বললেন, বায়তুল্লাহর হজ্জ করা’ (তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/৭৯২; সহীহুল জামে, হা/২৬১১)।

১০ ফিতনার সময় সুন্নাতকে আঁকড়ে থাকা। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের পরবর্তীতে এমন এক ধৈর্য্যরে যুগ আসবে, যে ব্যক্তি সেই মুহূর্তে আমার সুন্নাতকে আঁকড়ে থাকবে, সে পঞ্চাশজন শহীদের মর্যাদা লাভ করবে’। তখন ওমর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছা.)! আমাদের মধ্যকার নাকি তাদের মধ্যকার (পঞ্চাশজন শহীদের মর্যাদা লাভ করবে)? রাসূল (ছা.) বললেন, ‘তোমাদের মধ্যকার (৫০ জন) শহীদের মর্যাদা লাভ করবে’ (তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/১০৩৯৪; সহীহুল জামে, হা/২২৩৪; সিলসিলা সহীহা, হা/৪৯৪)।

১১ স্বৈরাচারী এবং অত্যাচারী শাসকের সামনে হক্ব কথা বলা। জাবের (রা.) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ‘শহীদগণের সর্দার হলো হামযা ইবনে আব্দুল মুত্ত্বালিব (রা.) এবং সেই ব্যক্তি, যে কোনো অত্যাচারী শাসকের কাছে গিয়ে তাকে সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে। ফলে তাকে হত্যা করা হয়’ (মুসতাদরাক হাকেম, হা/৪৮৮৪; সহীহুত তারগীব, হা/২৩০৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৭৪; সহীহুল জামে, হা/৩৬৭৫)।

১২ প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পড়া (সহীহ বুখারী, হা/৮৪৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৯৫)।

১৩ একশত বার আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করা (নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০৬১৩; সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৫৩; সনদ হাসান)।

১৪ সবসময় শহীদী মৃত্যু কামনা করা। সাহল ইবনে হুনাইফ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে শাহাদত প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত করবেন, যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে’ (সহীহ মুসলিম, হা/১৯০৯; আবুদাঊদ, হা/১৫২০; তিরমিযী, হা/১৬৫৩; ইবনু মাজাহ, হা/২৭৯৭; মিশকাত, হা/৩৮০৮)।

১৫ শহীদের মর্যাদা প্রদানকারী বিপদ ও রোগ। জাবের ইবনে আতীক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়াও আরও সাত শ্রেণীর শহীদ রয়েছে। তারা হলো- ১. মহামারীতে মৃত (মুমিন) ব্যক্তি ২. পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি ৩. ‘যাতুল জাম্ব’ নামক কঠিন রোগে মৃত ব্যক্তি ৪. (কলেরা, ডায়রিয়া বা অনুরূপ) পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি ৫. আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি ৬. ধ্বসে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি ও ৭. গর্ভাবস্থায় মৃত মহিলা’ (আবুদাঊদ, হা/৩১১১; মিশকাত, হা/১৫৬১, সনদ সহীহ)। ইত্যাদি।

সূত্র: মাসিক আল ইতিছাম, আগস্ট ২০২০
 
Last edited by a moderator:
Top