সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Farhad Molla

ফাযায়েলে আমল যেসব আমলে জান্নাতে বাড়ি তৈরি হয়

Farhad Molla

Susceptible

Exposer
Q&A Master
Reporter
Salafi User
Threads
130
Comments
205
Solutions
1
Reactions
1,323
Credits
1,198
যেসব আমলে জান্নাতে বাড়ি তৈরি হয় (بيت في الجنة)

এক) কাতারের মাঝে ফাঁকা স্থান পূরণ করা।

َعَنْ عائشة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُا قالت قال رسول الله ﷺ : مَنْ سَدَّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً وَبَنَى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ.​

আয়িশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি কাতারের মধ্যে ফাঁকা স্থান পূর্ণ করে, বিনিময়ে আল্লাহ তার মর্যাদা উন্নীত করেন এবং জান্নাতে তার জন্যে একটি ঘর তৈরী করেন।’’ [সহীহুত তারগীব- ৫০৫]

দুই) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মাসজিদ নির্মাণ করা।

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ "‏مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ أَوْ أَصْغَرَ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ"‏​

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য টিড্ডির ঢিবির ন্যায় বা তার চেয়েও ক্ষুদ্র একটি মাসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন।” [সহীহুল জামে‘- ৬১২৮]

তিন) যোহরের পূর্বে চার রাকা‘আত সলাতুদ্ব দ্বুহা আদায় করা।

عن أبي موسى الأشعري : "من صلى الضحى أربعا و قبل الأولى أربعا بني له بيت في الجنة"​

আবূ মূসা আল-আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি উলার পূর্বে (যোহরের পূর্বে) চার রাকা‘আত সলাতুদ্ব দ্বুহা আদায় করে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হয়।” [সহীহুল জামে‘- ৬৩৪০]

চার) আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় অসুস্থ লোক বা নিজের ভাইকে দেখতে যাওয়া।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ "‏مَنْ عَادَ مَرِيضًا أَوْ زَارَ أَخًا لَهُ فِي اللَّهِ نَادَاهُ مُنَادٍ أَنْ طِبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلاً"​

আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি হাসিলের আশায় কোন অসুস্থ লোককে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘোষক (ফেরেশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকেন, ‘কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলাও, তুমি তো জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে।’” [হাসান; সহীহুল জামে‘- ৬৩৮৭]

পাঁচ) সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করা।

وَعَنْ أَبي مُوسَى رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ: « إِذَا مَاتَ وَلَدُ العَبْدِ، قَالَ اللهُ تَعَالَى لِمَلائِكَتِهِ : قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِي؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ. فَيَقُولُ: قَبَضْتُمْ ثَمَرَة فُؤَادِهِ؟ فَيَقُولُونَ : نَعَمْ. فَيَقُولُ : مَاذَا قَالَ عَبْدِي؟ فَيَقُولُونَ : حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ. فَيَقُولُ اللهُ تَعَالَى : ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتاً فِي الجَنَّةِ، وَسَمُّوهُ بَيْتَ الحَمْدِ ».​

আবূ মূসা আল-আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ নিয়েছো?’ তাঁরা বলেন, ‘জ্বি’ অতঃপর আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তার অন্তরের ফল কেড়ে নিয়েছো?’ তাঁরা বলেন, ‘জ্বি।’ তারপর তিনি বলেন, ‘আমার বান্দা কী বলেছে?’ তাঁরা উত্তরে বলেন, ‘সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন’ পড়েছে।’ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করো এবং তার নাম রাখো ‘প্রশংসার ঘর।’” [সহীহুত তারগীব- ৭৯৫]

ছয়) পরিপূর্ণ অযূ করে দিনে-রাতে বারো রাকা‘আত সলাত আদায় করা।

عن أم حبيبة رملة بنت أبي سفيان رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قالت سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ توضأ فأسبغ الوضوء ثم صلى الله في كل يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ، إِلَّا بَنَى اللَّهُ تعالى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ​

উম্মে হাবীবাহ রমলাহ বিনতে আবূ সুফিয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, “কোন মুসলিম বান্দাহ যদি পরিপূর্ণ অযূ করে আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে দিনে-রাতে বারো রাকা‘আত ফরয নয় এমন সলাত (সুন্নাতে মু‘আক্কাদাহ) আদায় করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।’’ [সহীহুল জামে‘- ৫৭৩৬]

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ‏"‏مَنْ ثَابَرَ عَلَى ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً مِنَ السُّنَّةِ بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ أَرْبَعٍ قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ"‏.‏​

আয়িশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিয়মিত বারো রাকা‘আত সুন্নাত সলাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে: যোহরের আগে চার রাকা‘আত ও পরে দুই রাকা‘আত, মাগরিবের পরে দুই রাকা‘আত, ইশার পরে দুই রাকা‘আত এবং ফজরের পূর্বে দুই রাকা‘আত।” [সহীহ তিরমিযী- ৪১৪, সুনান নাসাঈ- ১৭৯৪, সুনান ইবনে মাজাহ- ১১৪০]

সাত) বাজারে প্রবেশ করে সুনির্দিষ্ট দু‘আ পড়া।

َعَنْ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: مَنْ دَخَلَ السُّوقَ فَقَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ أَلْفَ أَلْفَ حَسَنَةٍ وَمَحَا عَنْهُ أَلْفَ أَلْفَ سَيِّئَةٍ وَرَفَعَ لَهُ أَلْفَ أَلْفَ دَرَجَةٍ وَبَنَى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ.​

উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে এ দু‘আ পড়ে

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ​

(অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, তাঁরই প্রশংসা, তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দান করেন, তিনি চিরঞ্জীব, কক্ষনো মৃত্যুবরণ করবেন না, তাঁর হাতেই কল্যাণ এবং তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান)। আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দশ লক্ষ সাওয়াব লিখেন, দশ লক্ষ গুনাহ মিটিয়ে দেন, এছাড়া তার জন্য দশ লক্ষ মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর তৈরি করেন।” [সহীহুল জামে‘- ৬২৩১]

আট) ঝগড়া পরিহার করা, তামাশার ছলেও মিথ্যা না বলা, চরিত্রকে সৈন্দর্য্যমণ্ডিত করা।

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا، وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِي أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ​

আবূ উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের যিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের যিম্মাদার, আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের যিম্মাদার।” [সহীহ আবূ দাঊদ- ৪৮০০]

নয়) লোকদেরকে খাবার খাওয়ানো, সালামের প্রসার ঘটানো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সলাত আদায় করা।

عَنْ أبي مالك الأشعري رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قال : إِنَّ فِي الْجَنَّةِ غُرَفًا يَرَى ظَاهِرُهَا مِنْ بَاطِنِهَا, وَبَاطِنُهَا مِنْ ظَاهِرِهَا ، أَعَدَّهَا اللَّهُ لِمَنْ أَطْعَمَ الطَّعَامَ وأفشى السلام، وَصَلَّى بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ".​

আবু মালেক আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, “নিশ্চয় জান্নাতে কিছু ঘর আছে যার ভিতর থেকে বাহির দেখা যায়, আর বাহির থেকে ভিতর দেখা যায়, আল্লাহ এটি প্রস্তুত করেছেন এমন লোকের জন্য যে (অভুক্ত) মানুষকে খাদ্য দান করে, সালামের প্রসার করে এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সলাত আদায় করে।’’ [সহীহুত তারগীব- ৬১৮]

দশ) দশবার সূরা ইখলাস পাঠ করা।

معاذ بن أنس الجهني رضي الله عنه قال : قال رسول الله ﷺ : من قرأ : قل هو الله أحد عشر مرات بنى الله له قصرا في الجنة.​

মু‘আয ইবনে আনাস আল-জুহানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি দশ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, আল্লাহ তাঁর জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দিবেন।” [হাদীসটি দুর্বল, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনে বায- ২৬/২৯১; ইমাম নাসিরুদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ হাসান বলেছেন, সহীহুল জামে‘- ৬৪৭২]

সম্পাদনায়,
শাইখ ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ
১৮ যুলহিজ্জাহ ১৪৪৫; ২৫ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
 
Top