সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Md Atiar Rahaman Halder

ভ্রান্ত আকিদা মুহাম্মাদ (সঃ) মারা যাননি এমনকি ওলী-আওলিয়া ও মারা যাননি বলে যে আক্বীদা সমাজে প্রচলিত

Md Atiar Rahaman Halder

Salafi

Salafi User
Threads
59
Comments
80
Reactions
735
Credit
408
মুহাম্মাদ (সঃ) মারা যাননি; বরং স্থানান্তরিত হয়েছেন মাত্র। তিনি কবরে জীবিত আছেন। অর্থাৎ হায়াতুন্নবীতে বিশ্বাস করা। এমনকি ওলী-আওলিয়াও কবরে জীবিত আছেন।

খানকা ব্যবসায়ীরা উক্ত ভ্রান্ত আক্বীদা সমাজে চালু রেখেছে। তারা নিম্নোক্ত দলীলগুলোর অপব্যাখ্যা করে থাকে।
(أ) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُوْرِهِمْ يُصَلُّوْنَ
(ক) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, নবীগণ তাদের কবরে জীবিত থেকে সলাত আদায় করছেন। , (মুসনাদে বাযযার হা/৬৮৮৮; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৩৪২৫; বায়হাক্বী, হায়াতুল আম্বিয়া, পৃঃ ৩; সনদ সহীহ, সিলসিলা সহীহাহ হা/৬২১; ফাযায়েলে দুরুদ শরীফ, পৃঃ ৩৪; (উর্দূ), পৃঃ ১৯)।
(ب) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَرَرْتُ عَلَى مُوْسَى لَيْلَةً أُسْرِيَ بِيْ عِنْدَ الكَثِيب الأحمر وَهُوَ قَائِمُ يُصَلِّى فِي قَبْرِه
(খ) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, মি'রাজের রাত্রে আমি যখন লাল টিলার নিকট দিয়ে মূসা (আঃ)-কে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিলেন। (সহীহ মুসলিম হা/৬৩০৬, 'মর্যাদা' অধ্যায়, ‘মূসা (আঃ)-এর ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৪২)।

ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা/৪৪৮, 'ঈমান' অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৭)।

অন্য হাদীসে বলেন,​
(ج) إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الأَنْبِيَاءِ
(গ) 'নিশ্চয় মহান আল্লাহ যমীনের উপর নবীগণের শরীরকে হারাম করে দিয়েছেন।(আবুদাউদ হা/১০৪৭ ও ১৫৩১; মিশকাত হা/১৩৬১ ও ১৩৬৬)।

অন্যত্র এসেছে,​
مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلَّا رَدَّ اللهُ عَلَى رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ
'কোন ব্যক্তি আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করলে আমার রূহ ফেরত দেয়া হয় এবং আমি তার প্রতি সালামের উত্তর দেই” । (আবুদাউদ হা/২০২১; মিশকাত হা/৯২৫, সনদ হাসান)।

পর্যালোচনা :
রসূল (সঃ) মারা গেছেন এটিই সঠিক আক্বীদা। আল্লাহ তা'আলা রসূল (সঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন​
إِنَّكَ مَيْتُ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ رَبِّكُمْ تَخْتَصِمُوْنَ​

‘আপনিও মারা যাবেন এবং তারাও মারা যাবে। অতঃপর ক্বিয়ামত দিবসে তোমরা পরষ্পর তোমাদের প্রতিপালকের সামনে বাক-বিতণ্ডা করবে' (সূরা যুমার ৩০-৩১)।

এছাড়াও এ ব্যাপারে অনেক আয়াত ও হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে। তবে উপরে বর্ণিত হাদীছগুলোও ছহীহ। কিন্তু তা বারযাখী জীবনের বিষয় অর্থাৎ দুনিয়াবী জীবন ও পরকালীন জীবনের মাঝের জীবন। দুনিয়াবী জীবনের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে। কারণ এগুলো গায়েবের বিষয়।

যেমন- রসূল (সঃ) মূসা (আঃ)-কে কবরে ছালাত আদায় করতে দেখলেন কিন্তু একটু পরে ৬ষ্ঠ আসমানে দেখা হল।(বুখারী হা/৩৮৮৭; মিশকাত হা/৫৮৬২)।

এরপর যখন ফিরে আসলেন তখন সকল নবী-রাসূলগণ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং তাঁর ইমামতিতে সলাত আদায় করলেন বায়তুল মাক্বদেসে। (মুসলিম হা/৪৪৮)।সুতরাং এগুলোর কোন কল্পিত ব্যাখ্যা করা যাবে না।

দ্বিতীয়তঃ কবরে সলাত আদায়ের বিষয়টি কেবল নবীদের সাথেই খাস। অন্যদের ব্যাপারে নয়। কারণ মৃত্যুর পর কোন ইবাদত নেই। তাছাড়া কবরস্থানে সলাত আদায় করা নিষেধ। (বুখারী হা/১৩৩০; মিশকাত হা/৭১২)। তাহলে তারা কিভাবে সেখানে ছালাত আদায় করছেন? তাই এগুলো দুনিয়াবী বিষয়ের সাথে মিলানো যাবে না।

তৃতীয়তঃ রসূল (সঃ)-এর প্রতি কেউ দরূদ ও সালাম পাঠালে ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাঁর কাছে পাঠানো হয়। অতঃপর আল্লাহ তাঁর মাঝে রূহ ফেরত দিলে সালামের উত্তর দেন। কবর থেকে রসূল (সঃ) নিজে সরাসরি শুনতে পেলে কেন উক্ত মাধ্যমের প্রয়োজন হয়? তাই দুনিয়ার মানুষের কোন কথা সরাসরি কেউ কবর থেকে শুনতে পায় না এটাই চূড়ান্ত। আল্লাহ চাইলে কাউকে শুনাতে পারেন। এটা তাঁর ইচ্ছাধীন। (ফাত্বির ২২; যুমার ৫২; ইবনু মাজাহ হা/১৯৮)।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, তাবলীগ জামায়াতের ফাযায়েলে আমল বইয়ের হজ্জ ও দরূদ অংশে রসূল (সঃ)-এর কবর নিয়ে এত যে মিথ্যা ঘটনা লেখা আছে, তা গুণে শেষ করা যাবে না। অতএব উক্ত বই থেকে সাবধান!

চতুর্থতঃ সাধারণ মানুষকে কবরে রাখার পর লোকেরা যখন চলে আসে তখনও মৃত ব্যক্তি তাদের পায়ের জুতার শব্দ শুনতে পায়। উক্ত মর্মেও সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। , (বুখারী হা/১৩৩৮; মিশকাত হা/১২৬)।

'এছাড়া মুমিন ব্যক্তিকে কবরে বসানোর সাথে সাথে আসরের সলাত আদায় করতে চায়।(ইবনু মাজাহ হা/৪২৭২, সনদ হাসান; মিশকাত হা/১৩৮)।

কিন্তু কুরআন-হাদীস থেকে এর বেশী কিছু জানা যায় না। তাই যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে।

মূলতঃ উক্ত বিষয়গুলো কোনটিই দুনিয়াবী জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। কারণ ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত হাদীছগুলো জানা সত্ত্বেও কখনো রসূল (সঃ)-এর কবরের কাছে গিয়ে চাননি কিংবা তাঁর কাছে কোন অভিযোগ করেননি এবং তাঁকে অসীলা মেনে দু'আও করেননি। বরং দুর্ভিক্ষের কারণে তাঁরা রসূল (সঃ)-এর কবরের কাছে না গিয়ে তাঁর জীবিত চাচা আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে দু'আ চেয়েছেন। কারণ কবরে যাওয়ার পর দুনিয়ার সাথে যেমন কোন সম্পর্ক থাকে না, তেমনি কারো কোন উপকার বা ক্ষতি করারও ক্ষমতা থাকে না। যেমন-​
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَابِ كَانَ إِذَا قَحَطُوْا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَم نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا قَالَ فَيُسْقَوْنَ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মানুষ যখন দুর্ভিক্ষের মাঝে পড়ত, তখন ওমর (রাঃ) আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর মাধ্যমে পানি প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে পানি প্রার্থনা করতাম আপনার নবীর মাধ্যমে। আপনি আমাদের পানি দিতেন। এখন আমরা আমাদের নবীর চাচার মাধ্যমে পানি প্রার্থনা করছি, আপনি আমাদেরকে পানি দান করুন। রাবী বলেন, অতঃপর পানি হত। (সহীহ বুখারী হা/১০১০, ১/১৩৭ পৃঃ)।

উক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, সাহাবীগণ কবরের কাছে গিয়ে নবী (সঃ)-কে অসীলা ধরে দু'আ করতেন না। অথচ তাঁর কবর তাঁদের নিকটেই ছিল । বরং তাঁরা জীবিত ব্যক্তি হিসাবে রসূল (সঃ)-এর চাচার কাছে গিয়ে দু'আ চাইতেন।

লক্ষণীয় হল, যদি মুহাম্মাদ (সঃ) কবর থেকে তাঁর সাহাবীদের কোন উপকার করতে না পারেন, তবে পৃথিবীতে আর কোন ব্যক্তি আছে যে কবর থেকে মানুষের উপকার করতে পারবে?

সুধী পাঠক! বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ‘হায়াতুন্নবীতে' বিশ্বাসী। এমনকি তথাকথিত পীর-ফকীর ও ওলীরা কবরে জীবিত আছেন বলে ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ করে থাকে। উক্ত শিরকী আক্বীদা থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে।​

ভ্রান্ত আক্বীদা বনাম সঠিক আক্বীদা
মুযাফফর বিন মুহসিন​

আমাদের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি বাক্য :​
إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا يَموتُونَ، بَلْ يَنْتَقِلُونَ مِنْ دَارِ الْفَنَاءِ إِلى دَارِ الْبَقَاءِ
প্রচলিত একটি পুস্তকে এই বাক্যটির অনুবাদ লেখা হয়েছে: “নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন মৃত্যু নেই বরং তাঁরা স্থানান্তরিত হয় ধ্বংসশীল ইহ জগৎ হতে স্থায়ী পরজগতে”-আল হাদীস । (খাজা নিযামুদ্দিন আউলিয়া (রাহ), রাহাতুল মুহিব্বীন, শেষ প্রচ্ছদ) ।

এখানে উল্লেখ্য যে, আব্দুল কাদির জীলানীর (রাহ) নামে প্রচলিত ‘সিররুল আসরার' পুস্তকে এই হাদীসটি অন্যভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:​
المؤمِنُونَ لا يَمُوتُونَ ، بَلْ يَنْتَقِلُونَ مِنْ دَارِ الْفَنَاءِ إِلى دَارِ الْبَقَاءِ
“মুমিনগণের কোন মৃত্যু নেই বরং তাঁরা স্থানান্তরিত হয় ধ্বংসশীল ইহজগৎ হতে স্থায়ী পরজগতে।”

দুটি কথাই রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নামে জঘন্য মিথ্যা, বানোয়াট ও জাল কথা। কোনো সহীহ, যয়ীফ বা বানোয়াট সনদেও তা বর্ণিত হয় নি ।

আমরা জানি যে, প্রতিটি মানুষই মৃত্যুর মাধ্যমে “ধ্বংসশীল ইহ জগৎ হতে স্থায়ী পরজগতে স্থানান্তরিত হয়।” এখানে কারো কোনো বিশেষত্ব নেই । কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াত ও বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা শহীদগণের পারলৌকিক বিশেষ জীবন প্রমাণিত। সহীহ হাদীসের আলোকে নবীগণের পারলৌকিক বিশেষ জীবন প্রমাণিত। এছাড়া অন্য কোনো নেককার মানুষের পারলৌকিক বিশেষ কোনো জীবন প্রমাণিত নয়।

আলিমগণ, ওলীগণ, মুআযযিনগণ... ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার নেককার মানুষের মৃত্যু পরবর্তী ‘হায়াত’ বা জীবন সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় সবই সনদ বিহীন, ভিত্তিহীন বাতিল কথা ৷
('দরবেশ হৃত, আসনাল মাতালিব, পৃ. ২৯৫-২৯৬: দাইলামী, আল-ফিরদাউস ৩/৩৫ )।

ওলীগণের পারলৌকিক জীবন বিষয়ক আরেকটি জাল কথা​
الأنبياء والأولياء يُصَلُّونَ فِي قُبُورِهِمْ كَمَا يُصْلُونَ فِي بُسُوتِهِمْ
“নবীগণ ও ওলীগণ তাঁদের কবরের মধ্যে সালাত আদায় করেন, যেমন তাঁরা তাঁদের বাড়িতে সলাত আদায় করেন।” (সিররুল আসরার, পৃ. ৫৫)।

আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি যে, নবীগণের ক্ষেত্রে হাদীসটি সহীহ। তবে এখানে ‘ওলীগণ' শব্দটির সংযোগ বানোয়াট ।​

হাদীসের নামে জালিয়াতি: প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
পি-এইচ. ডি. (রিয়াদ), এম. এ. (রিয়াদ), এম.এম (ঢাকা) সহযোগী অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া​
 
Top