মুহাম্মদ হিজাবের মিথ্যাচারের জবাব - ১

  • Thread Author

মুহাম্মাদ হিজাবের দাবিঃ আল্লাহর সিফাতের স্বীকৃতি করা হল তাজসিম ও হিন্দুইজম!


মুহাম্মদ হিজাব তার একটি ভিডিওতে আহলুস সুন্নাহ’কে তথা সালাফিয়্যাহ’কে নিয়ে উপহাস করেছে এবং সালাফিদের উপর এই অপবাদ দিয়েছে ‘সালাফিরা নাকি আল্লাহর সাথে মানুষের সাদৃশ্য স্থাপন করে। আসুন আমরা আহলুস সুন্নাহর ইজমা’ (ঐকমত্য) দেখি। ইমাম আত-তিরমিযী (মৃত্যু ২৭৯ হিঃ): “আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবের বিভিন্ন স্থানে তাঁর হাত, শ্রবণ ও দেখার গুন(সিফাত) উল্লেখ করেছেন। কিন্তু জাহমিয়ারা এই আয়াতগুলিকে ভুল ব্যাখ্যা করেছে, আহলুল ইলমরা যেভাবে ব্যাখ্যা করেছে জাহমিয়ারা সেভাবে ব্যাখ্যা করেনি। জাহমিয়ারা আহলুল ইলমদের বর্ণনার বিরোধিতা করে এবং বলে, ‘এটি সাদৃশ্য (তাশবিহ)!’ জাহমিয়ারা বলে, ‘আল্লাহ আদমকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেননি।’ কারণ এখানে হাত দ্বারা ক্ষমতা উদ্দেশ্য। ইসহাক ইবনে ইব্রাহিম আর-রাহূয়াহ (মৃত্যু ২৩৮ হিঃ) বলেছেন, ‘সাদৃশ্য হবে তখন যখন বলা হয়: ‘আল্লাহর হাত আমার হাতের মতো বা এটার মত ওটার মত’ অথবা বলা হয়, ‘আমার শ্রবণের মতো শ্রবণ, বা আমার দেখার মত দেখা’ তাহলে এটি সাদৃশ্য হবে। যদি বলা হয় আল্লাহর হাত আছে তবে সেটা সেরকম যেরকম আল্লাহর সাথে যায় তাহলে এটি সাদৃশ্য বলে গন্য হবেনা। আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন, ‘তাঁর সমতুল্য কেউ নেই এবং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’। [ আত-তিরমিযী নং ৬৬২ (সুনান) ]

✅
আল্লাহ’র দুই হাত সম্পর্কে:


وَعَن عبد الله بن عَمْرو قَالَ: قا ل رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَطْوِي اللَّهُ السَّمَاوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْيُمْنَى ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ؟ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ؟ ثُمَّ يَطْوِي الْأَرَضِينَ بِشِمَالِهِ – وَفِي رِوَايَة: يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْأُخْرَى – ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ أينَ
الجبَّارونَ أينَ المتكبِّرونَ؟ . رَوَاهُ مُسلم رواہ مسلم (صَحِيح)​

আল্লাহর দু’হাত রয়েছে এবং ডান ও বাম হাতও রয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আকাশমন্ডলী পেঁচিয়ে নিবেন। তারপর তিনি আকাশমন্ডলীকে ডান হাতে ধরে বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় শক্তিশালী লোকেরা! কোথায় অহংকারীরা? এরপর তিনি বাম হাতে গোটা পৃথিবী গুটিয়ে নিবেন এবং বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় অত্যাচারী লোকেরা, কোথায় বড়ত্ব প্রদর্শনকারীরা?’ [ (মুসলিম হা/২৭৮৮; মিশকাত হা/৫৫২৩)]।

অত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর ডান ও বাম হাত রয়েছে। তবে তা সৃষ্টজীবের মত নয়। অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টজীব বাম হাত দ্বারা সাধারণত দুর্বল বা অপরিষ্কার কাজগুলো করে থাকে। সে অর্থে আল্লাহর দু’হাতই ডান হাত। যেমন রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘ন্যায়বিচারকগণ (ক্বিয়ামতের দিন) আল্লাহর নিকটে নূরের মিম্বর সমূহে মহিমান্বিত দয়ালু (আল্লাহ্)-এর ডানপার্শ্বে উপবিষ্ট থাকবেন। আর তার উভয় হাতই ডান হাত (অর্থাৎ সমান মহিমান্বিত)। (সেই ন্যায়পরায়ণ হচ্ছে) ঐসব লোক, যারা তাদের শাসনকার্যে, তাদের পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে এবং তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব সমূহের ব্যাপারে সুবিচার করে [ (মুসলিম হা/১৮২৭; মিশকাত হা/৩৬৯০) ]।

অর্থাৎ সম্মান-মর্যাদা, ক্ষমতা ও দোষ-ত্রুটির ক্ষেত্রে সৃষ্টজীবের বাম হাতের সাথে তাঁর হাত তুলনীয় নয় [ (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১২৬; উসাইমীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/১৬৫) ]।

✅
আল্লাহ’র আঙুল সম্পর্কে:


حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَابْنُ، نُمَيْرٍ كِلاَهُمَا عَنِ الْمُقْرِئِ، قَالَ زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ، اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ الْمُقْرِئُ قَالَ حَدَّثَنَا حَيْوَةُ، أَخْبَرَنِي أَبُو هَانِئٍ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحُبُلِيَّ، أَنَّهُ سَمِعَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، يَقُولُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏"‏ إِنَّ قُلُوبَ بَنِي آدَمَ كُلَّهَا بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ كَقَلْبٍ وَاحِدٍ يُصَرِّفُهُ حَيْثُ يَشَاءُ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ​

আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আল-আস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন: নিঃসন্দেহে, সমস্ত আদম-সন্তানের অন্তর আল্লাহর আঙ্গুলের মধ্যকার দুই আঙ্গুলের মধ্যে রয়েছে। তিনি যেদিকে চান সেদিকেই তাকে ঘুরিয়ে দেন. অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আল্লাহ, হে অন্তরের পরিবর্তনকারী, আমাদের অন্তরকে আপনার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দিন। [ সহীহ মুসলিম ২৬৫৫ ]

✅
আল্লাহ’র পা সম্পর্কে:


عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي الْأَسْوَدِ حَدَّثَنَا حَرَمِيُّ بْنُ عُمَارَةَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يُلْقَى فِي النَّارِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ حَتَّى يَضَعَ قَدَمَهُ فَتَقُوْلُ قَطْ قَطْ.​

আল্লাহ যখন জাহান্নামকে বলবেন, তুমি কি পূর্ণ হয়েছ? তখন সে বলবে, আরো বেশি আছে কি? তখন মহান আল্লাহ জাহান্নামে তাঁর পা রাখবেন। জাহান্নাম তখন বলবে, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে (বুখারী হা/৪৮৪৮; মুসলিম ‘জান্নাত’ অধ্যায় হা/৩৫, ৩৭, ৩৮; মিশকাত হা/৫৬৯৪-৯৫)।

আবু ইসমাঈল আল-হারাবী (৪৮১ হি) ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)-এর উদ্বৃতি দিয়ে বলেছেন: “নিশ্চয়ই কুরসী হল [আল্লাহর] দু পা রাখার স্থান, আর কুরসী কত বড় তা অনুমান করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।” [ আত-তাওহীদে ইবনে খুজাইমা, পৃ. ১০৭-১১৮; আল-হাকিম ইন আল-মুসতাদরাক: আত-তাফসীর 2/282, এবং তিনি বলেছেন: এই হাদীছটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুসারে সহীহ, এবং এটি তাদের দ্বারা বর্ণিত হয়নি এবং আয-যাহাবী সম্মত হন। শাইখ আল-আলবানী তার মুখতাসার আল-উলুউউ, পৃ. ১০২ ]

এতে বুঝা গেলো আল্লাহ তা’আলার দুটি পা রয়েছে এবং তা কিরূপ কোনো সৃষ্টি কখনো কল্পনা করতে পারবেনা এর প্রকৃত রূপ কেবল আল্লাহ তা’আলাই জানেন।

✅
আল্লাহ’র চোখ সম্পর্কে:

আল্লাহ তা’আলা নূহ আঃ কে বলেছিলেন

وَاصْنَعِ الْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا وَلَا تُخٰطِبْنِى فِى الَّذِينَ ظَلَمُوٓا ۚ إِنَّهُم مُّغْرَقُونَ​

“আর তুমি আমার চোখের সামনে ও আমার ওহী (প্রত্যাদেশ) অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ কর, আর যালেমদের ব্যাপারে আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তাদেরকে ডুবানো হবে। (হুদঃ৩৭)

وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعْيُنِنَا ۖ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ حِينَ تَقُومُ​

আর মহানবী (ﷺ) কে বলেছিলেন, তুমি ধৈর্যধারন কর তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায়; তুমি আমার চোখের সামনেই রয়েছ। আর তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর যখন তুমি শয্যা ত্যাগ কর (তূরঃ৪৮)

আবু ইসমাঈল আল-হারাবী (৪৮১ হি) আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) এর বর্ণনা দিয়ে বলেন, যিনি বলেছেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَا مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ وَقَدْ حذر أُمَّتَهُ الأَعْوَرَ الْكَذَّابَ أَلاَ إِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ الْكَذَّابَ أَلاَ إِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ​

“এমন কোন নবী নেই যে তিনি তার জাতিকে একচোখা মিথ্যাবাদী সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। দেখো সে একচোখা আর তোমার প্রভু একচোখা নন। তার (দাজ্জালের) কপালে কা-ফা-রা (অর্থাৎ কাফির) অক্ষর লেখা আছে।’’
আদ-দারিমী (رحمه الله) বলেন: “আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিটির ব্যাখ্যা হল, ‘আল্লাহ একচোখা নন’, তিনি (সর্বোচ্চ) সর্বদ্রষ্টা যার দুটি চোখ আছে। তিনি একচোখা [দাজ্জালের] মত নন।” [ (আন-নাকদ আলা বিশর আল-মারীসী, পৃ. ৪৮) ]

আবু বকর ইবনে খুযাইমাহ, মৃত্যু ৩১১ হি (رحمه الله) বলেছেন: “আমরা বলি: আমাদের প্রভু, সৃষ্টিকর্তার দুটি চোখ আছে এবং তিনি তা দিয়ে দেখেন যা মাটির নিচে কিংবা মাটির উপরে আছে এবং আকাশে যা রয়েছে তার সবই তিনি দেখেন তিনি সর্বদ্রষ্টা” [ (কিতাব আত-তাওহীদ পৃ. ৫২, দারুল-কিতাব আল ইলমিয়া) ]
ইবনে উসাইমিন (رحمه الله) বলেছেন: “আমরা বিশ্বাস করি যে মহান আল্লাহ তায়ালার দুটি চোখ রয়েছে। আর এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বক্তব্য। আবুল-হাসান আল-আশআরী বলেন: আহলুস-সুন্নাহ এবং আসহাবুল-হাদীসের উক্তি হল যে, আল্লাহর দুটি চোখ আছে [ দেখুনঃ ইজালাতুস-সিতার ‘আন আল-জাওয়াব আল-মুখতার লি-হিদায়াতিল-মুহতার ইবনে উসাইমিন, পৃ. ২২; এছাড়াও আল-মাকালাত আল-ইসলামিয়ীন ১/৩৪৫, এবং আবুল-হাসান আল-আশআরীর আল-ইবানাহ, পৃষ্ঠা ৪৩-৪৪,]

আমি তো কেবল কুর’আন ও সুন্নাহ থেকে দু’একটি দলিল নিয়ে এসেছি এরকম অসংখ্য দলিল কুর’আন সুন্নাহ ও সালাফদের বইয়ে রয়েছে এর পরেও যদি কারো বোধগম্য না হয় তাহলে ইমাম ত্বহাবীর সূরে সূর মিলিয়ে বলতে হয়

يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَيَعْصِمُ وَيُعَافِي فَضْلًا وَيُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَخْذُلُ وَيَبْتَلِي عَدْلًا​

আল্লাহ অনুগ্রহ করে যাকে ইচ্ছা, তাকে হেদায়াত, আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। আর যাকে ইচ্ছা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট করেন, অপমানিত করেন ও বিপদগ্রস্ত করেন।



জয়নাল বিন তোফাজ্জল
ইসলামিক স্টাডিস (বিভাগ), দনিয়া ইউনিভার্সিটি ঢাকা​
 
Last edited by a moderator:
Back
Top