সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Mahmud ibn Shahidullah

প্রবন্ধ প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
LV
10
 
Awards
18
Credit
3,455
তাবলীগ অনুসারীদের ব্যাপারে আলেমগণের উক্তিগুলোর সারাংশ

নিশ্চয় তাবলীগ জামা‘আত একটি বিদ‘আতী দল। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণের রেখে যাওয়া প্রথম নীতির উপর বিদ্যমান নেই। মিসর, সঊদী আরব বা পৃথিবীর অন্য যে কোন স্থানে থাক না কেন তারা একটি ভ্রান্ত দল। তারা আধুনিক ছূফীবাদী এবং পাশাপাশি তারা অজ্ঞ। শরী‘আতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথা সহীহ আক্বীদা সম্পর্কে তাদের কোন দূরদর্শিতা নেই। তারা তাওহীদ ও সহীহ আক্বীদার দা‘ওয়াত না দেয়ার কারণেই তাদের অনুসারীর সংখ্যা বেশি। তাদের একটি আশ্চর্য ব্যাপার হল যে, তারা নিজেদের অজ্ঞতার কথা স্বীকার করে। অথচ আবার অন্যকে দা‘ওয়াত দেয়। কোন ব্যক্তি যে বস্তু তার নিজের কাছেই নেই সে উহা অন্যকে কেমন করে দিতে সক্ষম হবে? এই কারণে তাদের সাথে মিলিত হওয়া ও তাদের সাথে দা‘ওয়াতী কাজে বের হওয়া জায়েয না। তবে শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) আলেম ব্যক্তির ব্যাপারে ভিন্নতা দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন,

من عنده علم فإنه يصح له الخروج معهم بنية إصلاحهم ودعوتهم لأنهم محتاجون إلى من يدعوهم​

‘আলেম ব্যক্তি তাদেরকে সংশোধন করা ও দা‘ওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদের সাথে বের হওয়া সঠিক হবে। কারণ তাদেরকে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করবে এমন ব্যক্তির তারা মুখাপেক্ষী’।

হে আমার পাঠক ভাই! তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে বিদ্যানগণের উক্তিগুলোর এই ছিল সারসংক্ষেপ বাণী। অতঃপর এই জামা‘আতের নিন্দায় ও তাদের থেকে সাবধানকরণে উক্ত বাণীগুলোকে পরিষ্কারভাবে আপনি পর্যবেক্ষণ করলেন। তাদের অজ্ঞতার ও সহীহ আক্বীদার প্রতি গুরুত্ব না দেয়ার কারণে তাদের দা‘ওয়াতের মাঝে ত্রুটি বিদ্যমান আছে। সুতরাং সত্য ও হেদায়াত তালাশকারীদের জন্য তাদের বাণীর পরেও কি কোন কথা রয়েছে?

হে সৌভাগ্যবান! এই জামা‘আত সম্পর্কে বিদ্বানদের অবস্থানের বিষয়টি আপনি অবগত হওয়ার মাধ্যমে আপনার নিকট পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, তাবলীগ অনুসারীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আলেমদেরকে নিন্দা করে কেন? এবং তাদের অনুসারীদেরকে ইলমী দারস ও আলেমদের থেকে আলাদা করে রাখে কেন? সুতরাং আপনি নিজেকে তাদের থেকে রক্ষা করুন এবং নিজের দ্বীন নিয়ে তাদের থেকে দূরে থাকুন। কারণ নবী ও রাসূলগণের ওয়ারিছ আলেমদের অনুসরণের মাঝেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা।

তাদের মাধ্যমে কিছু মানুষের হেদায়াত পাওয়ার কারণে আপনি প্রতারিত হওয়া থেকে সাবধান থাকুন। কারণ ইহা তাদের দা‘ওয়াত সঠিক হওয়ার জন্য মানদণ্ড নয়। বরং সত্য ও সঠিক হিসাবে মানদণ্ড হল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণের পন্থার সাথে তাদের পন্থার মিল থাকা। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পন্থা অনুসরণের মাঝে সফলতা রয়েছে। শরী‘আতে নতুন উদ্ভাবনের (তথা বিদ‘আতের) মাঝে নয়।

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّ اللهَ لَيُؤَيِّدُ هَذَا الدِّيْنَ بِالرَّجُلِ الْفَاجِرِ​

‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা পাপী ব্যক্তির মাধ্যমেও এই দ্বীনের সাহায্য করে থাকেন’।[১] উক্ত হাদীসের মাঝে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যক্তিটিকে একই সাথে পাপী ও দ্বীনের সাহায্যকারী হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আর এটা শুধু সায়্যিদুল মুরসালীন (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হেদায়াত থেকে লোকটি সরে যাওয়ার কারণেই ছিল।

সতর্কতা : আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেয়ার ব্যাপারে তাদের চরম আগ্রহ ও আত্মত্যাগের কারণেও আপনি প্রতারিত হবেন না। কারণ আমল করার ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম করা সেই আমলটি সঠিক হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে না। যতক্ষণ না উক্ত আমলটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পন্থার সাথে মিলে যায়। কারণ একাধিক সালাফ বলেছেন,

اقتصاد في سنة خير من اجتهاد في بدعة​

‘সুন্নাহ পালনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা বিদ‘আতের মাঝে কঠোর পরিশ্রম করার চাইতে উত্তম’। সালাফদের কথাকে জোরদার করবে আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত সালাত ও কুরআন পাঠের ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম গুণে গুণান্বিত খারেজী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

دَعْهُ فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلَاتَهُ مَعَ صَلَاتِهِمْ وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِمْ يَقْرَءُوْنَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُوْنَ مِنَ الدِّيْنِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ.​

‘তাকে ছেড়ে দাও। কারণ তার আরও কিছু সঙ্গী আছে। তোমরা তোমাদের সালাতকে তাদের সালাতের তুলনায় এবং তোমাদের সিয়ামকে তাদের সিয়ামের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন হতে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক হতে বের হয়ে যায়’।[২]

স্মরণ করুন! উক্ত হাদীসের মাঝে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণকে সম্বন্ধ করেছেন যারা সালাত ও সিয়াম পালনে শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন। অথচ খারেজীদেরকে আমলের ব্যাপারে তাদের এতো কঠোর পরিশ্রমও কোন উপকার করেনি। কারণ তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পন্থা অনুযায়ী ছিল না।

ইবনু তাইমিয়াহ এবং তাবলীগপন্থীরা

আরব দেশগুলোতে উপস্থিত তাবলীগ জামা‘আত যারা আক্বীদার ক্ষেত্রে নয় বরং দা‘ওয়াতী পন্থার ক্ষেত্রে ভিন্ন পথ অবলম্বনকারী। তাদের মত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এই বড় সালাফী ইমামের (ইবনু তাইমিয়ার) একটি বলিষ্ট ফৎওয়া রয়েছে। তার পক্ষ থেকে এই কঠোরতা ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে, যার আক্বীদায় কোন ত্রুটি নেই। সুতরাং দা‘ওয়াতের পাশাপাশি সে যদি আক্বীদায় ভিন্ন হত তাহলে তিনি তার ব্যাপারে আরো কতটা কঠোর হতেন? জ্ঞাতব্য যে, শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ)-কে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি দ্রুত উত্তর না দিয়ে তার কথার ফাঁকে ফাঁকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি প্রণয়ন করেছেন। যেগুলোকে জানা বা আয়ত্ত করা দাঈদের উচিত।

শায়খুল ইসলাম তাক্বীউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনু আব্দুল হালীম ইবনু তাইমিয়াহ আল-হাররানী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে একটি জামা‘আত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল যে, তারা খুন, রাহাজানী, চুরি, মদপান ছাড়াও অন্যান্য বড় বড় পাপ কাজের উদ্দেশ্যে এক জায়গায় একত্রিত হয়। এমতবস্থায় সুন্নাহ অনুসারী ও কল্যাণকর কাজে পরিচিত মাশায়েখদের মধ্য থেকে একজন শায়খ উল্লিখিত ব্যক্তিদেরকে উক্ত পাপগুলো থেকে বাধা প্রদানের ইচ্ছা করেন। কিন্তু একটি কৌশল ছাড়া তা সম্ভব ছিল না। তাহল এই যে, তিনি তাদের জন্য বাজনা ছাড়া ঢোল বাজিয়ে ও বাশি ছাড়া বৈধ কবিতার দ্বারা গায়কের গান শোনানোর জন্য একটি বৈঠকের আয়োজন করবেন যেখানে তারা এই উদ্দেশ্যে একত্রিত হবে। যখন তিনি এ কাজটি করলেন, তখন তাদের মধ্য থেকে একদল মানুষ তওবাহ করল এবং যে ব্যক্তি সালাত পড়ত না, চুরি করত, যাকাত দিত না সে এমন হল যে, এখন সে সন্দেহ বিষয় পরহেয করে, ফরযগুলো আদায় করে ও হারামগুলো বর্জন করে। অতএব প্রশ্ন হল এই যে, এই পদ্ধতিতে উক্ত শায়খের গান শোনানোর বৈঠক আয়োজন করা কি বৈধ? কারণ তাতে কল্যাণ বিদ্যমান আছে। সাথে সাথে এভাবে ছাড়া তাদেরকে দা‘ওয়াত দেয়া সম্ভব ছিল না।

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) -এর উক্ত প্রশ্নের জবাব উপস্থাপনের পূর্বে আমি সম্মানিত পাঠকের দৃষ্টিকে ঐ ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে চাই। যে ঘটনার আলোকে শায়খ এই শক্ত ফৎওয়াটি প্রদান করেছেন, উক্ত ঘটনাটির মাঝে বেশ কয়েকটি বিষয় একত্রিত হয়েছে।

১. দা‘ওয়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ হেদায়াতের পূর্বে তাদের দূরবস্থার বিষয়। কারণ তারা খুন-খারাবি, চুরি করা ও রাহাজানির মত বড় বড় পাপের মাঝে নিমজ্জিত ছিল।

২. দা‘ওয়াত দাতার সততার বিষয়। কারণ তিনি ছিলেন একজন বিদ্বান যিনি সুন্নাহ অনুসরণে ও ভাল কাজে প্রসিদ্ধ।

৩. তিনি তার সেই কাজের মাধ্যমে কল্যাণ চেয়েছিলেন।

৪. তিনি তাদের সাথে বড় বড় হারাম কাজগুলোতে লিপ্ত হননি। তিনি শুধু এতটুকু করেছেন যে, বাজনা ছাড়াই ঢোল বাজিয়েছেন এবং বাঁশি ছাড়াই বৈধ কবিতার গান গেয়েছেন।

৫. তাদের হেদায়াতের জন্য উক্ত পন্থা অবলম্বন করা ব্যতীত তার পক্ষে দা‘ওয়াত দেয়া সম্ভব ছিল না।

৬. উক্ত পন্থার উপর একটি বড় কল্যাণ ও বিরাট মঙ্গল অর্জিত হয়েছে। এসব কিছু সত্ত্বেও ইবুন তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে তার আবেগ পরাজিত করতে পারেনি এবং তিনি আবেগের জন্য ভেঙ্গে পড়েননি। বরং তিনি তার ফৎওয়াকে শারঈ দলীল ও কার্যকরী কায়েদার উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অতঃপর এই ঘটনার ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত ছিল নি¤œরূপ-সুতরাং তিনি প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে গিয়ে বলেন যে,

‘সমস্ত প্রশংসা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। এই মাসআলা এবং এই রকম আরো অন্যান্য সাদৃশ্যপূর্ণ মাসআলার জবাবের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল এই যে, পরিষ্কারভাবে জেনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সকল ধর্মের উপর বিজয় দেয়ার জন্য মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন। এ ব্যাপারে সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। এর সাথে আরো জেনে রাখতে হবে যে, তিনি তাঁর এবং তাঁর উম্মতের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا​

‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৩)।

আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির জন্য সৌভাগ্যের সুসংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁর আনুগত্য করে এবং যে তাঁর অবাধ্য হবে তাকে দুর্ভাগ্যের সংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَ الرَّسُوۡلَ فَاُولٰٓئِکَ مَعَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیۡقِیۡنَ وَ الشُّہَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیۡنَ ۚ وَ حَسُنَ اُولٰٓئِکَ رَفِیۡقًا​

‘আর যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়, তবে তারা ঐ ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নবীগণ, ছিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মশীলগণ এবং এরাই সর্বোত্তম সঙ্গী’ (সূরা আন-নিসা : ৬৯)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ فَاِنَّ لَہٗ نَارَ جَہَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا​

‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে’ (সূরা আল-জিন : ২৩)।

আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে এই নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, যখন তারা তাদের দ্বীনের ব্যাপারে কোন বিষয়ে মতানৈক্য করবে তখন তারা সে বিষয়ে সমাধানের জন্য মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যে দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন তার দিকে ছুটে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ ۚ فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡہُ اِلَی اللّٰہِ وَ الرَّسُوۡلِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ ذٰلِکَ خَیۡرٌ وَّ اَحۡسَنُ تَاۡوِیۡلًا​

‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও ও রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের অন্তর্গত আদেশদাতাগণের; অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে কোন মতবিরোধ হয় তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে থাক; এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর সমাধান’ (সূরা আন-নিসা : ৫৯)।

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি আল্লাহর দিকে এবং তাঁর ছিরাতে মুস্তাক্বীমের দিকে আহ্বান করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلۡ ہٰذِہٖ سَبِیۡلِیۡۤ اَدۡعُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ ۟ؔ عَلٰی بَصِیۡرَۃٍ اَنَا وَ مَنِ اتَّبَعَنِیۡ ؕ وَ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ وَ مَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ​

‘আপনি বলুন! এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি আহ্বান করি সজ্ঞানে, আমি এবং আমার অনুসারীগণও, আল্লাহ মহান পবিত্র। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ : ১০৮)। তিনি আরও বলেন

وَ اِنَّکَ لَتَہۡدِیۡۤ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ - صِرَاطِ اللّٰہِ الَّذِیۡ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ اَلَاۤ اِلَی اللّٰہِ تَصِیۡرُ الۡاُمُوۡرُ​

‘আপনি অবশ্যই প্রদর্শন করেন সরল পথ। ঐ আল্লাহর পথ, যাঁর আধিপত্বে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে। সাবধান! সকল বিষয় আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন করে’ (সূরা আশ-শূরা : ৫২-৫৩)।

আল্লাহ তাঁর নবী সম্পর্কে আরও সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি ভাল কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ প্রদান করেন এবং তিনি পবিত্র জিনিসকে হালাল ও অপবিত্র অনিষ্টকর জিনিসকে হারাম ঘোষণা করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ رَحۡمَتِیۡ وَسِعَتۡ کُلَّ شَیۡءٍ ؕ فَسَاَکۡتُبُہَا لِلَّذِیۡنَ یَتَّقُوۡنَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ بِاٰیٰتِنَا یُؤۡمِنُوۡنَ - اَلَّذِیۡنَ یَتَّبِعُوۡنَ الرَّسُوۡلَ النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ الَّذِیۡ یَجِدُوۡنَہٗ مَکۡتُوۡبًا عِنۡدَہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ ۫ یَاۡمُرُہُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہٰہُمۡ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُحِلُّ لَہُمُ الطَّیِّبٰتِ وَ یُحَرِّمُ عَلَیۡہِمُ الۡخَبٰٓئِثَ وَ یَضَعُ عَنۡہُمۡ اِصۡرَہُمۡ وَ الۡاَغۡلٰلَ الَّتِیۡ کَانَتۡ عَلَیۡہِمۡ ؕ فَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِہٖ وَ عَزَّرُوۡہُ وَ نَصَرُوۡہُ وَ اتَّبَعُوا النُّوۡرَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ مَعَہٗۤ ۙ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ​

‘আর আমার করুণা ও দয়া প্রতিটি জিনিসকেই পরিব্যপ্ত করে রয়েছে, সুতরাং কল্যাণ আমি তাদের জন্যই লিখব যারা পাপাচার হতে বিরত থাকে, (তাক্বওয়া অবলম্বন করে) যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করে। (এই কল্যাণ তাদেরই প্রাপ্য) যারা সেই নিরক্ষর রাসূল নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ করে চলে, যাঁর কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবে লিখিত পায় (সেই নিরক্ষর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করে, আর তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ বৈধ করে দেন এবং অপবিত্র ও খারাপ বস্তুকে তাদের প্রতি অবৈধ করেন, আর তাদের উপর চাপানো বোঝা ও বন্ধন হতে তাদেরকে মুক্ত করেন। সুতরাং তাঁর প্রতি যারা ঈমান রাখে, তাকে সম্মান করে ও সাহায্য সহানুভূতি করে, আর সেই আলোকে (কুরআনকে) অনুসরণ করে চলে যা তাঁর সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, তারাই (ইহকাল ও পরকালে) সাফল্য লাভ করবে’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৫৬-১৫৭)।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল প্রকার ভালো কাজের নির্দেশ দিয়েছেন ও সকল প্রকার মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন, এবং সব ধরণের পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন ও সব ধরণের অপবিত্র বস্তুকে হারাম করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধভাবে সাব্যস্ত আছে যে, তিনি বলেন

إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِىٌّ قَبْلِىْ إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ​

‘আমার পূর্বে এমন কোন নবী অতিবাহিত হননি যাঁর উপর এ দায়িত্ব বর্তায়নি যে, তিনি তার জাতির জন্য যে মঙ্গলজনক ব্যাপার জানতে পেরেছেন তা তাদেরকে সাবধান করেননি’।[৩]

ইরবায ইবনু সারিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে প্রমাণিত যে, তিনি বলেন

فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيْغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأَوْحَنَا فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُوصِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَّعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِىْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَّكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ​

‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় ওয়ায করলেন যে, চক্ষুসমূহ অশ্রুসিক্ত হল এবং হৃদয়সমূহ ভীত-সন্ত্রস্ত হল। অতঃপর জনৈক লোক বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মনে হচ্ছে এটা বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশি উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির এবং আমীরের আদেশ শুনতে ও মানতে উপদেশ দিচ্ছি, যদিও তিনি একজন হাবশী গোলামও হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি সমূহ হতে দূরে থাকবে। কেননা দ্বীনের ব্যাপারে নতুন সৃষ্টি হল বিদ‘আত।[৪]

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আরো প্রমাণিত আছে। তিনি বলেন,

مَا تَرَكْتُ مِنْ شَيْءٍ يُبْعِدُكُمْ عَنْ النَّارِ إلَّا وَقَدْ حَدَّثْتُكُمْ بِهِ​

‘আমি এমন কোন কিছু ছেড়ে দেয়নি যা তোমাদেরকে জান্নাতে পৌঁছাবে তার সবগুলো তোমাদেরকে বলে দিয়েছি।[৫] তিনি আরোও বলেন,

قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا لَا يَزِيْغُ عَنْهَا بَعْدِىْ إِلَّا هَالِكٌ​

‘আমি তোমাদের আলোকিত দ্বীনের উপর রেখে যাচ্ছি, তার রাত তার দিনের মতই (উজ্জ্বল) আমার পরে নিজেকে ধ্বংসকারীই কেবল এ দ্বীন ছেড়ে বিপদগামী হবে’।[৬]


তথ্যসূত্র :
[১]. সহীহ বুখারী, হা/৩০৬২; সহীহ মুসলিম, হা/১১১; মিশকাত, হা/৫৮৯২।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/৩৬১০; সহীহ মুসলিম, হা/১০৬৪।
[৩]. সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৪; নাসাঈ, হা/৪১৯১; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৫৬।
[৪]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭, ‘সুন্নাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬; তিরমিযী, হা/২৬৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৮৪, সনদ সহীহ।
[৫]. ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২৭তম খ-, পৃ. ৩৭২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৮০৩।
[৬]. ইবনু মাজাহ, হা/৪৩; মুসতাদরাক হাকিম, হা/৩৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৮২, সনদ সহীহ।


-মূল : আব্দুল আযীয ইবনু রাইস আল-রাইস​

-অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক্ব বিন আব্দুল ক্বাদির​

 
Last edited:

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,348Threads
Total Messages
17,208Comments
Total Members
3,677Members
Latest Messages
Sahadat HossainLatest member
Top