সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Abu Abdullah

সিয়াম মুসাফিরের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
LV
15
 
Awards
24
Credit
9,252
মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে মুসাফিরের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ; চাহে সে মুসাফির রোযা রাখতে সক্ষম হোক অথবা অক্ষম, রোযা তার জন্য কষ্টদায়ক হোক অথবা না হোক, অর্থাৎ মুসাফির যদি ছায়া ও পানির সকল সুবিধা নিয়ে সফর করে এবং তার সাথে তার খাদেমও থাকে অথবা না থাকে, (সফর এরোপে½নে হোক অথবা পায়ে হেঁটে); যেমনই হোক তার জন্য রোযা কাযা করা ও সালাত কসর করা বৈধ।[1] মহান আল্লাহ বলেন,

(فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَر)

অর্থাৎ, কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অপর কোন দিন গণনা করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)

অবশ্য সফরে রোযা কাযা করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি শর্ত রয়েছেঃ-

১। সফর পরিমাণ মত দূরত্বের হতে হবে। অর্থাৎ এমন সফর হতে হবে, যাকে পরিভাষায় সফর বলা হয়। আর সঠিক মত এই যে, সফর চিহিÁত করার জন্য কোন নির্দিষ্ট মাপের দূরত্ব নেই। এ ব্যাপারে প্রচলিত অর্থ ও পরিভাষার সাহায্য নিতে হবে।[2] তদনুরূপ স্থায়ী বসবাসের উদ্দেশ্য না হলে নির্দিষ্ট দিন অবস্থান করার ব্যাপারে কোন সীমাবদ্ধতা নেই।[3] ইবনে উমার (রাঃ) আযারবাইজানে ৬ মাস থাকা কালে কসর করে নামায পড়েছেন।[4]

সুতরাং যে ব্যক্তি কোন স্থানে সফর করার পর কিছুকাল বাস করে, কিন্তু সে সেখানে স্থায়ী বসবাসের নিয়ত করে না; বরং যে উদ্দেশ্যে সফর করেছে সে উদ্দেশ্য সফল হলেই সবগৃহে ফিরে যাওয়ার সংকল্প পোষণ করে, সে ব্যক্তি মুসাফির। সে মুসাফিরের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন স্থানে সফর করার পর সে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে, সে ব্যক্তিকে মুসাফির বলা যাবে না। সে হল প্রবাসী এবং তার জন্য রোযা কাযা করা জায়েয নয়। বরং তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। বলা বাহুল্য, যে ছাত্ররা বিদেশে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে সফর করে নির্দিষ্ট কয়েক মাস বা বছর ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, সে ছাত্ররা মুসাফির নয়। তাদের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ নয়।

২। মুসাফির যেন নিজের গ্রাম বা শহরের ঘর-বাড়ি ত্যাগ করে গ্রাম বা শহরের বাইরে এসে রোযা ভাঙ্গে। আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে (মক্কা যাওয়ার পথে) মদ্বীনায় যোহরের ৪ রাকআত এবং (মদ্বীনা থেকে ৬ মাইল দূরে) যুল-হুলাইফায় গিয়ে আসরের ২ রাকআত পড়তাম।’[5]

বলা বাহুল্য, সফর করতে শহর বা গ্রাম ত্যাগ করার পূর্ব থেকেই নামায কসর করা চলবে না। অনুরূপ রোযাও শহর বা গ্রাম সম্পূর্ণ ত্যাগ করার পূর্বে ভাঙ্গা চলবে না। কারণ, নিজ গ্রাম বা শহরের জনপদে থাকা অবস্থাকে সফর বলা যায় না এবং সফরকারীর জন্য মুসাফির নাম সার্থক হয় না।[6]

বুঝা গেল যে, মুসাফির যখন সফরের উদ্দেশ্যে নিজ গ্রাম বা শহরের আবাসিক এলাকা ত্যাগ করবে, তখনই তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ হবে। তদনুরূপ এয়ারপোর্ট শহরের ভিতরে হলে এরোপে½ন শহর ছেড়ে আকাশে উড়ে গেলে রোযা ভাঙ্গা বৈধ হবে। অবশ্য এয়ারপোর্ট শহরের বাইরে হলে সেখানে রোযা ভাঙ্গা বৈধ। আর শহরের ভিতরে হলে অথবা শহরের লাগালাগি হলে সেখানে রোযা ভাঙ্গা বৈধ নয়। কারণ, তখনও সফরকারী নিজ শহরের ভিতরেই থাকে।

যারা রমাযান মাসে সফর করার ইচ্ছা করে এবং রোযা কাযা করতে চায় তাদের জন্য একটি সতর্কতার বিষয় এই যে, গ্রাম বা শহর ছেড়ে সফর করে না যাওয়া পর্যন্ত যেন তারা রোযা ভাঙ্গার নিয়ত না করে। কারণ, ভাঙ্গার নিয়ত করলে রোযা হবে না। আর নিয়তের পর যদি কোন প্রতিবন্ধকতা বা কারণবশতঃ সফর না করা হয়, তাহলে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ হবে না।[7]

৩। মুসাফিরের সফর যেন কোন অবৈধ কাজের জন্য না হয়। (অধিকাংশ উলামার মত এটাই।) কেননা পাপ-সফরে শরয়ী সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অধিকার পাপী মুসাফিরের নেই। যেহেতু ঐ সুযোগ-সুবিধা হল ভারপ্রাপ্ত বান্দার উপর কিছু ভার সহজ ও হাল্কা করার নামান্তর। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানী করে হারাম কাজের জন্য সফর করে সে ব্যক্তি আল্লাহর দেওয়া ঐ সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকার পেতে পারে না।[8]

৪। সফরের উদ্দেশ্য যেন রোযা না রাখার একটা বাহানা না হয়। কারণ, ছল-বাহানা করে আল্লাহর ফরয বাতিল হয় না।[9]

যে সফরে রোযা কাযা করার অনুমতি আছে সে সফর হজ্জ, উমরাহ, কোন আপনজনকে দেখা করার উদ্দেশ্যে কিংবা ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে সাময়িক হোক, অথবা (ভাড়া গাড়ির ড্রাইভারের মত) সার্বক্ষণিক হোক, তাতে কোন পার্থক্য নেই। বলা বাহুল্য, যে সর্বক্ষণ সফরে থাকে, তার যদি ফিরে এসে আশ্রয় নেওয়ার মত বাসভূমি থাকে, অর্থাৎ, (উড়িয়া যাযাবরদের মত) তার পরিবার-পরিজন তার সাথে না থাকে, যেমন; পিওন, যে মুসলিমদের ডাক বহন করার উদ্দেশ্যে সফর করে। যেমন, ভাড়া গাড়ির ড্রাইভার, ট্রেন বা পে½নের পাইলট ও খালাসী-হোস্টেস ইত্যাদি - যদিও তাদের সফর প্রাত্যহিক হয়, তবুও তাদের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ। অবশ্য এ রোযা তারা সময় মত পরিশোধ করতে বাধ্য হবে। তদনুরূপ পানি-জাহাজের মাল্লা, যার স্থলে বাসস্থান আছে (অর্থাৎ, জাহাজই তার স্থায়ী বাসস্থান নয়), সেও কাযা করতে পারে।

উপরে উল্লেখিত ব্যক্তি সকলের কাজ যেহেতু নিরবচ্ছিন্ন ও বিরতিহীন, সেহেতু তারা শীতকালে কাযা করে নিতে পারে। কারণ, শীতের দিন ছোট ও ঠান্ডা। সে সময় কাযা তুলতে কষ্ট হবে না। কিন্তু তারা যদি রমাযান মাসে সবগৃহে ফিরে আসে তাহলে সেখানে থাকা কালে তাদের জন্য রোযা রাখা জরুরী।

পক্ষান্তরে শহরের ভিতরে চলমান ট্রেন, বাস, ট্যাক্সি, অটো-রিক্সা প্রভৃতির ড্রাইভার মুসাফির নয়। কারণ, তারা সফরের দূরত্ব অতিক্রম করে না। তাই তাদের জন্য যথাসময়ে রোযা রাখা ওয়াজেব।[10]

শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সৈনিক ও মুজাহেদ সফরের সেই পরিমাণ দূরত্ব সফর করলে রোযা কাযা করতে পারে, যে পরিমাণ সফর করলে নামায কসর করা বৈধ। অবশ্য তারাও রমাযান পরে কাযা তুলতে বাধ্য হবে। আর যদি তারা মুসাফির না হয়, বরং শত্রু তাদেরকে তাদের অবস্থান ক্ষেত্রে আক্রমণ করে, তাহলে যে জিহাদের সাথে রোযা রাখতে সক্ষম হবে তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। কিন্তু যে রোযা রাখার সাথে সাথে জিহাদের ‘ফর্যে আইন’ আদায় করতে সক্ষম নয়, তার জন্য কাযা করা বৈধ। তবে রমাযান শেষ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া রোযা অবশ্যই সে রেখে নেবে।[11]


[1] (সাবঊনা মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ১৭পৃঃ)
[2] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৪/৪৯৭-৪৯৮)
[3] (ঐ ৪/৫৩২-৫৩৭ দ্রঃ)
[4] (বাইহাকী ৩/১৫২, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৫৭৭, ৩/১৬, ইবনে উষাইমীন ফাসিঃ জিরাইসী ২৫পৃঃ)
[5] (বুখারী ১০৮৯নং, মুসলিম ৬৯০, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ)
[6] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৫৮-৩৫৯)
[7] (সাবঊনা মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ১৮নং)
[8] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৪/৪৯২)
[9] (ফুসূলুন ফিস্-সিয়ামি অত্-তারাবীহি অয্-যাকাহ, ইবনে উষাইমীন ১০পৃঃ)
[10] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৪/৫৩৯-৫৪০, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/১৪৪, ইবনে উষাইমীন ফাসিঃ মুসনিদ ৭৪পৃঃ)
[11] (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/১৪১, ফাসিঃ মুসনিদ ৭৫পৃঃ, ইতহাফু আহলিল ইসলাম বিআহকামিস সিয়াম ২৬পৃঃ)


রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল
শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী​
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,339Threads
Total Messages
17,179Comments
Total Members
3,673Members
Latest Messages
jahidhashanLatest member
Top