‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ মুসলিম রাষ্ট্র কি তবে নেই?

পূর্ববর্তী খারেজীদের মূলনীতিসমূহের মধ্য থেকে একটি হলো— মুসলিম ভূখণ্ডকে দারুল কুফর (কুফরী ভূখণ্ড), দারুল হারব (শত্রু-ভূখণ্ড) ও দারুর রিদ্দাহ (স্বধর্মত্যাগী ভূখণ্ড) হিসেবে বিশেষায়িত করা।

নাফে' আল-আযরাক্ব বলেছে, কোনো ভূখণ্ডের লোকজন প্রকাশ্যে ঈমান না আনা পর্যন্ত তা কুফরী ভূখণ্ড (দারুল কুফর) হিসেবে গণ্য হবে। তাদের যবেহকৃত পশু ভক্ষণ করা, তাদের সাথে বিবাহ-শাদী করা এবং ধন-সম্পত্তির ওয়ারিছী (উত্তরাধিকার) বৈধ নয়। তাদের মধ্য থেকে কেউ আসলে তাকে পরীক্ষা করা আমাদের উপর আবশ্যক। তারা আরবের কাফেরদের মতই। (নতুনভাবে) ইসলাম গ্রহণ অথবা তরবারির ভাষা ছাড়া ওদের সাথে কোনো কথা নেই। (এসব থেকে) বসে থাকা/বিরত থাকা ওদের মতোই সমান অপরাধের কাজ)। তাকিয়্যাহ (সত্য বলতে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া) বৈধ নয়।

প্রাচীনকাল ও বর্তমানের সকল খারেজীদের একটি বড় বিশ্বাস হলো, সকল মুসলিম ভূখণ্ড দারুল কুফর বা কুফরী ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। আর তাদের নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডসমূহ দারুল ঈমানের (ইসলামী ভূখণ্ড) অন্তর্ভুক্ত।

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ খারেজীদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেন, তারা তাদের ভূখণ্ডকে 'দারুল হিজরাহ' নামকরণ করে, আর মুসলিম ভূখণ্ডকে 'দারুল কুফর' ও 'দারুল হারব' হিসেবে গণ্য করে।

মুসলিমদের ভূখণ্ডকে 'দারুল কুফর' হিসেবে আখ্যায়িত করা বিদ'আতীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কেননা আহলুস্ সুন্নাহ তাদের কিতাবসমূহে এই নীতির ক্ষেত্রে বিদআতীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার কথা বলেন।

ইমাম আবু বকর আল-ইসমাঈলী রহিমাহুল্লাহ বলেন, আহলুল হাদীছদের মতে, কোনো ভূখণ্ডে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের আযান-ইক্বামত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেটা দারুল ইসলাম হিসেবেই গণ্য হবে; দারুল কুফর হিসেবে নয় - যেমনটি মু'তাযিলারা মনে করে থাকে। আর তার অধিবাসীগণ নিরাপদে সেখানে অবস্থান করবে। (অর্থাৎ তাদের কোনো ক্ষতি করা চলবে না)।

ফিরকা পরিচিতি সম্বন্ধীয় বইগুলো এ কথাতে ভরপুর যে, খারেজীদের সব ফিরকা-ই এই আকীদা লালন করে। তবে (ফিরকাভেদে) তাদের কেউ কেউ মনে করে, বিরোধীদের ভূখণ্ডগুলো দারুল কুফর। আবার অনেকেই এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকে (মুসলিম ভূখণ্ডও বলে না, কাফের ভূখণ্ডও না)। আবার কারো মতে, দারুস সুলতান এবং তার আশেপাশে যারা আছে, সেটা দারুল কুফর। (তবে সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, সেটা মুসলিম ভূখণ্ড নয়)

পক্ষান্তরে এ বিষয়ে বর্তমান যুগের খারেজীরা অনেক আলোচনা করেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উক্তি তুলে ধরা হলোঃ এ ব্যাপারে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের প্রবক্তা সাইয়েদ কুতুবের সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে। তিনি বলেছেন, বর্তমানে পৃথিবীর বুকে কোনো মুসলিম রাষ্ট্র নেই, কোনো মুসলিম সমাজও নেই।

তাওহীদ ও সুন্নাহভিত্তিক রাষ্ট্র সৌদি আরব বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সে এ কথা বলেছে। যে দেশ কিনা তার জামা'আতের হাজার হাজার জেল ও ফাঁসি পালাতক আসামীকে আশ্রয় দান করেছিলো!

সুতরাং সাইয়েদ কুতুবের মতে বর্তমানে কোনো ইসলামী রাষ্ট্র নেই। আর যখন বলা হয় সাইয়েদ কুতুব, মওদুদী ও জামাআতুল ইখওয়ান সকলেই ফিতনার মূল হোতা, বিভিন্ন সমস্যা ও বালা-মুসীবতের মূল কারণ, আধুনিক খারেজী মতাবলম্বীরা এই সম্প্রদায়ের জামার তল থেকেই বের হয়েছে; তখন পক্ষপাতদুষ্ট একদল লোকের নাক রাগে লাল হয়ে যায় এবং ঘাড়ের রগ ফুলে ওঠে। এতকিছুর পরেও তাদের (প্রবক্তা ও বড় নেতাদের) কথা অপব্যাখ্যা করে (সঠিকের সাথে মিলিয়ে দিতে চায়)।

আবু কাতাদা বলেছেন, মুরতাদদের মুরতাদ বলা/এই নামে নামকরণ করা অথবা কোনো ভূখণ্ডকে দারুল ইসলাম থেকে দারুল কুফরে স্থানান্তরিত হওয়ার ব্যাপারে ফিকহী গ্রন্থসমূহে খুব স্পষ্টভাবে বিস্তারিত আলোচনা আছে। তাহলে এমন সুস্পষ্ট বিষয় থেকে কেন পলায়ন করতে হবে? আর 'হারাকাতুল জিহাদ ওয়াল ক্বিতাল আস-সালাফী” যা বলে সে ব্যাপারে কেন কতিপয় লোকের এমন ধারণা হয় যে তা সম্পূর্ণ নতুন ও মিথ্যা কথা? দরবারি ও মুরজিয়া আলেমরা এবং তোতা পাখির মতো বিশ্বাসকারী আমজনতা যে সন্ত্রাসবাদের(?) চর্চা করে, সেটাই মূলত (আমাদের) অনেককে খারেজী ট্যাগ খাওয়ার ভয়ে নিজেকে আড়ালে রাখতে বাধ্য করছে।

তার এই কথাতে তিনি স্পষ্টভাবেই সবাইকে তাকফীরে অংশগ্রহণের আহ্বান করছেন, কোনো প্রকার দ্বিধা-সংকোচ ও হীনম্মন্যতা ছাড়াই। এমনকি তিনি এক্ষেত্রে আলেম-জাহেল, আমজনতা- পাবলিক(?) কোনো পার্থক্য করেননি!

মাক্বদিসী বলেছেন, সকল ইসলামী রাষ্ট্রই দারুল কুফরের অন্তর্ভুক্ত। এতে আমি কোন রাষ্ট্রকে বাদ দিই না; এমনকি মক্কা-মদীনাকেও না।

প্রথম যুগের খারেজীরা মক্কা-মদীনা দারুল কুফর হওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা বলেছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি; কিন্তু সে ব্যাপারে কোনো দলীল আমি খুঁজে পাইনি। যদিও তা রাষ্ট্রের ব্যাপারে তাদের আম কুফরী বিশ্বাসের মধ্যে প্রবিষ্ট।

মক্কা-মদীনা দারুল কুফর, দারুর রিদ্দাহ—এ ধরনের যে কথা প্রচলিত আছে, উক্ত দলের নিকট তা অবিচ্ছিন্ন কোনো কথা নয়; এ ব্যাপারে তাদের আলাপ- আলোচনাও গোপন নয়।

অচিরেই আমরা এমন একজনের কথা নকল করবো, যিনি এই দেশেরই (মক্কা/মদীনা) সন্তান, যিনি কিনা মাতৃদুগ্ধ পান করার সাথে সাথে তাওহীদের আক্বীদাও পেটে ধারণ করেছেন। এমনকি শরয়ী গবেষণায় (তাখাসসুস ) তিনি আলেম হওয়ার সার্টিফিকেটও অর্জন করেছেন। অতঃপর বলেছেন, মক্কা- মদীনা দারুল কুফর!

এমনকি তিনি তার পুস্তিকার শেষের দিকে একটি বাক্যে বলেছেন: ইবনুল আরাবী তার 'আহকামুল কুরআন' গ্রন্থে যে বলেছেন, “মক্কা কিয়ামত পর্যন্ত দারুল ইসলামের অন্তর্ভুক্ত”- তার এ কথাটি ধর্তব্য নয়। এ ব্যাপারে কোনোই দলীল নেই। সাহাবীদের থেকে কোনো আছারও বর্ণিত হয়নি, তাদের থেকে এ ব্যাপারে জানাও যায় না। সালাফে সালেহীন এবং তাদের পরবর্তীদের থেকেও কোনো দলীল পাওয়া যায় না। (আল্লাহ তা'আলা তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হোন)। কুফরী হুকুম আপতিত হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা মক্কাকে আল্লাহ এই দেশকে সম্মানিত করুন!!- অন্যান্য রাষ্ট্রের মতোই করেছেন। সেজন্যই কখনো কখনো তা দারুল কুফর। আবার কখনো সেটা দারুল ইসলাম।

- ইবরাহীম আল-মুহায়মীদ হাফিযাহুল্লাহ
আরও জানতে পড়ুন - ইসলামী রাষ্ট্র কি তবে নেই? - PDF


১. আল-মিলাল ওয়ান-নিহাল, শাহরস্তানী, ১/১১৯; আল-কামিল ফিল-লুগাতি ওয়াল-আদাব, ৩/ ২০৭।
২. আন-নুবুওয়াত, ১/১৪০-১৪১।
৩. ই'তিকাদু আইম্মাতিল হাদীস, ৬৭ পৃষ্ঠা।
৪. বিস্তারিত: মাকালাতুল ইবাযিয়্যাহ।
৫. তাফসির ফী যিলালিল কুরআন, ৪/২১২২।
৬. একটি ফিলিস্তিনী জঙ্গি সংগঠন। আবু কতাদাহ এই দলেরসহ আইএস, আল-কায়েদা ইত্যাদি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মহামান্য মুফতী বলে খ্যাত।
৭. মাকালাত বায়না মানহাজায়নি, মাকালাহ নাম্বার-৩৭। এসব দেখে জ্ঞানবান যে কেউ হেসে কুটিকুটি খাবে। ওদের জিহাদী জোশ, জযবা ইত্যাদি তাদের ভাষায় মুরজিয়া আলেম ও জনসাধারণের বক্তব্য, লিখনীতেই হাওয়া হয়ে যায়!!
৮. সামারাতুল জিহাদ, ৮৩ পৃষ্ঠা। এই মাকদিসী একাধারে আল-কায়েদা, আইএসের বড় পর্যায়ের নেতা।
 

Share this page