মালহামার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অন্যান্য অপব্যাখ্যা ও বাতিল কথার খণ্ডন

Joynal Bin TofajjalVerified member

Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
344
Comments
475
Reactions
5,426
হাদিসে বর্ণিত মহাযুদ্ধের মতো গায়েবি বিষয়ে বক্তা আবু ত্বহা আদনান অনেক জায়গায় দলিলবিহীন উদ্ভট কথা বলেছেন। মহাযুদ্ধের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বক্তা আদনানের নানাবিধ অপব্যাখ্যা ও বাতিল কথাবার্তার আরও কয়েকটি নমুনা আমরা উল্লেখ করছি।

বক্তা আদনানের মতে ইমাম মাহদি মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দেবেন:
আবু ত্বহা আদনান বক্তব্য দিয়েছেন, “রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এর বিপরীতে আল্লাহ তায়ালা একটি শক্তিকে দাঁড় করাবেন, যাদের নেতৃত্ব দিবে ইমামুল মাহদি এবং তাঁর নেতৃত্বে একটা মালহামা হতে যাচ্ছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে বলেছেন, যখন মদিনার গুরুত্ব কমে যাবে, তখন জেরুজালেমের গুরুত্ব বেড়ে যাবে। যেটা এখন হয়েছে। ঠিক তখনই দেখা দেবে মালহামা, অর্থাৎ মহাযুদ্ধ। এটা এমন একটা যুদ্ধ, যে বিষয়ে বিশ্ববাসীর কোনো কল্পনাই নাই, এটা কতবড়ো যুদ্ধ হতে পারে।” [দেখুন: https://youtu.be/hEBD6kmxO2s (১৪:৩৫ মিনিট থেকে ১৫:০৩ মিনিট)]

আদনান সাহেব আরেক বক্তব্যে বলেছেন, “এবং নবিজি বলেছেন, তাদের সাথে, ওই যে ওদের কথা বলছি। ওদের সাথে মুসলিমদের বিশাল যুদ্ধ হবে, বিশাল ব্যাটল। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো যুদ্ধ মানুষ কখনো দেখে নাই, এতবড়ো যুদ্ধ হতে যাচ্ছে। আল্লাহর রসুল বলেছেন, এই যুদ্ধে মুসলিমদের হাল ধরবেন একজন ইমাম, তাঁর নাম ইমাম মাহদি। এটা কি আমি নতুন বলছি, না হাদিসের মধ্যেই আছে?” [দেখুন: https://youtu.be/FLx7i81qd94 (৪৬:২৮ মিনিট থেকে ৪৬:৫৩ মিনিট)]

আরেক লেকচারে আবু ত্বহা আদনান বিলকুল স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, “শোনেন। যতক্ষণ পর্যন্ত এ বিশ্বে একটা বিশাল মালহামা না হচ্ছে—মালহামা মানে মহাযুদ্ধ, পারমাণবিক যুদ্ধ—ততক্ষণ পর্যন্ত ইমামুল মাহদি আসবেন না। এটাই কনক্লুশন। পুরো কুরআন-হাদিসের আখিরুজ জামান সাবজেক্ট স্টাডি করে এই রেজাল্টটা আমি বলছি।” [দেখুন: https://youtu.be/LaoZHhtGhbM (৩:৪০ মিনিট থেকে ৪:০০ মিনিট)]

প্রথমোক্ত বক্তব্য দুটোতে দেখা গেল, আবু ত্বহা আদনান হাদিসের নামে জালিয়াতি করে এবং নবিজির প্রতি মিথ্যারোপ করে বলেছেন, মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দেবেন ইমাম মাহদি। আর শেষোক্ত বক্তব্যে দেখা গেল, আবু ত্বহা আদনান বলছেন, মহাযুদ্ধ না হওয়ার আগে ইমাম মাহদি আসবেন না! দুটো বক্তব্যে স্পষ্ট স্ববিরোধিতা রয়েছে। স্ববিরোধী বক্তব্যদ্বয়ের মধ্যে কোনটি সঠিক তা আমরা সংক্ষেপে আলোকপাত করছি। রক্তক্ষয়ী মহাযুদ্ধের পরে ইমাম মাহদি পৃথিবীতে থাকবেন, এ কথা স্পষ্ট। কিন্তু মালহামার আগে তাঁর আগমন হবে কিনা সে বিষয়ে হাদিসে স্পষ্ট কথা বলা নেই। বিধায় আমরা এরকম গায়েবি জ্ঞানকে আল্লাহর দিকে সোপর্দ করে বলব, মহাযুদ্ধের আগে ইমাম মাহদির আগমন হবে কিনা, কিংবা তিনি মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দেবেন কিনা তা আল্লাহই ভালো জানেন।

কাতারভিত্তিক ফতোয়ার ওয়েবসাইট ইসলামওয়েবের ৩১৭৪৮৫ নং ফতোয়ায় বলা হয়েছে, وأما عن توقيت ظهور المهدي بالنسبة للملحمة: فقد جاء أن المهدي يكون قد ظهر حين نزول عيسى بن مريم. ... ونزول عيسى بن مريم يكون عقب الملحمة وفتح قسطنطينية وخروج الدجال، كما في صحيح مسلم عن أبي هريرة، فيتبين من هذا أن المهدي يكون ظاهرا بعد الملحمة الكبرى التي تكون بين المسلمين والروم، وأما هل يكون قد ظهر قبل الملحمة؟ لا نعلم شيئا صريحا في هذا “আর মহাযুদ্ধের সাথে মাহদি আগমনের সময়কাল প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে, মারইয়াম তনয় ইসার অবতরণের সময় মাহদির আগমন হয়ে যাবে।... মহাযুদ্ধ সংঘটন, কনস্টান্টিনোপল বিজয় ও দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়ার পরে অবতরণ করবেন মারইয়াম তনয় ইসা আলাইহিস সালাম। যেমনটি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। এ থেকে প্রতিভাত হয়, মুসলিম বাহিনী ও রোমানদের মাঝে মহাযুদ্ধ সাধিত হওয়ার পরবর্তী সময়ে ইমাম মাহদি সমুপস্থিত থাকবেন। কিন্তু মহাযুদ্ধের আগে তাঁর আগমন হবে কিনা, এ বিষয়ে আমরা কোনো সুস্পষ্ট দলিল জানতে পারিনি।” [দেখুন: https://www.islamweb(ডট)net/amp/ar/fatwa/317485]

হাদিসে বর্ণিত মহাযুদ্ধ জাতিসংঘ করবে – মর্মে ইঙ্গিত প্রদান:
আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “একটা হাদিস আমি বলে দেই। আখিরুজ জামানে মালহামা হবে একটা। এখানে যুদ্ধের নাম বলা হয়েছে মালহামা। মালহামা শব্দের অর্থ মহাযুদ্ধ। অন্য একটা হাদিসে এসেছে, আশিটা ফ্ল্যাগ। আশিটা পতাকা একত্রিত হয়ে যাবে যুদ্ধে। আর আশিটা পতাকাকে একত্রিত কোন সংগঠন করতে পারে, বলেন? ইউনাইটেড নেশনস। জি, ওরা করতে পারে। জি, ওরাই করতে পারে। আশিটা ফ্ল্যাগকে একত্রিত করতে পারবে।” [দেখুন: https://youtu.be/nBuhSJKl1Q4 (০:৫৫ মিনিট থেকে ১:২৯ মিনিট)]
আমরা ইতোমধ্যে বারবার বলেছি, শেষ জামানায় ঘটিতব্য যুদ্ধবিগ্রহ গায়েবি বিষয়ের অন্তর্গত। এসব বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল ব্যতিরেকে একটি কথাও অনুমান করে বা ধারণাবশত বলা যাবে না। সুতরাং হাদিসে বর্ণিত বৃহৎ মহাযুদ্ধ জাতিসংঘ করবে, এসব কথা ভণ্ড জ্যোতিষীদের মতো গণকবাজি করে বলার কোনো শরয়ি ভিত্তি নেই। এজন্য এ জাতীয় দলিলবিহীন বাতিল কথা বিশ্বাস করাও না-জায়েজ।

বক্তা আদনানের মতে হাদিসে বর্ণিত আশিটি পতাকা মানে আশিটি দেশ:
আবু ত্বহা আদনান বিভিন্ন বক্তব্যে মহাযুদ্ধ সংক্রান্ত হাদিসের বিবরণ দিতে গিয়ে আশিটি পতাকার ব্যাখ্যা করেছে ‘আশিটি দেশ’ বলে। হাদিসে এসেছে, রোমানরা আশিটি ঝাণ্ডা নিয়ে এক বিরাট সেনাবাহিনী জমায়েত করবে। একেকটি ঝাণ্ডার অধীনে থাকবে বারো হাজার করে সৈন্য। [সহিহুল বুখারি, হা: ৩১৭৬] আবু ত্বহা আদনান হাদিসে বর্ণিত আশিটি পতাকার ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “তিনি বলেছেন, শেষ জামানায় এমন একটা যুদ্ধ হতে যাচ্ছে, যেখানে আশিটা দেশ একত্রিত হবে, আশিটা দেশ এবং প্রত্যেকটা দেশের আন্ডারে থাকবে বারো হাজার করে সৈন্য।” [দেখুন: https://youtu.be/G0Ccp4Veo3g (১:১২ মিনিট থেকে ১:২৭ মিনিট)]

আদনান সাহেব আরেক বক্তব্যে বলেছেন, “এ যখন শক্তিশালী হয়ে গেছে, তখন সামনে এ একটা মহাযুদ্ধ লঞ্চ করবে। যেখানে পৃথিবীর আশিটা দেশ একত্রিত হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকটা দেশের আন্ডারে থাকবে বারো হাজার করে সৈন্য।” [দেখুন: https://youtu.be/LaoZHhtGhbM (৫:৫৯ মিনিট থেকে ৬:২০ মিনিট)]

এখানে আদনান সাহেব ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের শক্তিশালী হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু দেখুন কুরআন-সুন্নাহর কোথাও এমন কথা বলা হয়নি যে, হাদিসে বর্ণিত বৃহৎ মহাযুদ্ধ চালু করবে ইহুদিরা, এবং সেই ইহুদিরাই হচ্ছে ইসরাইলের ইহুদি-সম্প্রদায়। কোথাও এ কথা নেই। বরং আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি, বৃহৎ মহাযুদ্ধ হবে মুসলিম বাহিনী ও খ্রিষ্টীয় রোমান সেনাবাহিনীর মধ্যে। [দেখুন: সহিহ মুসলিম, হা: ২৮৯৭-২৮৯৯; আবু দাউদ, হা: ৪২৯২; আহমাদ, হা: ১৬৮২৬] সুতরাং ইসরাইল এ যুদ্ধ লঞ্চ করবে মর্মে আবু ত্বহা আদনানের এ কথাটি পরিত্যাজ্য, বাতিল।

এখন আসি, ‘আশিটা পতাকার মানে আশিটা দেশ’ – কথাটির ব্যাপারে। দেখুন, ‘আশিটা পতাকার মানে আশিটা দেশ’ – এমন কথা গ্রহণযোগ্য ভাষ্যকার ইমামদের ব্যাখ্যাগ্রন্থে পাওয়া যায় না। বরং বিশুদ্ধ হাদিস থেকে জানা যায়, যুদ্ধের সময় একটি দেশেরই একাধিক পতাকা থাকতে পারে। যেমন মক্কা বিজয়ের ঘটনায় আমরা দেখতে পাই, মদিনা থেকে একাধিক পতাকার অধীনে সাহাবিগণের সৈন্যদল মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন। সহিহুল বুখারির হাদিসে এসেছে, সাহাবিদের সেনাবাহিনী যখন মক্কায় প্রবেশ করছিলেন, তখন তাঁদের পর্যবেক্ষণে রত ছিলেন মক্কার নেতা আবু সুফইয়ান ও আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। এ সময় সাহাবিগণের একটি বিরাট বাহিনী দেখে আবু সুফইয়ান জিজ্ঞেস করেন, ‘এরা কারা?’ আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “এরাই আনসারবৃন্দ। সাদ বিন উবাদা তাঁদের দলপতি। তাঁর হাতেই রয়েছে তাঁদের পতাকা।” এরপর আরেকটি দল আসে। এটি ছিল সবচেয়ে ছোটো দল। আর এঁদের মধ্যেই ছিলেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবিবর্গ। যুবাইর ইবনুল আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে ছিল নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পতাকা। [সহিহুল বুখারি, হা: ৪২৮০]

এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, কোনো যুদ্ধে একটি রাষ্ট্রেরই একাধিক পতাকা থাকতে পারে। তাই বিনা দলিলে আগামীতে ঘটিতব্য বৃহৎ মহাযুদ্ধে রোমান বাহিনীর আশিটা পতাকা মানে আশিটা দেশ – বলে ব্যাখ্যা করা অনুচিত এবং বিনা ইলমে আল্লাহর শরিয়তের ব্যাপারে কথা বলার শামিল।

আদনানের মতে যখন মদিনার গুরুত্ব কমে জেরুজালেমের গুরুত্ব বেড়ে যাবে তখনই শুরু হবে বৃহৎ মহাযুদ্ধ:
আবু ত্বহা আদনান বলেন, “রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রোফিসাইড করেছেন যে, যখন মদিনার গুরুত্ব কমে যাবে। আবু দাউদের মধ্যে হাদিসটা আছে। যখন মদিনার গুরুত্ব কমে যাবে। সারা ওয়ার্ল্ডে মদিনার এখন কোনো গুরুত্বই নাই। নো রোল। তারা সারা ওয়ার্ল্ডে তারা কোনো রোল প্লে করে না। এটা ট্যুরিস্ট জায়গা। মানুষ যায় সেখানে জেয়ারত করতে, পড়াশোনা করতে। সারা ওয়ার্ল্ডের পলিটিক্সের মধ্যে কোনো রোল প্লে করে না। তার চেয়ে বেটার রোল মালয়েশিয়া প্লে করে। যখন মদিনার গুরুত্ব কমে যাবে, ঠিক তখনই জেরুজালেমের গুরুত্ব বেড়ে যাবে। সারা ওয়ার্ল্ডের এখন মাথাব্যথার কারণ জেরুজালেম।... ঠিক তখনই শুরু হবে মালহামা।” [দেখুন: https://youtu.be/n6MN49cP2VU (৭:২৮ মিনিট থেকে ৮:১৩ মিনিট)]

আরেক বক্তব্যে আদনান সাহেব বলেন, “রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু দাউদের হাদিসে বলেছেন, যখন মদিনার গুরুত্ব কমে যাবে, তখন জেরুজালেমের গুরুত্ব বেড়ে যাবে—যেটা এখন হয়েছে—ঠিক তখনই দেখা দিবে মালহামা।” [দেখুন: https://youtu.be/hEBD6kmxO2s (১৪:৪৮ মিনিট থেকে ১৪:৫৭ মিনিট)]

বক্তা আদনান আবু দাউদের যে হাদিসটির কথা বলছেন, সে হাদিসে মদিনার গুরুত্ব কমে জেরুজালেমের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। সুতরাং এটা নবিজির প্রতি একপ্রকার মিথ্যাচারের আওতাভুক্ত হতে পারে। আসুন, আমরা আবু দাউদের মূল হাদিসটি দেখে নিই। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, عُمْرَانُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ خَرَابُ يَثْرِبَ، وَخَرَابُ يَثْرِبَ خُرُوجُ الْمَلْحَمَةِ، وَخُرُوجُ الْمَلْحَمَةِ فَتْحُ قُسْطَنْطِينِيَّةَ، وَفَتْحُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ خُرُوجُ الدَّجَّالِ “বাইতুল মাকদিসে বসতিস্থাপন ইয়াসরিব তথা মদিনা বিরান হওয়ার কারণ হবে এবং ইয়াসরিবের বসতিশূন্যতা হবে মহাযুদ্ধের আলামত। মহাযুদ্ধের পরে কনস্টান্টিনোপল বিজিত হবে এবং কনস্টান্টিনোপল বিজয় হবে দাজ্জালের আবির্ভাবের আলামত।” [আবু দাউদ, হা: ৪২৯৪; সনদ: হাসান]

হাদিসটিতে বলা হয়েছে, জেরুজালেমের বাইতুল মাকদিসে বসতিস্থাপনই হবে মদিনা বিরান হওয়ার কারণ। অর্থাৎ কেয়ামতের প্রাক্কালে জনমানুষ, ঘরবাড়ি ও সম্পদের প্রাচুর্যতায় বাইতুল মাকদিস সমৃদ্ধ হবে। [দেখুন: আওনুল মাবুদ শারহু সুনানি আবি দাউদ (ইবনুল কাইয়্যিম কৃত আবু দাউদের টীকা-সহ), খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ২৭০]

আর মদিনা ছেড়ে মানুষজন চলে যাওয়ায় মদিনা বসতিশূন্য বিরান হয়ে যাবে। বুখারি-মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, يَتْرُكُونَ الْمَدِينَةَ عَلَى خَيْرِ مَا كَانَتْ لاَ يَغْشَاهَا إِلاَّ الْعَوَافِ يُرِيدُ عَوَافِيَ السِّبَاعِ وَالطَّيْرِ وَآخِرُ مَنْ يُحْشَرُ رَاعِيَانِ مِنْ مُزَيْنَةَ يُرِيدَانِ الْمَدِينَةَ يَنْعِقَانِ بِغَنَمِهِمَا فَيَجِدَانِهَا وَحْشًا حَتَّى إِذَا بَلَغَا ثَنِيَّةَ الْوَدَاعِ خَرَّا عَلَى وُجُوهِهِمَا “মানুষজন উত্তম অবস্থায় মদিনাকে রেখে চলে যাবে। জীবিকা অন্বেষণে বিচরণকারী অর্থাৎ হিংস্র পশু ও পাখি ছাড়া আর কেউ একে আচ্ছন্ন করে নিতে পারবে না। সবশেষে যাদের মদিনাতে যারা মারা যাবে, তারা হলো মুযায়না গোত্রের দুজন রাখাল। তারা তাদের ছাগলগুলোকে হাঁকডাক দিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই মদিনাতে আসবে। এসে দেখবে মদিনা বন্য পশুতে ছেয়ে আছে। এরপর তারা ‘সানিয়্যাতুল-বিদা’ নামক স্থানে পৌঁছতেই মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে।” [সহিহুল বুখারি, হা: ১৮৭৪; সহিহ মুসলিম, হা: ১৩৮৯]

আবু দাউদের হাদিসটির সাথে আরেক হাদিসের বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হয়। আবু দাউদের হাদিসটিতে বলা হয়েছে, দাজ্জালের আবির্ভাবের আগেই মদিনা বিরান হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে সহিহুল বুখারির হাদিসে এসেছে, মদিনার নিকটে এসে দাজ্জাল বাধাগ্রস্ত হবে। তখন মদিনা তার অধিবাসীদের নিয়ে তিনবার প্রকম্পিত হবে, তখন সকল মুনাফেক পুরুষ ও নারী মদিনা থেকে বের হয়ে দাজ্জালের কাছে চলে যাবে। [সহিহুল বুখারি, হা: ৭১২৪]

ইমাম ইবনু কাসির রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭৭৪ হি.) এই বৈপরীত্যের সংশয় নিরসন করে বলেছেন, وليس المراد أن المدينة تخرب بالكلية قبل خروج الدجال ، وإنما ذلك آخر الزمان ، بل تكون عمارة بيت المقدس سببا في خراب المدينة النبوية ، فإنه قد ثبت في الأحاديث الصحيحة أن الدجال لا يقدر على دخولها ، يُمنع من ذلك بما على أبوابها من الملائكة القائمين بأيدهم السيوف المصلتة “এ হাদিসের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, দাজ্জাল বের হওয়ার আগে মদিনা বিলকুল বিরান হয়ে যাবে। বরং এটা শেষ জামানায় হবে। বাইতুল মাকদিসে বসতিস্থাপন মদিনাতুন নববি বিরান হওয়ার কারণ হবে। কারণ সহিহ হাদিসগুলোতে সাব্যস্ত হয়েছে, দাজ্জাল মদিনায় ঢুকতে পারবে না। সে ঢুকতে বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ মদিনার দরজাগুলোতে কোষমুক্ত তরবারি হাতে দাঁড়িয়ে থাকবেন ফেরেশতাগণ।” [ইবনু কাসির কৃত আন-নিহায়া ফিল ফিতানি ওয়াল মালাহিম, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৮৩; তাহকিক: ইসামুদ্দিন আস-সাবাবিতি; দারুল হাদিস কর্তৃক প্রকাশিত]

এ থেকে প্রতীয়মান হয়, আবু ত্বহা আদনান আবু দাউদের হাদিসটির ভুল অনুবাদ ও অপব্যাখ্যা করেছেন। আল্লাহুল মুস্তাআন।




লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।​
 
Similar threads Most view View more
Back
Top